গর্ভাবস্থায় করনীয় অকরনীয় সমূহ - গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় করনীয় অকরনীয় সমূহ সম্পর্কে কি আপনি জানতে চান ? তাহলে এই পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন। এই পোস্টে গর্ভকালীন সময়ে বিভিন্ন করণীয়-অকরণীয় এবং গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করব।

গর্ভাবস্থায় করনীয় অকরনীয় সমূহ

গর্ভকালীন সময়ে একজন মায়ের কি কি করণীয় অকরণীয় সে সম্পর্কে অবশ্যই কিছুটা হলেও জ্ঞান থাকা দরকার। কেন না এই সময়টা একজন গর্ভবতী মা ও তার গর্ভে থাকা সন্তানের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়।

পোস্ট সূচিপত্র - গর্ভাবস্থায় করনীয় অকরনীয় সমূহ

গর্ভাবস্থায় করনীয় অকরনীয় সমূহ

গর্ভাবস্থায় করনীয় অকরনীয় নিয়ে কথা বললেই যে বিষয়টি প্রথমেই মাথায় আসে সেটি হচ্ছে অধিক নিরাপত্তা ও সতর্কতা। এ সময়টা একটি মা ও তার গর্ভে থাকা সন্তানের জন্য কতটা যে গুরুত্বপূর্ণ সেটি আমরা কম বেশি সবাই ভালোভাবে জানি । তাই আমাদের সকলেরই জানা উচিত গর্ভকালীন সময়ে আমাদের কোন কোন কাজগুলো করা যাবে এবং কোন কাজগুলো থেকে বিরত থাকতে হবে।

গর্ভকালীন সময়ে বিশেষ করে সব ধরনের কাজ থেকেই বিরত থাকাই ভালো হবে। কিন্তু এ সময় এমন কিছু কিছু কাজ রয়েছে যে কাজগুলো করলে গর্ভবতী মা ও তার সন্তানের জন্য উপকারে আসবে। এ সময়টাতে একটি গর্ভবতী মা ও তার সন্তানের জন্য যে বিষয়টি বেশি নজরদারী করা হয় সেটি হচ্ছে গর্ভবতী মায়ের খাবার। এই দিকটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়।

তাহলে এইবার চলুন জানা যাক গর্ভকালীন সময়ে একজন গর্ভবতী মায়ের কোন কাজগুলো করা উচিত এবং কোন কাজগুলো থেকে বিরত থাকা উচিত সেই সম্পর্কে । এই সম্পর্কে আপনাদের সাথে এখন আলাদা আলাদাভাবে বিস্তারিত সবকিছু আলোচনা করব। প্রথমেই আপনাদের সাথে গর্ভকালীন সময়ে করণীয় সমূহ নিয়ে আলোচনা করব তাহলে শুরু করা যাক -

গর্ভাবস্থায় খাবার তালিকা সম্পর্কে জেনে নিন

গর্ভকালীন সময়ে একজন মায়ের সতর্কতা ও নিরাপত্তার পরে যে বিষয়টি মাথায় রাখতে হয় সেটি হচ্ছে গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা। একজন গর্ভবতী মা ও তার গর্ভের সন্তানের দৈহিক বৃদ্ধির জন্য জন্য নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এই সময়টাতে গর্ভবতী মায়ের সুস্থ থাকাটা অনেক বেশি জরুরী। তাই মা যাতে সুস্থ থাকে সেই জন্য নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার অতি জরুরী।

এতে করে যে শুধু সুস্থ থাকবে তা না। মা সুস্থ থাকার সাথে সাথে গর্ভে থাকা বাচ্চার শারীরিকভাবে বেড়ে ওঠা, সুন্দর গঠন ও সহ সবকিছু নির্ভর করে মায়ের খাবারের উপর। তাহলে বুঝতে পারছেন যে এই সময়ে গর্ভবতী একজন মায়ের পুষ্টিকর খাবার তালিকার দিকে কি পরিমাণে নজরদারি করা উচিত। জেনে নেয়া যাক কোন কোন খাবারগুলো গর্ভবতী মায়ের জন্য খাওয়া উচিত।

শর্করা জাতীয় খাবার : শর্করা জাতীয় কোন খাবারের কথা বললেই আমরা ভাত এবং রুটি কেউ বোঝাই। একজন গর্ভবতী মায়ের শরীরের জন্য শর্করা খুবই প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। গর্ভবতী মা ও তার গর্ভে থাকা সন্তান সুস্থ থাকার জন্য গর্ভবতী মায়ের প্রচুর পরিমাণে শরীরে শর্করা থাকা প্রয়োজন। তাই নিয়মিত সঠিক পরিমাণে ভাত এবং রুটি থেকে এই ঘাটতি পূরণ করা যায়।

গর্ভবতী মায়ের জন্য দুধ : দুধ ই একটি একমাত্র খাবার যে খাবারে খাদ্যের ছয়টি উপাদানিই একসাথে পাওয়া যায়। দুধে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, আমিষ ইত্যাদি সবকিছুই পাওয়া যায়। তাই এ সকল পুষ্টি উপাদান এর ঘাটতি পূরণ করতে চাইলে গর্ব অবস্থায় একজন মায়ের নিয়মিত একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে দুধ খাওয়া উচিত। এতে করে মা ও সন্তানের দুজনেরই স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।

রঙিন ফল ও সবজি : গর্ভস্থায় একজন মায়ের খাবার তালিকার মধ্যে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ যে খাবারগুলো তা হচ্ছে বিভিন্ন রঙিন ফল ও শাকসবজি। রঙিন ফল ও শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি সহ অন্যান্য অনেক পুষ্টি উপাদানে ভরপুর থাকে। যেহেতু একজন গর্ভবতী মায়ের শরীরে প্রতিনিয়ত অনেক পুষ্টিগুণের প্রয়োজন হয় সেহেতু একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য রঙিন ফল সবজি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

মাছ মাংস ও ডাল : আমরা জানি যে মাছ মাংস ও ডাল আমিষের সবচাইতে বড় উৎস। আমাদের শরীরে প্রতিনিয়ত আমিষের চাহিদা অনেক বেশি থাকে। তাহলে বুঝতে পারছেন গর্ব অবস্থায় একটি মায়ের শরীরে আমিষের চাহিদা কেমন। তাই গর্ভকালীন সময়ে গর্ভবতী মায়ের খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে মাছ মাংস ও ডাল জাতীয় খাবার রাখা উচিত। 

গর্ভাবস্থায়ী কোন খাবারগুলো খাওয়া যাবেনা : আমরা অনেক কয়েকটি খাবার দেখলাম যে খাবারগুলো কালীন সময়ে খাওয়া দরকার। আমরা অনেকে ভাবি যে, যে কোন ধরনের খাবার খেলেই আমাদের শরীরের জন্য উপকারী হবে। কিন্তু আসলে বিষয়টি তা না। অনেক খাবার রয়েছে যে খাবারগুলো গর্ভকালীন সময়ে এড়িয়ে চলতে হবে। এবার চলুন তাহলে দেখে নিই কোন খাবারগুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।

আমরা বললাম যে এই সময় বেশি বেশি আমিষ জাতীয় খাবার খাওয়া দরকার। কিন্তু সেদিকে একটা বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে মাছ-মাংস ও এ জাতীয় খাবার গুলো ভালোভাবে সিদ্ধ হয়। আধা সিদ্ধ মাছ মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এছাড়াও কিছু কিছু মাসে উচ্চমাত্রায় পারদ থাকে। গর্ভবস্থায় সেই মাছগুলো খাওয়া থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে।

এছাড়াও কিছু কিছু ফল রয়েছে যে ফলগুলো গর্ব অবস্থায় খাওয়া উচিত না। যেমন পেঁপে, আনারস, আঙ্গুর, হিমায়িত ফল ইত্যাদি। এ সময়ে এ ফলগুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

গর্ভবতী মায়ের পোশাক কেমন হবে

গর্ভাবস্থায় করনীয় অকরনীয় সমূহ এর মধ্যে একজন গর্ভবতী মায়ের পোশাক কেমন হবে সে বিষয়টিও পড়ে। এ সময় যাতে গর্ভবতী মায়ের কোনরকম সমস্যা না হয় সেদিকে ভালোভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে। তার মধ্যে এসময়ের উপযুক্ত পোশাক নির্বাচন করাটাও একটি নিরাপত্তার মধ্যে পড়ে। তাই সব দিকে খেয়াল রাখার পাশাপাশি পোশাকের দিকেও লক্ষ্য রাখাটা খুব জরুরী একটি কাজ।

আরো পড়ুন : গর্ভাবস্থায় কলার থোড় ও মোচা খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভকালীন সময়ে সন্তান প্রসবের সময় যত এগিয়ে আসে মায়ের শরীরের ওজনও দিন দিন তত বাড়তে থাকে। ফলে এই সময়গুলোতে গর্ভবতী মায়ের চলাফেরা করতে অনেক অসুবিধা দেখা দেয়। এজন্য মায়ের শরীরে ঢিলেঢালা ও আরামদায়ক পোশাক পরার কারণে অনেক অস্বস্তির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। বর্তমানে আমাদের দেশে প্রেগনেন্সির কারণে বিভিন্ন রকম পোশাক পাওয়া যায়।

যেমন ঢিলেঢালা কামিজ, পাজামা, ম্যাক্সি, ফতুয়া ইত্যাদি যে পোশাকগুলো পড়লে বিভিন্ন অসস্তি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তাই এ সময় গর্ভবতী মায়ের আরামদায়ক পরিবেশটি আরেকটু বৃদ্ধি করার জন্য উক্ত পোশাকগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে করে গর্ভবতী মায়ের চলাফেরা এবং অন্যান্য ছোটখাটো কাজগুলো করতে অনেক সুবিধা হয়।

গর্ভাবস্থায় কত ঘন্টা ঘুমানো উচিত

আমাদের পরিশ্রমের পর সারাদিনের ক্লান্তি দূর করার সবচাইতে বড় মাধ্যম হচ্ছে ঘুম। একজন পূর্ণ বয়স্ক স্বাভাবিক মানুষের প্রতিদিন গড়ে ৬ থেকে ৭ ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন। এক্ষেত্রে যাদের বয়স কম তাদের ঘুমের চাহিদা আরো বেশি। ঠিক সেই ভাবে গর্ভবতী মায়ের জন্য প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে ঘুমানো দরকার। ঘুম আমাদের শরীরে একটা রিফ্রেশমেন্ট আনে।

গর্ভাবস্থায় কত ঘন্টা ঘুমানো উচিত

গর্ভাবস্থায় অনিদ্রা একটি ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়। গর্ভবতী মায়ের যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম না হয় তাহলে গর্ভের সন্তানের ক্ষতি হতে পারে। একজন গর্ভবতী মায়ের দিনের বেলায় কমপক্ষে দুই ঘন্টা এবং রাতের বেলা কমপক্ষে ছয় থেকে সাত ঘন্টা ঘুমানো জরুরী। ঘুমের অভাবে দিনের বেলায় ক্লান্তি ও বেখেয়ালি বোধ হয়। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানো দরকার।

পরিপূর্ণ বা পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম হলে সারাদিন মন ভালো থাকে এবং মনে প্রফুল্লতা থাকে এতে করে শরীরও ভালো থাকে। তাই গর্ভবতী মায়ের পর্যাপ্ত ঘুমের জন্য সেরকম পরিবেশ তৈরি করতে হবে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে হবে যাতে করে গর্ভের সন্তানের কোন পরিমাণে ক্ষতি না হয়। এ সময়ে নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুমানো টা খুব জরুরী।

কিভাবে ঘুমাবেন : অন্যান্য সময়ে যতটা সস্তির সাথে ঘুমানো যায় গর্ভকালীন সময়ে ততটা স্বস্তির সাথে ঘুমানো সম্ভব না। এই সময়ে যেমন তেমন করে শুয়ে স্বস্তির ঘুম ঘুমানো যায় না। আর স্বস্তি মতো আরামদায়ক ঘুম না ঘুমালে ঘুমের মধ্যে আরাম পাওয়া যায় না। তাই কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখলে আরামদায়ক বা স্বস্তির ঘুম ঘুমানো সম্ভব।

আপনি যে শুধুমাত্র বিছানায় স্বস্তির ঘুম ঘুমাবেন এমন কোন কথা নাই। আপনি যেখানে স্বস্তি পাবেন সেখানেই কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নিতে পারেন। গর্ভাবস্থায় চিত হয়ে শোয়া ঠিক নয়। কারণ চিৎ হয়ে ঘুমালে মায়ের জরায়ু সংকুচিত হয়ে যায় এবং বাচ্চার শরীরের রক্ত চলাচল মাত্রা কমে যায়। তাই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারেরা গর্ভবতী মাকে চিত হয়ে না ঘুমানোর পরামর্শ দেন।

তাহলে কিভাবে ঘুমানো উচিত ? গর্ভবতী মায়ের বাম কাধ হয়ে ঘুমানো সবচাইতে বেশি নিরাপদ। এতে করে গর্ভের বাচ্চা শরীরে রক্ত সঞ্চালন এবং পুষ্টি সরবরাহ স্বাভাবিকভাবেই হতে থাকে। তাই বাম পাশে শোয়াটাই বেশি নিরাপদ। তবে ঘুমের মধ্যে পাশফিরা নিয়ে চিন্তা করার কোন কারণ নেই। ঘুমের মধ্যে আপনার শরীর আরামদায়ক পজিশনটি বেছে নিবে।

ঘুমের মধ্যে যদি অস্বস্তি হয় তাহলে আপনার ঘুম আপননি ভেঙে যাবে। সেজন্য ঘুমের মধ্যে আপনার পজিশন নিয়ে চিন্তার কোন কারণ নেই। আরেকটি বিষয়ের দিকে আমাদের লক্ষ্য রাখা দরকার ঘুমের সময় মাথার কাছে ফোন বা টেব রাখা উচিত নয়। এতে করে মা ও সন্তানের স্বাস্থ্য ঝুকির সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়। গর্ভাবস্থায় সুস্থ থাকতে ঘুমের প্রয়োজনীয়তা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ঘুম ভালো না হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত।

গর্ভবতী মায়ের রোগ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ

গর্ভাবস্থায় করনীয় অকরনীয় সমূহ এর মধ্যে গর্ভবতী মায়ের রোগ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার বিষয়টিও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এই সময় গর্ভবতী মায়েদেরকে বিভিন্ন রোগ থেকে দূরে রাখতে রোগ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। এজন্য বিভিন্ন পুষ্টিকর খাবার এবং সবসময়ের জন্য পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। যাতে করে কোন প্রকার রোগ জীবাণু আক্রমণ করতে না পারে।

এ সময় গর্ভবতী মাকে নিয়মিত প্রতিদিন সাবান বা অ্যান্টিসেপটিক দিয়ে গোসল করতে হবে। হাত পায়ের নখ কেটে ছোট রাখতে হবে। সারা শরীর সবসময়ের জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। কোন প্রকার ময়লা বা সেতসেঁতে জায়গার সংস্পর্শে যাওয়া যাবেনা। বিশেষ করে কাপড়-চোপড় অবশ্যই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে ।

পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার আর একটি বড় বিষয় হচ্ছে দাঁতের যত্ন নেওয়া। গর্ভকালীন সময়ে বিশেষ করে মায়েদের দাঁতগুলো অনেক নরম হয়ে যায়। তাই বিশেষভাবে মাড়ি ও দাঁতের যত্ন নিতে হবে। তার থেকে ৮ মাসের মধ্যে গর্ভবতী মাকে টিটেনাসের টিকা অবশ্যই দিতে হবে।। গর্ভবতী মায়ের আমরা অনেক কয়েকটি করণীয় দেখলাম। এবার চলুন অকরণীয় গুলো দেখা যাক।

গর্ভাবস্থায় কি কি কাজ করা নিষেধ

আমরা এতক্ষনে দেখলাম গর্ব অবস্থায় বিভিন্ন করণীয় গুলো। এখন আমরা দেখব একজন গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তার জন্য কোন কাজগুলো থেকে বিরত থাকতে হবে। গর্ভাবস্থায়ী অনেক মায়েরা আছে যারা সকল ধরনের কাজ করে থাকেন। কিন্তু এ সময় নিজের এবং গর্ভে সন্তানের নিরাপত্তার জন্য অনেক কাজ আছে যেগুলো পরিহার করা উচিত। কোন কাজগুলো গর্ভাবস্থায় ক্ষতিকর, কোন কাজ পরিহার করা দরকার ? এখন আমরা সেগুলো জেনে নিব।

ভারী কাজ : একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য প্রথম তিন মাস এবং শেষের তিন মাস সবচাইতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় গুলো অবশ্যই বিভিন্ন ধরনের ভারী কাজ যেমন টিউবয়েল থেকে পানি উঠানো, ধান ভািনা, অতিরিক্ত ভারী কাপড় কাচা, ভারী জিনিস উঠানো ইত্যাদি থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। এই কাজগুলো গর্ভে থাকা শিশুর অনেক বড় ক্ষতি করতে পারে ।

ঝাকি লাগা : অবস্থায় অবশ্যই ঝাকির হাত থেকে দূরে থাকতে হবে। কেননা এ সময় ঝাঁকি লাগলে গর্ভের সন্তানের অনেক বড় ক্ষতি হতে পারে। তাই দূরের কোন রাস্তায় হেঁটে যাওয়া বা জোরে হাটা থেকে বিরত থাকতে হবে। কোন কাজ করার সময় যাতে পেটে ঝাকি বা চাপ না লাগে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাই সবসময় এ বিষয়ে সাবধান থাকা জরুরী।

গাড়িতে পরিবহন : গর্ভকালীন সময়ে দূরদূরান্তে কোথাও যাওয়ার সময় অবশ্যই অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। কারণ গাড়িতে উঠলে পেটে ঝাঁকি বা চাপ লাগার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। তাই গাড়িতে পরিবহন করার সময় অবশ্যই ঝাকি এবং চাপ যাতে না লাগে সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। ঝাকি লাগা গর্ভাবস্থায়ী মারাত্মক একটি ক্ষতির লক্ষণ।

ক্যাফেইন থেকে দূরে থাকা : গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ক্যাফেইন খাওয়া কোনভাবেই ঠিক নয়। সে কারণেই ডাক্তারি পরামর্শে গর্ভকালীন সময় কফি খেতে বারণ করা হয়। ক্যাফিন খেলে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায় সাথে সাথে হার্টের ও বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। ক্যাফিন শুধু সাবা কফিতেই থাকে না, বরং চকোলেট ওরফোটাতেও ক্যাফিন থাকে। তাই বিষয়ে সতর্ক থাকা দরকার।

ওষুধ খাওয়া : অনেক সময় দেখা যায় যে গর্ভাবস্থায়ও হালকা সর্দি জ্বর বা যেকোনো সমস্যার কারণে আমরা যেকোনো ধরনের ওষুধ বাজার থেকে কিনে এনে খায়। মোটেও এ কাজটি ঠিক নয়। গর্ভকালীন সময়ে যেকোনো ধরনের সমস্যায় হোক না কেন ওষুধ খাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ীই খেতে হবে। নিজ সিদ্ধান্তে কোন ওষুধ খাওয়া যাবেনা।

আরো পড়ুন : গর্ভাবস্থায় মাদার হরলিক্স খাওয়ার উপকারিতা

এছাড়াও অনেক কাজ আছে যেগুলা থেকে গর্ভবতী মায়েদের বিরত থাকা উচিত। যেমন, একাধারে এক জায়গায় অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে বা বসে থাকা যাবে না। এতে পায়ের পাতা । খুলে যেতে পারে । প্রতিদিন গর্ভবতী মায়েদের পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম করতে হবে। আলোচিত উপরোক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে অবশ্যই সচেতন থাকা দরকার।

গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা

কলাতে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন থাকে। কলার বিভিন্ন পুষ্টি গুণ গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মা ও গর্ভের শিশুর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কলাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার থাকে। গর্ভাবস্থায় ফাইবার খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। কারণ ফাইবার হজম শক্তি বৃদ্ধিতে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে থাকে। চলুন দেখে নেওয়া যাক গর্ভাবস্থায়ী কলা খাওয়ার আরো বিভিন্ন উপকারিতা।

গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা

  • গর্ভবতী মহিলাদের একটি স্বাভাবিক সমস্যা হচ্ছে বমি। কলা পেট ভালো রাখে এবং বমি বমি ভাব কমায়।
  • কলাতে উচ্চ মাত্রায় ফাইবার থাকে। ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।
  • কলা প্রাকৃতিক অ্যান্টাসিড হিসেবে কাজ করে। তাই গর্ভাবস্থায় অন্য যেকোনো সময় বুক জ্বালাপোড়া করা বা পেটের এসিডিটি হলে তা নির্মূলে সাহায্য করে।
  • রাতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি থাকে। যা অতিরিক্ত ওজন আটকাতে সাহায্য করে।
  • এছাড়াও কলাতে ভিটামিন সি, ভিটামিন বি, মিনারেল ইত্যাদি অনেক রকমের পুষ্টি উপাদান থাকে যা গর্ভকালীন সময়ে অনেক বেশি উপকারী।

গর্ভাবস্থায় শিশুর বৃদ্ধি চার্ট-ওজন এবং দৈর্ঘ্য

গর্ভ অবস্থার সপ্তাহ গড় ওজন(গ্রাম/ কি. গ্রাম) গড়দৈর্ঘ্য (সে.মি.)
৮ সপ্তাহ ১ গ্রাম ১.৬ সে.মি.
১২ সপ্তাহ ১৪ গ্রাম ৫.৪ সে.মি.
১৬ সপ্তাহ ১০০ গ্রাম ১১.৬ সে.মি.
২০ সপ্তাহ ৩০০ গ্রাম ২৫.৬ সে.মি.
২৪ সপ্তাহ ৬০০ গ্রাম ৩০ সে.মি.
২৮ সপ্তাহ ১ কি. গ্রাম ৩৭ সে.মি.
৩২ সপ্তাহ ১.৭ কি. গ্রাম ৪২.৪ সে.মি.
৩৬ সপ্তাহ ২.৬ কি. গ্রাম ৪৭.৪ সে.মি.
৪০ সপ্তাহ ৩.৫ কি. গ্রাম ৫১.২ সে.মি.

আমাদের শেষ কথা

গর্ভাবস্থায় করনীয় অকরনীয় সমূহ নিয়ে আপনাদের সাথে এতক্ষণ আলোচনা করলাম। আশা করি বিস্তারিত জানার জন্য পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়েছেন। গর্ভকালীন সময় হচ্ছে একটি মেয়ের জন্য জীবনের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই সময়ে শারীরিকভাবে সবচাইতে বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে হয় সর্বদা খুব সাবধানে থাকতে হয়।

গর্ভ অবস্থায় নিজেকে সুস্থ ও সবল রাখতে প্রথমে যেই বিষয়ের উপর লক্ষ্য রাখতে হবে সেটি হচ্ছে সঠিক খাবার তালিকা পরিচালনা করা। তার পরেও নিজেকে সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। এছাড়াও উপরে বর্ণিত নিয়মগুলো মেনে চললে আশা করি সুস্থ থাকবেন। আপনাদের সুস্থতা ও মঙ্গল কামনা করে আজকে এ পর্যন্তই। আল্লাহ হাফেজ 😍

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url