চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা - চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম

চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা এবং চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম অনেকে জানতে চান কারণ চিয়া সিড কতটা পুষ্টিগুণসম্পন্ন তা আমাদের অনেকেরই অজানা। বিভিন্ন পুষ্টিগুণ ও ঔষধি গুণসম্পন্ন খাবার বা বীজগুলোর মধ্যে চিয়া সিড বা চিয়া বীজ অন্যতম।

চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা

তাই আজকে আপনাদের সাথে চিয়া সিড বা চিয়া বীজ নিয়ে বিস্তারিত খুঁটিনাটি সকল বিষয়ে আলোচনা করব। তাই উক্ত বিষয়গুলো পরিষ্কারভাবে বুঝার জন্য কনটেন্টটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন। চলুন তাহলে শুরু করা যাক।

পোস্ট সূচীপত্র - যেখান থেকে পড়তে চান ক্লিক করুন

চিয়া সিড কি

চিয়া সিড বা চিয়া বীজ যার সাথে আমরা কমবেশি সকলেই পরিচিত। এটি আমরা অনেকেই দেখেছি কিন্তু অনেকে ভালোভাবে জানিনা আসলে জিনিসটা কি ? এটি ছোট্ট একটি বীজ যা দিয়া গাছ থেকে উৎপন্ন হয়। এই উদ্ভিদটি মরুভূমিতে জন্মে থাকে যা সালভিয়া হিসপানিকা নামে পরিচিত। অতি উপকারী এই বীজটির আদি জন্মস্থান হচ্ছে সেন্ট্রাল আমেরিকাতে।

আরো পড়ুন : পুরুষদের জন্য অ্যালোভেরার ১০ টি উপকারিতা

সেখানকার প্রাচীন আদিবাসী এ্যাজটেক জাতিদের খাদ্য তালিকায় এই বীজ টি অন্তর্ভুক্ত ছিল বলে জানা যায়। এই বীজ টি অনেক বেশি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এবং অতি উপকারী। সেই প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ এটির যথাযথ ব্যবহার করে আসছে। ছোট্ট এই চিয়া সিড এর উপকারিতা গুলো সত্যিই অবাক করার মত। চলুন তাহলে এখন ধাপে ধাপে চিয়া সিড এর উপকারিতা গুলো জেনে নিই।

চিয়া সিড এর উপকারিতা গুলো কি কি

চিয়া সিড এর উপকারিতা জানার আগে আমরা এতক্ষণে চিয়া সিড এর সাধারণ একটি পরিচিতি জেনে নিলাম। চিয়া সিডের উপকারিতা বলে শেষ করার মত নয়। খুবই ছোট তিলের দানার মত সাদা কালো এই বীজটি আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী এবং বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে থাকে। চলুন তাহলে একনজরে সব উপকারিতা গুলো দেখে নেয়া যাক।

  1. চিয়া সিডে উচ্চ মাত্রায় ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড থাকে যা আমাদের হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে এবং মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে সহায়তা করে।
  2. এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা খাদ্য আঁশ থাকে। ফাইবার আমাদের খাদ্য হজম করতে সাহায্য করে এবং পাচনতন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
  3. চিয়া সিড পানি শোষণ করে ফুলে যায় ফলে তা আমাদের পেট দীর্ঘক্ষন পূর্ণ রাখে। যার ফলে আমাদের ক্ষুধা কম লাগে। তাই শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে।
  4. এতে ফাইবার থাকে, ফাইবার আমাদের শরীরে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে ফলে ডায়াবেটিসের হাত থেকে দূরে থাকা যায়।
  5. পুষ্টিবিদদের মতে জানা যায় যে, চিয়া সিডে স্যামন মাছের চেয়ে আট গুণ পরিমাণ বেশি ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড থাকে।
  6. এতে দুধের চেয়ে ৫ গুণ বেশি ক্যালসিয়াম থাকে যা হাড় কে শক্তিশালী ও মজবুত করে তোলে।
  7. চিয়া সিডে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
  8. চিয়া সিড প্রোটিন, ফাইবার ও কার্বোহাইড্রেট এর ভালো একটি উৎস যা আমাদের শরীরে শক্তির যোগান দেয়।
  9. পেটে এসিডিটি বা গ্যাস জনিত সমস্যা দূর করে।
  10. শরীর থেকে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল বের করে দিতে সহায়তা করে।
  11. হাড়ের বিভিন্ন জয়েন্টের ব্যথা ও হাটুর ব্যথা দূর করতে অনেক সাহায্য করে।
  12. কাজ করার পর ক্লান্তি দূর করতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
  13. মলাশয়ে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় ও মলাশয় পরিষ্কার রাখে।
  14. কোষ্ঠকাঠিন্য ও বদ হজমের হাত থেকে দূরে রাখে।
  15. শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখে।

গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায়  চিয়া সিড খাবার বিশেষ কিছু উপকারিতা রয়েছে। যা গর্ভবতী মা ও তার পেটের সন্তানের বিকাশে বিশেষ ভূমিকা রাখে। অনেকেই বুঝতে পারেন না যে গর্ভ অবস্থায় চিয়া সিড খাওয়া যাবে কিনা ? গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড আদৌ নিরাপদ হবে কিনা। তাদের এইসব প্রশ্ন বলা যায় যে, হ্যাঁ। গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়া যাবে। কেননা এটি খুব পুষ্টিকর ও ঔষধি গুনসম্পন্ন একটি উদ্ভিদের বীজ।

গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা

তাহলে দেরি না করে চলুন দেখে নিই গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার কি কি উপকারিতা রয়েছে -

  • চিয়া সিডে থাকা পর্যাপ্ত পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড ভ্রুনের মস্তিষ্ক ও চোখের বিকাশে সহায়তা করে পাশাপাশি এটি স্নায়ুতন্ত্রের উন্নয়নেও সহায়ক।
  • চিয়া সিড প্রোটিনের ভালো একটি উৎস যা গর্ভাবস্থায় একটি মায়ের শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ করতে সহায়তা করে।
  • চিয়া সিডে যে ফাইবার থাকে তা গর্ভবতী মায়ের খাবার হজমে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যর হাত থেকে দূরে রাখে পাশাপাশি পেট পরিষ্কার রাখে।
  • এতে ফাইবার থাকায় গর্ভকালীন সময় গর্ভবতী মায়ের শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে।
  • এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা গর্ভবতী মা ও গর্ভে থাকা শিশুর যেকোনো প্রকার ক্ষতির হাত থেকে দূরে রাখে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
  • চিয়া সিডে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম ও আয়রন থাকে যা হাড় ও দাঁতের জন্য অনেক বেশি প্রয়োজনীয়।
  • চিয়া সিড রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে যা গর্ভকালীন ডায়াবেটিস বা গর্ভধারণ সম্পর্কিত ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
  • চিয়া সিডে থাকা ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার পাশাপাশি এসিডিটি বা গ্যাস জনিত বিভিন্ন সমস্যার হাত থেকে দূরে রাখে।
  • এটি ক্ষুধা দমনকারী হিসেবে কাজ করে যার ফলে গর্ভবতী মায়ের পেট দীর্ঘক্ষণ ভরা থাকে ফলে অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণ থেকে বিরত থাকা যায় এতে করে শরীরের ওজন সঠিক থাকে।

তবে এই সুবিধাগুলো ভোগ করতে চাইলে চিয়া সিড খাওয়ার পূর্বে আপনার অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়া উচিত। কেননা এতে আপনার পূর্ববর্তী স্বাস্থ্য সমস্যাও থাকতে পারে। তবে অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। একটি নির্দিষ্ট মাত্রার মধ্যে রাখার পরামর্শ দেয়া হয়।

বাচ্চাদের জন্য চিয়া সিড এর উপকারিতা

চিয়া সিড এমন একটি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ বীজ যা সকলের জন্যই অনেক বেশি উপকারী। এমনকি এটি পরিমাণ মতো বাচ্চাদের জন্যও বেশ উপকারী। তাই আপনার বাচ্চার পুষ্টির দিক নিশ্চিত করতে প্রতিদিন নির্দিষ্ট মাত্রায় চিয়া সিড খাওয়াতে পারেন । চলুন তাহলে দেখে নেয়া যাক বাচ্চাদের জন্য চিয়া সিড এর কি কি উপকারিতা রয়েছে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে : চিয়া সিড এ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

ওমেগা-৩ ফ্যাট অ্যাসিড : চিয়া সিডে পর্যাপ্ত পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাট এসিড থাকে যা শিশুদের মস্তিষ্ক বিকাশে সহায়ক এবং এটি শিশুদের মানসিকভাবেও সুস্থ রাখে।

শক্তি বৃদ্ধি করে : চিয়া সিড প্রাকৃতিকভাবে শক্তি বৃদ্ধি কর একটি খাবার। বাচ্চাদের সকালের নাস্তার সাথে চিয়া সিড যুক্ত করলে সারা দিনে বাচ্চাদের শরীরে শক্তি যোগান দেয়।

হাড়ের গঠন মজবুত ও সুস্থ রাখে: চিয়া সিড ক্যালসিয়াম এর ভালো একটি উৎস। ক্যালসিয়াম বাচ্চাদের হাড় গঠন করতে সাহায্য করে ও হাড়কে মজবুত ও সুস্থ রাখে।

পুষ্টিতে ভরপুর : চিয়া সিড খুবই পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি বীজ যা শিশুদের শরীরে বিভিন্ন পুষ্টি গুণের চাহিদা পূরণ করে থাকে।

হজম শক্তি বৃদ্ধি করে : এতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার থাকায় এটি শিশুদের পাকযন্ত্রের হজম শক্তি বৃদ্ধি করে, পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্যর হাত থেকে দূরে রাখেন।

আরো পড়ুন : রামবুটান ফলের উপকারিতা

বাচ্চাদের ডায়েটে চিয়া সিড সংযোজন করার সময় আপনাকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে এর পরিমাণ এর ওপর। তবে প্রথমদিকে অল্প অল্প করে শুরু করতে হবে। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে এটি শুরু করা উচিত। চিয়া সিড আপনি বাচ্চাকে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন খাবারের যেমন পুডিং, ওটমিল, ইয়োগোর্ট  , সালদ ইত্যাদিতে মিশিয়ে খাওয়াতে পারেন।

ওজন কমাতে চিয়া সিড এর উপকারিতা

অতিরিক্ত ওজন বা ওজন জনিতে সমস্যা বর্তমানে আমাদের দেশে দিন দিন বেড়েই চলেছে। তাই আমরা ওজন কমানোর জন্য প্রতিনিয়ত কত কি না করে থাকি। ওজন কমানোর জন্য কার্যকরী একটি ঔষধি গুনসম্পন্ন খাবার হচ্ছে চিয়া সিড। এতে থাকা বিভিন্ন পুষ্টিগুণ ও উপাদান সমূহ ওজন কমাতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। এদের মধ্যে কিছু কিছু বিষয় হলো যেমন - 

  • চিয়া সিড এ পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন থাকে যা পেশী গঠন ও রক্ষণাবেক্ষণে খুবই সহায়ক। আর পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন গ্রহণ করার ফলে ক্ষুধা কম লাগে ফলে ক্যালরি গ্রহণ কম হয় তাই সহজেই ওজন কমে আসে।
  • এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে যা আমাদের পেট বেশিক্ষণ ভরিয়ে রাখে যার কারণে ক্ষুধা কম লাগে ফলে ওজন তাড়াতাড়ি নিয়ন্ত্রণে আসে। তাছাড়া ফাইবার হজমও ধীরগতিতে করে।
  • ওমেগা-৩ ফ্যাট অ্যাসিড মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে যা শরীরে অতিরিক্ত ফ্যাট পড়াতে সাহায্য করে।
  • চিয়া সিড এ ক্যালরির পরিমাণ খুবই কম থাকে কিন্তু অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ থাকে পর্যাপ্ত। তাই এটি কম খেয়ে বেশিক্ষণ ক্ষুধা ছাড়াই থাকার একটি চমৎকার উপায়।.
  • এটি শরীরের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে ফলে অতিরিক্ত শর্করা গ্রহণের আগ্রহ কমে যায় ফলে ওজন দ্রুত নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।

ত্বকের যত্নে চিয়া সিড এর উপকারিতা

ত্বকের যত্নে চিয়া সিড হচ্ছে অসাধারণ উপকারী একটি উপাদান। এতে থাকা বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান ও ঔষধি গুণসমূহ ত্বককে সুন্দর উজ্জ্বল ও চকচকে করে তুলে। ত্বকহচ্ছে আমাদের সৌন্দর্যের একটি বড় বিষয়। তাই ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে প্রতিনিয়ত আমরা কত কি করছি তার কোনো হিসেব নেই। ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে কার্যকারী একটি উপাদান হচ্ছে চিয়া সিড।

এতে থাকা ভিটামিন ই ও প্রোটিন ত্বকের কোন ধরনের ক্ষতি হলে তা খুব সহজে মেরামত করে। এটি নিয়মিত ব্যবহারের ফলে তাকে সৌন্দর্য ও উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। চিয়া সিড এ থাকা ফ্যাটি এসিড ত্বকের আদ্রতা বজায় রাখে। তাই ত্বককে সুন্দর আকর্ষণীয় ও চকচকে করতে চাইলে নিয়মিত চিয়া সিড ব্যবহার করতে পারেন।

কিডনির যত্নে চিয়া সিড এর উপকরিতা

কিডনি আমাদের শরীরের অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। আমাদের শরীরে যত প্রকার রেচন কার্যসম্পাদন হয় তা এই কিডনির মধ্য দিয়েই। চিয়া সিড কিডনির যত্নে অনেক ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে। তবে কিডনির যত্ন বা সুস্থ রাখার জন্য সবচাইতে বড় বিষয়টি হচ্ছে সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা। এতে থাকা অনেক উপাদান রয়েছে যা কিডনি সুস্থ থাকতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

তবে এর পরিমাণের দিকে লক্ষ্য রাখা উচিত। এতে থাকা ফাইবার আমাদের শরীরে জমে থাকা বর্জ্য ও টক্সিন বাইরে বের করে দিতে সাহায্য করে ফলে আমাদের কিডনির ওপর চাপ কমে যায়। তাছাড়াও এতে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং প্রদাহ কমায় ফলে কিডনি সুস্থ থাকার হার বৃদ্ধি পায়।

আরো পড়ুন : ড্রাগন ফল খাওয়ার নিয়ম ও ড্রাগন ফলের খোসার উপকারিতা

কিডনির জন্য ক্ষতিকর একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে ডায়াবেটিস। চিয়া সিড আমাদের শরীরে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে যার ফলে ডায়াবেটিসের হাত থেকে দূরে থাকা যায়। আর ডায়াবেটিসের হাত থেকে মুক্তি পেলে কিডনির সুস্থতা নিশ্চিত হয়। এছাড়াও রক্তচাপ কিডনির সুস্থ থাকাতে বাধা প্রদানকারী আরেকটি কারণ। চিয়া সিড আমাদের শরীরে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।

চুলের যত্নে চিয়া সিড এর উপকারিতা

চুল হল আমাদের সৌন্দর্য বৃদ্ধির আরেকটি অন্যতম অংশ। তাই আমরা প্রতিনিয়তই চুল ভালো করার জন্য এর পিছনে লেগেই থাকি। কিন্তু আমাদের অনেকেরই এটা জানা নাই যে চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার জন্য চিয়া সিড একটি প্রাকৃতিক উপাদান। এতে থাকা বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান সমূহ চুলকে সুন্দর, মজবুত, ঝলমলে ও আকর্ষণীয় করে তোলে।

এতে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড চুলকে দ্রুত বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে পাশাপাশি আমাদের মাথার স্কাল্পে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে ফলে চুলের গোড়া মজবুত ও চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে। এতে থাকা প্রোটিন চুলকে ভেঙে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে। চিয়া সিড এ থাকা জিংক নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। তাই এ সুবিধা গুলো গ্রহণ করতে নিয়মিত চিয়া সিড ব্যবহার করুন।

চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম চিয়া সিড কিভাবে খাবেন

প্রতিটা জিনিসই খাওয়ার একটি নির্দিষ্ট নিয়ম কানুন থাকে। ঠিক তেমন চিয়া সিড এর ও সাধারণ কিছু নিয়মকানুন রয়েছে। এ নিয়ম কানুন গুলো মেনে যদি আমরা চিয়া সিড খাই তাহলে উপকারিতা পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। চিয়া সিড খাওয়ার বেশ কয়েকটি নিয়মকানুন বা পদ্ধতি রয়েছে। চলুন তাহলে ধাপে ধাপে সেই পদ্ধতি গুলো পরিষ্কারভাবে দেখে নিই।

পানিতে ভিজিয়ে খাওয়া : চিয়া সিড খাওয়ার সবচাইতে সহজ ও জনপ্রিয় পদ্ধতি হচ্ছে পানিতে ভিজিয়ে খাওয়া। প্রথমে একটি গ্লাসে এক থেকে দুই টেবিল চামচ সিয়া সিট পানির সাথে ১৫ থেকে ২০ মিনিট ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরপর এগুলো ফুলে জেলির মতো হয়ে যাবে। জেলের মতো হাওয়া এই চিয়া সিড গুলো আপনি এবার দই, জুস অথবা যে কোন কিছুর সাথে খেতে পারেন।

চিয়া পুডিং বানিয়ে : প্রথমে দুই থেকে তিন টেবিল চামচ চিয়া সিড দুধ অথবা বাদাম দুধ এর সাথে মিশিয়ে তিন থেকে চার ঘন্টা বা সারারাত ফ্রিজে রেখে দিবেন। তাহলে এটি পানি শোষণ করে একদম পুডিং এর মত হয়ে যাবে। তখন এটির সাথে আপনার পছন্দমত বাদাম বিভিন্ন ধরনের ফল, মধু ইত্যাদি মিশে চমৎকার একটি ব্রেকফাস্ট বানিয়ে ফেলতে পারেন।

আরো পড়ুন : ত্বীন ফলের উপকারিতা ও ত্বীন ফল খাওয়ার নিয়ম

এছাড়াও একে সালাদের সাথে মিশিয়ে, দই এর সাথে মিশিয়ে, ময়দার সাথে মিশিয়ে বেকিং এ, জুসের সাথে মিশে ইত্যাদি বিভিন্নভাবে খেতে পারেন।

চিয়া সিড কখন খাবেন 

চিয়া সিড এর উপকারিতা ও চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম সকল কিছু জানার পরও আপনার জানার ইচ্ছা থাকতে পারে যে এটি কোন সময় খেলে বেশি উপকারিতা পাওয়া যাবে। এটি খাবার তেমন কোন আলাদা বা নির্দিষ্ট কোন সময় নেই। তবে কিছু কিছু সময় আছে যে সময়গুলোতে এটি খেলে উপকারিতা বেশি পাওয়া যাবে। যেমন -

  • ভিজিয়ে রেখে সকাল বেলা খালি পেটে
  • খাবার খাওয়ার কিছু সময়  পূর্বে
  • ব্যায়াম করার পূর্বে
  • ঘুমোতে যাওয়ার আগে
  • খাবার মাঝখানে স্নেক হিসেবে

চিয়া সিড খেলে কি হয় এক নজরে দেখুন

চিয়া সিড এর উপকারিতা এবং চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম সহ বিস্তারিত এতক্ষণে অনেক কিছুই দেখলেন। তাহলে বুঝতেই পারছেন চিয়া সিড  খেলে কি হয় বা চিয়া সিড এর উপকারিতা গুলো কি কি। তারপরেও এক নজরে চলুন দেখে নেয়া যাক চিয়া সিড খেলে আসলে কি হয় কি কি উপকারিতা গুলো পাওয়া যায়।

  1. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
  2. স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী
  3. হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
  4. চুলের জন্য অনেক বেশি উপকারী
  5. ত্বককে সুন্দর মসৃণ ও আকর্ষণীয় করে তুলে
  6. কিডনি সুস্থ রাখে
  7. ওজন কমাতে সাহায্য করে
  8. গর্ভবতী মা ও গর্ভের সন্তানের জন্য অনেক বেশি উপকারী
  9. শরীরে পুষ্টির ঘাটতি মেটাই
  10. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
  11. শক্তি বৃদ্ধি করে ইত্যাদি

চিয়া সিড এর অপকারিতা গুলো কি কি

চিয়া সিড সাধারণত বেশিরভাগ সব ধরনের মানুষের জন্যই নিরাপদ ও পুষ্টিকর কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটির অপকারী দিক বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। প্রতিটি জিনিসেরই যেমন ভালো দিকের পাশাপাশি কিছু সতর্কতার দিক থাকে এরও তেমন কিছু কিছু সতর্কতা রয়েছে। চলুন নিচে এক নজরে দেখে নেয়া যাক।

  • এতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার থাকার কারণে অতিরিক্ত গ্রহণ করলে পেটব্যথা, পেট ফাঁপা, গ্যাস সহ বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। তাই অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • চিয়া সিড পানি শোষণ করে অনেক বেশি ফুলে ওঠে। তাই শুকনা অবস্থায় এটি খেলে পাকস্থলীতে গিয়ে পানি শোষণ করে অনেক বেশি ফুলে ওঠে ফলে হজম জনিত সমস্যা হতে পারে।
  • এটি রক্তচাপ কমিয়ে দেয় যার ফলে যাদের রক্তচাপ স্বাভাবিকের চেয়ে কম তাদের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে। যাদের রক্তচাপ কম তাদের এ বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
  • কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে চিয়া সিড গ্রহণের ফলে অ্যালার্জিজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • অতিরিক্ত মাত্রায় গ্রহণের ফলে কিডনিতে পাথরের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করতে পারে।
  • ডায়াবেটিসের জন্য ওষুধ খান তারা যদি চিয়া সিড গ্রহণ করেন তাহলে তাদের শর্করার মাত্রা অতিরিক্ত হারে কমে যেতে পারে।

চিয়া সিড কারা খেতে পারবে না কাদের জন্য ঝুকিপূর্ণ 

চিয়া সিড বেশিরভাগ প্রায় সকল মানুষের জন্যই নিরাপদ ও পুষ্টিকর কিন্তু কিছু কিছু পরিস্থিতিতে এটি এড়িয়ে চলাই ভালো। চিয়া সিড খাওয়ার ফলে যে ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে এ সমস্যাগুলো যদি কারো মধ্যে থেকে থাকে তাহলে তাদের এর থেকে দূরে থাকাই ভালো। চলুন তাহলে দেখে নিই এটি কাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বা সতর্কতামূলক -

  • যারা রক্তচাপের রোগী তারা। চিয়া সিড রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে তাই তাদের উচ্চ রক্তচাপ তাদের জন্য ভালো কিন্তু যাদের রক্তচাপ স্বাভাবিকের চেয়ে কম তাদের চিয়া সিড থেকে দূরে থাকাই ভালো।
  • গর্ভবতী ও স্তন্য দানকারী মায়েদের জন্য এটি উপকারী কিন্তু এটি গ্রহণ করার পরিমাণ এর ওপর খেয়াল রাখতে হবে এবং ডাক্তার পরামর্শ নিয়ে গ্রহণ করতে হবে।
  • ডায়াবেটিসের রোগী। কারণ চিয়া সিড শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। ডায়াবেটিসের রোগী ডায়াবেটিসের ওষুধ খেলে শর্করার মাত্রা অতিরিক্ত কমে যেতে পারে।
  • এলার্জি বা এ ধরনের কোন সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তি
  • কিডনির সমস্যায় ভোগা ব্যক্তি
  • গ্যাস বা হজমে সমস্যা আছে এমন কোন ব্যক্তি
  • রক্তপাতে ঝুঁকি আছে এমন কোন ব্যক্তি

চিয়া সিড এর দাম কত 

চিয়া সিড এর দাম আমাদের অনেকেরই সঠিক জানা থাকে না তাই অনেকেই জানার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেন। এটি খুবই পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যকর একটি উপাদান যার কারণে আমরা এটির প্রতি একটু বেশি আগ্রহ প্রকাশ করি। বর্তমানে বাংলাদেশে চিয়া সিড এর দাম প্যাকেজের ওজনের ওপর এবং বিক্রেতার ওপর নির্ভর করে।

চিয়া সিড এর দাম

বিভিন্ন জায়গায় এর দাম বিভিন্ন হতে পারে। আপনি যদি ১০০ গ্রাম চিয়া সিড নিতে চান তাহলে এর দাম দাঁড়াবে ১১০ থেকে ১৫০ টাকা। কিন্তু আপনি যখন এক কেজি নিতে যাবেন তখন এর দাম ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা নিবে। অনেক সময় দামের তারতম্য হয় ব্র্যান্ড ও এর মানের উপর নির্ভর করে। অনেক সময় অনলাইনে কম দামে অফারও দেখা যায়।

চিয়া সিড এর বাংলা নাম কি

চিয়া সিডের বাংলা নাম জানতে আগ্রহ প্রকাশ করেন অনেকে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এর মতানুসারে চিয়া সিড এর বাংলা নাম হল চিয়া বীজ। আমাদের দেশের অনেকেই এই বীজ কে শক্তি বীজ বা পুষ্টি বীজ নামেও চিনে থাকে। অনেকেই আবার চিয়া বীজকে তোকমা বীজ ভেবে ভুল করে থাকেন। কিন্তু তোকমা বীজ ও চিয়া বীজ সম্পূর্ণই দুইটি আলাদা বীজ।

আসল চিয়া সিড কিভাবে চিনবেন

আসল চিয়া সিড চেনার জন্য আপনার কয়েকটি বিষয়ের ওপর লক্ষ্য রাখতে হবে। আগেই বললাম যে অনেকে তোকমা দানা কে চিয়া সিড ভেবে ভুল করে থাকে। এটি খুবই ছোট ১ থেকে ২ মিলিমিটার লম্বা তিলের দানার সমান। সাদা এবং কালো রঙের দানায় মিশ্রিত। আসল চিয়া সিড চেনার জন্য যে বিষয়গুলোর উপর লক্ষ্য রাখতে হবে তা হল -

  1. আসল চিয়া সিড সব সময় ঝরঝরে ও ফ্রেশ হয়ে থাকে
  2. একটি দানা আরেকটি দানার সাথে লেগে যাবে না
  3. বালি বা অন্য কোন উচ্ছিষ্ট এর মিশ্রণ থাকবে না
  4. পচা বাসি কোন ধরনের গন্ধ করবে না
  5. সাদা ও কালো দানার মিশ্রণ থাকবে তবে সাদা দানার চাইতে কালো দানারর দাম একটু বেশি।

শেষ কথা - চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা

চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা এবং চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম সহ এতক্ষণে চিয়া সিড সম্পর্কে বিস্তারিত খুঁটিনাটি সবকিছু আলোচনা করেছি। আশা করি সবকিছু জানার জন্য পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়েছেন। চিয়া সিড সত্যিই খুব অবাক করার মত পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি বীজ। এটি এমন একটি উপাদান যা বেশিরভাগ সকল ধরনের মানুষের জন্য উপকারী।

তাই উক্ত উপকারগুলো গ্রহণ করতে চাইলে নিয়মিত আপনার ডায়েটে চিয়া সিড । এতে করে আপনি অনেক বেশি উপকৃত হতে পারবেন। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আজকে এ পর্যন্তই। আল্লাহ হাফেজ😍

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url