গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার উপকারিতা - খেজুর খাওয়ার নিয়ম
গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার উপকারিতা দুর্দান্ত।গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার প্রচলন অনেক আগে থেকেই রয়েছে। নিয়মিত খেজুর খেলে সন্তান জন্মদান প্রক্রিয়া অনেকটাই সহজ হয় এবং প্রসব বেদনার সময়কাল তুলনামূলক কম হয়।
খেজুর অনেক বেশি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি খাবার যা একজন গর্ভবতী মা ও শিশুর জন্য খুবই উপকারী। গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও নিয়ম এবং খেজুরের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
সূচীপত্র - গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম
- খেজুরে থাকা পুষ্টিগুণ সমূহ
- গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার উপকারিতা
- গর্ভাবস্থায় ড্রাই ফ্রুটস বাদাম খেজুর খাওয়ার উপকারিতা
- খালি পেটে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা
- গর্ভাবস্থায় কেন খেজুর খেতে হয়
- গর্ভধারণের বিভিন্ন পর্যায়ে খাওয়ার জন্য খেজুর
- গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার নিয়ম
- গর্ভাবস্থায় খেজুর গ্রহণের বিভিন্ন উপায়
- গর্ভাবস্থায় কোন ধরনের খেজুর খেতে হবে
- গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
- ভালো খেজুর চেনার সহজ উপায়
- পরিশেষে - গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও খেজুর খাওয়ার নিয়ম
খেজুরে থাকা পুষ্টিগুণ সমূহ
খেজুর আয়রন সমৃদ্ধ এটি একজন গর্ভবতী মায়ের রক্তস্বল্পতা রোধ করতে সক্ষম। এতে
রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এছাড়াও
এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং রক্তচাপ কমাতে সাহায্য
করে। নিচে ১০০ গ্রাম খেজুরের পুষ্টি উপাদান গুলো এক নজরে দেখে নিন।
- ফাইবার ৬.৭ গ্রাম
- প্রোটিন ১.৮ গ্রাম
- লৌহ ০.৯ মিলি গ্রাম
- ফোলেট ১৫ মিলি গ্রাম
- ফ্যাট ০.২ গ্রাম
- ভিটামিন কে ২.৭ মিলি গ্রাম
- পটাশিয়াম ৬৯৬ মিলি গ্রাম
- ম্যাগনেসিয়াম ৫৪ মিলি গ্রাম
তাহলে বুঝতে পারছেন এত এত ভিটামিন সমৃদ্ধ এই ফলটি স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারী।
উপকারিতা গুলো পাওয়ার জন্য নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে খেজুর খাওয়া শুরু করুন।
গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে। খেজুরে রয়েছে উচ্চ মানের পটাশিয়াম যা রক্তচাপ উন্নত করে। গর্ভাবস্থায় রক্তচাপের সমস্যা এড়াতে এটি খুবই কার্যকরী। আইরন বা লৌহের ঘাটতি পূরণেও খেজুর ভালো কাজ করে। এবারে গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার উপকারিতা গুলো ধাপে ধাপে জেনে নিন।
আরো পড়ুন : গর্ভাবস্থায় গাজর খাওয়ার উপকারিতা
- শক্তি বৃদ্ধি করে: খেজুরের প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক শর্করা থাকে যা শরীরের তাৎক্ষণিক শক্তি বৃদ্ধি করে। গর্ভবতী মেয়েদের অতিরিক্ত শক্তির প্রয়োজন হয়, খেজুর এই প্রয়োজন পূরণ করতে সহায়ক হতে পারে।
- প্রসব বেদনার ব্যথা কমায়: প্রতিদিন খেজুর খেলে মহিলাদের লেবার পেইন অনেকটাই কম হয়।প্রতিদিন খেজুর খাওয়ার ফলে ইউটেরাসের সংবেদনশীলতা কমে এবং তা শক্তিশালী হয়।
- রক্ত উৎপাদন করে: সন্তান জন্মদানের জন্য মায়েদের শরীর থেকে অনেক রক্ত বের হয়ে যায় এতে করে অনেকের নানা ধরনের শারীরিক জটিলতা বা রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। নিয়মিত খেজুর খেলে রক্ত তৈরি হয় এবং শক্তি সঞ্চয় হয় ।
- জরায়ুর পেশী শক্তিশালী করে: খেজুরে অক্সিটোসিন নামক এক ধরনের বিশেষ হরমোন থাকে যা জরায়ুর সংকোচন নিয়ন্ত্রণ করে। এই হরমোন প্রসবের সময় প্রসব বেদনার কমাতে সাহায্য করে এবং স্বাভাবিক প্রসবের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে।
- হাড় ও দাঁতের গঠনে সহায়তা করে: খেজুরে বিদ্যমান ভিটামিন এ এবং পটাশিয়াম শরীরের হাড় এবং দাঁতের গঠনে সহায়তা করে।
- গর্ভের বাচ্চার ওজন বৃদ্ধি করে: অনেকের বাচ্চার ওজন সহজে বাড়তে চায় না বা অতিরিক্ত বমি করার কারণে বাচ্চার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সঠিক বৃদ্ধি হয় না। নিয়মিত খেজুর খেলে গর্ভের বাচ্চার ওজন বৃদ্ধি পায় এবং শারীরিক পুষ্টি ঠিক থাকে।
- সারভিক্স নরম করে: গর্ভাবস্থায় শেষের দিকে নিয়মিত ৬০ থেকে ৮০ গ্রাম খেজুর খেলে সারভিক্স নরম হয়। সারভিক্স নরম হলে তা প্রসবের জন্য অনুকূল হয় এর ফলে কৃত্রিমভাবে কোন ওষুধ দিয়ে প্রসব ব্যথা তৈরি করার প্রয়োজন পড়ে না।
- হাঁপানি ও কাশির সমস্যা কমায়: নিয়মিত খেজুর খেলে কাশি ও হাঁপানির সমস্যা কিছুটা কমে। যেসব গর্ভবতী মহিলারা হাঁপানি ও কাশির সমস্যায় ভুগছেন তারা খেজুর খেলে অনেকটাই উপকার পাবেন।
- চুল পড়ার সমস্যা কমায়: গর্ভাবস্থায় অনেকেই চুল পড়ার সমস্যায় ভুগেন। খেজুর আয়রনের একটি খুব ভালো উৎস যা রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে যাতে করে মাথার স্কেলপেও রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় এবং চুল পড়া কমে।
- মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করে: নিয়মিত খেজুর খাওয়ার ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। এতে গর্ভবতী মায়ের শরীরের পাশাপাশি মনও ভালো থাকে যা অনাগত সন্তানের সুন্দর গঠনের জন্য অনেক উপকারী।
গর্ভাবস্থায় ড্রাই ফ্রুটস বাদাম খেজুর খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভবতী মায়েদের খাদ্য তালিকায় ড্রাইফ্রুটস খেজুর বাদাম থাকা উচিত। আপেল,
আখরোট, এপ্রিকট খেজুর, বাদাম. কিসমিস ও পেস্তা বাদাম গর্ভবতী মায়ের
স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। কারণ এগুলোতে ভিটামিন, খনিজ যেমন ম্যাগনেসিয়াম,
ক্যালসিয়াম ও আয়রন, ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। নিচে উপকারিতা গুলো
দেয়া হলো।
- ড্রাই ফ্রুট বাদাম ও খেজুর প্রচুর ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় এগুলো কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।
- ড্রাই ফ্রুটসের খেজুর বাদাম ও কাজুতে প্রচুর আয়রন থাকে। গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীর থেকে শিশু শরীরে রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ করতে আয়রন সহায়তা করে।
- ড্রাই ফ্রুটসের মধ্যে পটাশিয়াম রয়েছে যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং পেশীর নিয়ন্ত্রণ শক্তি বৃদ্ধি করে। গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ কিডনিতে ও হার্টে খুব আঘাত করে যা স্ট্রোক, হার্ট ও কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।
- ড্রাইফ্রুট শিশুর হাড় ও দাঁতের গঠনের জন্য প্রয়োজনীয়। এগুলো প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ সরবরাহ করে যা ভ্রুনের বৃদ্ধি বিকাশ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
- জরায়ুর পেশী শক্তিশালী করার জন্য খেজুর খুবই পরিচিত। যা স্বাভাবিকভাবে প্রসব ঘটাতে সাহায্য করে এবং প্রসবের পরবর্তী রক্তস্বল্পতা দূর করতেও ভূমিকা রাখে।
- ড্রাই ফুডস খাওয়ার ফলে গর্ভাবস্থায় হাঁপানি ও কাশির ঝুঁকি হ্রাস পায়।
খালি পেটে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা
খেজুর স্বাস্থ্যের জন্য দারুন উপকার করে। পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এই ফলটিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ছাড়াও রয়েছে ভিটামিন এ ও ভিটামিন বি, ম্যাগনেসিয়াম,, পটাশিয়াম সালফার, ম্যাঙ্গানিজ, আইরন এবং ফাইবার। তাই শরীরে ভরপুর এনার্জি রাখতে প্রতিদিন খেজুর খান। চলুন খালি পেটে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা গুলো বিস্তারিত জেনে নিই।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে: খেজুরে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে যা
আমাদের বদহজম ও কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে। তুলনামূলকভাবে একটু
শক্ত খেজুর সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটেখেজুর খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য
সমস্যা অনেকাংশেই হ্রাস পায়। এছাড়াও খেজুর মুখে লালাকে খাবারের সাথে ভালোভাবে
মেশাতে সাহায্য করে যাতে করে বদহজমের সমস্যাও দূর হয়।
মস্তিষ্ক সচল রাখে: খেজুরের সবচেয়ে বড় গুণ হলো এটি আমাদের মস্তিষ্ককে
প্রাণবন্ত রাখে। ভরপুর সুস্বাদু এই ফলটি আমাদের শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে শক্তির
যোগান দিতে সক্ষম।
ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে: খেজুরে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার আঁশ
থাকে।খেজুর খেলে ক্ষুধা কম লাগে এবং অতিরিক্ত খাওয়া এড়ানো যায় যাতে করে ওজন
নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।
গর্ভবতী নারীদের জন্য উপকার করে: খেজুর আয়রনের খুব ভালো উৎস। তাই
গর্ভাবস্থায় নিয়মিত খেজুর খেলে নারীদের শরীর রক্তে ভরপুর থাকে। এছাড়াও খেজুর
ভিটামিন ও খনিজ সমৃদ্ধ যা গর্ভবতী মায়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করে: খেজুরে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে যা
হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করে। খালি পেটে নিয়মিত খেজুর খেলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা
বৃদ্ধি পায়।
ত্বক টানটান করে: খেজুরে রয়েছে ভিটামিন বি যা ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। ভিটামিন বি কুঁচকে যাওয়া ত্বককে ভেতর থেকে টানটান করে। সকালে খালি পেটে নিয়মিত খেজুর খেয়ে দেখবেন ত্বকের ভাজ আস্তে আস্তে মিলিয়ে যাবে।
হার্টের সমস্যা দূর করে: খেজুর দুর্বল হার্ট কে মজবুত করতে সক্ষম।
যাদের হার্টের সমস্যা রয়েছে তারা প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেজুর খেয়ে দেখবেন
কিছুদিনের মধ্যে উপকার পাবেন।
খুসখুসে কাশি দূর করে: যাদের কাশির সমস্যা রয়েছে তারা দু-একটি খেজুর এক
গ্লাস পানিতে সারারাত ভিজিয়ে রেখে পরদিন সকালে ওই পানি সহ খেজুর খেয়ে দেখবেন।
১৫ দিনের মধ্যে উপকার পাবেন।
চুলের গোড়া মজবুত করে: খেজুরের মধ্যে যে তেল থাকে তার চুলের জন্য খুবই
উপকারী। যাদের চুলের সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত খেজুর খেয়ে দেখতে পারেন। খেজুর
খুবই পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি ফল এটি চুলের গোড়া মজবুত করে এবং চুল পড়ার সমস্যা
রোধ করে।
ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে: খেজুর ক্যান্সারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ
করে। এই ফল মুখ গহ্বরের ক্যান্সার রোধে বেশ কার্যকরী।
গর্ভাবস্থায় কেন খেজুর খেতে হয়
সন্তান জন্মদানের জন্য একজন মায়ের অনেক বেশি শক্তির প্রয়োজন হয়। গর্ভাবস্থায়
নিয়মিত খেজুর খেলে মায়ের শরীরে শক্তির মাত্রা বৃদ্ধি পাই। খেজুরে প্রচুর
পরিমাণ ে কার্বোহাইড্রেট. সুক্রোজ এবং ফ্রূকটোজ রয়েছে যেগুলো শক্তি উৎপাদনে
সহায়তা করে। এছাড়াও এতে পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্লুকোজ থাকে। তাই গর্ভাবস্থায় খেজুর
খাওয়ার বিকল্প নেই।
গর্ভাবস্থার শেষের দিকে নিয়মিত ৬০ থেকে ৮০ গ্রাম খেজুর খেলে সারভিক্স মজবুত হয়
এবং প্রসব ক্রিয়া সহজ হয়। এর ফলে কৃত্রিমভাবে কোন ওষুধ দিয়ে প্রসব ব্যথা
সৃষ্টি করার প্রয়োজন পড়ে না। এই প্রক্রিয়া স্বাভাবিকভাবেই ঘটে। নিয়মিত খেজুর
গ্রহণ স্বাভাবিক প্রসবের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে।
আরো পড়ুন : গর্ভাবস্থায় লটকন খাওয়ার উপকারিতা
তাছাড়া সন্তান প্রসবের সময় মায়েদের শরীর থেকে অনেক রক্ত বের হয়ে যায়। এজন্য গর্ভাবস্থার পাশাপাশি সন্তান জন্মদানের পরেও নিয়ম করে খেজুর খেলে শরীরে দ্রুত রক্ত উৎপাদন হয় এবং মা তার হারানো শক্তি ফিরে পায়। এছাড়াও খেজুরে রয়েছে উপকারি ফ্যাটি এসিড। এটা সারভিক্স কে নরম ও কমনীয় করে তুলে যার ফলে প্রসব বেদনা কিছুটা কম অনুভূত হয়।
গর্ভধারণের বিভিন্ন পর্যায়ে খাওয়ার জন্য খেজুর
গর্ভস্থায় কোন সময় থেকে খেজুর খাওয়া শুরু করবেন এই নিয়ে অনেকেই দ্বিধায়
থাকেন। গর্ভাবস্থার বিভিন্ন পর্যায়ে খেজুর খাওয়া মায়ের স্বাস্থ্যের জন্য এবং
অনাগত শিশুর জন্য উপকারী হবে যদি তা সঠিকভাবে নিয়ম মেনে খাওয়া হয়।
প্রতিটি ত্রৈমাসিকে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও নিয়ম সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা
হলো:
প্রথম ত্রৈমাসিক (১ থেকে ১২ সপ্তাহ): এ সময় দিনে ১-২ টি খেজুর খাওয়া যায়। খেজুরে থাকা প্রাকৃতিক শর্করা দ্রুত শক্তির যোগান দেয় এবং ফাইবার হজম ভালো করে যা প্রথম মাসে কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করতে সহায়তা করে। তবে প্রথম ত্রৈমাসিকে অতিরিক্ত খেজুর খাওয়া থেকে দূরে থাকুন কারণ এটি রক্তের শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে।
দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক (১৩ থেকে ২৬ সপ্তাহ): দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে ২-৩ টি খেজুর খাওয়া যেতে পারে। এ সময় খেজুরে থাকা উচ্চ পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম মায়ের শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং গর্ভে শিশুর হাড়ের গঠন ও মস্তিষ্কের বিকাশে সহায়তা করে।
আরো পড়ুন : গর্ভবতী মায়ের জন্য জাফরানের উপকারিতা
তৃতীয় ত্রৈমাসিক (২৭ থেকে ৪০ সপ্তাহ): এ সময় খেজুর খাওয়া খুবই উপকারী। তৃতীয় ত্রৈমাসিকে নিয়মিত ৩-৪ টি খেজুর খাওয়া উচিত। গবেষণায় দেখা গেছে, গর্ভাবস্থার শেষের দিকে নিয়মিত খেজুর খেলে প্রসব বেদনা কম হয় এবং প্রসবের সময় কমায়।
এছাড়াও প্রসবের কাছাকাছি সময়ে দিনে ৪-৬ টি খেজুর খাওয়া জরায় সংকোচন উদ্দীপ্ত
করতে পারে যা স্বাভাবিক প্রসবকে ত্বরান্বিত করতে পারে।
গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার নিয়ম
গর্ভাবস্থায় কোন সময় খেজুর খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী বা খাওয়ার নিয়ম কি এরকমটা অনেকেই জানতে চান। এ প্রশ্নের উত্তরে বলা যায় গর্ভাবস্থায় যে কোন সময় খেজুর খাওয়া যায় তবে সকাল, দুপুর এবং বিকেল সেরা সময়। বিশেষ করে নাস্তায় বা নাস্তার কয়েক ঘন্টা পরে খাওয়া ভালো।
গর্ভাবস্থায় খেজুর খুবই উপকারী তবে সব খাবারেরই একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ বজায়
রাখা উচিত। প্রতিদিন ২ থেকে ৩ টির বেশি খেজুর খাবেন না। তাছাড়া যদি কোন শারীরিক
জটিলতা দেখা দেয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।
গর্ভাবস্থায় খেজুর গ্রহণের বিভিন্ন উপায়
গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়া স্বাস্থ্যকর হতে পারে, কারণ এতে অনেক পুষ্টিগুণ
রয়েছে যা মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। খেজুর সাধারণভাবে সরাসরি
খাওয়া যায় তবে নেচে কিছু উপায় বর্ণনা করা হলো যেগুলো খেজুরের পুষ্টিমান
আরো বৃদ্ধি করবে এবং স্বাদে নতুনত্ব নিয়ে আসবে।
সরাসরি খাওয়া: প্রতিদিন ২-৪ টি খেজুর খাওয়া যেতে পারে। এটি সহজ এবং
দ্রুত শক্তি দেয়।
দুধের সাথে মিশিয়ে: খেজুর এবং দুধ একসাথে মিশিয়ে খেলে এর পুষ্টিগুণ আরো
বৃদ্ধি পায়। এটি হালকা গরম করে সকালে খেতে পারেন।
খেজুর ও বাদামের মিশ্রণ: খেজুর ও বাদাম একসাথে মিশিয়ে হালকা খাবার হিসেবে
খাওয়া যেতে পারে। এটি একটি পুষ্টিকর ও সুস্বাদু স্ন্যাকস।
খেজুরের স্মুদি: খেজুর দুধ এবং যেকোনো ফল মিশিয়ে একটি স্মুতি তৈরি করতে
পারেন। এটি খুবই স্বাস্থ্যকর এবং সুস্বাদু।
খেজুরের মিষ্টান্ন: খেজুরের সাথে ঘি মিশিয়ে ছোট ছোট লাড্ডু তৈরি করতে
পারেন এটি প্রাকৃতিক মিষ্টান্ন হিসেবে খাওয়া যেতে পারে।
সালাদে মিশিয়ে: আপনার পছন্দের ফল অথবা সবজির সালাদের সাথে কুচি করে খেজুর কেটে মিশিয়ে নিতে পারেন এটা সালাদের স্বাদ বৃদ্ধি করে এবং পুষ্টিযোগ করে।
উপায়গুলো গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার বিভিন্ন পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহার করতে
পারেন। গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত বিশেষ করে
ডায়াবেটিস বা অন্যান্য গর্ভকালীন সমস্যা দেখা দিলে।
গর্ভাবস্থায় কোন ধরনের খেজুর খেতে হবে
গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়া মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। খেজুরে
প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান যেমন আয়রন, ফাইবার, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম,
ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন থাকে যা গর্ভাবস্থায় খুব দরকারি। তবে নির্দিষ্ট ধরনের
খেজুর বিশেষ উপকারী হতে পারে।
মেদজুল খেজুর: এটি আকারে বড় এবং মিষ্টি স্বাদ যুক্ত। এই খেজুর প্রচুর ক্যালরি ও শক্তি সরবরাহ করে। গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত শক্তি সরবরাহের জন্য মেদজুল খেজুর ভালো বিকল্প হতে পারে।
আঞ্জির খেজুর : আঞ্জির খেজুর ও পুষ্টিকর, এতে রয়েছে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ। যা শিশুর হাড়ের গঠন ও রক্তের গুণমান উন্নত করতে সহায়ক।
আরো পড়ুন : গর্ভাবস্থায় করনীয় অকরনীয় সমূহ
মাজদুল খেজুর: পুষ্টিকর এবং স্বাদে মিষ্টি। এতে প্রচুর ফাইবার ও আয়রন থাকে যা গর্ভাবস্থার রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
সুক্কারি খেজুর: এই খেজুরটি মিষ্টি এবং নরম, এতে প্রচুর ফাইবার ও
ক্যালসিয়াম রয়েছে, যা হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
যদিও গর্ভাবস্থায় খেজুর পুষ্টি যোগাতে সক্ষম তবুও দিনে ২-৩ টির বেশি খাওয়া থেকে
বিরত থাকতে হবে। কারণ এতে প্রাকৃতিক চিনি থাকে তাই অতিরিক্ত পরিমাণে না খাওয়াই
ভালো। তবে যাদের ডায়াবেটিস বা অন্য কোন সমস্যা রয়েছে তাদের খেজুর খাওয়ার
পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।
গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
কোন সমীক্ষায় এটা দাবি করে না যে গর্ভাবস্থার জন্য খেজুর অনিরাপদ। মূলত
প্রথম এবং তৃতীয় ত্রৈমাসিকে সংযত হয়ে খেজুর খাওয়া একজন গর্ভবতী মায়ের এবং
অনাগত শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য দুর্দান্ত উপকারী। তবে মাত্রাতিরিক্ত খেজুর খাওয়ার
ফলে কিছু কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। খেজুর খাওয়ার ফলে সম্ভাব্য
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলো নিচে দেয়া হলো।
- খেজুরে প্রাকৃতিক চিনি ও ক্যালোরি বেশি থাকায় গর্ভাবস্থায় অপ্রত্যাশিত ওজন বৃদ্ধি করে দিতে পারে।
- খেজুরে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে তাই অতিরিক্ত খেলে পেট ফাঁপা, গ্যাস বা ডায়রিয়া হতে পারে।
- খেজুরে থাকা প্রাকৃতিক চিনি রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। যা গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস থাকলে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
- কিছু লোকের এলার্জিক প্রতিক্রিয়া হতে, পারে যদিও এটি বিরল।
- খেজুর জরায়ু সংকোচন বাড়াতে পারে যা স্বাভাবিক প্রসবকে ত্বরান্বিত করে। তবে এটি প্রি-টার্ম লেবারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে যদি গর্ভকালীন কোন জটিলতা থাকে।
- এ কারণে গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা জরুরী। আপনি যদি খেজুর খেয়ে কোন সমস্যা অনুভব করেন তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।
ভালো খেজুর চেনার সহজ উপায়
আপনি যদি খেজুর থেকে যথাযথ উপকারিতা গ্রহণ করতে চান তবে অবশ্যই আপনাকে সেরা খেজুরটি বাছাই করতে হবে।পৃথিবীর অনেক দেশেই খেজুরের উৎপাদন হয়ে থাকে তবে সব জায়গার খেজুরের গুনগত মান এক হয় না। নিচে কিছু বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হলো যেগুলো আপনাকে ভালো খেজুর চিনতে সহায়তা করবে।
- ভালো খেজুরের রং সাধারণত গাঢ় বাদামি বা লালচে বর্ণের হয়। খুব হালকা রঙের খেজুর অপরিপক্ক বা নিম্নমানের হতে পারে।
- ভালো খেজুরের চামড়া একটু কুঁচকানো হবে তবে, শক্ত হবে না। চামড়ায় অতিরিক্ত ভাজ খেজুর শুকিয়ে যাওয়ার লক্ষণ হতে পারে।
- ভালো খেজুরের ত্বক সাধারণত সামান্য তেলতেলে হয়। খেজুর অতিরিক্ত তেলতেলে বা শুকনো হলে এটির মান ভালো হবে না।
- খেজুরে একটি প্রাকৃতিক মিষ্টি গন্ধ থাকে। যদি টক বা অস্বাভাবিক গন্ধ আসে তবে সেটা নষ্ট খেজুর বলে বিবেচিত হবে।
- ভালো মানের খেজুরে গায়ে কোন ধরনের ছিদ্র বা ফাটল থাকবে না।
আশা করি উপরোক্ত নির্দেশনা গুলো দেখে আপনি সহজেই ভালো খেজুর চিনতে পারবেন।
পরিশেষে - গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও খেজুর খাওয়ার নিয়ম
গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার উপকারিতা, খেজুর খাওয়ার নিয়ম সহ খেজুর সম্পর্কে বিস্তারিত দেখলেন। আশা করি সবকিছু সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা পেয়েছেন এবং উপকৃত হয়েছেন। আসলে খেজুর একটি সুপার ফুড। এর পুষ্টিগুণ এবং উপকারিতা অবিশ্বাস্য রকমের। আর তা যদি হয় গর্ভাবস্থায়। খেজুর গর্ভবতী মা এবং গর্ভে থাকা শিশুর জন্য অনেক অনেক বেশি সহায়ক যা আপনারা উপরে দেখেছেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url