গিমা শাক খাওয়ার উপকারিতা - গিমা শাকের অপকারিতা

গিমা শাক খাওয়ার উপকারিতা আমরা বেশিরভাগ মানুষই জানিনা। গিমা শাকের নাম শুনলেও আবার অনেকের কাছেই অপরিচিত মনে হয়। কিন্তু গিমা শাকে রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার মত উপাদান।

গিমা শাক খাওয়ার উপকারিতা

তিতা স্বাদ যুক্ত এই শাকটিতে বিভিন্ন পুষ্টি  উপাদানে ভরপুর থাকা সত্ত্বেও আমরা তা আবর্জনা বা আগাছা হিসেবে ফেলে দিয়ে থাকি। চলুন জেনে নেয়া যাক এই  শাকের উপকারিতা এবং গিমা শাকের অপকারিতা সম্পর্কে।

পোস্ট সূচিপত্র - গিমা শাক খাওয়ার উপকারিতা

ভূমিকা

গিমা শাক , নামটা শুনলেও আমাদের অনেকের কাছেই অপরিচিত লাগে। এটি খুব পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি শাক। বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন নামে পরিচিত এই শাকটি। কোথাও গিমা, টিমা, আবার কোথাও বা জিমা নামেও পরিচিত এই শাক। পুষ্টিগুণের দিকে বিবেচনা করলে এটিও অন্যান্য শাকের মতোই একটি শাক। বিশেষজ্ঞদের মতে এটি বিভিন্ন রোগের ভেষজ হিসেবে কাজ করে।

পেটের বিভিন্ন রকম সমস্যায় গিমা শাক বেশ কাজে দিয়ে থাকে। কোষ্ঠকাঠিন্য। কৃমি জনিত সমস্যা, হজমে গন্ডগোল, ভিটামিন সি এর অভাব, চুলকানি, অ্যাজমা এবং পাকস্থলী জনিত বিভিন্ন সমস্যার সমাধান সহ আরো অনেক উপকারে আসে গিমা শাক। বাড়ির আশেপাশে বা বিভিন্ন ক্ষেতে গিমা শাকের দেখা মিলে।

দেখে নিন গিমা শাকের পুষ্টিগণ

আমাদের দেশের কৃষি তথ্য সার্ভিস এবং বিভিন্ন স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্য থেকে পাওয়া যায় যে গিমা শাকে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার বা খাদ্য আশ থাকে। এছাড়াও এই শাকে প্রচুর পরিমাণে  ক্যালসিয়াম, প্রোটিন, আইরন, আয়োডিন, পটাশিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি১, ভিটামিন বি২ ও ভিটামিন সি সহ বিভিন্ন ভিটামিন থাকে।

  • প্রতি ১০০ গ্রাম গিমা সাথে থাকে
  • ফাইবার ৮ গ্রাম
  • প্রোটিন২.২৯ গ্রাম
  • ক্যালোরি ২২ কিলোক্যালরি
  • ফ্যাট ০.৬২ গ্রাম
  • শর্করা ১.৬ গ্রাম
  • ভিটামিন সি ৭.০৩ মিলিগ্রাম

গিমা শাক খাওয়ার উপকারিতা

গিমা শাক খাওয়ার উপকারিতা জানার আগে আমরা গিমা শাকের বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান ও মাত্রা এবং গিমা শাকের সাধারণ পরিচিতি সম্পর্কে জানলাম। বর্তমান যুগে আমরা অনেকেই বা গিমা শাকের সাথে কোনোভাবেই পরিচিত নই। আমরা আমাদের খাবার তালিকায় বর্তমানে প্রাকৃতিক যে শাকসবজি গুলো সেগুলো খাওয়ার কথা হয়তো বা ভুলেই গেছি।

আমাদের দেশের কৃষি তথ্য সেবা, উইকিপিডিয়া এবং বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক তথ্য থেকে গিমা শাকের নিম্নলিখিত উপকারিতা গুলো সম্পর্কে জানা যায়। চলুন তাহলে জেনে নি ন তাদের মতামত অনুযায়ী গিমা শাকের কি কি উপকারিতা রয়েছে -

গিমা শাক রুচি বৃদ্ধি করে : এটি খুব তিতা স্বাদ যুক্ত একটি শাক। এই তিতা স্বাদ আমাদের জিব্বার উপরে পড়া আস্তরণ দূর করে। যার ফলে আমাদের মুখে খাবারের রুচি বৃদ্ধি পায়।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে : গিমাতে প্রচুর পরিমাণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এমন পুষ্টি উপাদান প্রচুর পরিমাণে থাকে। তাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে নিয়মিত গিমা শাক খেতে পারেন।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে : আমরা দেখেছি যে গিমাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাইবার বা আঁশ থাকে যা কোষ্ঠকাঠিন্য জড়িত সমস্যা থেকে আমাদেরকে দূরে রাখে এবং পাকস্থলীর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

হজম শক্তি বৃদ্ধি করে : গিমা শাকে খাদ্য আঁশ থাকায় এটি আমাদের খাদ্য হজম করতে বিভিন্নভাবে সহায়তা করে। ফলে হজম জনিত যে সমস্যাগুলো থাকে তার হাত থেকে আমরা রক্ষা পায়। গিমা পেটের গ্যাস্ট্রিক বা জ্বালাপোড়া জনিত সমস্যা থেকেও দূরে রাখে।

চর্মরোগ দূর করে : গিমা শাক খোস পচড়া, দাউদ. চুলকানি ইত্যাদি চর্ম জনিত সমস্যাগুলো দূর করে থাকে। এর জন্য কিছুদিন নিয়মিত গিমা শাক খাওয়া দরকার।

আরো পড়ুন : বিলাতি আমড়ার উপকারিতা

ডায়াবেটিস দূর করে : বর্তমানে আমাদের দেশে সবচাইতে বড় একটি সমস্যা হচ্ছে এটা ডায়াবেটিস। এমন কোন পরিবার খুঁজে পাওয়া যাবে না যেই পরিবারে একজন ডায়াবেটিসের রোগী নেই। গিমা তিতা স্বাদ যুক্ত হওয়ায় এটি ডায়াবেটিস নিরাময়ে অনেক বেশি ভূমিকা পালন করে। তাই নিয়ম গিমা শাক খাওয়ার ফলে ডায়াবেটিস থেকে কিছুটা হলেও দূরে থাকা যায়।

গিমা শাক রক্ত পরিশোধন করে : আমরা যারা গিমা শাক খেয়ে থাকি তারা অনেকেই এই কথাটা জানি যে গিমা শাক রক্ত পরিশোধন করে থাকোন। রক্তে মিশে থাকা ক্ষতিকর উপাদান গুলো আমাদের শরীর থেকে মুত্রের মাধ্যমে বাহিরে বের করে দেয়। এছাড়াও -

  • গিমা শাক বসন্ত রোগ দূর করে
  • ব্যথা নিরাময় করে
  • দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে
  • ত্বক ভালো রাখে
  • ডায়াবেটিসের জন্য সবচাইতে বেশি উপকারী
  • গ্যাস্ট্রিক বা জ্বালাপোড়া  জনিত সমস্যা দূর করে
  • দাঁত ভালো রাখে
  • জন্ডিস প্রতিরোধেও বেশ কার্যকারী
  • ভিটামিন সি এর একটি ভালো উৎস যা হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

খুব সহজলভ্য এই শাকগুলো আমরা আবর্জনা বা আগাছা হিসেবে ফেলে দিয়ে থাকি। কিন্তু আমরা এখন দেখলাম যে এই সহজলভ্য জিনিস থেকেও আমরা কতটা উপকার পেতে পারি। তাই উপরোক্ত সুযোগ-সুবিধা গুলো যদি আমরা ভোগ করতে চাই তাহলে আমাদের নিয়মিত অল্প পরিমাণ হলেও গিমা শাক খাওয়া উচিত। এটি আমাদের শরীরের জন্য বেশ উপকারী।

গিমা শাক কোথায় পাওয়া যাবে

গিমা শাক অনেকের কাছেই অনেক প্রিয় একটি শাক। অনেক এটি খেতে খুব পছন্দ করেন। কিন্তু এটি খুব সহজে যেখানে সেখানে পাওয়া যায় না। আবার দেখা যায় কিছু কিছু বাজার আছে যে বাজারগুলোতে বারো মাস গিমা শাক পাওয়া যায়। তাই আপনার যদি প্রয়োজন হয় তাহলে আপনি বাজারে দেখে শুনেই গিমা শাক কিনতে পারেন।

আরো পড়ুন : আমলকি হরিতকি বহেরার উপকারিতা

আবার দেখা যায় যে এই গিমা শাক যেখানে সেখানে অযত্নে বেড়ে ওঠে। অনেকে এটিকে জংলি শাকও বলে থাকে। বিশেষ করে বিভিন্ন ক্ষেতের আইলে বা ক্ষেতের ভিতরে ঘাসের মতো লতালো হয়ে মাটির সাথে লেগে থাকে। তাই আপনার প্রয়োজনে আপনি এটি বাজার থেকে বা খেত থেকেও সংগ্রহ করে শাক হিসেবে খেতে পারেন।

কিভাবে গিমা শাক খাওয়া যায়

অনেকে যারা আগে কখনো  গিমা শাক খাননি তারা ভাবতে পারেন যে এই শাক কি ভাবে খাব। তাদের জন্য বলব যে, তিতা  স্বাদযুক্ত এই শাক রান্না করে খেতে হয়। গিমা শাকের শুধুমাত্র পাতা খাওয়ার উপযোগী। তাছাড়া এর ডাটার রস ডায়াবেটিস রোগের জন্য উপকারী। তাছাড়া এই শাক যেসব রেসিপির মাধ্যমে খাওয়া যায় তা হল - 

  • আলু বেগুন দিয়ে তরকারি বানিয়ে
  • ছোট আলু দিয়ে ভাজি করে
  • গিমা পাতার বড়া বানিয়ে
  • আমলকির জুসের সাথে গিমা শাকের পাতা বেটে। এছাড়া
  • পেঁয়াজ, মরিচ, কালোজিরা একসাথে কড়াইতে তেল দিয়ে নেড়ে ভর্তা করেও খাওয়া যেতে পারে। এই ভর্তা জন্ডিস এর জন্য বেশি উপকারী।

গিমা শাক খাওয়ার অপকারিতা বা সর্তকতা

গিমা শাক খাওয়ার তেমন কোনো অপকারিতা বা সতর্কতা নেই। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে অতিরিক্ত গিমা শাক খাওয়ার ফলে বমি বা ডায়রিয়া হতে পারে। তাই আমাদের এ বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত। আমরা জানি যে অতিরিক্ত মাত্রায় কোন কিছুই গ্রহণ করা ঠিক নয়। তাই এর উপকারিতা পেতে চাইলে নিয়মিত নির্দিষ্ট পরিমাণে খাওয়া উচিত।

তবে আরেকটি বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখতে হবে যে গর্ভ অবস্থায় গিমা শাক খাওয়া থেকে বিরত থাকায় উচিত হবে। তাই আমাদের সকল বিষয়ের উপর সতর্কতা থাকা উচিত। 

আমাদের শেষ কথা

গিমা শাক খাওয়ার উপকারিতা এবং গিমা শাকের অপকারিতা নিয়ে এতক্ষন আপনাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করলাম। তারা এতক্ষণে পরিষ্কারভাবে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন যে এই সহজলভ্য একটি শাক আমাদের কতটা উপকারে দেয়। এতে যে পুষ্টি উপাদান গুলো রয়েছে তা আমাদের শরীরে বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে কাজ করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

তাই উপরোক্ত সুযোগ সুবিধা গুলো ভোগ করতে চাইলে আপনি নিয়মিত নির্দিষ্ট পরিমাণে গিমা শাক গ্রহণ করতে পারেন। এতে করে শাকে থাকা পুষ্টি উপাদান গুলো আপনার শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকার বয়ে আনতে পারে। কিন্তু অতিরিক্ত মাত্রায় ঘ্যামাশাক গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

আশা করি পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়েছেন এবং বিস্তারিত ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন। আপনার সুস্বাস্থ্য ও মঙ্গল কামনা করে আজকে এখানেই শেষ করছি। আল্লাহ হাফেজ😍


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url