বিটরুট পাউডারের ১০ টি উপকারিতা - বিটরুট খাওয়ার নিয়ম
বিটরুট পাউডারের অনেক উপকারিতা রয়েছে। এটি খুবই পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ সুস্বাদু ও মিষ্টি জাতীয় একটি সবজি। আজকে আপনাদের সাথে বিটরুট এর উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম সহ বিটরুট সম্পর্কে বিস্তারিত সবকিছু আলোচনা করব।
অনেকের কাছেই বিটরুট খুবই জনপ্রিয় একটি সবজি। বিটরুট বিভিন্নভাবে খাওয়া
যায়। তাই সবকিছু ভালোভাবে জানার জন্য পোস্টটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে
থাকুন। সম্পূর্ণ পোস্ট পড়া শেষে আশা করি এ সম্পর্কে পরিষ্কার একটি ধারণা
পাবেন।
সূচিপত্র - বিটরুট পাউডারের উপকারিতা উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম
- বিটরুট কি
- বিটরুটে থাকা পুষ্টি উপাদান সমূহ
- বিট রুট পাউডারের উপকারিতা
- বিট রুট এর উপকারিতা দেখে নিন
- বিট রুটের দাম বাংলাদেশে
- বিট রুট পাউডার এর দাম বাংলাদেশে
- বিট রুট খাওয়ার নিয়ম বিট রুট কিভাবে খায়
- বিট রুট পাউডার খাওয়ার নিয়ম
- বিট রুট জুসের উপকারিতা
- গর্ভাবস্থায় বিট রুট খাওয়ার উপকারিতা
- বিট রুট দিয়ে রূপচর্চা
- বিট রুট কোথায় পাওয়া যায়
- বিট রুট এর অপকারিতা বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
- লেখকের কথা - বিট রুট পাউডারের উপকারিতা অপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম
বিটরুট কি
বিটরুট হলো একটি মূল জাতীয় সবজি যা সাধারণত মাটির নিচে জন্মে থাকে। বিটরুটের মূল গাড়ো লাল, গোলাপি বা বেগুনি রঙের হয়ে থাকে। বিটরুটের বৈজ্ঞানিক নাম Beta Vulgaris। বিটরুট খেতে মিষ্টি স্বাদের হয়ে থাকে। বিটরুট বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়। কাঁচা অবস্থায় বিট রুটের স্বাদ মিষ্টি এবং এটি তরকারি রান্না করে খেলে এর মিষ্টি আরো বেড়ে যায়।
বিটরুট এর পাতা সবুজ রঙের একদম পালং শাকের মতো হয়ে থাকে। বিটরুট খুবই পুষ্টিকর একটি সবজি। এটি কাঁচা, সালাদ, জুস, স্মুদি, রোস্ট ইত্যাদি বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়। অনেকের কাছে এটি অনেক প্রিয় একটি সবজি।
বিটরুটে থাকা পুষ্টি উপাদান সমূহ
বিটরুট খুবই পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি সুস্বাদু সবজি। অনেক পুষ্টি উপাদান থাকে। বিটরুট পাউডারের উপকারিতা জানার আগে যদি আপনি এর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে কিছুটা ধারণা
রাখেন তাহলে অন্যান্য বিষয় বুঝতে আপনার জন্য কিছুটা হলেও সুবিধা হবে। বিটরুটে
থাকে প্রচুর ভিটামিন মিনারেল ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান। যা আমাদের শরীরের জন্য
অনেক জরুরী।
আরো পড়ুন : কিউই ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা - কিউই ফলের দাম
বিটরুটে অনেক ধরনের পুষ্টি উপাদান থাকে যার উল্লেখযোগ্য কিছু উপাদান নিচে দেয়া
হলো:
- ক্যালসিয়াম
- ম্যাগনেসিয়াম
- আইরন
- জিঙ্ক
- ম্যাঙ্গানিজ
- আয়োডিন
- ফোলেট
- ভিটামিন এ
- ভিটামিন সি
- ভিটামিন বি৬
- ফাইবার
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
- প্রোটিন
- নাইট্রেট ইত্যাদি
তাহলে বুঝতে পারছেন সাধারণ এই সবজিটিতে কি অসাধারণ রকমের পুষ্টি উপাদান থাকে। এ
পুষ্টি উপাদান গুলো আমাদের শরীরের জন্য কতটা জরুরি তা বুঝতে পারছেন। চলুন এখন
তাহলে বিটরুট এর উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত দেখে নেয়া যাক।
বিট রুট পাউডারের উপকারিতা
বিটরুট পাউডারের সাথে আমরা অনেকেই পরিচিত। আমরা সাধারণত বিটরুট কাঁচা অথবা রান্না
বা অন্য কোনভাবে খেয়ে থাকি। কিন্তু বর্তমানে বিটরুট পাউডার হিসেবেও পাওয়া যায়।
তাই অনেকেই এই পাউডার খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান। সাধারণত প্রাকৃতিক
উপায়ে কাঁচা বিট রুটই শুকিয়ে পাউডার করে ব্যবহার করা হয়। এটিও অনেক উপকারী।
এখন আপনাদের সাথে বিটরুট পাউডারের উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করব। এরপরে কাঁচা
বিটরুট বা বিট রুটের উপকারিতা নিয়েও আলোচনা করব। তাহলে চলুন আর দেরি না করে এক
নজরে বিটরুট পাউডারের উপকারিতা গুলো দেখে নেয়া যাক।
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে : বিটরুটে প্রচুর পরিমাণ নাইট্রেট থাকে যা রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। নাইট্রেট আমাদের শরীরে নাইট্রিক অক্সাইড এ রূপান্তরিত হয়ে রক্তনালীর প্রসারণ ঘটায় ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ থাকে।
- হজমে সহায়ক : বিটরুটে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হজমের জন্য অনেক বেশি সহায়ক এবং এটি পরিপাকতন্ত্রকে সুস্থ রাখে।
- মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায় : বিটরুটে থাকা নাইট্রেট রক্তের প্রবাহমাত্রা বৃদ্ধি করে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। বিশেষ করে এটি বয়স্কদের মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে অনেক সহায়ক।
- ওজন কমাতে সাহায্য করে : বিটরুট কম ক্যালরিযুক্ত এবং অধিক ফাইবার যুক্ত যা আমাদের ক্ষুধা মেটাতে সাহায্য করে পাশাপাশি ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
- ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে : বিট রুটে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি ও মিনারেল ত্বকের জন্য অনেক উপকারী। এটি আমাদের ত্বককে সুন্দর ও সুস্থ রাখে।
- হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখে : বিট রুটে থাকা নাইট্রেট রক্তের প্রবাহ উন্নত করে ফলে হৃদযন্ত্র সুস্থ থাকে। এছাড়াও
- এতে প্রচুর এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকাই ত্বকের বিভিন্ন জায়গার প্রদাহ ও কশির ক্ষয় রোধ করে।
- এতে প্রচুর খনিজ পদার্থ থাকে যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক প্রয়োজনীয়।
- এটি শরীরে প্রয়োজনীয় খনিজ সরবরাহ করে ইত্যাদি।
আশা করি বিটরুট পাউডারের উপকারিতা সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা পেয়েছেন। বিটরুট
খুবই পুষ্টিকর একটি সবজি। এটি নিয়মিত খাওয়ার ফলে আপনি উপরে বর্ণিত সুবিধা গুলো
পেতে পারেন। তাই নিয়মিত খাদ্য তালিকায় বিটরুট পাউডার যোগ করেন।
বিট রুট এর উপকারিতা দেখে নিন
বিটরুট পাউডারের উপকারিতা দেখলেন এতক্ষন। আপনাদের মনে এখন বিটরুটের উপকারিতা জানার
আকাঙ্ক্ষা জাগতে পারে। অনেকে বিটরুট কাঁচা অবস্থায়ও খেয়ে থাকে। তাই তাদের
জন্য বিটরুট পাউডার না খেয়ে কাঁচা বিটরুট খেলে কি উপকারিতা পাওয়া যাবে তা
নিয়ে একটি স্বল্প পরিসরে এক নজরে আলোচনা করব। কাঁচা বা তাজা বিটরুট খেলে
নিম্নোক্ত উপকারিতা গুলো পাওয়া যায়।
আরো পড়ুন : বিচি কলা ও সাগর কলা খাওয়ার কার্যকরী ২৫টি উপকারিতা
- হৃদরোগের সম্ভাবনা কমে
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়
- শারীরিক কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে
- ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো থাকে
- মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়
- ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে ইত্যাদি
বিটরুট পাউডারের উপকারিতার পাশাপাশি বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা শুধুমাত্র আলোচনা
করলাম এ কারণে যে, অনেকে ভাবতে পারে বিটরুট ও বিটরুটের পাউডার খাওয়ার আলাদা কোন
উপকারিতা থাকতে পারি কিনা তাই। কিন্তু আমরা দেখলাম যে, পাউডার ও তাজা অবস্থায়
খাওয়ার তেমন আলাদা কোন উপকারিতা নেই। দুইভাবে খাওয়ার উপকারিতা একই।
বিট রুটের দাম বাংলাদেশে
বিট রুটের দাম আমাদের অনেকের কাছেই অজানা। তাই অনেকে বিট রুটের দাম জানতে চান। বিটরুট একটি মৌসুমী সবজি। বিটরুট সাধারণত শীতকালে চাষ হয়ে থাকে। তবে বর্তমানে বারোমাসি বিটরুট পাওয়া যায়।বিট রুটের দাম বিভিন্ন অঞ্চল এবং সময়ের ওপর নির্ভর করে। কারণ যখন বিটরুট চাষ করা হয় তখন এর দাম কিছুটা কম থাকে।
কিন্তু বছরের অন্যান্য সময়ে এর দাম একটু বেড়ে যায়। আপনি যদি বিটরুট চাষের
মৌসুমে কিনতে চান তাহলে প্রতি কেজি বিটরুট এর দাম পড়বে ৮০ থেকে ১০০ টাকা। যদি
সাধারণ বাজারে কিনতে যান তাহলে এরকম দাম হবে। আর যদি কোন সুপারশপে কিনেন তাহলে
দাম একটু বেশি পড়তে পারে। বছরের অন্যান্য সময়ে প্রতি কেজি বিটরুটের দাম
২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
বিট রুট পাউডার এর দাম বাংলাদেশ
বিট রুটের দাম সম্পর্কে আশা করি একটি ধারণা পেয়েছেন। এখন আমরা বিট রুট পাউডারের দাম সম্পর্কে জানব। সাধারণত বিট রুটই প্রাকৃতিক উপায়ে শুকিয়ে পাউডার করা হয়। বর্তমানে বাজারে বিট রুটের পাউডার অ্যাভেলেবল পাওয়া যায়। তাই অনেকে বিট রুটের পরিবর্তে বিট রুট পাউডার ব্যবহার করে থাকেন।বিট রুটের তুলনায় বিট রুট পাউডারের দাম অনেক বেশি হয়ে থাকে।
বিট রুট পাউডারের দাম সাধারণত বিভিন্ন ব্র্যান্ড ও গুণগত মানে প্যাকেটের আকারের ওপর নির্ভর করে। আপনি যদি ১০০ গ্রাম বিটরুট পাউডার কিনতে চান তাহলে এর দাম দাঁড়াবে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত। তবে কিছু প্রিমিয়াম ব্র্যান্ডের বিট রুট পাউডারের দাম আরো বেশি হতে পারে। বর্তমানে অনেক অনলাইন মার্কেটপ্লেসে অনেক সময় বিভিন্ন অফারে কম দামে বিট রুট পাউডার পাওয়া যায়।
বিট রুট খাওয়ার নিয়ম বিট রুট কিভাবে খায়
বিট রুট খাবার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই ধারণা নেই। তাই এটি জানার জন্য আমরা অনেকেই বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করি। আজকে আপনাদের সাথে বিটরুট খাওয়ার নিয়ম এবং বিট রুটের পাউডার খাওয়ার নিয়ম দুটি নিয়ে আলোচনা করব। এখন আমরা প্রথমে বিট রুট খাওয়ার বিভিন্ন পদ্ধতি ও নিয়ম সম্পর্কে ধাপে ধাপে দেখে নিব।
আরো পড়ুন : রাতে ঘুমানোর আগে কিসমিস খেলে কি হয়
- একটি বিটরুট আপনি বিভিন্নভাবে খেতে পারবেন। এটি কাঁচা, রান্না করা, অন্যান্য খাবারের সাথে মিশিয়ে, সালাদে ইত্যাদি ভাবে খেতে পারবেন।
- একটি কাঁচা বিটরুট নিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে এর খোসা ছাড়িয়ে টুকরো টুকরো করে কেটে সরাসরি খেতে পারেন। ইচ্ছেমতো এর সাথে লবণ, লেবুর রস বা অন্যান্য সবজিও যোগ করতে পারেন।
- বিট রুটের রোস্ট বানিয়েও খাওয়া যায়। এর জন্য বিটরুট খোসা ছাড়িয়ে টুকরো টুকরো করে কেটে তেল মাখিয়ে ওভেনে রোস্ট করে খেতে পারেন। তাছাড়া এটি সিদ্ধ করেও অন্যান্য সবজির সাথে খাওয়া যায়।
- বিট রুটের জুস অনেক বেশি জনপ্রিয়। একটি বিট রুট ও তার সাথে আরো কিছু ফল নিয়ে একসাথে ব্লেন্ড করে জুস বানিয়ে খাওয়া যায়।
- বিট রুটের স্যুপ বানিয়েও খাওয়া যায়। বিশেষ করে শীতকালে এভাবে বেশি খাওয়া হয়।
- অনেকে বিট রুটের সাথে আরো কিছু মিশিয়ে আচার বানিয়েও খেয়ে থাকেন।
বিট রুট পাউডার খাওয়ার নিয়ম
বিট রুট খাওয়ার নিয়ম দেখলেন। এইবার বিট রুট পাউডার খাওয়ার নিয়ম দেখে নিন। কাঁচা বা তাজা বিট রুট আমরা অনেকভাবে খেতে পারি। কিন্তু পাউডার সেভাবে খাওয়া যায় না। পাউডার কোন পানীয় এর সাথে মিশিয়ে খেতে হয়। বিট রুট যেমন উপকারী বিট রুট পাউডার ও তেমন উপকারী। বিট রুট এর মত বিট রুট পাউডার ও অনেক কয়েক ভাবে খাওয়া যায়। যেমন -
- ১ থেকে ২ চামচ বিট রুট পাউডার এক গ্লাস পানির সাথে মিশে খেয়ে নিতে পারেন। সকাল বেলা খালি পেটে খেলে বেশি উপকারিতা পাওয়া যায়।
- এছাড়াও অন্য কোন জুসের সাথে বিট রুট পাউডার মিশিয়ে খাওয়া যায়।
- অন্যান্য খাবারের রেসিপি যেমন কেক, ব্যানকেক, পাউরুটি ইত্যাদির সাথে বিট রুট পাউডার মিশিয়ে খাওয়া যায়।
- বিট রুট পাউডার দিয়ে চা বানানো যেতে পারে। এটি মিষ্টি এবং মজাদার একটি পানীয় তৈরি করতে সাহায্য করে।
- প্রোটিন শেক বা প্রি ওয়ার্কআউট ড্রিংকস বা স্পোর্ট ড্রিংকস এর সাথে বিটরুট পাউডার মিশিয়ে খেলে কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পায়।
বিট রুট জুসের উপকারিতা
বিটরুটের জুস অনেক বেশি জনপ্রিয় একটি পানীয়। বিট রুট খাওয়ার বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্যে বিটরুট এর জুস একটি। অনেকে বিটরুট জুস খুবই পছন্দ করেন। এটি মিষ্টি জাতীয় একটি পানীয়। এতক্ষন তো বিট রুট ও বিট রুট পাউডারের উপকারিতা দেখলেন। এখন তাহলে বিট রুট জুসের উপকারিতা দেখলে কেমন হয়। চলুন তাহলে দেরি না করে দেখে ফেলি।
বিট রুট জুসের অনেক উপকারিতা রয়েছে তার মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য উপকারিতা নিচে দেয়া হল:
- ব্লাড প্রেসার কমাতে সাহায্য করে
- রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
- ত্বকের উন্নতি ঘটাতে সহায়ক
- হজম শক্তি বৃদ্ধি করে
- মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে
- শারীরিক কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে
- শরীরের বিভিন্ন জায়গার প্রদাহ কমায়
- হৃদরোগ প্রতিরোধ করে ইত্যাদি।
আপনি এতক্ষণে একটা জিনিস খেয়াল করলে দেখবেন যে বিট রুট খাওয়ার উপকারিতা, বিট রুট পাউডার খাওয়ার উপকারিতা ও বিট রুট এর জুস খাওয়ার উপকারিতা গুলো একই। তাহলে বুঝতে পারছেন এই সবজিটি আপনি এই তিন পদ্ধতির যেভাবেই খান না কেন সমান উপকারিতা পাবেন। তাই উপকারিতা গুলো পেতে আপনি যেভাবে খুশি বিট রুট খেতে পারেন।
গর্ভাবস্থায় বিট রুট খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় বিট রুট খাওয়া অনেক বেশি উপকারী হতে পারে। উপরে ইতোমধ্যে দেখেছেন বিট রুটে কি পরিমান পুষ্টি উপাদান থাকে এবং তা আমাদের জন্য কতটা উপকারী। গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য যেকোনো ধরনের পুষ্টিকর খাবার অতি জরুরী। তাই একটি পুষ্টিকর খাবার হিসেবে গর্ভবতী মায়ের খাদ্য তালিকায় বিট রুট যোগ করা যেতে পারে।
এতে থাকা বিভিন্ন পুষ্টিগুণ গর্ভবতী মা এবং গর্ভস্থ সন্তানের জন্য অনেক সহায়ক। বিট রুট এ অনেক ভিটামিন, মিনারেল ও এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা গর্ভাবস্থায় অনেক উপকার প্রদান করে। গর্ভাবস্থায় বিট রুট খাবার প্রধান প্রধান উপকারিতা গুলো নিচে উল্লেখ করা হলো।
- বিট রুট ফোলেট এর একটি ভালো উৎস। ফোলেট গর্ভস্থ শিশুর মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্র বিকাশে বিশেষভাবে সহায়তা করে এবং নিউরাল টিউব ডিফেক্ট প্রতিরোধে বিশেষভাবে সাহায্য করে যা গর্ভধারণের প্রথম দিকে খুবই প্রয়োজনীয়।
- বিট রুট এ পর্যাপ্ত আয়রন থাকে যা রক্তে হিমোগ্লোবিন এর সংখ্যা বাড়াতে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় এটি অনেক অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
- গর্ভকালীন সময় অনেক গর্ভবতী মা ই উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যায় ভুগে থাকেন। তাদের অবশ্যই বিটরুট খাওয়া উচিত। কারণ এটি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
- গর্ভাবস্থায় মহিলারা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের ব্যথায় ভুগে থাকেন। বিট রুট বিভিন্ন জায়গার প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
- বিট রুট হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। যা একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য অনেক জরুরী।
- গর্ভাবস্থায় বিট রুট খাবার ফলে গর্ভবতী মায়ের শরীরে ইমিউনিটি সিস্টেম শক্তিশালী হয়।
তাহলে বুঝতেই পারছেন গর্ভাবস্থায় বিট রুট খাওয়া কতটা উপকারী। তাই এ উপকারিতা গুলো যদি পেতে চান তাহলে গর্ভাবস্থায় নিয়মিত পরিমান মত বিট রুট খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন। এতে করে আশা করা যায় অনেক বেশি লাভবান হবেন।
বিট রুট দিয়ে রূপচর্চা
বিট রুট শুধুমাত্র খাওয়াতেই যে উপকারিতা তা নয়। আপনি জানলে অবাক হবেন যে বিট রুট রূপচর্চা যেমন ত্বক ও চুলের জন্যও অনেক অনেক উপকারী। নিয়মিত কিছু নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে বিট রুট ব্যবহারের ফলে চুল ও ত্বকের সৌন্দর্য বহু গুণে বৃদ্ধি করা সম্ভব। তাই চলুন দেখে নিই বিটরুট এর ব্যবহার কিভাবে রূপচর্চার ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
ত্বকের জন্য বিট রুট
- বিট রুট ব্লেন্ড করে রস সংগ্রহ করে সেই রস মুখে লাগিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললে ত্বকে প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা আসে এবং ত্বক সজীব ও মসৃণ দেখায়।
- বিট রুট রসের সাথে টমেটোর রস মিশিয়ে ১০ মিনিট মুখের ওপর দিয়ে রাখুন। দেখবেন মুখের ব্রণ হারিয়ে গেছে।
- বিট রুট ব্লেন্ড করে পেস্ট তৈরি করে তার সাথে চিনি ও মধু মিশিয়ে মুখের উপর ব্যবহার করুন। এর ফলে ত্বকের মৃত কোষ দূর হবে এবং ত্বককে নরম ও কোমল করে তুলবে।
- বিট রুট এর সাথে বেসন ও দই মিশিয়ে মুখের ওপর লাগিয়ে 15 মিনিট অপেক্ষা করুন। এর ফলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে।
চুলের জন্য বিট রুট
- বিট রুট এর সাথে মেহেদী পাউডার যোগ করে চুলে ব্যবহার করুন এবং ১ থেকে ২ ঘন্টা পর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। এতে করে চুল নরম মসৃণ ও ঝলমলে হবে।
- বিট রুট পেস্টের সাথে এলোভেরা জেল মিশে চুলে ৩০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। এতে করে চুলের গোড়া শক্ত হবে এবং চুল পড়া বন্ধ হবে।।
ঠোঁটের জন্য বিট রুট
- বিট রুট এর রস বা পাতলা করে কেটে নিয়ে তা সরাসরি ঠোঁটে ঘষুণ, এতে করে ঠোট গোলাপি হবে এবং ঠোঁটের শুষ্কতা দূর করবে।
- বিট রুট এর সাথে সামান্য নারকেল তেল যোগ করে ঠোঁটে লিভ জেলের মতো ব্যবহার করলে ঠোঁটের কালো দাগ দূর করবে এবং আদ্র রাখবে।
বিট রুট কোথায় পাওয়া যায়
বর্তমানে বিট রুট যে কোন বাজারেই পাওয়া যায়। তবে এটি একটি মৌসুমী সবজি হয় বারো মাস সব জায়গায় পাওয়া যায় না কিন্তু বারো মাস কোথাও না কোথাও থাকে। এটি একটি শীতকালীন মৌসুমী সবজি। তাই শীতকালে যেখানে সেখানেই পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায়। কিন্তু বছরের অন্যান্য সময় গুলোতে কোন নির্দিষ্ট স্থানে বা সুপার শপে পাওয়া যেতে পারে।
আরো পড়ুন : মিষ্টি কুমড়া খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
এছাড়াও বর্তমানে অনলাইন এর অনেক প্ল্যাটফর্মেই বিট রুট ১২ মাস পাওয়া যায়। এছাড়াও বিভিন্ন অর্গানিক ফার্ম, খামার বা কৃষি মেলা, অনলাইন গোসারি শপ ইত্যাদি জায়গায় বিটরুট পেতে পারেন। তবে সর্বপ্রথম স্থানীয় বাজারে খোঁজ করলেই আশা করে পেয়ে যাবেন। কারণ এটি আমাদের দেশে এখন পর্যাপ্ত পরিমাণে চাষ হয়।
বিট রুট এর অপকারিতা বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
বিটরুট খাওয়ার বিভিন্ন উপকারিতা খাওয়ার নিয়ম নিয়ম সহ এতক্ষণে বিস্তারিত অনেক কিছু জেনেছেন। কিন্তু এ সকল কিছু জানার পরও আর একটি বিষয় জেনে রাখা জরুরি। সেটি হচ্ছে বিট রুট এর অপকারিতা বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া। কারণ এ সম্পর্কে যদি আপনি না জানেন তাহলে আপনার কাঙ্ক্ষিত উপকারিতা পাওয়াতে জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে।
আপনি যখন এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে অবগত থাকবেন তখন এর উপকারিতা গুলো ভালোভাবে গ্রহণ করতে পারবেন। সব জিনিসেরই ভালোর পাশাপাশি কিছু কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকে। বিটরুট এরও তেমন কিছু সম্ভাব্য পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে। এ থেকে অবশ্যই সতর্ক থাকা উচিত। পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলো নিচে উল্লেখ করলাম।
- বিটরুট এ থাকা নাইট্রেট রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। তাই আগে থেকেই যদি কারো রক্তচাপ কম থাকে তাহলে তার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
- বিট রুটে অক্সালেট থাকে। অতিরিক্ত বিট রুট খাওয়ার ফলে অক্সালেট এর পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে এটি কিডনির সমস্যা করতে পারে।
- অনেক বেশি বিট রুট খাওয়ার ফলে প্রসাব ও পায়খানার রং পরিবর্তন করতে পারে যদিও এটি চিন্তার কোন কারণ নয়।
- অনেকে আছে যাদের বিটরুট খাওয়ার ফলে এলার্জি জনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- এটি মিষ্টি জাতীয় একটি সবজি যাতে অনেক চিনি থাকে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি ঝুঁকির হতে পারে।
- গর্ভ অবস্থায় যদিও বিট রুট খাওয়া নিরাপদ তাও এ সময় অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে হবে।
- এতে ফাইবার থাকাই অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে অনেকেরই পেট ব্যথা হতে পারে।
তাহলে বুঝতে পারলেন বিট রুট খাওয়ার ফলে কি কি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। আমরা একটা বিষয়ে লক্ষ্য করলে দেখব যে এ সমস্যাগুলো সম্মুখীন আমরা তখনই হব যখন এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খাব। তাই আমরা বিটরুট একসাথে অনেকগুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকবো এবং এই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার দিকে অবশ্যই খেয়াল রাখব।
লেখকের কথা - বিটরুট পাউডারের উপকারিতা অপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম
প্রিয় পাঠক এতক্ষণে আপনারা বিটরুট পাউডারের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং খাবার বিভিন্ন নিয়ম সম্পর্কে জানলেন। আশা করি এতক্ষণে এ বিষয়ে একটি পরিষ্কার ধারণা পেয়েছেন। বিট রুট খুবই পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি সবজি। সব বয়সের লোকের জন্য এটি অনেক উপকারী। বিট রুট এ থাকা বিভিন্ন ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আমাদের জন্য অনেক উপকারী।
তাই এ উপকারিতা গুলো পেতে ওপরে বর্ণিত পদ্ধতি অনুযায়ী নিয়মিত খাদ্য তালিকায় বিটরুট যোগ করতে পারেন। এতে করে আশা করা যায় অনেক লাভবান হবেন। তবে যে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলো উল্লেখ করা হয়েছে তার দিকে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন। তা না হলে উপকার এর জায়গায় ক্ষতি সম্মুখীন হতে পারেন। আজকে এ পর্যন্তই। ভালো থাকবেন, আল্লাহ হাফেজ😍
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url