আমলকি হরিতকি বহেরার উপকারিতা - ত্রিফলা খাওয়ার নিয়ম

আমলকি হরিতকি বহেরার উপকারিতা সম্পর্কে আপনার যদি জানার আগ্রহ থাকে তাহলে এই পোষ্টটি আপনার জন্য। আমলকি হরিতকি ও বহেরার সংমিশ্রনে একত্রে তৈরী হয় ত্রিফলা। আজকে এই পোষ্ট থেকে আমলকি হরিতকি ও বহেরার উপকারিতা এবং ত্রিফলা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে পারবেন।
আমলকি হরিতকি বহেরার উপকারিতা

আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে ত্রিফলার গুরুত্ব সর্বোচ্চ স্থানে । এই পোস্ট থেকে আপনারা আজকে জানতে পারবেন আমলকি হরতকি ও বহেরার উপকারিতা এবং ব্যবহার বিধি বা সেবন সম্পর্কে । 

নিচের যে অংশ থেকে পড়তে চান , ক্লিক করুন

আমলকি হরিতকি বহেরার উপকারিতা

আমলকি হরিতকি বহেরার উপকারিতা সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই জানা। আমলকি হরতকি এবং বহেরা আমাদের খুবই পরিচিত ভেষজ ঔষধি উপাদান। আমরা অনেকেই প্রতিনিয়ত এই তিনটি ফল বিভিন্ন রোগের ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করে থাকি। আমলকি হরতকি এবং বহেরা আমরা আলাদা আলাদা খেতে পারি।

আবার এই তিনটি ফলের সংমিশ্রনে ত্রিফলা গুড়া তৈরি করে তাও ব্যবহার করতে পারি। আমরা জানি এই তিনটি ফলকে একত্রে ত্রিফলা বলে। চলুন এখন তাহলে জেনে নেয়া যাক আমলকি হরতকি ও বহেরার সংমিশ্রণের বা ত্রিফলার উপকারীতা সম্পর্কে।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। নিয়মিত ত্রিফলা খেলে দেহের পুষ্টিকর উপাদানের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। ফলে আমাদের আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে থাকে। 
  • কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
  • ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ রোগের হাত থেকে দূরে রাখে।
  • শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
  • কোষ্ঠকাঠিন্যের প্রকোপ থেকে দূরে রাখে।
  • দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটে ইত্যাদি।
এছাড়াও ত্রিফলার আরো অনেক অনেক উপকারিতা রয়েছে। চলুন এবার জেনে নেয়া যাক আমলকি, হরতকি ও বহেরার আলাদা আলাদা উপকারিতা সম্পর্কে । 

আমলকির উপকারিতা অপকারিতা এবং ব্যবহার বিধি

আমলকি একটি ভেষজ গুণ সম্পন্ন ফল। দেখতে সবুজ রঙের এবং নরম কাঁচা খাওয়ার উপযোগী। আমলকির পাতা ওষুধ এবং আমলকি ফল ও ওষুধ দুই ভাবেই ব্যবহার করা হয়। আমলকিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে যা পেয়ারা ও লেবুর চাইতেও অনেক কয়েক গুণ বেশি । এমনকি কমলা আপেল এবং কলার চাইতেও অনেক অনেক বেশি পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে ।

আমরা জানি একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের দৈনিক ৩০ গ্রাম ভিটামিন সি খাওয়া জরুরী। যেখানে কিনা একজন মানুষ প্রতিদিন দুইটি করে আমলকি খেলেই এই চাহিদা পূরণ হয়ে যাবে। আমলকি একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফল। যা আমাদের পেটের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে থাকে ও শরীরে জমে থাকা টক্সিন পদার্থ বাইরে বের করে দিতে সাহায্য করে এবং আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

আমলকি আমাদের অনেক কাজে এবং বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। চলুন জেনে নিই আমলকির ব্যবহারসমূহ -
  • আমলকি একটি টক জাতীয় ফল যা কাঁচা খাবার জন্য উপযোগী
  • আমলকি কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের জন্য খুবই উপকারী
  • এটি হৃদযন্ত্র ও মস্তিষ্কের শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে
  • শুষ্ক কাশির জন্য আমলকির নির্যাস ব্যবহার করা হয়ে থাকে
  • বহুমূত্রের জন্য আমলকি খুব উপকারী
  • কোষ্ঠকাঠিন্য , মাথা ব্যাথা ,  বমি বমি ভাব ইত্যাদি প্রতিরোধে আমলকি ভালো কাজে দেয় 
  • এটি ব্যবহারে অকালে চুল ঝরে যাওয়াকে রোধ করে
  • আমলকি চুলের জন্য খুবই উপকার
  • আমলকি মুখের রুচি বাড়ায় এবং হজম শক্তিকে বৃদ্ধি করে ।
আমলকির যেমন অনেক উপকারিতা আছে তেমন কিছু ক্ষতিকারক দিক আছে যেদিকে আমাদের লক্ষ্য রাখা উচিত । চলুন এবার জানা যাক আমলকির কিছু ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে -
  • অতিরিক্ত আমলকি খেলে গ্যাসের সমস্যা বা পায়খানা কষা হতে পারে 
  • আমলকিতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে যা অনেক সময় কোষ্ঠকাঠিন্যর কারণ হতে পারে  
  • আমলকি শরীরের তাপমাত্রা কমিয়ে দেয় । তাই বেশি পরিমাণে আমলকি খেলে জ্বর সর্দি হওয়ার আশঙ্কা থাকে
  • আমলকি ও আদা একসাথে খেলে পেটে খারাপ প্রভাব পড়তে পারে
  • যাদের হার্ট এর সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য আমলকি ক্ষতিকর হবে
  • যারা বিভিন্ন সমস্যার জনিত কারণে আমলকি খেতে চান তারা অবশ্য ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খেলে উপকৃত হবেন। 

হরতকির উপকারিতা ও অপকারিতা এবং ব্যবহার বিধি

হরতকি ভেষজ গুণসম্পন্ন বেশ তিক্ত স্বাদের খুব শক্ত একটি ফল। কাঁচা অবস্থায় এই ফলটি সবুজ রংয়ের এবং শুকিয়ে গেলে কালচে খয়েরী বর্ণ ধারণ করে। এর ভিতরে শক্ত একটি বীজ থাকে। হরতকির ফল এবং পাতা উভয়ই ভেষজ ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। 

হরতকিতেও রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে এন্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং পেটের স্বাস্থ্য ‍‍‍‍ভালো রাখতে খুবই সহায়ক। চলুন এবার জেনে নেয়া যাক হরতকির উপকারী বিভিন্ন দিক ও ব্যবহার সম্পর্কে। হরিতকি অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়ে থাকে যেমন-
  • হরতকি ভেজানো পানি রক্তচাপ হ্রাস করে 
  • হরতকির গুঁড়া পানিতে ভিজিয়ে সেবন করলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়
  • চুলকানি বা এলার্জির সমস্যা থাকলে হরিতকি দিয়ে পানি গরম করে সেই পানি পান করলে এ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়
  • হরতকির গুড়া যদি নারিকেল তেলের সাথে ভালোভনে ফুটিয়ে মাথায় ব্যবহার করা হয় তাহলে চুল অনেক ভালো থাকে ।
  • দাঁতের ব্যথার জন্য হরিতকি গুড়া বেশ কাজে দেয় 
  • গলা ব্যথা হলে হরতকের গোড়া পানিতে ফুটে সেই পানি দিয়ে গড় গড়গড়া করলে ব্যথা উপশম হয়
  • পিত্তশূল দূর করার জন্য হরতকি চূর্ণ ঘী এর সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়।

হরতকির অনেক উপকার থাকার পাশাপাশি এর কিছু অপকারিতা রয়েছে। চলুন এবার অপকারিতা গুলো জেনে নিই-
  • গর্ভবতী বা কম বয়সী বাচ্চাদের জন্য হরতকি ক্ষতিকর ।
  • অতিরিক্ত পরিমাণে হরতকি খাওয়া থেকে বিরত থাক
  • আর তোকে প্রতিদিন না খেয়ে মাঝে মাঝে খেতে হবে
  • হরতকি তার পরে যদি কোন সমস্যা দেখা দেয় তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে
  • হরতকি খাওয়ার জন্য অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া উচিত 

বহেরার উপকারিতা অপকারিতা এবং ব্যবহার বিধি 

বহেরা ভেষজ গুণসম্পন্ন বেশ উপকারী একটি ফল। গাছ আকারে অনেক বড় হয়ে থাকে। বহেরা দু ধরনের হয়। একটি গোল আকৃতির ও আরেকটি ডিম্বাকৃতির। ফলের ভেতরে শ্বাশ থাকে এবং উপরে ছাল দিয়ে আবৃত থাকে। বহেরা বিভিন্ন ভেষজ ঔষধ এবং রোগ নিরাময়ের জন্য ব্যবহার করা হয়।বহেরা আমাদের শরীরে কোলেস্টরলের মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে।

তাছাড়াও বহেরা  পেশি ও অস্থিকে মজবুত করতেও বেশ উপকারী। চলুন জেনে নেয়া যাক বহেরার বিভিন্ন ব্যবহার ও উপকারী দিকসমূহ । বহেরা অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় যেমন-
  • যে কোন ধরনের আমাশয় এর জন্য বহেরার গুড়া বেশ উপকারী। প্রতিদিন এক গ্লাস পানিতে এক চামচ বহিরার গুড়া মিশিয়ে খেলে আমাশয় ভালো হয়।
  • চুল পড়া সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে বহেরা ব্যবহার করা যায়। কয়েকটা বহেরা বিচি বাদ দিয়ে শুধুমাত্র উপরের অংশ পানি দিয়ে পিষে এক কাপ পানিতে মিশিয়ে ছেঁকে নিয়ে সেই পানি দিয়ে চুল ধুলে চুল পড়া বন্ধ হয়।
  • ফুলা কমানোর জন্য বহেরার শ্বাস বাদ দিয়ে শুধুমাত্র উপরের অংশ পিষে গরম করে ফোলার ওপরে প্রলেপ দিলে ফোলা কমে যায়।
  • অকালে টাক পড়লে বহেরার বিচি বাদ দিয়ে মিহি করে পিষে টাকের উপর প্রলেপ দিলে টাক সেরে যেতে থাকে। 
  • বহেরার যেমন উপকারী দিক আছে সে সাথে ক্ষতির দিকগুলাও মাথায় রাখতে হবে। বহেরা খাওয়ারর জন্য অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া উচিত। 

ত্রিফলা কি প্রস্তুত করার উপায় 

আমলকি হরিতকি বহেরার উপকারিতা আমাদের জানা থাকলে সে অনুযায়ী এর ব্যবহার করে আমরা অনেক বেশি উপকৃত হতে পারব। ভেষজ ঔষধ হিসেবে আমলকি হরিতকি ও বহেরার উপকারিতার পরিমাণ কত সেটা আমরা কম বেশি সবাই জানি। সেজন্য আমাদের আমলকি, হরিতকি ও বহেরার সংমিশ্রণ বা ত্রিফলা প্রস্তুত করার সঠিক নিয়ম জানা দরকার।
ত্রিফলা কি প্রস্তুত করার উপায়
আমরা জানি আমলকি হরতকি এবং বহেরাকে একত্রে ত্রিফলা বলা হয়। আমলকি হরতকি এবং বহেরাকে রোদে শুকিয়ে  পিষে একটা নির্দষ্ট অনুপাতে ত্রিফলা চূর্ণ তৈরি করা হয়। অনুপাতটি হচ্ছে ১ঃ২ঃ৩ (হরতকিঃবহেরাঃআমলকি)। এই অনুপাতে আপনি খুব সহজেই বাসায় বসে ত্রিফলা চূর্ণ বানাতে পারেন। এবার চলুন জেনে নিই আমলকি হরতকী ও বহেরা কি কি কাজে ব্যবহার করা হয় এবং উপকারিতা সমূহ ।

পেটের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে ত্রিফলার ব্যবহার

আমরা প্রতিনিয়তই আমাদের পেটের বিভিন্ন সমস্যায় ভুগি। এই সমস্যার হাত থেকে রক্ষা পেতে আমরা আমলকি হরিতকী বহেরা বা ত্রিফলার গুনাগুন কাজে লাগাতে পারি। আমলকি ভিটামিন সি এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ একটি টক জাতীয় ফল। যা আমাদের পেটের বিভিন্ন সমস্যার হাত থেকে রক্ষা করে এবং আমাদের পরিপাকতন্ত্রকে সুস্থ রাখে। 

ত্রিফলা আমাদের পরিপাকতন্ত্রের বিভিন্ন ক্ষতিকর জীবাণুকে মেরে ফেলে এবং উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়িয়ে দেয় । পাচন তন্ত্রকে আরও বেশি শক্তিশালী করে তুলে। কাজেই কাজেই আমাদের পেট বিভিন্ন সমস্যার হাত থেকে রক্ষা পায় এবং সুস্থ থাকে।

চুলের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধিতে আমলকির ব্যবহার

চুল একটি মানুষের ব্যক্তিগত সৌন্দর্যের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর এই সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার জন্য আমরা অনেকেই চুলে আমলকি ব্যবহার করে থাকি। কারণ আমরা জানি চুলের বর্ধনশীলতা ও সৌন্দর্যতা বৃদ্ধি করার জন্য আমলকি কতটা  উপকারী। তাই আমাদের এর সঠিক ব্যবহার  বিধি সম্পর্কে জানা থাকলে আমরা এখান থেকে অনেক উপকৃত হতে পারব।

আমলকি আমাদের চুলকে দ্রুত বৃদ্ধি ও মজবুত করে তুলে এবং চুল অনেক কালো ও সুন্দর দেখায়। চুলকে অকালে ঝরে পড়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে। মাথা ঠান্ডা রাখে এবং মাথার আরো ছোটখাটো যেই সমস্যাগুলো থাকে সেগুলা দূর করতে সাহায্য করে, ছাড়াও মাথায় আমলকি ব্যবহারে মাথার ত্বকে কাঙ্খিত পুষ্টিগুণ প্রদান করে।

দাঁতের যত্নে ত্রিফলা ব্যবহারের উপকারিতা

দাঁত আমাদের শরীরের কতটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ তা তখনই বোঝা যায় যখন আমরা দাঁত নিয়ে বিভিন্ন সমস্যায় ভুগি। খুব সহজে দাঁতের এই সমস্যাগুলোর হাত থেকে রক্ষা পেতে আমরা ত্রিফলার সাহায্য নিতে পারি। আমরা আস্তে আস্তে বুঝতে পারছি যে, আমলকি হরিতকি ও বহেরা বা ত্রিফলা ব্যবহার করার উপকারিতা কত।

বিশেষজ্ঞদের মতে ত্রিফলা ভেজানো পানি দিয়ে মুখ ধুলে মুখের দুর্গন্ধ এবং তার ব্যাকটেরিয়া দূর হয় এবং দাঁতকে সুস্থ রাখে। দাঁতের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় । এছাড়াও দাঁতের হলদে ছোপ দাগ, মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া এবং বিভিন্ন সমস্যার হাত থেকে বাঁচা যায়। তাই এ ক্ষেত্রেও আমরা ত্রিফলা ব্যবহার করতে পারি।

ওজন কমাতে ত্রিফলার উপকারিতা ও ব্যবহার

বর্তমানে আমাদের দেশে অতিরিক্ত ওজন একটি বড় সমস্যা। আর এর প্রধান কারণ হচ্ছে আমাদের অস্বাস্থ্যকর খাবার, দৈনন্দিন খাবার তালিকা অনুযায়ী সঠিক খাবার না খাওয়া, খাবারে অতিরিক্ত তেল খাওয়া এবং পেটের বিভিন্ন সমস্যা। তাই এ সমস্যার হাত থেকে রক্ষা পেতে ব্যবহার করতে পারেন ত্রিফলা চূর্ণ।

আমরা আগেই বলেছি যে, ত্রিফলা আমাদের পেটের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং হজমে কোন প্রকার সমস্যা থাকলে তা দূর করে হজম শক্তি বৃদ্ধি করে তাই দ্রুত ওজন কমাতে সাহায্য করে।  নিয়মিত ত্রিফলা সেবন করলে আমাদের ওজন খুব তাড়াতাড়ি নিয়ন্ত্রিনে চলে আসে। 

চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ত্রিফলার ব্যবহার

চোখ হচ্ছে আমাদের সংবেদনশীল সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। আমরা প্রতিনিয়তই চোখের বিভিন্ন সমস্যায় পড়ে থাকে। ছোট ছোট সমস্যা গুলো থেকে আস্তে আস্তে বড় সমস্যা সৃষ্টি হয়। তাই চোখের এই সমস্যাগুলো দূর করার জন্য ত্রিফলা আমাদের অনেক বেশি কাজে দিবে।
চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ত্রিফলার ব্যবহার

চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ত্রিফলা অনেক বেশি সাহায্য করে থাকে। চোখের ছানি ও গ্লকোমা নিয়ন্ত্রণে আয়ুর্বেদিক মিশ্রণ তৈরি করার জন্য ত্রিফলা ব্যবহার করা হয় । ক্লিনিক্যাল গবেষণায় দেখা গেছে যে চোখের ছানিবিরোধী ও দৃষ্টিশক্তির উন্নতি সাধনের জন্য এই ত্রিফলা অনেক বেশি কার্যকরী। 

তাছাড়াও ত্বকের নানান সমস্যার সমাধান হতে পারে এই ত্রিফলা। নিয়মিত ত্রিফলা সেবনের ফলে আমাদের ত্বক ব্রণ এবং অন্যান্য সমস্যার হাত থেকে রক্ষা পায় । পাশাপাশি ত্বকের সৌন্দর্যতা ধরে রাখতে অনেক সাহায্য করে।

ক্যান্সার বিরোধী ভেষজ হিসেবে ত্রিফলার উপকারিতা

আমরা সবাই জানি ক্যান্সার একটি মরণব্যাধি। আর দিনে দিনে এই রোগের সংখ্যা আমাদের দেশে বেড়েই চলেছে। আমরা যদি একটু সতর্কতার সাথে চলাফেরা করি তাহলে আমরা এই মরণ ব্যাধির হাত থেকে খুব সহজেই মুক্তি পেতে পারি।
 
ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধি কেও ঠেকিয়ে রাখতে খুব সহায়তা করে এই ত্রিফলা । ত্রিফলা ভিটামিন সি সমৃদ্ধ একটি ভেষজ যাতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণ অনেক বেশি যার ফলে এটি আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে অনেক সহায়তা করে। ক্যান্সার বিরোধী কার্যকারিতার গবেষণায় দেখা গেছে যে ত্রিফলা ক্যান্সার বিরোধী ঔষধ হিসেবে বেশ কার্যকরী।

যা ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি ব্যহত করে । তাই যদি আমরা নিয়মিতভাবে কি ফলা সেবন করে থাকি তাহলে আমরা ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধির হাত থেকে নিজেদেরকে অনেকটা দূরে রাখতে পারবো। 

পাশাপাশি ত্রিফলা আমাদের কিডনি কে তার স্বাভাবিক কার্যক্রম ঠিক রাখতে সাহায্য করে এবং লিভারেরও স্বাস্থ্য যথোউপযোগী রাখে। এছাড়াও কিডনি ও লিভারে জমে থাকা টক্সিন বা ক্ষতিকর পদার্থ গুলো বাইরে বের করে দিতে সাহায্য করে ত্রিফলা। 

ডায়াবেটিসের হাত থেকে রক্ষা পেতে ত্রিফলার উপকারিতা

বর্তমানে ডায়াবেটিস আমাদের খুবই পরিচিত একটি ব্যাধি যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। ডায়াবেটিসের কারণে আমরা দিন দিন মৃত্যুর মুখে এগিয়ে চলেছি। এই ডায়াবেটিসের হাত থেকে রক্ষা পেতে আমরা ত্রিফলা ব্যবহার করে অনেক উপকৃত হতে পারি। 

গবেষণায় দেখা গেছে যে ত্রিফলা অন্যান্য ডায়াবেটিস বিরোধী সহজলভ্য ওষুধের মতই একটি ভেষজ। ত্রিফলা আমাদের শরীরে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রিত রাখে। ত্রিফলা আমাদের শরীরের গ্লুকোজ রক্তের সাথে মিশতে বাধা প্রদান করে যার ফলে আমাদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ঠিক রাখে। এরি ফলে আমরা রক্ষা পাই ডায়াবেটিসের হাত থেকে।

ত্রিফলা খাওয়ার নিয়ম জেনে নিন

ত্রিফলা আমরা সাধারণত ত্রিফলা চূর্ণ হিসেবে সেবন করে থাকি। কিন্তু বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে ত্রিফলার ক্যাপসুল রস বা ট্যাবলেট হিসেবে প্রদান করে থাকে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে একে তেলের আকারেও ব্যবহার করা।

আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকদের মতে ত্রিফলা খাওয়ার একটি নির্দিষ্ট অনুপাত রয়েছে। এটি আলাদা আলাদা শরীরের জন্য আলাদা অনুপাত হয়ে থাকে। তবে সাধারণ অনুপাতটি হচ্ছে ১ঃ২ঃ৩ (হরতকিঃবহেরাঃআমলকি)। বহেরা চূর্ণ টি খাওয়ার আগে আমলকি খাবার পরে এবং হরতকি চূর্ণটি খাবার দুই থেকে তিন ঘন্টা পরে খেতে হবে।

পরিশেষে

বর্তমানে ভেষজ ঔষধ হিসেবে আমলকি হরিতকি ও বহেরা বা ত্রিফলার উপকারিতা যে কত তা আমরা জানলাম। বুঝতেই পারলেন ত্রিফলার উপকারিতা সম্পর্কে যদি আপনার জানা থাকে তাহলে আপনি কি পরিমানে উপকৃত হতে পারেন। আমাদের দৈনন্দিনজীবনে ছোটখাটো বিভিন্ন সমস্যার সমাধান হিসেবে ত্রিফলা ব্যবহার করতে পারব।

আশা করি আমলকি হরিতকি বহেরার উপকারিতা ও ব্যবহারবিধি সম্পর্কে জানতে পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়েছেন। এই পোস্টে আমার নিজের জানা থেকে আপনাদেরকে সর্বোচ্চটা জানানোর চেষ্টা করেছি। পরিশেষে এই পোস্টটি পড়ার পরে যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই
আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url