গর্ভবতী মায়ের জন্য জাফরানের উপকারিতা - জাফরান ব্যবহারের নিয়ম
গর্ভবতী মায়ের জন্য জাফরানের উপকারিতা দেখলে সত্যিই অবাক হয়ে যাবেন। গর্ভাবস্থায় এর অনেক গুণাগুণ রয়েছে। এই পোস্ট থেকে গর্ভবতী মায়ের জন্য জাফরানের বিভিন্ন উপকারিতা এবং জাফরান ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
অনেকেই জানতে চান গর্ভাবস্থায় জাফরান খেলে বাচ্চা ও গর্ভবতী মায়ের কি কি
উপকার হয় এবং জাফরান কিভাবে খেতে হয়। আজকে এ বিষয় নিয়েই আপনাদের সাথে
বিস্তারিত আলোচনা করব। চলুন তাহলে শুরু করা যাক।
পোস্ট সূচিপত্র - গর্ভবতী মায়ের জন্য জাফরানের উপকারিতা
- গর্ভবতী মায়ের জন্য জাফরানের বিভিন্ন উপকারিতা
- নিয়মিত জাফরান খেলে কি হয়
- গর্ভাবস্থায় জাফরান গ্রহণ করা কি নিরাপদ
- গর্ভাবস্থায় জাফরান ব্যবহারের নিয়ম
- জাফরান কখন গ্রহণ করবেন
- গর্ভাবস্থায় কতটা জাফরান খাওয়া নিরাপদ
- গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা ফর্সা হয়
- জাফরানের দাম বাংলাদেশ
- জাফরানের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলো কি কি
- পরিশেষে
গর্ভবতী মায়ের জন্য জাফরানের উপকারিতা
গর্ভবতী মায়ের জন্য জাফরানের উপকারিতা রয়েছে অনেক। আমাদের মধ্যে অনেকে আছে যারা এখনো জানিনা যে জাফরান আসলে কি জিনিস বা কোথা থেকেই বা এর উৎপত্তি। জাফরান খেলে কি হয় এরকম নানান প্রশ্ন নিয়ে থাকেন। তাহলে সবকিছু জানার আগে আমাদের জানা প্রয়োজন যে জাফরান কি এবং এটি কোথা থেকে উৎপাদন হয়। চলুন তাহলে জেনে নিই জাফরান কি।
জাফরান কি : জাফরান হল জাফরান গাছের ফুল থেকে সংগ্রহ করা এক ধরনের
মসলা। এটি সাধারণভাবে জাফরান ক্রোকাস নামে অনেকের কাছে পরিচিত। জাফরান ফুলের
প্রাণবন্ত গাড়ো লাল রঙের ও শৈলির গর্ভমুন্ড জাফরান আঁশ বলা হয়। এটি সংগ্রহ
করে শুকানোর পরে জাফরান প্রস্তুত করা হয় যা সাধারনত খাবারের স্বাদ এবং রঙের জন্য
ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
তাহলে আমরা বুঝতে পারলাম যে, জাফরান হচ্ছে একটি প্রাকৃতিক ঔষধি যা শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অনেক বেশি উপকারী। গর্ভাবস্থায় জাফরান ব্যবহারে গর্ভবতী মা অনেক রকম সমস্যার হাত থেকে মুক্তি পায়। এছাড়াও গর্ভাবস্থায় জাফরান ব্যবহারের ফলে গর্ভবতী মা এবং গর্ভের সন্তানের আরো অনেক কয়েকটি উপকারিতা দেখা দেয়।
মেজাজ ঠান্ডা রাখে : গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়েদের শরীরে অনেক
কয়েকটি হরমোন জনিত পরিবর্তন দেখা যায় যা অনুভূতির ওপর অনেক বেশি প্রভাব ফেলে।
ফলে মেজাজ খিটখিটে, মুড সুইং, কোন কিছু ভালো না লাগা, সবকিছুর প্রতি
একটি বিরক্তিভাব ইত্যাদি অনেক সমস্যা দেখা দেয়। এই সমস্যাগুলোর হাত থেকে রক্ষা পেতে আপনি জাফরানের উপকারিতা গ্রহণ করতে পারেন।
জাফরান আপনার শরীরে অ্যান্টি ডিপ্রেশন হিসেবে কাজ করবে। এটি আমাদের মস্তিষ্কে রক্তের প্রবাহ মাত্রা বৃদ্ধি করে। যার ফলে মুড সুইং, ডিপ্রেশন, খিটখিটে ভাব, বিরক্তিভাব ইত্যাদি দূর হয় এবং মেজাজ উন্নত হয় এমন হরমোন তৈরি করে। তাই গর্ভাবস্থায় এ সমস্যাগুলোর হাত থেকে বাঁচতে আপনি জাফরানের উপকারিতা গ্রহণ করতে পারেন।
সকালের অসুস্থতাকে দূর করে : মর্নিং সিকনেস আমাদের মাঝে দুর্বল এবং
অলস ভাব তৈরি করে। গর্ভাবস্থায় প্রতিনিয়ত এ সমস্যাটি দেখা দেয়। তাই এখান থেকে
মুক্তি পেতে জাফরান চায়ের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। কারণ দেখা গেছে যে, জাফরান বমি বমি ভাব এবং মাথা ঘোরা সমস্যা দূর করে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে : গর্ভাবস্থায় দেখা যায় যে প্রায় ২৫%
হারে রক্তচাপ বাড়িয়ে দিতে পারে। এতে করে অনেক সমস্যাই করতে হয়। জাফরানে
পটাশিয়াম এবং ক্রোসটিন থাকে যা রক্ত চাপ কমাতে সাহায্য করে। তাই এ সময় রক্ত চাপ
জনিত সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে গর্ভাবস্থায় নিয়মিত জাফরান ব্যবহার করা যেতে
পারে।
হজমে সাহায্য করে : গর্ভকালীন সময় একটি গর্ভবতী মায়ের সবচাইতে বেশি গুরুত্ব দিতে হয় যে দিকটির ওপর সেটি হচ্ছে খাবার। এ সময় গর্ভবতী মা সব খাবার খেতে পারে না। এবং খাওয়ার প্রতি অরুচি সহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। এজন্য গ্রহণকৃত খাবার যাতে ভালোভাবে হজম হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা উচিত।
জাফরান পাঁচকতন্ত্রে রক্ত প্রবাহ মাত্রা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। ফলে পাচক তন্ত্রের হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং গ্রহনকৃত খাদ্য খুব সহজেই হজম হয়ে যায়। গর্ভকালীন সময়ে এই বৈশিষ্ট্যটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই এদিকে একটু আলাদাভাবে লক্ষ্য রাখা উচিত।
হার্টের সমস্যা দূর করে : গর্ভ অবস্থায় আমরা খাবারের দিকে লক্ষ্য
রাখতে গিয়ে অনেক সময় বেশি পরিমাণে চর্বিযুক্ত খাবারগুলো খেয়ে ফেলি। চর্বিযুক্ত
খাবার খাওয়ার ফলে আমাদের রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। আর এই
কোলেস্টেরলের ফলে আমাদের রক্ত চলাচলের জন্য বিভিন্ন বাধার সৃষ্টি হয়। আর এখান
থেকেই শুরু হয় হার্টের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা।
আরো পড়ুন : গর্ভাবস্থায় ইলিশ মাছ খাওয়ার উপকারিতা
হার্ট সুস্থ রাখতে জাফরানি রয়েছে অবাক করার মতো কিছু উপাদান যা হার্টকে সুস্থ
রাখতে অনেক বেশি ভূমিকা পালন করে। জাফরানে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, পটাশিয়াম এবং
ক্রস্টিন থাকে যা রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করে। তাই গর্ভাবস্থায়
হার্ট জনিত এই সমস্যাগুলো থেকে দূরে থাকতে নিয়মিত জাফরান
ব্যবহার করা যেতে পারে।
ভালো ঘুমের জন্য সহায়তা করে : গর্ভকালীন সময়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ
বিষয় হচ্ছে ঘুম। এসময় একজন গর্ভবতী মা হরমোনের পরিবর্তন জনিত বিভিন্ন কারণে
সঠিকভাবে ঘুমাতে পারেন না। নির্দিষ্ট পরিমাণে ঘুম না হলে সারাটা দিন
অসস্তি, কোন কিছু ভালো না লাগা, মেজাজ খিট মিটে ইত্যাদি বিভিন্ন
সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এ সময়ে এ সমস্যাগুলো দূর করাও একটি গুরুত্বপূর্ণ
বিষয়।
জাফরানে কিছু উপকারী উপাদান রয়েছে যা ভালো ঘুম হতে সহায়তা করে। জাফরান চা বা দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে ঘুমের উন্নতি ঘটাতে সাহায্য করে এবং ঘুমের প্রতি উৎসাহিত করে। তাছাড়া জাফরান নিয়মিত দুধের সাথে খাওয়ার ফলে মনেও একটি স্বাচ্ছন্দ বোধ সৃষ্টি করে। এছাড়াও জাফরানে আরো অনেক উপকারিতা রয়েছে।
নিয়মিত জাফরান খেলে কি হয়
আমরা ইতোমধ্যেই দেখলাম যে জাফরান খাওয়ার বিভিন্ন উপকারিতা। আমরা জানি যে একটি কাজ নিয়মিত ভাবে করলে তা আমাদের ভালো মতোই কাজে দেয়। আমরা এতক্ষণে জাফরান খাওয়ার যে উপকারিতা দেখলাম এছাড়াও আরো অনেক উপকারীতা রয়েছে। এখন তাহলে চলুন এক নজরে দেখে নেয়া যাক নিয়মিত জাফরান খেলে আমরা আরো কি কি উপকারিতা পেতে পারি।
- গর্ভাবস্থায় নানা রকম অস্বস্তি, ঘুম জনিত সমস্যা সহ বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। নিয়মিত জাফরান খেলে এই সমস্যা গুলো থেকে দূরে থাকা যায়। মন ভালো থাকে , মনে প্রফুল্লতা আসে।
- বিভিন্ন হরমোনের পরিবর্তন দেখা দেয়। যার ফলে শরীরের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন রকম অসহ্যকর ব্যথার অনুভূত হয়। নিয়মিত জাফরান ব্যবহার করার ফলে এ সমস্যা গুলো সমাধান মিলে। কেননা জাফরান একটি ব্যথা নাশক ঔষধ হিসেবে কাজ করে।
- একজন গর্ভবতী মা বিভিন্ন সংক্রমনে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। কেননা এ সময়ে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে থাকে। নিয়মিত জাফরান সেবনের ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
- এছাড়া বুকে কফ জমা, শ্বাসকষ্ট জনিত বিভিন্ন সমস্যাও দূর করে থাকে জাফরান সুতো। তাই অল্প পরিমাণ হলেও নিয়মিত জাফরান সেবনে গর্ভকালীন সময়ে অনেকটা উপকৃত হওয়া যায় বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
গর্ভাবস্থায় জাফরান গ্রহণ করা কি নিরাপদ
গর্ভবতী মায়ের জন্য জাফরানের উপকারিতা জানার জন্য আপনারা অনেকে ইচ্ছে পোষণ করেন। সেই সাথে সাথে আপনাদের এ বিষয়টি মাথায় আসে যে গর্ভাবস্থায় জাফরান গ্রহণ করাটা কি আদৌ নিরাপদ হবে ? তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা কি বলেন। যদি এ বিষয়ে প্রশ্ন করেন তাহলে বলব -
হ্যাঁ, গর্ভাবস্থায় জাফরান গ্রহণ করা নিরাপদ কারণ এতে আছে নানান ঔষধি
পুষ্টিগুণ। এটি মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব, ব্যথা-বেদনা, এবং গর্ভকালীন বিভিন্ন
সমস্যার হাত থেকে মুক্তি দিতে পারে। এজন্য বলা যায় যে গর্ভ অবস্থায় জাফরান
গ্রহণ করাটা নিরাপদ হবে। তবে, সর্বোচ্চ উপকার পেতে চাইলে কিছু কিছু বিষয়ের
উপর লক্ষ্য রাখতে হবে। নিচে আমরা এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
গর্ভাবস্থায় জাফরান ব্যবহারের নিয়ম
এতক্ষণে আপনারা জাফরান গ্রহণের বিভিন্ন উপকারিতা এবং তা গর্ভবতী মায়ের জন্য
নিরাপদ হবে কিনা সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানলেন। এ সকল কিছু জানার পর একজন গর্ভবতী
মায়ের জাফরান খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে অবশ্যই জানা দরকার। সঠিক নিয়মে জাফরান ব্যবহারের ফলে আমরা সর্বোচ্চ উপকারিতা টা পেতে পারি।
জাফরান সাধারণত দু ভাবে খাওয়া যায়। জলে ভিজিয়ে ও জাফরানের চূর্ণ করে। এ
কাজগুলো আপনি বাড়িতে বসেই করতে পারবেন। জাফরান খাওয়ার তেমন আলাদা কোন নির্দিষ্ট
নিয়ম নেই। চলুন তাহলে দেখে নিই জাফরান খাওয়ার পরিচিত সাধারণ নিয়ম।
ভেজানো জাফরান : এটি জাফরান খাওয়ার একটি সাধারণ নিয়ম। এটি আপনি বাড়িতে বসেই খুব সহজেই করতে পারেন। আমরা যখন জাফরান কোন খাবারের সাথে মিশিয়ে খাই তখন তা মিশানোর পূর্বে 10 থেকে 15 মিনিট পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। ভিজিয়ে রাখার পর এটি পছন্দের তরকারির ঝোল বা যেকোন রেসিপির সাথে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
জাফরানের চূর্ণ : জাফরানের চূর্ণ সালাদ, ড্রিংকস, স্যুপ এজাতীয় খাবারের সাথে মিশে খাওয়ার জন্য বেশি উপযুক্ত। এর জন্য সহজেই আপনি জাফরানের তৈরি করতে পারেন। জাফরানের সুতোগুলো হাত দিয়েই পিষে বা ভেঙ্গে চূর্ণ তৈরি করতে পারেন এবং সরাসরি তা যে কোন খাদ্যে মিশিয়ে খেতে পারেন। এছাড়াও জাফরান খাওয়ার আরো অনেক পদ্ধতি রয়েছে।
জাফরান দুধের সাথে মিশিয়েও খাওয়া যায়। এতে করে দুধের সাথে জাফরানের চূর্ণ
মিশিয়ে খেতে হবে। তাছাড়া এক গ্লাস পানিতে জাফরানের কয়েকটি সুতো 10 থেকে
15 মিনিট ভিজিয়ে রেখে সেই পানি পান করা যায়। জাফরান ভেজানো পানি পান করলে হজমে
অনেক সহায়তা করে।
জাফরান কখন গ্রহণ করবেন
আমরা এতক্ষণে দেখলাম জাফরান খাওয়ার বিভিন্ন উপকারিতা এবং খাওয়ার বিভিন্ন নিয়ম কানুন। এর পাশাপাশিও আমাদের আরো কিছু জিনিস জানা দরকার। যেমন, জাফরান কখন গ্রহণ করলে সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যাবে এ সম্পর্কে । তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক গর্ভবতী অবস্থায় জাফরান কখন গ্রহণ করলে আমরা সবচেয়ে বেশি উপকৃত হতে পারব।
বিশেষ করে জাফরান খাবার সবচেয়ে উৎকৃষ্ট সময় হচ্ছে রাতের বেলা ঘুমাতে যাওয়ার আগে। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে দুধের সাথে কিসমিস ও মধু মিশিয়ে তাতে কয়েক চিমটি জাফরান মিশিয়ে খেলে সবচাইতে বেশি উপকারিতা পাওয়া যায়। এর পুষ্টি উপাদান আরো বৃদ্ধি করতে চাইলে তার সাথে বিভিন্ন ধরনের বাদাম যোগ করে নিতে পারেন।
আরো পড়ুন : গর্ভাবস্থায় মাদার হরলিক্স খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
আমরা দেখলাম যে, জাফরান কোন সময়ে খাওয়া উচিত। অনেকের মনে আরেকটি প্রশ্ন জাগতে পারে যে গর্ভাবস্থায় জাফরান কোন মাস থেকে খাওয়া শুরু করা উচিত। অনেকে ভাবেন যে গর্ভাবস্থার প্রথম দিক থেকেই জাফরান খেলে অনেক বেশি উপকারিতা পাওয়া যাবে। কিন্তু এটি একেবারেই একটি ভুল ধারণা। তাহলে সঠিক তথ্যটি কি ?
আপনি যদি গর্ভধারণের প্রথম থেকেই জাফরান খাওয়া শুরু করেন তাহলে এটি আপনার জরায়ু
সংকোচন করে দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ফলে অনেক বড় বিপদ এমনকি গর্ভপাত হতে পারে।
সেজন্য বিশেষজ্ঞদের মতে গর্ভাবস্থায় আপনি দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক
বা গর্ভধারণের পঞ্চম মাস থেকে আপনি নিয়মিত জাফরান খেতে পারেন।
এতে করে আপনি ভালো ফলাফল পেতে পারেন। তবে আরেকটি বিষয় বলে রাখি, জাফরান নিজে
থেকে একা একাই খাওয়া শুরু করবেন না। জাফরান খাওয়া শুরু করার আগে অবশ্যই একজন
ভালো ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত।
গর্ভাবস্থায় কতটা জাফরান খাওয়া নিরাপদ
আমরা অনেকে চিন্তা করি যে গর্ভস্থায় পর্যাপ্ত পরিমাণে জাফরান খেলে আমাদের অনেক বেশি উপকারে দিবে। কিন্তু এই ধারণাটি একেবারেই ভুল। প্রতিটা জিনিসেরই একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ রয়েছে সেই পরিমাণ অনুযায়ী ব্যবহার করলেই সর্বোচ্চ উপকারিতা পাওয়ার নিশ্চয়তা থাকে। তাই অনেকেই জানতে চান যে গর্ভাবস্থায় কতটা জাফরান খাওয়া নিরাপদ।
গর্ভ ধারণের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ত্রৈমাসিক থেকে একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য
নিয়মিত 20 থেকে 30 মিলিগ্রাম জাফরান ব্যবহার করা নিরাপদ হবে। কারণ এই সময়গুলোতে
মায়ের গর্ভপাতের সম্ভাবনা কম থাকে। বিশেষজ্ঞরা প্রথম ত্রৈমাসিকে জাফরান ব্যবহার
করতে নিষেধ করেন। কারণ এ সময় জাফরান ব্যবহারে জরায়ু সংকোচন হওয়ার সম্ভাবনা
থাকে।
তাহলে নিশ্চয়ই এতক্ষণে বুঝতে পেরেছেন যে গর্ভ অবস্থায় কখন থেকে এবং নিয়মিত
কতটা পরিমাণে জাফরান ব্যবহার করা নিরাপদ হবে।
গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা ফর্সা হয়
গর্ভকালীন সময়ে একজন মা সব সময় বিভিন্ন চিন্তায় থাকেন যে কি করলে বা কি খেলে তার এবং তার গর্ভে থাকা সন্তানের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে এবং গর্ভের সন্তান সুন্দর এবং ফর্সা হবে। অনেকের মনে এমন প্রশ্ন জাগে যে গর্ভাবস্থায় কি খেলে গর্ভের বাচ্চা ফর্সা হবে। অনেকে এরকমটাও চিন্তা করেন যে গর্ভাবস্থায় হয়তো বা জাফরান খেলে গর্ভের বাচ্চা ফর্সা হয়।
গর্ভাবস্থায় বাচ্চা ফর্সা হওয়া এবং সুস্থ থাকা সবচাইতে বেশি নির্ভর করে যে
বিষয়টির ওপর সেটি হচ্ছে মায়ের খাদ্য তালিকা। নিয়মিত সুষম ও পুষ্টিকর খাবার
খেলে গর্ভের বাচ্চা সুস্থ ও সুন্দর হয়ে ওঠে। এছাড়াও নিয়মিত ব্যায়াম করলে
মায়ের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে ফলে গর্ভের বাচ্চারও বৃদ্ধি ও
বিকাশে সাহায্য করবে।
তাই গর্ভের বাচ্চা সুন্দর ফর্সা হওয়ার জন্য মায়ের খাবারের উপর অনেকটা নির্ভর
করে। অনেক কুসংস্কার আছে যে গর্ভাবস্থায় যদি নারকেল বা দুধের সাথে জাফরান মিশিয়ে পান করে তাহলে গর্ভের সন্তান ফর্সা হয়। যদিও বৈজ্ঞানিকভাবে এর কোন প্রমাণ নেই।
তবে জাফরান গর্ভকালীন সময়ের জন্য খুব উপকারী একটি ভেষজ।
জাফরানের দাম বাংলাদেশ
বিশ্বের সবচাইতে দামি মসলার মধ্যে জাফরান অন্যতম। বাংলাদেশের জাফরানের মূল্য আকাশ সমান। কেননা বাংলাদেশে জাফরানের চাষ হয় না। এক গ্রাম জাফরান তৈরি করতে ১৫০ টি ফুলের প্রয়োজন হয়। এক কেজি জাফরান তৈরি করতে যেখানে দরকার হয় এক লক্ষ আশি হাজার ফুলের। তাহলে বুঝতে পারছেন যে জাফরানের মূল্য কত হবে।
আপনি যদি এক গ্রাম জাফরানের দাম জানতে চান তাহলে এর দাম গিয়ে দাঁড়াবে ৩০০ টাকা। আপনি ৫০০ গ্রাম জাফরান কিনতে পারবেন ১,৫০,০০০ টাকা দিয়ে। যদিও কারো এতটা প্রয়োজন হয় না। তবে যারা জাফরানের ব্যবসা করে তাদের ক্ষেত্রে আলাদা বিষয়। বাংলাদেশে এক কেজি জাফরানের মূল্য দাঁড়াই প্রায় ৩০০০০০ টাকা।
আরো পড়ুন : গর্ভাবস্থায় কলার থোড় ও মোচা খাওয়ার উপকারিতা
বিশেষ করে জাফরানের গুণগত মানের ওপর এর দাম নির্ভর করে। অনেকে আছে যেখানে প্রতি কেজি ২,৫০,০০০ টাকা দরে কিনে থাকেন। কিছু কিছু জায়গায় ২,২০,০০০ টাকা দরেও পাওয়া যায়। তবে আপনি যদি ভালো ও অরজিনাল জাফরান নিতে চান তাহলে আপনাকে নিতে হবে প্রতি কেজি ৩,০০,০০০ টাকা দরে।
জাফরানের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলো কি কি
আমরা এতক্ষণে জাফরানের বিভিন্ন উপকারিতা অপকারিতা ব্যবহারের নিয়ম সহ আরো
বিস্তারিত অনেক কিছু জানলাম। জাফরানের এত উপকারিতা থাকা সত্ত্বেও এর কিছু পার্শ্ব
প্রতিক্রিয়া রয়েছে। যেগুলো গর্ভবতী মায়ের জন্য হুমকি স্বরূপ। তাই জাফরানের
উপকারিতার পাশাপাশি আমাদের এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলো সম্পর্কেও ভালোভাবে জেনে
থাকা দরকার।
গর্ভবতী মায়ের জন্য জাফরান ব্যবহারে প্রচুর উপকারিতা রয়েছে। কিন্তু অতিরিক্ত
ব্যবহারের ফলে গর্ভবতী মায়ের জরায়ুর সংকোচন সহ নিম্নলিখিত আরো বিভিন্ন
সমস্যাগুলো হতে পারে। যেমন -
গর্ভস্রাব : জাফরান ব্যবহারের ফলে দেহে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং
জরায়ু সংকোচন এর সম্ভাবনা থাকে। প্রথম ত্রৈমাসিক এর মধ্যে জাফরান সেবন করলে
গর্ভপাতের সম্ভাবনা থাকে। তাই গর্ভধারণের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ত্রৈমাসিকে জাফরান
অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শে ব্যবহার করা যেতে পারে।
বমি : কিছু কিছু মহিলার জাফরান সেবনের ফলে বমি বমি ভাব অথবা বমি হতে
পারে। সেজন্য আপনাকে আগে নিশ্চিত হওয়া দরকার যে জাফরান আপনার শরীরে কেমন প্রভাব
ফেলছে। বমি হওয়া আপনার শরীর এবং পেটের বাচ্চা উভয়কেই পুষ্টি উপাদান থেকে বঞ্চিত
করে। তাই যদি এটি সেবনের ফলে আপনার বমি হয় তাহলে যা এখান থেকে দূরে থাকাই
ভালো।
মাথা ঘোরা : অনেক সময় অতিরিক্ত জাফরান সেবনের ফলে গর্ভবতী মায়ের
মাথা ঘোরার আশঙ্কা বেশি দেখা দেয়। সে ক্ষেত্রে জাফরান এড়িয়ে চলা দরকার।
এছাড়াও অতিমাত্রায় জাফরান সেবনের ফলে প্রস্রাব বা মলের সাথে রক্ত, আসাড়তা,
এলার্জি, জরায়ু সংকোচন সহ আরো বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই জাফরান অতি
মাত্রায় (১২ গ্রাম বা তার বেশি) সেবন করা থেকে বিরত থাকতে হবে। সে সাথে
খেয়াল রাখা উচিত জাফরান যাতে অরিজিনাল হয়।
পরিশেষে
গর্ভবতী মায়ের জন্য জাফরানের উপকারিতা অপকারিতা সহ জাফরান ব্যবহারের নিয়ম-কানুন সম্পর্কে বিস্তারিত জানলেন। আসলে জাফরান গর্ভবতী মায়ের জন্য খুব উপকারী একটি ভেষজ। জাফরান সেবনে গর্ভবতী মায়ের শরীরে বিভিন্ন পুষ্টিগুণ এর মাত্রা বৃদ্ধি পায়। সে সাথে সাথে আমাদের এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া গুলোর দিকেও ভালোভাবে নজর রাখা উচিত।
আশা করি উক্ত বিষয়টি জানার জন্য পোস্টটি খুব মনোযোগ সহকারে পড়েছেন এবং আপনার যা জানার আগ্রহ ছিল তা সম্পর্কে বিস্তারিত ভালোভাবে জানতে পেরেছেন। পোস্টটি পড়ে যদি ভালো লাগে এবং উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে নিয়মিত আমাদের ওয়েব সাইটটি ভিজিট করবেন এবং শেয়ার করবেন। আজ এই পর্যন্তই। আল্লাহ হাফেজ😍
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url