বেল পাতার কার্যকরী ১০টি উপকারিতা ও অপকারিতা - বেল পাতা খাওয়ার নিয়ম

বেল পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমাদের মধ্যে খুব কম মানুষেরই জানা আছে। এমনকি বেল পাতা খাওয়ার নিয়ম বা ব্যবহার সম্পর্কেও আমাদের জানা নেই বললেই চলে। অথচ বেল পাতার সাথে আমরা খুব ভালোভাবেই পরিচিত।

বেল-পাতার-উপকারিতা-ও-অপকারিতা

তাই আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে বেল পাতার উপকারিতা অপকারিতা ও বেল পাতা খাওয়ার নিয়ম সহ এ বিষয়ে বিস্তারিত আরো অনেক কিছু আলোচনা করব। এসব বিষয়ে ভালোভাবে জানার জন্য পোস্টটি শুধুমাত্র পড়তে থাকুন।

সূচিপত্র - বেল পাতার উপকারিতা অপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম

বেল পাতার উপকারিতা

বেল পাতার উপকারিতা রয়েছে অনেক। বেল পাতা অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন রোগের প্রাকৃতিক ও কার্যকরী আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করে আসা হচ্ছে। বিভিন্ন রোগ নিরাময়ের জন্য ব্যবহার করা হয় এই বেল পাতা। এছাড়াও রূপচর্চায়ও বেল পাতার ব্যবহার রয়েছে। এ পাতায় অনেক ঔষধি গুনাগুন রয়েছে যা আমাদের শরীরে বিভিন্নভাবে কাজ করে।

আরো পড়ুন : যষ্টিমধু খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা ও যষ্টিমধু খাওয়ার নিয়ম

তাই নিয়মিত বেল পাতা খাওয়ার ফলে আপনি বিভিন্ন ধরনের রোগের হাত থেকে মুক্তি পেতে পারেন। অনেক সময় ডাক্তারও বেলপাতা খাওয়ার পরামর্শ দেন। বেল পাতার কিছু বিশেষ উপকারিতা নিচে ধাপে ধাপে উল্লেখ করা হলো।

  1. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ : বর্তমানে আমাদের দেশের ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বেলপাতা রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্র কমাতে পারে। বেল পাতা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অনেক বেশি উপকারী। নিয়মিত বেল পাতা খাওয়ার ফলে ডায়াবেটিসের হাত থেকে দূরে থাকা যায়।
  2. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে : বেলপাতা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। বেল পাতাতে থাকা এন্টি অক্সিডেন্ট আমাদের শরীরকে ডিটক্সিফাই করে এবং রক্তের সঞ্চালন ঠিক রাখে।
  3. পাচনতন্ত্রের সুরক্ষা দেয় : বেল পাতা খাওয়ার ফলে গ্যাস জাতীয় সমস্যা দূর হয় এবং এটি খাবার হজম করতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়ক।
  4. সংক্রমণ প্রতিরোধে : বেলপাতাতে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গাস বৈশিষ্ট্য থাকে যা বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ ও অন্যান্য ব্যাকটেরিয়া জনিত সংক্রমণ থেকে দূরে রাখে।
  5. শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা কমায় : বেলপাতা শ্বাসকষ্ট ও অ্যাজমা দূর করতে অনেক বেশি সহায়ক। এটিতে থাকা প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্য শ্বাসনালী কে পরিষ্কার রাখে।
  6. জ্বর কমাতে সাহায্য করে : নিয়মিত বেলপাতা খেলে শরীরে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ থাকে এবং এটি জ্বর কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
  7. ইমিউনিটি সিস্টেম শক্তিশালী করে : বেলপাতা তে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য থাকায় এটি শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে অনেক বেশি সহায়ক।
  8. হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখে : বেলপাতা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে ও রক্তের কোলেস্টেরল ঠিক রাখে। এবং রক্ত সঞ্চালনে সাহায্য করে যার ফলে হৃৎপিণ্ডও সুস্থ থাকে।
  9. শরীর ঠান্ডা রাখে : অত্যাধিক তাপমাত্রার সময় বেলপাতা দিয়ে শরবত বানিয়ে খেলে এটি শরীরের তাপমাত্রা কমিয়ে শরীরকে শীতল রাখতে সাহায্য করে।
  10. ঘামের দুর্গন্ধ দূর করে : ঘামের দুর্গন্ধ জনিত সমস্যা যারা বুকে থাকেন তারা গোসলের পানির সাথে বেলপাতা সিদ্ধ করা পানি মিশিয়ে যদি গোসল করেন তাহলে আশা করা যায় এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।
  11. মাথার চুলে ব্যবহার : বেল পাতার রস বা বেলপাতা বেটে মাথায় দিলে চুল ঝরে যাওয়া রোধ করে এবং টাক মাথায় চুল গজাতে সাহায্য করে তাছাড়া চুল দ্রুত বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
  12. জন্ডিসের বিরুদ্ধে কাজ করে : বেলপাতা জন্ডিসের জন্য এক মহা ঔষধ। নিয়মিত বেল পাতা খাওয়ার ফলে জন্ডিসের হাত থেকে অনেক দূরে থাকা যায়।
  13. এলার্জি দূর করে : বেলপাতা এলার্জি ও চুলকানি জাতীয় সমস্যা দূর করতে সহায়ক। তাছাড়া এটি শরীরের হাড়ের জয়েন্টের ব্যথা দূর করতে পারে।

তাহলে বুঝতে পারলেন বেলপাতা ব্যবহারে কত উপকারিতা পাওয়া যেতে পারে। আমাদের বাড়ির আশেপাশেই থাকা অবহেলিত এ বেলপাতা কত কাজে আসে বুঝতে পারলেন তাহলে ? আশা করছি পরিষ্কারভাবে বুঝতে পেরেছেন। এই উপকারিতা গুলো পেতে চাইলে নিয়মিত সঠিক নিয়মে বেলপাতা খেতে পারেন।

বেল পাতার পুষ্টিগুণ সমূহ

বেলপাতা তে কি কি পুষ্টিগুণ বা এর কি কি গুনাগুন রয়েছে তা যদি জানেন তাহলে অন্যান্য বিষয়ে ধারণা পেতে সহজ হবে। বেলপাতাতে বিভিন্ন ধরনের গুণাগুণ রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদানও রয়েছে। সাধারণত এই পুষ্টি উপাদান গুলোই আমাদের শরীরে বিভিন্নভাবে কাজ করে থাকে। চলুন এক নজরে বেল পাতাতে থাকা পুষ্টিগুণ গুলো দেখে নিই।

আরো পড়ুন : থানকুনি পাতার ১৮টি উপকারিতা ও অপকারিতা

  • ফাইবার
  • ক্যালসিয়াম
  • ভিটামিন এ
  • ভিটামিন বি ১
  • ভিটামিন বি ৬
  • ভিটামিন সি
  • ফসফরাস ইত্যাদি

ওপরে দেখলেন এই ভিটামিন বা পুষ্টি উপাদান গুলো বেল পাতাতে থাকে। আপনি বুঝতে পারছেন এই উপাদানগুলো আমাদের শরীরের জন্য কতটা উপকারী। এই উপাদান গুলো বিভিন্নভাবে আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের কাজ করে থাকে।

বেল পাতার অপকারিতা বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

বেলপাতার উপকারিতা তো দেখলেন। এবার তাহলে বেলপাতার অপকারিতা বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কেও একটু জেনে নিন। সব জিনিসেরই ভালোর পাশাপাশি যেমন কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা সতর্কতামূলক দিক থাকে বেলপাতার তেমন কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা সতর্কতা আছে। যেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখা উচিত।

বেল-পাতার-উপকারিতা-ও-অপকারিতা

বেল পাতার অপকারিতা বা সম্ভাব্য কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ও সতর্কতা নিচে দেয়া হল।
  • বেলপাতা অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে বদহজম বা পেট ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • দীর্ঘদিন এবং অতিরিক্ত বেল পাতা খাওয়ার ফলে যৌন চাহিদা কমে যেতে পারে।
  • বেল পাতা রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। তাই এর দীর্ঘদিন ব্যবহারে রক্তচাপ অতিরিক্ত কমে যেতে পারে।
  • গর্ভাবস্থায় বেল পাতা থেকে সতর্ক থাকা উচিত।
  • বেল পাতা শরীরে তাপমাত্রার হ্রাস করতে সহায়ক। তাই অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে শরীরের তাপমাত্রা অতিরিক্ত হ্রাস করতে পারে ফলে শরীরে দুর্বল ভাব দেখা দিতে পারে।
  • অন্য কোন ওষুধ গ্রহণ করার পাশাপাশি বেলপাতা খেলে ওষুধের সাথে পার্শ্বপ্রতিকরা করতে পারে।

তাহলে বুঝতে পারলেন বেলপাতা কি কি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ঘটাতে পারে। তাই অবশ্যই এ বিষয় গুলোর দিকে লক্ষ্য রাখবেন। একটা বিষয় খেয়াল করলে দেখবেন যে বেলপাতা তখনই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় যখন তা অতিরিক্ত গ্রহণ করা হবে। তাই অবশ্যই অতিরিক্ত গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকবেন।

বেল পাতা খাওয়ার সঠিক নিয়ম

বেলপাতা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এতক্ষনে দেখলেন। এখন যদি সেটি খাবার সঠিক নিয়মটাই না জানেন তাহলে কিন্তু সঠিক উপকারিতা নাও পেতে পারেন। সব জিনিস খাওয়ারই বিভিন্ন ধরনের নিয়ম বা পদ্ধতি থাকে। তাই এখন আপনার বেল পাতা খাওয়ার কি কি পদ্ধতি বা নিয়ম রয়েছে তা জানতে হবে।

আরো পড়ুন : তোকমা দানার উপকারিতা ও ইসুবগুলের ভুষি ও তোকমা খাওয়ার নিয়ম

প্রথমত আপনি বেলপাতা চিবিয়ে খেতে পারেন। কাঁচা কচি বেলপাতা চিবিয়ে খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। তবে খাওয়ার আগে অবশ্যই ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। কিন্তু অনেকেই এইভাবে বেল পাতা খেতে পারেনা। তাই আরো কিছু পদ্ধতি অনুযায়ী বেলপাতা কে থাকে। নিচে চলুন আরো কিছু উল্লেখযোগ্য পদ্ধতি দেখে নিই।

বেল পাতার রস করে : এর জন্য প্রথমে কয়েকটি কাঁচা বেলপাতা নিয়ে বেটে ভালোভাবে এর থেকে রস সংগ্রহ করে নেন। এরপর রসগুলো এক গ্লাস পানির সাথে মিশিয়ে তার সাথে ইচ্ছে হলে একটু চিনি বা মধু যোগ করে নিয়ে খেতে পারেন। এভাবে খেলে ডায়াবেটিস ও গ্যাস্ট্রিক জনিত সমস্যা থেকে দূরে থাকা যায়।

বেল পাতার চা : বেল পাতার চা বানানোর জন্য প্রথমে কিছু শুকনা বেল পাতা নিয়ে তা পানিতে ভালোভাবে সিদ্ধ করে ওই পানি দিয়ে চা বানিয়ে খেতে পারবেন।

বেল পাতার পাউডার : বেলপাতা ভালোভাবে শুকিয়ে তা দিয়ে পাউডার তৈরি করে সংরক্ষণ করবেন। প্রতিদিন সকাল বেলা খালি পেটে এক গ্লাস পানির সাথে এক চামচ বেলপাতার পাউডার মিশিয়ে খেয়ে নিবেন।

উপরোক্ত নিয়মে আপনি বেলপাতা খেতে পারেন। তবে খেয়াল রাখবেন অতিরিক্ত যাতে খাওয়া না হয়। কচি বেলপাতা কাঁচা চিবিয়ে খেলে বেশি উপকারিতা পাওয়া যায়। তাই কাঁচা পাতা খাওয়ার চেষ্টা করবেন যদি না পারেন তাহলে এই পদ্ধতি গুলো ট্রাই করতে পারেন।

বেল পাতা খাওয়ার সঠিক সময়

এত কিছু জানার পর এখন বেলপাতা কখন খাবেন বা এটি খাওয়ার সঠিক সময় সম্পর্কে জানার আগ্রহ হতে পারে। তাই এ বিষয়টি নিয়েও আপনাদেরকে বলবো। কাঁচা বেলপাতা বা বেল পাতা থেকে সংগ্রহ করা রস বিভিন্ন সময় খাওয়া যায়। যেমন সকালে খালি পেটে, রাতে ঘুমানোর আগে এবং খাবার খাওয়ার ৩০ মিনিট আগে ইত্যাদি।

কিন্তু এর মধ্যে সবচাইতে ভালো ও সঠিক সময় হচ্ছে সকাল বেলা খালি পেটে খাওয়া। সকাল বেলা খালি পেটে কাঁচা বেলপাতা চিবিয়ে খেলে বা বেল পাতার রস খেলে উপকারিতা বেশি পাওয়া যায়। খালি পেটে সকাল বেলা বেল পাতা খাওয়ার ফলে ডায়াবেটিস দূর হয়, গ্যাস্ট্রিক জনিত সমস্যা দূর হয়, খাদ্য হজম শক্তি বৃদ্ধি পায় ইত্যাদি।

তাই বেলপাতা খেয়ে যদি বেশি উপকারিতা পেতে চান তাহলে সকাল বেলা খালি পেটে খাওয়ার অভ্যাস করুন। এতে আশা করা যায় বেশি উপকৃত হতে পারবেন।

বেল পাতার রস খেলে কি হয়

বেল পাতার রস খেলে কি হয় তা জানতে চান অনেকে। ইতোমধ্যে আপনারা বেলপাতা খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা ও খাওয়া সঠিক নিয়ম সম্পর্কে আরো অনেক কিছু জেনেছেন। এখন আপনাদেরকে বলবো বেল পাতার রস খেলে কি হয় সে সম্পর্কে। আসল কথা বেল পাতার রস ও বেলপাতা খাওয়া কিন্তু একই ব্যাপার।

আরো পড়ুন : খালি পেটে কাঁচা ছোলা খাওয়ার উপকারিতা

আপনি যদি বেলপাতা খান তাহলে রসটাও কিন্তু খাওয়া হলো। আর সেই বেলপাতা বা বেল পাতার রসে থাকা বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরে বিভিন্নভাবে কাজ করে থাকে। বেল পাতার রস খাওয়ার ফলে যে উপকারিতা গুলো হয়তা চলুন এক নজরে নিচে দেখে নিই।

  1. ডায়াবেটিস দূর হয়
  2. হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়
  3. লিভারের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে
  4. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত হয়
  5. রক্ত পরিষ্কার করে 
  6. ইমিউনিটি সিস্টেম শক্তিশালী হয়
  7. জ্বর ও প্রদাহ কমে
  8. শ্বাস-প্রশ্বাসে সহায়ক ইত্যাদি

এই ছিল বেল পাতার রস খাওয়ার উপকারিতা। আপনি ইতিমধ্যে দেখলেন বেলপাতা বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়। এর রস করে কাঁচা চিবিয়ে বা চা হিসেবে। আপনি যেভাবে খান না কেন এর উপকারিতা পাবেন। যারা জানতে চাই বেল পাতার রস খেলে কি হয় তাদের জন্য শুধু এটা আলোচনা করলাম।

বেল পাতার রস খেলে কি ক্ষতি হয়

বেল পাতার রস খেলে কি ধরনের ক্ষতি হয় বা বেল পাতার রস খেলে ক্ষতি হয় কিনা এরকম প্রশ্ন আপনারা করে থাকেন। আসলে ইতোমধ্যে আপনারা বেল পাতা খাওয়ার ও বেলপাতার রস খাওয়ার বিভিন্ন উপকারিতা দেখেছেন। কিন্তু বেল পাতার রস খেলে কি ক্ষতি হয় এ সম্পর্কে ভালোভাবে হয়তোবা বুঝতে পারেননি।

আরো পড়ুন : চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা

কিন্তু এর মধ্যে আপনারা বেল পাতার অপকারিতা বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখেছেন। বেল পাতার রস খাওয়া ও বেল পাতা খাওয়ার অপকারিতা কিন্তু একই। তবুও আপনাদের ভালোভাবে বোঝার জন্য নিচে এক নজরে বেল পাতার রস খেলে কি ক্ষতি হয় তা উল্লেখ করলাম।

  • রক্তচাপ অতিরিক্ত কমে যাওয়া
  • গর্ভাবস্থায় ঝুঁকি
  • অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে পেট ব্যথা বা ডায়রিয়া
  • ওষুধের সাথে প্রতিক্রিয়া
  • এলার্জির ঝুঁকি
  • শর্করার মাত্রা অতিরিক্ত কমে যাওয়া
  • শরীরের তাপমাত্রা অতিরিক্ত কমে যাওয়া ইত্যাদি

তাহলে আপনি বুঝতে পারছেন যে, হ্যাঁ ! বেল পাতার রস খেলে ক্ষতিও হয়। এই ক্ষতিগুলো দেখা যায় যে বেলপাতা খাওয়ার ক্ষতির অনুরূপ। এ সমস্যাগুলো তখনই দেখা দেয় যখন আপনি বেলপাতা বা পাতার রস অধিক মাত্রায় সেবন করবেন। কিন্তু এ বিষয়ে আপনারা অবশ্যই সতর্ক থাকবেন।

বেল পাতার রস খেলে কি সেক্স কমে যায়

বেল পাতার রস খেলে কি সেক্স কমে যায় বা যৌন উত্তেজনা কমে যায় নাকি এরকম প্রশ্ন অনেকে করে থাকেন। ইতোমধ্যে আপনাদেরকে উপরেও বলেছি বেলপাতা অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে যৌন উত্তেজনা কমে যায়। কিন্তু আসলে বিষয়টা সরাসরি সেরকম না। বেলপাতা সরাসরি আপনার যৌন উত্তেজনা বা সেক্স কমাতে পারে এমন কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই।

তবে অতিরিক্ত বেল পাতা বা পাতার রস খাওয়ার ফলে শরীরে তাপমাত্রা অতিরিক্ত কমে যাওয়া, রক্তচাপ অতিরিক্ত কমে যাওয়ার ফলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। এই ধরনের সমস্যাগুলোর কারনে যৌন উত্তেজনা বা সেক্স কমে যেতে পারে। অতিরিক্ত বেলপাতা খাওয়ার ফলে এগুলোর প্রভাব কিছুটা শরীরের ওপর পড়তে পারে।

আরো পড়ুন : পুরুষদের জন্য অ্যালোভেরার ১০ টি উপকারিতা

তাই আপনি বেল পাতা খাওয়ার পর যদি বুঝতে পারেন আপনার শারীরিক বা মানসিক কোন পরিবর্তন হচ্ছে তাহলে সে বিষয়ে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন। তবে আসল কথা বেল পাতার রস খেলে সেটি সরাসরি সেক্স কমাতে পারে না।

বেল পাতা দিয়ে ব্রণ দূর করার উপায়

বেল পাতার এতক্ষণে অনেক উপকারী তাই তো দেখলেন। বেল পাতা শুধু খাওয়া নয় এ দিয়ে যে আরো অনেক কাজ করা যায় তা যাবে কি। মুখের ব্রণ দূর করতে বেলপাতা প্রাকৃতিক এবং কার্যকরী একটি উপাদান। এটি দিয়ে খুব সহজেই ব্রণ দূর করা যায়। চলুন তাহলে এইবার জেনে নেই বেলপাতা দিয়ে কিভাবে খুব সহজেই ব্রণ দূর করবেন।

বেল-পাতার-উপকারিতা-ও-অপকারিতা

বেল পাতার পেস্ট

প্রথমে কয়েকটি কাঁচা সতেজ বেলপাতা নিয়ে ভালোভাবে বেটে একটি পেস্ট তৈরি করে নেন। এর সাথে সামান্য পানি যোগ করতে পারেন এরপর পেস্টটি তৈরি হলে সেটি ব্রনের ওপর সরাসরি ব্যবহার করবেন। ২০ থেকে ৩০ অপেক্ষা করার পর মুখ ধুয়ে ফেলবেন। এই কাজটি করার ফলে ব্রণ দূর হয় এবং ব্রণের প্রদাহ দূর হয়।

বেল পাতার রস

বেলপাতার রস দিয়েও কিন্তু ব্রণ দূর করা যায়। এর জন্য উপরের মতোই বেলপাতা পেস্ট না করে শুধুমাত্র ওখান থেকে পাতার রসটা সংগ্রহ করে নিতে হবে। রস নেওয়ার পরে এটি ব্রনের ওপর কটন বার বা কোন ভাবে লাগিয়ে রাখতে হবে। কিছুক্ষণ লাগিয়ে রাখার পর মুখ ধুয়ে ফেলবেন। এই প্রক্রিয়াটি ট্রাই করেও সহজে ব্রণ দূর করতে পারবেন।

বেলপাতা ও নিম পাতা

বেলপাতা ও নিমপাতা একই পরিমাণে নিয়ে ভালোভাবে সেগুলো বেটে পেস্ট করে নিবেন। পেস্ট করার পরে সেগুলো সরাসরি মুখের ওপর ব্যবহার করবেন। ২০ মিনিট পর মুখ ভালোভাবে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন। এতে করে ব্রণের প্রদাহ, ব্রণ সহ অন্যান্য আরো যে সমস্যা থাকে তা দূর হয়। নিমপাতা ও বেল পাতা ত্বকের জন্য অনেক উপকারী।

বেল পাতার রস ও মধু

প্রথমে বেল পাতার একটু রস সংগ্রহ করে নেবেন এবং তার পরে তার সাথে এক চা চামচ মধু মেশাবেন এবং ব্রণের ওপর ব্যবহার করবেন। এই পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করে আপনি খুব সহজেই বেলপাতা দিয়ে ব্রণ দূর করতে পারেন। আশা করি বাসায় ট্রাই করলে উপকৃত হবেন।

ছেলেদের বেলপাতার রস খেলে কি হয়

ছেলেদের বেলপাতার রস খেলে কি হয় এই প্রশ্নটি অহরহ লোক করে থাকে। আসলে বিষয়টা শুধুমাত্র ছেলেদের জন্য তা কিন্তু নয়। বেল পাতার রস ছেলেদের জন্য যেমন উপকারী মেয়েদের জন্যও তেমন উপকারী। ছেলেদের জন্য যেমন ক্ষতিকর মেয়েদের জন্যও কিন্তু তেমন ক্ষতিকর। অনেকেই ভাবে যে ছেলেদের বেল পাতার রস খেলে সেক্স কমে যায়।

এটি নিতান্তই একটি ভুল ধারণা যা আপনাদের সাথে ইতোমধ্যে উপরে আলোচনা করেছি। বেলপাতার রস খেলেই যে ছেলেদের কোন ক্ষতি হবে এরকমটা কিন্তু নয়। ইতিমধ্যে উপরে বর্ণিত বেল পাতার রস খাওয়ার যে সব উপকারিতা ও যেসব পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা অপকারিতা আলোচনা করা হয়েছে ছেলেদের বেলপাতার রস খাওয়ার ফলে একই কাজ হবে।

যদি নিয়ম মেনে পরিমান মত ভালোভাবে খান তাহলে উপকৃত হবেন আর যদি অতিরিক্ত সেবন করেন তাহলে বিভিন্ন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্মুখীন হতে পারেন এই আর কি। তাই ছেলেদের বেলপাতার রস খেলে যে ক্ষতিই হবে এমনটা ভাবার কিছু নেই।

কচি বেলপাতা খেলে কি হয়

অনেকে প্রশ্ন করে থাকেন যে কচি বেলপাতা খেলে কি হয়। এ প্রশ্নটি করার কারণ হচ্ছে অনেকেই কচি বেলপাতা খুব সহজেই খেয়ে ফেলতে পারে তাই এটি খেলে কি হয় তা জানার আগ্রহ থাকে। আসলে বেলের যে ধরনের পাতা, বা পাতার রস বা কচি পাতা খান না কেন আপনি একই উপকারিতা পাবেন। এগুলা যে উপকারিতার খুব একটা কম বেশি হবে তা কিন্তু নয়।

ইতিমধ্যে উপরে আপনাদের সাথে যে উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে আলোচনা করেছি কচি বেলপাতা খাওয়ার ফলেও আপনি সেগুলোই পেতে পারেন। তবে আপনি যদি গাছ থেকে সরাসরি কচি বেলপাতা খেতে পারেন তাহলে সেটি আপনার জন্য ভালো। এতে পুষ্টিগুণ একটু হলেও বেশি পাওয়া যাবে। তাছাড়া এভাবে খাওয়ারও তেমন কোন ঝামেলা নেই।

বেল পাতার তৈরি ফেসপ্যাক তৈরি

বেল পাতার ফেসপ্যাক তৈরি কিভাবে করবেন তা আপনারা অনেকেই জানেন না। তাই জানার জন্য বিভিন্নভাবে খোঁজাখুঁজি করে থাকেন। তাই আপনাদেরকে আজকে বেল পাতার কয়েকটি ফেসপ্যাক তৈরি করা ও ব্যবহার সম্পর্কে বলব। বেল পাতার ফেসপ্যাক অনেক উপকারী। এ ফেসপ্যাক দিয়ে ও ব্রণের প্রদাহ সহজে দূর করা যায়।

বেল পাতা ও চন্দন ফেসপ্যাক

ফেসপ্যাকটি তৈরি করার জন্য প্রথমে আপনাকে কয়েকটি তাজা বেলপাতা, এক চামচ চন্দন গুড়া ও সামান্য পরিমাণ গোলাপ জল নিতে হবে। এরপর বেল পাতাগুলো ভালোভাবে বেটে একটি পেস্ট তৈরি করতে হবে। সেই পেস্টের সাথে চন্দন গুড়া মেশাতে হবে এবং পরিমাণ মতো গোলাপজল দিয়ে সুন্দর করে একটি পেস্ট তৈরি করতে হবে।

এরপর সেই পেস্ট সারা মুখে এবং গলায় ভালোভাবে ব্যবহার করবেন। ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলবেন।

বেলপাতা ও নিম পাতার ফেসপ্যাক

এই ফেসপ্যাকটি তৈরি করার জন্য আপনাকে কয়েকটি বেলপাতা ও কয়েকটি নিমপাতা নিতে হবে এবং সেগুলো ভালোভাবে পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে। এই পেস্ট এর সাথে এক চামচ মধু মিশিয়ে পেস্টটি এমন ভাবে তৈরি করবেন যাতে তা খুব বেশি পাতলা বা বেশি ঘন না হয়। এরপর সেটি সারা মুখে ভালোভাবে ব্যবহার করবেন।

ব্যবহার করার ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিবেন। এই ফেসপ্যাকটি অনেক অনেক বেশি উপকারী। এটি এন্টিব্যাক্টেরিয়াল হিসেবে কাজ করে।

এই দুটি ফেসপ্যাক ছাড়াও আপনি বেল পাতার সাথে মুলতানি মাটির ফেসপ্যাক ও বেল পাতার সাথে দইয়ের ফেসপ্যাক তৈরি করতে পারেন। এই জিনিসগুলো নিয়ে শুধু ওপরের পদ্ধতি অনুযায়ী মিশিয়ে ভালোভাবে পেস্ট করে তা ত্বকে ব্যবহার করতে পারবেন। বেলপাতা দিয়ে তৈরি এই ফেসপ্যাক গুলো অনেক বেশি কার্যকর ও উপকারী।

শেষ কথা - বেল পাতার উপকারিতা অপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম

বেল পাতার উপকারিতা অপকারিতা খাওয়ার নিয়ম সহ বেলপাতা সম্পর্কে বিস্তারিত সবকিছু জানার জন্য আশা করি পোস্টটি ভালোভাবে পড়েছেন বুঝতে পেরেছেন এবং উপকৃত হয়েছেন। আসলেই বেলপাতা যে এতটা উপকারী তা আমাদের জানাই ছিল না। বেল পাতা নিয়ম মেনে ব্যবহার করলে অনেক উপকারিতা পাওয়া যায়।

কিন্তু এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। উপরে বর্ণিত এই উপকারিতা গুলো যদি পেতে চান তাহলে বর্ণিত নিয়ম ও পদ্ধতি অনুযায়ী ব্যবহার করতে পারেন। তবে কোন ধরনের সমস্যায় পড়লে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। অতিরিক্ত ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকবেন। এতক্ষণ ধরে পোস্টটি পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ😍

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url