ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ কারণ রোগ নির্ণয় প্রতিকার ও প্রতিরোধ ২০২৪
ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ, কারণ এবং এর বিভিন্ন ধরনের প্রতিকার, প্রতিরোধ ও রোগ নির্ণয় সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই ধারণা খুব কম। ডেঙ্গু খুবই মারাত্মক এবং ভয়ংকর একটি রোগ। ডেঙ্গু আমাদের দেশে মাঝে মাঝে মহামারী আকার ধারণ করে থাকে।
আপনারা যারা ডেঙ্গু সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান তাদের জন্য আজকে এই পোস্টে
ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ, ডেঙ্গু রোগের কারণ, রোগ নির্ণয় প্রতিকার ও প্রতিরোধসহ
ডেঙ্গু রোগ নিয়ে বিস্তারিত সকল কিছু আলোচনা করব। জানতে হলে সাথে থাকুন।
সূচিপত্র - ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ কারণ রোগ নির্ণয় প্রতিকার ও প্রতিরোধ
- ডেঙ্গু রোগ বা ডেঙ্গু জ্বর কি
- ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ২০২৪
- ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণ
- ডেঙ্গু রোগ নির্ণয় পদ্ধতি
- ডেঙ্গু রোগের প্রতিকার ও করণীয় ২০২৪
- ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে করণীয়
- ডেঙ্গু জ্বর কতদিন থাকে
- ডেঙ্গু রোগীর খাবার তালিকা ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হয়
- ডেঙ্গু জ্বর হলে কি ওষুধ খেতে হবে
- ডেঙ্গু রোগের বিস্তার কিভাবে ঘটে
- ডেঙ্গু ভাইরাস কিভাবে ছড়ায়
- ডেঙ্গু জ্বর হলে কি গোসল করা যাবে
- ডেঙ্গু জ্বর কি ছোঁয়াচে রোগ
- ডেঙ্গু জ্বর হলে কি মানুষ মারা যায়
- ডেঙ্গু মশা বা এডিস মশা কামড়ালে কিভাবে বুঝব
- ডেঙ্গু জ্বর হলে করণীয়-অকরণীয়
- এডিস মশা কখন কামড়ায়
- ডেঙ্গু হলেই কি হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে
- ডেঙ্গু জ্বরের ঘরোয়া প্রতিকার
- সারসংক্ষেপ - ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ কারণ রোগ নির্ণয় প্রতিকার ও প্রতিরোধ
ডেঙ্গু রোগ বা ডেঙ্গু জ্বর কি
ডেঙ্গু একটি ভাইরাস জনিত রোগ। এটি এডিস মশা দ্বারা বাহিত ডেঙ্গু ভাইরাসের কারণে এই রোগটি হয়। ডেঙ্গু ভাইরাসের বাহক এডিস মশা। সাধারণত উষ্ণ ও আদ্র অঞ্চলে ডেঙ্গু দেখা যায় তবে বৃষ্টি বা বর্ষার পরে এর প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়। এডিস মশা কামড়ালে যদি ডেঙ্গু ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করে তাহলে ৩ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে এই রোগের লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে থাকে।
ডেঙ্গু ভাইরাসের প্রধান স্ট্রেইন রয়েছে চারটি। DENV-1, DENV-2, DENV-3 এবং DENV-4। কেউ যদি একবার আক্রান্ত হয় তাহলে সেই স্ট্রেইন থেকে শরীরে ইমিউনিটি তৈরি হয়ে যায় কিন্তু বাকি স্ট্রেইন গুলোতেও আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।
ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ২০২৪
ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ সম্পর্কে আমরা অনেকেই অবগত নই। সাধারণত আমাদের শরীরে ডেঙ্গু ভাইরাস প্রবেশ করলে ৩ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে ডেঙ্গু রোগের বিভিন্ন লক্ষণ গুলো প্রকাশ পেতে থাকে। ২০২৪ সালের লক্ষণ গুলো আগের গুলোর মতই থাকে। তবে কিছু কিছু ভিন্ন হতে পারে। ডেঙ্গু একটি ভাইরাস জনিত রোগ।
ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ বর্তমানে আগের লক্ষণ গুলোর মতই। আমাদের ডেঙ্গু রোগ হয়েছে
কিনা তা কোন কোন লক্ষণ গুলো প্রকাশ পেলে বুঝতে পারব চলুন তা দেখে নিই। ডেঙ্গু রোগ
হওয়ার সাধারণ লক্ষণগুলো হলো -
- ডেঙ্গু রোগের প্রধান লক্ষণ হচ্ছে হঠাৎ করে প্রচন্ড পরিমাণে জ্বর আসা। আমরা একে ডেঙ্গু জ্বরও বলে থাকি। এই জ্বর দুই থেকে সাত দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
- ডেঙ্গুর সাধারণ আর একটি লক্ষণ হচ্ছে চোখের পেছনে ব্যথা অনুভূত হওয়া।
- প্রচন্ড পরিমাণে মাথা যন্ত্রণা বিশেষ করে কপালে তীব্র যন্ত্রণা।
- শরীরের বিভিন্ন জায়গায় তীব্র ব্যাথা অনুভব করা বিশেষ করে মাসল এবং জয়েন্টে তীব্র ব্যথা।
- ডেঙ্গুর আরেকটি সাধারণ লক্ষণ হচ্ছে বমি হওয়া বা বমি বমি ভাব।
- গলা ও গায়ে লালচে দাগ দেখতে পাওয়া যায়। অনেক সময় এটি সারা শরীরে ছড়িয়েও যেতে পারে।
- শরীর প্রচন্ড রকমের দুর্বল হয়ে যায় এবং তীব্র ক্লান্তি অনুভূতি হয়।
- মাঝে মাঝে খুব পেট ব্যথা এবং অস্বস্তি হয়।
- ডেঙ্গু ভয়ানক আকার ধারণ করলে নাক ও মুখ দিয়ে রক্তপাত হতে পারে।
ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণ
ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে ডেঙ্গু ভাইরাস। ডেঙ্গু একটি
ভাইরাস জনিত রোগ। বিশেষ করে এডিস এজিপ্টাই এবং এডিস এ্যালবোপিক্টাস জাতের এডিস
মশা এ ভাইরাসটি বহন করে থাকে। ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে
এডিস মশার কামড়। এই মশাটি যখন আমাদের শরীর থেকে রক্ত খায় তখন এই ভাইরাসটা
আমাদের শরীরের প্রবেশ করে।
ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হওয়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে মশা বাহিত এলাকা। যেসব এক এলাকায়
পর্যাপ্ত এডিস মশা আছে কিন্তু এগুলো দমনের কোন ব্যবস্থা নেই। যার ফলে এডিস মশার
কামড়ের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এছাড়াও বসতবাড়ির আশেপাশে জমে থাকা পচা পানির জন্য
এডিসের বংশ বৃদ্ধি বেশি হয় ফলে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি
থাকে।
এছাড়াও জনবহুল এলাকা, অপর্যাপ্ত মশা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, উষ্ণ ও আর্দ্র
আবহাওয়া ইত্যাদি ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। জনবহুল
পরিবেশে মশার আক্রমণ করার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এডিস মশা উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়া
বেশি আক্রমণ করে।
ডেঙ্গু রোগ নির্ণয় পদ্ধতি
ডেঙ্গু রোগ নির্ণয়ের জন্য অনেকগুলো পদ্ধতি রয়েছে। উপরে বর্ণিত কিছু কিছু উপসর্গ
বা লক্ষণ দেখা দিলেই যে ডেঙ্গু হয়েছে এরকমটা ধরে নিবেন তা কিন্তু ঠিক নয়। উক্ত
লক্ষণগুলো যদি একজন রোগীর মধ্যে দেখা দেয় তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী
বিভিন্ন ধরনের টেস্ট রয়েছে সেই টেস্টগুলো করার পরেই বোঝা যায় রবি ডেঙ্গু রোগে
আক্রান্ত কিনা।
তার আগে আতঙ্কিত হওয়ার কোন দরকার নেই। ডেঙ্গু রোগ নির্ণয়ের অনেক কয়েকটি পদ্ধতি
রয়েছে তার মধ্যে প্রধান পদ্ধতি গুলো নিচে দেয়া হল।
ক্লিনিক্যাল মূল্যায়ন : একটি রোগীর মধ্যে ডেঙ্গু রোগের উপসর্গ বা লক্ষণগুলো দেখার মাধ্যমে এবং চিকিৎসার ইতিহাস মূল্যায়ন করে একজন ডাক্তার সহজেই বুঝতে পারবেন রোগীর ডেঙ্গু আক্রান্ত কিনা।
রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে : ডেঙ্গু রোগ নির্ণয় করা ভালো নিরাপদ মাধ্যম
হচ্ছে রক্ত পরীক্ষা। রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত কিনা এটি নিশ্চিত করার জন্য কয়েক ভাবে
রক্ত পরীক্ষা করা হয়। ডেঙ্গু রোগ সংক্রমনের চার থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে NS1
পরীক্ষা করা হয়। NS1 পরীক্ষা করার মাধ্যমে রক্তে ডেঙ্গু ভাইরাসের এন্টিজেন
শনাক্ত করা হয়।
এছাড়াও ডেঙ্গু অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করা হয়। ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধের জন্য আমাদের শরীরে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয় তা সনাক্ত করার জন্য IgM ও IgG অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করা হয়। IgM অ্যান্টিবডি ডেঙ্গু সংক্রমনের পাঁচ থেকে সাত দিন পর উপস্থিত হয়ে যা প্রাথমিক অবস্থা নির্দেশ করে এবং IgG অ্যান্টিবডি ডেঙ্গু সংশোধনের দুই সপ্তাহ পর বা দ্বিতীয়বার সংক্রমণে সনাক্ত হয় যা দীর্ঘ মেয়াদী ইউনিটি নির্দেশ করে।
রোগীর পূর্ণ রক্ত পরীক্ষাও করা হয়। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর রক্তে প্লেটলেট এবং
শ্বেত রক্তকণিকার মাত্রা কমে যেতে পারে। তাই CBC পরীক্ষা করা হয় যাতে করে রক্তের
প্লেটলেট কাউন্ট এবং অন্যান্য রক্তকণিকার মাত্রার পরিবর্তন সহজে বোঝা যায় এবং
রোগ নির্ণয় করতে সহজ হয়। এছাড়াও পি সি আর পরীক্ষা, লিভার ফাংশন টেস্ট, ডেঙ্গু
হেমোরেজিক ফিভার টেস্টের মাধ্যমে ডেঙ্গু নির্ণয় করা হয়।
ডেঙ্গু রোগের প্রতিকার ও করণীয় ২০২৪
ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হলেই আমরা অনেক বেশি আতঙ্কিত হয়ে ওঠে। কিন্তু এটি একেবারেই
ঠিক নয়। চেষ্টা করতে হবে এখান থেকে বেরিয়ে আসার। যদিও ডেঙ্গু রোগে তেমন
নির্দিষ্ট কোন প্রতিকার নেই। ডেঙ্গু রোগের জন্য কার্যকরী কোন প্রতিষেধক এখনো বের
হয়নি। তাই কিছু কিছু কাজ রয়েছে যেগুলো করার মাধ্যমে এর লক্ষণ গুলো উপশম করে
রোগীকে শারীরিকভাবে সুস্থ রাখতে সহায়ক হবে।
এ সময় আতঙ্কিত না হয়ে আগে রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি যাতে না হয় সেদিকে
খেয়াল রাখতে হবে এবং নিচে দেয়া পদক্ষেপ গুলো গ্রহণ করতে হবে।
- মশার কামড় থেকে রক্ষা করতে হবে
- রোগীকে তরল খাবার রং করতে হবে
- রোগীর পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রামে থাকতে হবে
- গলা ব্যথা ও জ্বর কমাতে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খাওয়া যেতে পারে
- প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে
- পানি শূন্যতা দূর করতে হবে
- পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করতে হবে
- পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সতর্ক থাকতে হবে
ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে করণীয়
ডেঙ্গু রোগের প্রতিরোধ করা আমাদের একার পক্ষে সম্ভব নয়। এটি সম্মিলিত ভাবে
সবার জন্য কাজ। ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হওয়ার আগে আমরা যদি এর প্রতিরোধ ব্যবস্থা
গড়ে তুলতে পারি তবেই এর হাত থেকে আমরা রক্ষা পেতে পারবো। তাই ডেঙ্গু প্রতিরোধে
আমাদের সবাইকে একসাথে এগিয়ে আসতে হবে। সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
ডেঙ্গুর রোগের যেহেতু কোন নির্দিষ্ট প্রতিকার নাই তাই এর প্রতিরোধ সবচাইতে বেশি
গুরুত্বপূর্ণ। ডেঙ্গু রোগের প্রতিরোধ হিসেবে অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়। যার
প্রধান প্রধান পদক্ষেপ গুলো নিচে বর্ণনা করা হলো।
মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষা করা : ডেঙ্গু প্রতিরোধের সবচাইতে বড়
যে বিষয়টি তা হচ্ছে নিজেকে মশার কামড় থেকে দূরে রাখা। এর জন্য অবশ্যই ঘুমানোর
সময় দিনে ও রাতে সব সময় মশারি টাঙিয়ে ঘুমানো, মশার কামড় থেকে রক্ষা পেতে
ক্রিম বা স্প্রে ব্যবহার করা, অবশ্যই সন্ধ্যা এবং সকালের দিকে ফুলহাতা শার্ট ও
প্যান্ট পরা ইত্যাদি।
মশার বংশ বৃদ্ধি রোধ : ডেঙ্গু প্রতিরোধের আরেকটু বড় বিষয় হচ্ছে মশার বংশ বৃদ্ধি রোধ করা। মশা বদ্ধ স্বচ্ছ পানিতে বংশ বৃদ্ধি করে। এর জন্য বাড়ির আশেপাশে কোথাও পানি জমতে দেওয়া যাবে না যেমন ফুলের টব, টায়ার, ক্যান ইত্যাদি সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে।
এছাড়াও জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে, বাড়িতে থাকা এবং বাড়ির আশেপাশে মশা প্রজনন
করতে পারে এরকম জায়গা ধ্বংস করতে হবে, কোথাও ভ্রমণে সতর্ক থাকতে হবে, কিছু কিছু
ক্ষেত্রে ডেঙ্গুর টিকা দেয়া হয় প্রয়োজন হলে ডাক্তারের পরামর্শে টিকা গ্রহণ
করতে হবে ইত্যাদি। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবচাইতে কার্যকরী পদক্ষেপ হচ্ছে মশার বংশ
বৃদ্ধি রোধ করা তাই এদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
ডেঙ্গু জ্বর কতদিন থাকে
ডেঙ্গু জ্বরের স্থায়িত্ব ও তীব্রতা রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং শারীরিক
অবস্থার উপর নির্ভর করে। অনেক সময় দেখা যায় অনেক রোগীর ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যেই
ডেঙ্গু জ্বর কমে যায়। কিন্তু জ্বর কমার পরও পুরোপুরি সুস্থ হতে আরো কিছুদিন সময়
লাগে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই রোগটি মারাত্মক রূপও ধারণ করে এবং প্রচুর রক্তক্ষরণ
করে।
একে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার বা ডেঙ্গু রক্তক্ষয়ী জ্বর বলা হয়। এতে ৫ থেকে ৭ দিনের
প্রথম ৩-৪ দিন প্রচন্ড রকমের জ্বর, মাথাব্যথা, চোখের পিছনে ব্যথা সহ অনেক উপসর্গ
দেখা যায়। ৫ থেকে ৬ দিন পর থেকে জ্বর কমতে থাকে এবং তারপরে শরীর আস্তে আস্তে
সুস্থ হতে থাকে। তবে বিভিন্ন জনের ক্ষেত্রে জ্বরের স্থায়িত্ব কমবেশি হতে
পারে।
ডেঙ্গু রোগীর খাবার তালিকা ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হয়
ডেঙ্গু রোগী তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য অবশ্যই খাবার তালিকার দিকে নজর রাখতে হবে। ডেঙ্গু ভাইরাসের এখন পর্যন্ত কোন কার্যকারী ভেনোম আবিষ্কৃত হয়নি। এজন্য শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা অনেক বেশি জরুরী। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যত বেশি হবে তত সহজেই একটি রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সহজ হবে। তাই পুষ্টিকর খাবারের দিকে নজর দিতে হবে।
পুষ্টিকর খাবার খেয়ে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধ করতে হবে। এজন্য ডেঙ্গু রোগীর কিছু খাবার বেশি বেশি খেতে হবে এবং কিছু খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
ডেঙ্গু জ্বর বা রোগ হলে যে খাবার গুলো খেতে হবে
প্রচুর তরল জাতীয় খাবার
- পানি
- নারকেলের পানি
- ফল ও ফলের রস
- বিভিন্ন ধরনের স্যুপ
- ও আর এস (ORS)
হালকা ও পুষ্টিকর খাবার
- খিচুড়ি
- দুধভাত
- ওটমিল বা পরিজ ইত্যাদি
প্রোটিন জাতীয় খাবার
- ডিম
- মুরগির মাংস
- মসুর ডাল ইত্যাদি
ভিটামিন এবং মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার
- ফল
- বাদাম
- শাকসবজি
ডেঙ্গু রোগীর যে খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে
- অতিরিক্ত মসলা ও চর্বিযুক্ত খাবার
- ক্যাফিন ও কার্বোনেটেড পানীয়
- অতিরিক্ত চিনি যুক্ত খাবার
- অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার
- অ্যাসিডিক খাবার
- প্রক্রিয়াজাত খাবার
ডেঙ্গু জ্বর হলে কি ওষুধ খেতে হবে
ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ কারণ রোগ নির্ণয় ও প্রতিকার প্রতিরোধ সম্পর্কে এতক্ষন
জানলেন। এখন ডেঙ্গু জ্বর হলে কি ওষুধ খেতে হবে এটি জানা দরকার। আসলে এখন পর্যন্ত
ডেঙ্গু রোগের কোন কার্যকরী এন্টিভাইরাল ওষুধ বের হয়নি। কিন্তু ডেঙ্গু রোগীর
উপসর্গ গুলো দূর করে রোগীর সুস্থতা বৃদ্ধি করার জন্য কিছু কিছু ওষুধ
খাওয়ানো যেতে পারে।
যেমন প্যারাসিটামল। রোগী শরীরের ব্যথা ও জ্বর নিয়ন্ত্রণের জন্য রোগীকে
প্যারাসিটামল খাওয়ানো যেতে পারে। ৪ থেকে ৬ ঘন্টা পর পর প্যারাসিটামল নেয়া যায়।
তবে ওষুধটি খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। অ্যাসপিরিন ও
আইবুপ্রোফেন এ ওষুধগুলোকে এড়িয়ে চলতে হবে কারণ এই ওষুধগুলো ডেঙ্গু রোগীর জন্য
ক্ষতিকর হবে।
ডেঙ্গু রোগীর জন্য প্রচুর পানির প্রয়োজন হয়। কোনরকম পানি শূন্যতা হতে দেয়া
যাবে না। তাই রোগীকে পানি শূন্যতা দূর করতে ও আর এস (ORS), নারকেলের পানি, ফলের
রস খাওয়ানো যেতে পারে।
ডেঙ্গু রোগের বিস্তার কিভাবে ঘটে
ডেঙ্গু রোগের বিস্তার কয়েকভাবে হয়ে থাকে। গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে মশার বংশবিস্তার
বেশি পরিমাণে হয় ফলে এই সময় এ রোগের বিস্তারও বেশি হয়ে থাকে। একজন মানুষ থেকে
আরেকজন মানুষের দেহে ডেঙ্গু রোগের বিস্তার ঘটে মশার কামড়ের মাধ্যমে। একজন ডেঙ্গু
আক্রান্ত রোগীকে যদি একটি মশা কামড়ায় তাহলে ওই মশাটি রক্তের মাধ্যমে ঐ লোকের
শরীর থেকে ডেঙ্গু ভাইরাস গ্রহণ করে।
এই ভাইরাসটি মশা শরীরে ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায় এবং মশাটি সংক্রমণ ক্ষমতা অর্জন
করে। এরপর ওই মশা যখন অন্য আরেকজন মানুষকে কামড়ায় তখন সেই ভাইরাসটি ওই মানুষের
দেহে প্রবেশ করে। ফলে ৪ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ওই লোকটির দেহ ডেঙ্গুর লক্ষণ প্রকাশ
পেতে থাকে। এই এক পদ্ধতিতে ডেঙ্গু রোগের বিস্তার ঘাটে। মানুষে মানুষে সরাসরি
ডেঙ্গু রোগের বিস্তার ঘটে না।
একজন ডেঙ্গু রোগী যদি আরেকজন ভালো মানুষের সংস্পর্শে আসে তাহলে কোন ভাবেই তার
ডেঙ্গু হওয়ার সম্ভাবনা নেই। একজন ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তি যদি অন্য কোন
এলাকায় যায় তাহলে ওই লোককে যেই মশা কামড়াবে সেই মশা ডেঙ্গু ভাইরাস বিস্তার করে
থাকে। এরপরে ওই মাসে যখন আর এক ব্যক্তিকে কামড়াবে সেও ডেঙ্গু আক্রান্ত হবে।
আর এভাবেই ধীরে ধীরে ডেঙ্গু রোগের বিস্তার করতে থাকে। তাই ডেঙ্গু রোগের বিস্তার
কমাতে ডেঙ্গু রোগীকে সবসময়য়ের জন্য মশারির ভেতর রাখতে হবে এবং অন্য কোন এলাকায়
যাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
ডেঙ্গু ভাইরাস কিভাবে ছড়ায়
ডেঙ্গু ভাইরাস ছড়ানোর একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে মশা। এর কিছুটা উপরে আলোচনা করেছি।
ডেঙ্গু ভাইরাস ছড়ানোর জন্য মশা ছাড়া অন্য কোন মাধ্যম নেই। এক মানুষ থেকে অন্য
মানুষের শরীরে ডেঙ্গু ভাইরাস ছড়ায় না। একটি ডেঙ্গু আক্রান্ত মানুষকে যখন একটি
মশা কামড় দেয় তখন ওই রক্তের মাধ্যমে মশাটি ডেঙ্গু ভাইরাস গ্রহণ করে।
ওই মশাটি যখন অন্য আরেকটি ভালো মানুষকে কামড় দিবে তখন ওই মশার ভেতরে থাকা
ভাইরাসটি ওই মানুষের শরীরে প্রবেশ করবে। ফলে ওই মানুষটিও তখন ডেঙ্গু রোগে
আক্রান্ত হবে। এই মানুষটি যদি আবার অন্য কোন জায়গায় যাই তাহলে ওখান থেকে আবার
অন্য মশার মাধ্যমে অন্য মানুষের শরীরে ডেঙ্গুর ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়বে। আর এভাবেই
ডেঙ্গু ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে।
ডেঙ্গু জ্বর হলে কি গোসল করা যাবে
ডেঙ্গু জ্বর হলে গোসল করা যাবে তবে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। গোসল করলে
শরীর ঠান্ডা থাকে এবং পরিষ্কার থাকা যায় যা জ্বরের জন্য ভালো। তাছাড়া পরিষ্কার
থাকা তাড়াতাড়ি সুস্থ হওয়াতে সহায়ক। তবে জ্বর হলে শরীর দুর্বল হয়ে যায়। তাই
ডেঙ্গু জ্বর হলে গোসল করার সময় নিম্নলিখিত সতর্কতা গুলো অবশ্যই অবলম্বন করতে
হবে।
- গোসলের জন্য কুসুম গরম পানি ব্যবহার করতে হবে
- দীর্ঘক্ষণ ধরে গোসল করা যাবেনা
- জ্বর বেশি হলে ঠান্ডা পানি ব্যবহার করা যাবে না
- গোসলের পর বিশ্রাম নিতে হবে
- শরীর ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করা যাতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
ডেঙ্গু জ্বরের সময় গোসল করা নিরাপদ ও আরামদায়ক হতে পারে। তবে এটি শারীরিক
অবস্থার ওপর নির্ভর করবে। জ্বর যদি স্বাভাবিক হয় তো গোসল করা যাবে কিন্তু তীব্র
জ্বর হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে গোসল করা ভালো হবে।
ডেঙ্গু জ্বর কি ছোঁয়াচে রোগ
না !! ডেঙ্গু জ্বর ছোঁয়াচে রোগ নয়। একটি ডেঙ্গু আক্রান্ত মানুষ যদি আর একটি মানুষের কাছে যায় তাহলে ওই মানুষের দেহে সরাসরি ডেঙ্গু প্রবেশ করবে না। এটি কোন ছোঁয়াচে রোগ নয়। ডেঙ্গু জ্বর বা ডেঙ্গু ভাইরাস একজন মানুষ থেকে আরেকজন মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে অবশ্যই মশার কামড়ের প্রয়োজন।এর বিস্তারিত একটু আগে উপরে আলোচনা করেছি।
একজন ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিকে একটি মশা যখন কামড়ায় এবং ওই মশা যখন আরেকটি সুস্থ মানুষকে কামড়ায় তবেই ডেঙ্গু একজন থেকে আরেক জনের শরীরে প্রবেশ করে। তাই বুঝতে পারছেন ডেঙ্গু কোন ছোয়াচে রোগ নই। তাই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সাথে ওঠাবসাতেও কোন সমস্যা নেই। তবে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে অবশ্যই সাবধানে রাখতে হবে যেন তার শরীরে মশা না বসে।
ডেঙ্গু জ্বর হলে কি মানুষ মারা যায়
ডেঙ্গু জ্বর যদিও প্রাণঘাতী নয় তবে এটি গুরুতর হতে পারে। সঠিক চিকিৎসা না হলে
ডেঙ্গু জ্বর সাংঘাতীক হতে পারে এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। ডেঙ্গু জ্বরের
বিভিন্ন রূপ রয়েছে। কিছু রূপ অনেক বেশি বিপদজন। যেমন ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার।
যা ডেঙ্গুর একটি ভয়াবহ রূপ। এটি রোগীর রক্তের প্লেটলেটের সংখ্যা দ্রুত হ্রাস
করে।
ফলে শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্তপাত শুরু হয়। দাঁতের গোড়া বা মাড়ি থেকে রক্ত
পড়া চামড়ার নিচে রক্তের ছোপ ছোপ দাগ পড়া ইত্যাদি। ডেঙ্গু জ্বর বা ডেঙ্গু রোগের
সবচাইতে বিপদজনক রূপ হচ্ছে ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোম। এটি রোগীর শরীরে রক্তের চাপ একদম
কমিয়ে দেয় এবং শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে রক্ত চলাচলে বাধা প্রদান করে।
এই রোগটির দ্রুত চিকিৎসা না করলে নিশ্চিত মৃত্যুর সম্ভাবনা থাকে। তাই বলা যায়
ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার এবং ডেঙ্গু শক সিনড্রোম এর চিকিৎসা সময়মতো না করলে
রোগীর জীবনে ঝুঁকি থাকে। তাই সময়মত রোগের চিকিৎসা করলে, পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল
জাতীয় খাবার খেলে এবং পর্যাপ্ত যত্ন পেলে রোগীর সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা অনেক
বেশি।
তাই একথা বলা যাবে না যে ডেঙ্গু জ্বর হলেই মানুষ মারা যাবে। এ রোগ থেকে
বাঁচতে হলে সময় মত চিকিৎসা, পর্যাপ্ত তরল খাবার গ্রহণ এবং ভালো সেবা যত্ন পেলে
রোগী অবশ্যই সুস্থ হয়ে উঠবে।
ডেঙ্গু মশা বা এডিস মশা কামড়ালে কিভাবে বুঝব
ডেঙ্গু মশা বা এডিস মশা কামড়ালে তৎক্ষণাৎ ডেঙ্গু শনাক্ত করার তেমন নির্দিষ্ট কোন
বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায় না। তবে এ মশার কামড়ের কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে যেগুলো দেখে
বোঝা যেতে পারে যে এডিস বা ডেঙ্গু মশার কামড়। এডিস মশা সাধারণত দিনের বেলায়
বিশেষ করে ভোর এবং সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে কামড়িয়ে থাকে। এটির রাতের বেলা
কামড়ানোর প্রকোপ খুব কম।
এই মশা পোশাক, বিছানার চাদর বা কাপড়ের উপর দিয়ে কামড়াতে সক্ষম। এডিস মশা যে
স্থানে কামড়াবে সেই স্থানে লালচে ফোলা দাগ হতে পারে তবে এই কামর অন্যান্য সাধারণ
মশার মতোই। তাই কামড় দেখে ডেঙ্গু শনাক্ত করা যায় না। যদি ডেঙ্গু মশা কামড়িয়ে
থাকে তাহলে উপরে বর্ণিত লক্ষণ গুলো প্রকাশ পাওয়ার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে যে
ডেঙ্গু হয়েছে কিনা।
ডেঙ্গু জ্বর হলে করণীয়-অকরণীয়
ডেঙ্গু জ্বর হলে মানুষ অনেক বেশি আতঙ্কিত হয়ে যায়। এটি খুবই মারাত্মক একটি রোগ।
কিন্তু সঠিক চিকিৎসা ও যত্নের ফলে এ রোগের হাত থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়। তাই এই
রোগ হলে কিছু করণীয় ও অকরণীয় রয়েছে। করণীয়-অকরণীয় গুলো মেনে চলতে পারলে রোগী খুব
সহজে সুস্থতা লাভ করে। চলুন তাহলে দেখে নেয়া যাক ডেঙ্গু জ্বর হলে করণীয় ও
অকরণীয় গুলো।
ডেঙ্গু জ্বর হলে করণীয় সমূহ
- যতটা দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
- পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম করতে হবে
- পর্যাপ্ত পানি পান এবং তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে
- পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে হবে পর্যাপ্ত
- শরীরের জ্বর নিয়ন্ত্রণ করতে হবে
- মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হবে
- সব সময় পরিষ্কার থাকার চেষ্টা করতে হবে
ডেঙ্গু জ্বর হলে অকরণীয় সমূহ
- অ্যাসপিরিন বা ইবুপ্রোফেন ব্যবহার করা যাবে না
- শক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন
- শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত কমানোর চেষ্টা করবেন না
- অতিরিক্ত পরিশ্রম করা যাবে না
- সাধারণ মশার কামড় অবহেলা করা যাবে না
- চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন ওষুধ গ্রহণ করা যাবে না
- অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় ও ভাজাপোড়া জিনিস খাওয়া যাবে না
এডিস মশা কখন কামড়ায়
এডিস মশা দিনের বেলা কিছু নির্দিষ্ট সময় কামড়ে থাকে। বিশেষ করে সূর্য উদয়ের
পরপরই। এ সময় এডিস মশা অনেক বেশি সক্রিয় থাকে। সন্ধ্যার পূর্বেও এডিস মশা আরো
বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং কামড়ায়। তাছাড়া দিনের আলোতেও ছায়াময় ও আর্দ্র
পরিবেশে এডিস মশা কামড়াতে পারে। এই মশা দিনের বেলা যতটা থাকে রাতের বেলা
ততটা থাকে না।
তবে রাতের বেলা অনেক আলোময় হলে এবং দিনের বেলা পর্যাপ্ত খাবার সংগ্রহ করতে না
পারলে রাতের বেলায়ও মশা কামড়িয়ে থাকে। তাই এডিস মশার কামড় থেকে বাঁচতে বিশেষ
করে সূর্যোদয়ের পরপর এবং সূর্যাস্তের পূর্বে বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
ডেঙ্গু হলেই কি হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে
ডেঙ্গু হলেই যে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে বিষয়টা আসলে তা নয়। কিন্তু কোন কোন
ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি হওয়াটা জরুরী হয়ে পড়ে। ডেঙ্গুর উপসর্গ ও জটিলতা বা
অবস্থার উপর নির্ভর করে হাসপাতালের ওপর ভর্তি হওয়া না। কিছু কিছু লক্ষণ দেখা
দিলে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি হওয়া উচিত। আর তেমন কোনো জটিল উপসর্গ দেখা না দিলে
বাসায় থেকেও ভালো হয়।
যদি ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার, ডেঙ্গু শক সিনড্রোম (যা উপরে আলোচনা করা হয়েছে),
প্রচন্ড বমি বা ডায়রিয়া, তীব্র পেট ব্যথা বা শ্বাসকষ্ট, প্লেটলেট এর সংখ্যা
অধিক পরিমাণে কমে যাওয়া এ ধরনের সমস্যা যদি দেখা দেয় তাহলে দেরি না করে যত যত
সম্ভব হাসপাতালে ভর্তি হওয়া উচিত। তাছাড়া গর্ভবতী মহিলা, শিশু বা বয়স্ক হলে
তাদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
কারণ তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। কিন্তু এরকম তীব্র কোন উপসর্গ দেখা না
দিলে এবং শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে, বাসায় এসে বিশ্রাম নেয়ার পাশাপাশি
পর্যাপ্ত তরল পান করে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চললে বাসায় থেকেও সুস্থ হয়ে
যায়।
ডেঙ্গু জ্বরের ঘরোয়া প্রতিকার
ডেঙ্গু জ্বর থেকে বাঁচতে প্রত্যেককে তার নিজ নিজ জায়গা থেকে সতর্ক থাকা জরুরি।
সম্মিলিতভাবে সবাই এর প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরও ঘরোয়া ভাবে এর
প্রতিকারমূলক কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। ঘরোয়া ভাবে ডেঙ্গু জ্বরের প্রতিকার
হিসেবে যেই কাজগুলো করতে পারেন তা হল -
- বাড়ির আশপাশ অবশ্যই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে
- কোন জায়গায় পানি জমতে দেয়া যাবে না বিশেষ করে ফুলের টপ, পুরাতন টায়ার, ক্যান, পুরাতন ভাঙ্গা পাত্র ইত্যাদি। মশা স্থির পরিষ্কার পানিতে বংশবিস্তার করে।
- দিনের বেলা সূর্যোদয়ের পর এবং সূর্যাস্তের পূর্বে অবশ্যই মশার কামড় থেকে সতর্ক থাকতে হবে এবং ফুলহাতা প্যান্ট ও শার্ট পড়তে হবে।
- মশা নিরোধক ক্রিম বা স্প্রে ব্যবহার করতে হবে
- দিনে বা রাতে যখনই ঘুমান না কেন অবশ্যই মশারি বেঁধে ঘুমাতে হবে।
- ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিকে বেশি সতর্ক থাকতে হবে যাতে তার গায়ে মশা না পড়ে। এই কাজগুলো যে যার মত নিজ নিজ জায়গা থেকে করতে হবে।
সারসংক্ষেপ - ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ কারণ রোগ নির্ণয় প্রতিকার ও প্রতিরোধ
প্রিয় পাঠক এতক্ষণে ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ কারণ রোগ নির্ণয় প্রতিকার ও প্রতিরোধসহ
ডেঙ্গু রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত সকল কিছু জানলেন। ডেঙ্গু আসলেই একটি ভয়ংকর
রোগ। কিন্তু সঠিক চিকিৎসা ও কিছু নিয়ম কানুন মেনে চললে এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া
যায়। এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার পূর্বে আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে এবং প্রতিরোধ
ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
এ পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগের কার্যকরী কোন এন্টিভেনম নেই এবং এর তেমন কোন প্রতিকারও
নেই তাই এর থেকে বাঁচার সবচাইতে বড় উপায় হচ্ছে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
এটি কারো একার পক্ষে সম্ভব নয়, তাই সকলের একসাথে এ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কোন
লোক যদি ডেঙ্গু আক্রান্ত হয় তাহলে দেরি না করে যতটা সম্ভব তাড়াতাড়ি ডাক্তারের
শরণাপন্ন হতে হবে।
আপনাদেরকে ডেঙ্গু সম্পর্কে সবকিছু সুন্দর ও বিস্তারিতভাবে জানানোর চেষ্টা করেছি। আশা করি সবকিছু বুঝতে পেরেছেন এবং উপকৃত হয়েছে। পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আজকে এ পর্যন্তই। আল্লাহ হাফেজ 😍
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url