রাতে ঘুমানোর আগে কিসমিস খেলে কি হয় - প্রতিদিন কতটুকু কিসমিস খাওয়া উচিত

রাতে ঘুমানোর আগে কিসমিস খেলে কি হয় তা আমাদের অনেকেরই অজানা। কিসমিস অনেক বেশি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ও উপকারী একটি খাবার। এটি আমাদের শরীরের জন্য অনেক অনেক বেশি উপকারী, এক কথায় সুপার ফুড ও বলা চলে।

রাতে ঘুমানোর আগে কিসমিস খেলে কি হয়

আজকের এই পোস্ট এ আপনাদের সাথে কিসমিস খেলে কি হয়, প্রতিদিন কতটুকু কিসমিস খাওয়া উচিত এ সকল প্রশ্নের উত্তর সহ কিসমিস সম্পর্কিত খুঁটিনাটি সকল বিষয় বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব। চলুন শুরু করা যাক।

পোস্ট সূচিপত্র - রাতে ঘুমানোর আগে কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা

রাতে ঘুমানোর আগে কিসমিস খেলে কি হয়

রাতে ঘুমানোর আগে কিসমিস খেলে কি হয় তা আমাদের অনেকেরই জানা আবার অনেকেরই অজানা। কিসমিস খুবই সুস্বাদু, পুষ্টিকর এবং অনেক বেশি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি ড্রাই ফ্রুট। কিসমিস আঙ্গুর থেকে তৈরি হয়। আঙ্গুর শুকানোর পরে তা কিসমিস হিসেবে আমরা চিনে থাকি। কিসমিসের উপকারিতা বলে শেষ করার মত নয়।

তাই আজকে আপনাদেরকে রাতে ঘুমানোর আগে কিসমিস খেলে এটি আমাদের শরীরের ওপর কি কি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে তা ধাপে ধাপে বলব। রাতে ঘুমানোর আগে কিসমিস খাওয়ার ইতিবাচক প্রভাব গুলো হল -

  • রাতে ঘুমানোর আগে কিসমিস খেলে প্রথমত যে উপকারটি হয় তা হচ্ছে ভালো ঘুম এর নিশ্চয়তা। কিসমিসে থাকে মেলাটোনিন হরমোন যা ঘুমের চক্র নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে রাতের বেলা সুন্দর একটি ঘুম উপভোগ করা যায়।
  • কিসমিসে থাকে পটাশিয়াম যা আমাদের শরীরে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। তাই রাতের বেলা কিসমিস খেলে শরীরের রক্তচাপ জনিত সমস্যা হ্রাস পাবে।
  • কিসমিসে রয়েছে ফাইবার যা পাক যন্ত্রের উন্নতি ঘটাতে সাহায্য করে এবং হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।
  • এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
  • রাতের বেলা কিসমিস খাওয়ার ফলে চোখ সুস্থ থাকে পাশাপাশি চোখের যে সমস্যাগুলো যেমন চোখ ওঠা, চোখ ব্যথা এসব থেকেও অনেকটা উপকার পাওয়া যায়।
  • রাতের বেলা কিসমিস খাওয়ার ফলে শরীরের বিভিন্ন গিটে গিটে ব্যথা থেকে আরাম পাওয়া যায়।

প্রতিদিন কতটুকু কিসমিস খাওয়া উচিত

প্রতিদিন কতটুকু কিসমিস খাওয়া উচিত প্রশ্নটি অনেকেই করে থাকেন। যে জিনিসের অনেক বেশি উপকারিতা রয়েছে তা অতিরিক্ত গ্রহণের ফলে আমাদের শরীরের উপর নেতিবাচকও প্রভাব ফেলতে পারে। তাই প্রতিটা জিনিসেরই একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ থাকে। তাই ভালো উপকারিতা গ্রহণ করার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণের চেয়ে বেশি খাওয়া উচিত হবে না।

আরো পড়ুন : খালি পেটে কাঁচা ছোলা খাওয়ার উপকারিতা

প্রতিদিন একটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য ৩০ থেকে ৪০ গ্রাম বা ১০ থেকে ১৫ টি কিসমিস খাওয়া উপকারী হবে । এটি অনেক বেশি উপকারী। অনেক বেশি উপকারী বলে যে ইচ্ছে মতন খাবেন সেটি ঠিক হবে না। মাত্রাতিরিক্ত খাবার ফলে উপকারের জায়গায় দেখা যাবে ক্ষতি সম্মুখীন হয়ে বসে আছেন।

কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা

আমরা কিসমিস বিভিন্নভাবে খেয়ে থাকি। বিশেষ করে বিভিন্ন ধরনের মিষ্টান্ন যেমন, লাচ্ছা, সেমাই, পোলাও, হালুয়া ইত্যাদি। তাছাড়া আমরা এতক্ষন ঘুমানোর আগে কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা ও দেখলাম। কিসমিস ভিজিয়ে রেখেও খাওয়া যায়। কিসমিস ভিজে রেখে খেলেও অনেক বেশি উপকারিতা পাওয়া যায়। চলুন এক নজরে কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা গুলো দেখে নিই।

  1. কিসমিস সুস্থভাবে ওজন বাড়াতে সাহায্য করে।
  2. কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
  3. ক্যান্সার প্রতিরোধী হিসেবে কাজ করে
  4. শরীরে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
  5. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
  6. হাড়ের সুস্থভাবে বেড়ে ওঠা এবং হাড়কে শক্ত মজবুত করে
  7. ভালো ঘুমের জন্য অনেক সহায়ক
  8. ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে
  9. শরীরে এনার্জি বৃদ্ধি করে
  10. চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে
  11. রক্তস্বল্পতা দূর করে
  12. হৃদরোগ প্রতিরোধ করে

কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা

কিসমিস ভিজিয়ে ভিজে খাওয়ারও উপকারিতা রয়েছে অনেক। উপরে বললাম আমরা বিভিন্নভাবে কিসমিস খেয়ে থাকি। বিভিন্ন খাবারের সহযোগে শুকনা অবস্থাতেও খাই। উপরে আমরা সাধারণত কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা গুলো দেখলাম। এখন আমরা দেখব কিসমিস ভিজিয়ে খেলে কি কি উপকারিতা পাওয়া যায়।

কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা

আমরা সাধারণত রাতের বেলা একসাথে কাঁচা ছোলা, কিসমিস, কাঁচা বাদাম রাতে ভিজিয়ে রেখে সকাল বেলা খালি পেটে খেয়ে থাকি। কিসমিস রাতে ভিজিয়ে রেখে ভিজিয়ে রাখা পানি সহ সকালে খাওয়া যায়। ভিজিয়ে রাখা পানি ও কিসমিস খেলে সারা দিনে ক্লান্তি ভাব কম আসে। এছাড়াও কিসমিস ভিজিয়ে রেখে খাওয়ার ফলে - 

শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়, পর্যাপ্ত আয়রন থাকায় রক্তস্বল্পতা দূর হয়, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, হাড়ের শক্তি যোগায়, হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখে, ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে ইত্যাদি আরো অনেক উপকারিতা পাওয়া যায়।

কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার নিয়ম

কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার আগে এ সঠিক নিয়ম সম্পর্কে আপনার অবশ্যই জানা দরকার। এটি খুব সহজ একটি কাজ। আমরা সাধারণত রাতের বেলা কিসমিস ভিজিয়ে রাখি এবং সকালবেলা খালি পেটে খেয়ে থাকি। এ কাজটি করার জন্য প্রথমে আপনাকে একটি পরিস্কার গ্লাসে সাধারণ তাপমাত্রা বিশিষ্ট পানি নিতে হবে। ঠান্ডা বা গরম পানি নেওয়া থেকে বিরত থাকবেন।

এরপর ১০ থেকে ১৫ টি কিসমিস ভালোভাবে ধুয়ে নিবেন। আপনি যদি প্রথম প্রথম খাওয়া শুরু করেন তাহলে প্রথমদিকে অল্প পরিমাণে খাওয়া শুরু করবেন। আস্তে আস্তে এর পরিমাণ বাড়াতে পারেন। কিসমিসগুলো ধুয়ে নেওয়ার পর গ্লাসের ভেতর ভিজিয়ে রাখবেন। আপনি এটি ৬ থেকে ৮ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে পারেন।

আরো পড়ুন : ইসুবগুলের ভুসি ও তোকমা দানার উপকারিতা

সকাল বেলা খালি পেটে পানি থেকে কিসমিস গুলো আলাদা করে নিয়ে খেতে পারেন বা পানি সহ কিসমিস খেতে পারেন। পানিতেও ভালো পুষ্টি গুণ থাকে। তাই চাইলে ভেজানো পানিও পান করতে পারেন। এভাবে নিয়মিত কিসমিস ভিজিয়ে খেলে আশা করি অনেক উপকৃত হতে পারবেন।

সকালে খালি পেটে কিসমিস খেলে কি হয়

রাতে ঘুমানোর আগে কিসমিস খেলে কি হয় এবং কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা সহ কিসমিস ভিজিয়ে  খাওয়ার উপকারিতা ওপরে দেখলাম। আমরা এখন দেখব সকালে খালি পেটে কিসমিস খেলে কি হয়। আমরা কিসমিস ভিজিয়ে সাধারণত সকালে খালি পেটেই খেয়ে থাকি। তাহলে চলুন এক নজরে এইবার দেখে নিই সকালে খালি পেটে কিসমিস খেলে কি কি উপকারিতা পাওয়া যাবে।

সকালে খালি পেটে কিসমিস খেলে প্রথমেই যে উপকারিতাটি পাওয়া যাবে তা হচ্ছে, এটি সারাদিন আমাদের এনার্জি ধরে রাখতে সাহায্য করবে। পাশাপাশি সারাদিনে আমাদের পরিশ্রমের যে ক্লান্তি ভাব সেটি কমাতে সাহায্য করবে। পাক যন্ত্রের উন্নতি সাধন করবে এবং রক্তস্বল্পতা দূর করবে। বড় আর একটি উপকার হচ্ছে লিভার এবং কিডনি থেকে টক্সিন দূর করতে সাহায্য করবে।

সকালে খালি পেটে কিসমিস খাওয়ার নিয়ম

সকালে খালি পেটে কিসমিস খাওয়ার নিয়ম জানার চেষ্টা করেন অনেকে। যা ইতোমধ্যে ওপরে আপনাদের সাথে আমি আলোচনা করেছি। এটি খাওয়ার তেমন জটিল বা কঠিন কোন নিয়ম নেই। আমরা সাধারণত কিসমিস যেভাবে ভিজিয়ে সকাল বেলা খালি পেটে খায় ঠিক একই ভাবে আমরা কিসমিস সকালে খালি পেটে খেতে পারি।

এর জন্য প্রথমে আপনাকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থাৎ ১০ থেকে ১৫ টি বা তার একটু বেশি কিসমিস নিয়ে রাতে শোবার আগে একটি পুরস্কার গ্লাসে পানি নিয়ে তাতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। এবং সকালবেলা খালি পেটে সেই কিসমিস গুলো আরেকবার ধুয়ে নিয়ে খেতে পারেন। আপনি চাইলে কিসমিস ভেজানো পানীয় পান করতে পারেন। এতো ভালো পুষ্টিগুণ থাকে।

গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাবার অসাধারণ রকমের উপকারিতা রয়েছে। আমরা এতক্ষণে বিভিন্নভাবে কিসমিস খাবার বিভিন্ন উপকারিতা দেখলাম। এখন আমরা গর্ভস্থায় কিসমিস কতটা ইতিবাচক হতে পারে তা দেখব। যেহেতু কিসমিস অনেক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি খাবার সেহেতু একজন গর্ভবতী মায়ের জন্যও এটি বেশ উপকারী হবে।

গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভকালীন সময়ে একজন গর্ভবতী মায়ের বড় ধরনের যে সমস্যাটি দেখা দেয় তা হচ্ছে রক্তস্বল্পতা। কিসমিস এ পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন থাকে। আইরন রক্তস্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে। কিসমিস গর্ভবতী মায়ের পাঁচকতন্ত্র শক্তিশালী করে। গর্ভকালীন সময় গর্ভবতী মা অনেক সময় শক্তিহীনতায় ভুগেনে। অবস্থায় কিসমিস খেলে শরীরে শক্তি বৃদ্ধি পায়।

এ সময় শরীরে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়ামের ও প্রয়োজন হয় যা মা এবং শিশুর হাড়ের বৃদ্ধি ও হাড় সুস্থ রাখার জন্য বিশেষভাবে জরুরী। তাই এ সময় কিসমিস খেলে কিসমিস ক্যালসিয়াম সরবরাহ করে থাকে। অনেক সময় গর্ভবতী মা রক্তচাপ জনিত সমস্যায়ও ভুগে থাকেন। কিসমিস রক্তচাপ জনিত সমস্যা দূর করে থাকে।

গর্ভবতী মায়ের শরীর থেকে ক্ষতিকর টক্সিন দূর করে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এছাড়াও গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়ার ফলে আরো অনেক উপকারিতা পাওয়া যায়। তাই এই উপকারিতা গুলো পাওয়ার জন্য গর্ভাবস্থায় নিয়মিত গর্ভবতী মাকে কিসমিস খাওয়াতে পারেন।

দুধ কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা

আমরা এতক্ষণে শুধুমাত্র কিসমিস বিভিন্নভাবে খাওয়ার বিভিন্ন উপকারিতা দেখলাম। এখন আমরা দেখব কিসমিস দুধের সাথে খেলে কি উপকারিতা পাওয়া যাবে। আমরা জানি দুধ এবং কিসমিস কতটা পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ দুটি খাবার। তাহলে একবার চিন্তা করে দেখুন এ দুইটি পুষ্টিকর খাবার একসাথে খাওয়ার ফলে আমরা কতটা উপকার গ্রহণ করতে পারি।

দুধ ও কিসমিস একসাথে খাওয়ার ফলে এই দুইটির কম্বিনেশনে এটি উচ্চমাত্রায় পুষ্টিগুণ আমাদের শরীরে সরবরাহ করবে। বিশেষ করে ক্যালসিয়াম। আমাদের শরীরে হাড় এবং দাঁতের জন্য ক্যালসিয়াম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই খাবার খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে শক্তি সরবরাহ করবে। এছাড়াও এটি রক্তস্বল্পতা দূর করবে।

আরো পড়ুন : চিয়া সিডের উপকারিতা ও এর অপকারিতা

আরেকটি ভালো উপকার হচ্ছে এটি আমাদের ভালো ঘুম হতে অনেক বেশি সাহায্য করবে। এটি করার জন্য আপনি এক গ্লাস গরম বা হালকা গরম দুধে ৮ থেকে ১০ টি কিসমিস মিশিয়ে নিন। মেশানোর পর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে খেয়ে নিন। এই উপকারিতা গুলো পেতে চাইলে নিয়মিত দুধের সাথে কিসমিস খাবার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

কাঠ বাদাম ও কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা

কিসমিস তো খুবই পুষ্টিগুণী সমৃদ্ধ একটি শুকনো ফল। আর কাঠ বাদামের কথা তো আপনাদের বলতেই হবে না। এটি কতটা পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। তাহলে একটু চিন্তা করলে বুঝতে পারবেন, এই দুটির কম্বিনেশন কতটা পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ হবে। কাঠবাদাম ও কিসমিস খাওয়ার ফলে তাৎক্ষণিকভাবে শরীরে শক্তি বৃদ্ধি পায়। এগুলো হৃদযন্ত্রের জন্য অনেক বেশি উপকারী।

কাঠবাদাম ও কিসমিস একসাথে খাওয়ার ফলে পাঁচক তন্ত্রের কাজ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করে। বড় একটি উপকারিতা হচ্ছে এই দুটি একসাথে খাওয়ার ফলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি হয়। তাই প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ টি কাঠবাদাম ও ১০ থেকে ১২ টি কিসমিস খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন। এগুলো সকালে খালি পেটে বা যেকোনো সময় নাস্তার অংশ হিসেবে খেতে পারেন।

কিসমিস ভেজানো পানি খেলে কি হয়

কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা আমরা দেখেছি। কিন্তু এটি একটি মজার বিষয় যে, কিসমিস যে পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয়, সেই পানিও অনেক বেশি পুষ্টি সমৃদ্ধ। এই পানি পান করলেও আমরা অনেক উপকৃত হতে পারব। তাই কিসমিস ভেজানো পানি ফেলে না দিয়ে পান করাই ভালো হবে। চলুন তাহলে দেখে নিই কিসমিস ভেজানো পানি খেলে আমরা কি কি উপকার পেতে পারি।

  • সকালবেলা কিসমিস ভেজানো পানি খেলে সারা দিনের কাজকর্মে ক্লান্তি ভাব কম আসে
  • এই পানিতে ভিটামিন সি থাকে যার প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
  • কিসমিস ভেজানো পানি খেলে আমাদের শরীরে এনার্জি লেভেল বৃদ্ধি পায়
  • লিভার এর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়
  • অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে
  • শরীরে উচ্চমাত্রায় রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে

শুকনো কিসমিস খেলে কি হয়

কিসমিস খাওয়ার এতক্ষণে কতই না উপকারিতা দেখলাম। এতক্ষণে বিভিন্নভাবে বা অন্য কিছুর সহযোগে কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা দেখলাম। আমরা অনেকেই শুধুমাত্র শুকনা কিসমিস খেয়ে থাকি। এটি আমরা অনেকে পছন্দও করে থাকি। এইবার তাদের জন্য বলবো এই শুকনা কিসমিস খেলে আপনি কি কি উপকার পেতে পারেন, যদিও এটি এমনিতেও অনেক বেশি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ।

কিসমিসে পর্যাপ্ত পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে যা আমাদের হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখে। শুকনো কিসমিস খাওয়ার ফলে এটি আমাদের শরীর থেকে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল দূর করে ফলে শরীরের ওজন কমাতে সহায়তা করে। এতে কার্বোহাইড্রেট থাকে যা আমাদের শক্তি জোগাতে সাহায্য করে। চুল ও ত্বকের যত্নে শুকনা কিসমিস অনেক বেশি উপকারী।

আরো পড়ুন : অ্যাভোকাডো ফল খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা

শুকনা কিসমিস খাওয়ার ফলে শরীরে রক্তস্বল্পতা দূর হয়। বিশেষ করে মহিলারা এই সমস্যাটিতে বেশি পড়ে থাকে। তাই বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা মহিলাদের রক্তস্বল্পতা দূর করার জন্য কিসমিস খাওয়ার উপদেশ দেন। তাই আজ থেকেই শুকনা কিসমিস খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন।

অতিরিক্ত কিসমিস খেলে কি হয়

কিসমিস খাওয়া ভালো বলেই যে আপনি ইচ্ছে মতো খেতে থাকবেন, তা করলে হবে না। প্রতিটা জিনিসই খাবার একটি নির্দিষ্ট মাত্রা থাকে। মাত্রাতিরিক্ত খাওয়ার ফলে দেখা যাবে আপনি উপকারিতার বদলে ক্ষতি সম্মুখীন হয়ে বসে আছেন। উপরে প্রতিদিন কি পরিমানে কিসমিস খাবেন তা দেয়া আছে। চলুন দেখে নেই অতিরিক্ত কিসমিস খেলে কি কি নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

  • কিসমিসে প্রচুর পরিমাণে শর্করা ও প্রোটিন থাকে। অতিরিক্ত কিসমিস খাওয়ার ফলে শরীরের ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে।
  • কিসমিসের প্রাকৃতিক শর্করা থাকার ফলে অতিরিক্ত খেলে এটি রক্তের শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি করতে পারে।
  • অতিরিক্ত খাবার ফলে, পেট ব্যথা, পেট ফাঁপা, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি হজম জনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • অতিরিক্ত কিসমিস খাওয়ার ফলে এটি সমস্যা হতে পারে।
  • অতিরিক্ত শর্করা দাঁতের জন্য ক্ষতিকর।

কিসমিস খেলে কি মোটা হয়

 খেলে মোটা হওয়া যায় কিনা এরকম প্রশ্ন অনেকে করেন। আসলে কিসমিস খেলে ওজন বাড়বে না ওজন কমবে তা নির্ভর করবে আপনি কি পরিমানে কিসমিস খাচ্ছেন এবং কিভাবে খাচ্ছেন তার উপরে। আপনি যদি কোন নিয়ম না মেনে মাত্রা অতিরিক্ত খান তাহলে আপনার ওজন বাড়তে পারে। কেননা কিসমিস একটি উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার।

আপনি যদি নিয়মিত একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে কিসমিস খান তাহলে এটি আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করবে। সকাল বেলা খালি পেটে ভেজানো কিসমিস খাওয়ার ফলে এটি আমাদের সারাদিন সতেজ রাখে ফলে পেট বেশিক্ষণ ঘরে থাকে। এজন্য ক্ষুধা কম লাগে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে। কিন্তু আপনি যদি কোন নিয়ম না মেনে মাত্রাতিরিক্ত খান তাহলে মোটা হতে পারেন।

কিসমিস খাওয়ার অপকারিতা কিসমিসের ক্ষতিকর দিক

কিসমিস খাওয়ার আমরা এতক্ষণে অহরহ উপকারিতা দেখলাম। কিন্তু সমস্যাটি তখন দেখা দিবে যখন আমরা এই উপকারিতা গ্রহণ করার বদলে ক্ষতি সম্মুখীন হবে। কিসমিস খুবই পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি খাবার। তবুও আমরা তখনই ক্ষতির সম্মুখীন হব যখন আমরা এটি মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে ও অনিয়ম করে খেতে থাকবো। প্রতিটি জিনিসেরই ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাব থাকে।

কিসমিস খেয়ে উপকারিতা গ্রহণ করতে চাইলে আমাদের অবশ্যই এসব নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে অবগত থাকতে হবে। তবে আমরা উচ্চ মানের উপকারিতা পেতে পারি।আমরা এখন দেখব কিসমিস খাবার নেতিবাচক প্রভাব কি কি।

  1. কিসমিসে প্রচুর পরিমাণে শর্করা ও কার্বোহাইড্রেট থাকে। যা অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে শরীরের ওজন বৃদ্ধি করে।
  2. কিছু কিছু কিসমিসের সোডিয়াম যোগ করা থাকে, যা রক্তচাপ বাড়াতে সাহায্য করে।
  3. অনেক মানুষ আছে যাদের কিসমিস খাওয়ার ফলে অ্যালার্জি জনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  4. বেশি কিসমিস খাওয়ার ফলে পেট ব্যথা, গ্যাস, পেট ফাঁপা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  5. কিসমিসে অনেক শর্করা থাকে। অতিরিক্ত শর্করা দাঁতের জন্য ক্ষতিকর।
  6. মাত্রাতিরিক্ত খাওয়ার ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি করে।

ভালো মানের কিসমিস চেনার উপায়

বর্তমানে বাজারে প্রায় সব জিনিসের মধ্যেই ভেজাল, ফরমালিন বা কেমিক্যাল যুক্ত বিভিন্ন ধরনের সমস্যা। বাজারে একটি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ভালো জিনিস খুঁজে পাওয়া কঠিন। কিন্তু তার মধ্যেও ভালো মানের জিনিসটি খুঁজে বের করে তারপর সেটি আমাদের নেওয়া উচিত । ভাল কিসমিস চেনার জন্য আপনি কয়েকটি বিষয়ের উপর লক্ষ্য করতে পারেন।

  • ভালো কিসমিসের রং হবে বাদামি থেকে কালো রঙের। কিন্তু কিসমিসের গায়ের রং যদি উজ্জ্বল বা সাদা হয় তাহলে কেমিক্যাল ব্যবহারের সম্ভাবনা থাকতে পারে।
  • ভালো মানের কিসমিসের সাইজ সবগুলোর একই হবে। বিভিন্ন ধরনের ছোট বড় সাইজ হবে না।
  • ভালো কিসমিস সাধারণত আঠালো ও নরম হবে, তবে অতিরিক্ত শুকিয়ে গেলে সেটি ভালো হবে না।
  • ভালো মানের কিসমিসের স্বাদ মিষ্টি হবে। অতিরিক্ত ঝাল বা অস্বাভাবিক স্বাদ হলে এটি ভালো না।
  • ভালো কিসমিসের গন্ধ মিষ্টি এবং স্বাভাবিক ফলের মত হবে। টক হলে মানহীন হতে পারে।
  • মুখে দিলে মিষ্টি ও সুগন্ধি অনুভূত হবে অন্য অস্বাভাবিক কোনো স্বাদ অনুভূত হবে না।
  • প্যাকেটের ভিতর ও বাহির পরিষ্কার থাকতে হবে। ভিতরে কোন ধরনের ভেজা হবে না এবং অবশ্যই মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ দেখে নিতে হবে।

শেষ কথা - রাতে ঘুমানোর আগে কিসমিস খেলে কি হয়

প্রিয় পাঠক, এতক্ষণে কিসমিস সম্পর্কে বিস্তারিত সকল কিছু আপনাদের সাথে আলোচনা করলাম। আশা করি কিসমিস সম্পর্কে সকল খুঁটিনাটি জানার জন্য পোস্টটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়েছেন এবং উপকৃত হয়েছেন। কিসমিস সত্যিই খুব অসাধারণ একটি খাবার। এক কথায় একে সুপার ফুডও বলা যায়। আমাদের শরীরের জন্য এটি অনেক বেশি উপকারী।

উপরে বর্ণিত বিভিন্ন সমস্যায় যদি আপনি ভুগে থাকেন এবং তা থেকে পরিত্রান চান তাহলে নিয়মিত কিসমিস খাওয়ার অভ্যাস শুরু করেন। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আজকে এখানেই শেষ করছি। আল্লাহ হাফেজ😍

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url