বেসন দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায় - মুখে বেসন ব্যবহারের নিয়ম
বেসন দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায় জানতে চাচ্ছেন ? মুখে বেসন ব্যবহারের নিয়ম কি তাও জানেন না ? চিন্তার কোন কারণ নেই। আজকে আপনাদের সাথে বেসন ব্যবহার করে কিভাবে ত্বকের সাস্থ্য ভালো রাখবেন তার বিস্তারিত আলোচনা করব এই পোস্টে।
বেসন ব্যবহার করে কিভাবে ফর্সা হবেন, বেসন কিভাবে মুখে ব্যবহার করবেন, মুখে
ব্যবহার করার জন্য বেসনের বিভিন্ন ফেসপ্যাক তৈরি ও ব্যবহার ইত্যাদি সকল কিছু
নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব এখন। চলুন তাহলে শুরু করি।
সূচিপত্র - বেসন দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায় - মুখে বেসন ব্যবহারের নিয়ম
- বেসন দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায়
- বেসন ব্যবহার করলে কি ফর্সা হওয়া যায়
- মুখে বেসন ব্যবহারের নিয়ম
- বেসন মুখে মাখার উপকারিতা
- বেসন ও মধুর ফেসপ্যাক তৈরি ও ব্যবহার
- বেসন ও লেবুর ফেসপ্যাক তৈরি ও ব্যবহার
- বেসন ও হলুদের ফেসপ্যাক তৈরি ও ব্যবহার
- কফি ও বেসনের ফেসপ্যাক তৈরি ও ব্যবহার
- তৈলাক্ত ত্বকের জন্য বেসনের ফেসপ্যাক
- বেসন কি দিয়ে তৈরি করা হয়
- লেখকের কথা - বেসন দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায় ও মুখে বেসন ব্যবহারের নিয়ম
বেসন দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায়
বেসন দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায় অনেকেরই জানা নেই। আবার কারো কারো জানা থাকলেও
জানা নেই এর সঠিক ব্যবহার। কিভাবে ব্যবহার করলে কার্যকরী উপকারিতা পাওয়া যাবে তা
জানা নেই। তবে চিন্তার কোন কারণ নেই এর সব কিছু নিয়েই এখানে বিস্তারিত আলোচনা
হবে। বেসন দিয়ে ফর্সা হওয়ার জন্য আপনাকে বেসন ব্যবহার করতে হবে।
আরো পড়ুন : বিটরুট পাউডারের ১০ টি উপকারিতা - বিটরুট খাওয়ার নিয়ম
আর এই বেসন আমরা ত্বকে বিভিন্নভাবে ব্যবহার করতে পারি। সঠিক ব্যবহার করতে না
পারলে আমরা কাঙ্খিত উপকারিতা কখনোই পাবো না। তাই এখন বেসন ব্যবহার করে কিভাবে
ফর্সা হবেন, এবং এর ফেস প্যাক তৈরি করবেন কিভাবে, কত রকম ভাবে এটি ব্যবহার করা
যায় ও ব্যবহার করার নিয়ম নিয়ে নিচে ধাপে ধাপে আলোচনা করব।
বেসন ব্যবহার করলে কি ফর্সা হওয়া যায়
বেসন ব্যবহার করলে কি ফর্সা হওয়া যায় ? এই প্রশ্নের উত্তরটা আপনাদের কাছে আগে ক্লিয়ার করি। আসলে বেসন সরাসরি ত্বক ফর্সা করবে এমন কোন ক্ষমতা রাখেনা। আসল কথা আপনার ত্বকের প্রাকৃতিক রং নির্ভর করবে আপনার জেনেটিক্স ও অন্যান্য বাহ্যিক কারণ এর ওপর। হঠাৎ করেই একটি কিছু ব্যবহার করবেন আর ফর্সা হয়ে যাবেন এমনটি নয়।
আপনি আপনার ত্বকের রং বংশ পরস্পরায় ক্রোমোজোমের মাধ্যমেই পেয়ে থাকেন। এই রং যে
আপনি বেসন ব্যবহার করেই পরিবর্তন করতে পারবেন এটি কিন্তু সম্ভব নয়। অনেকে দেখবেন
যে বাজার থেকে কৃত্রিম কিছু ক্রিম ব্যবহার করে কালো ত্বকের ধবধবে সাদা বানিয়ে
ফেলে। এটি ত্বকের জন্য যে কতটা ক্ষতিকার তা আমরা জানলে কোনদিনই এসব ব্যবহার করতাম
না।
আরো পড়ুন : পুরুষের জন্য মেথি খাওয়ার নিয়ম উপকারিতা ও অপকারিতা
আসলে বেসন আমাদের ত্বক সরাসরি ফর্সা করতে পারে না। তবে এটি ব্যবহারের ফলে আমাদের
ত্বকের উপর এমন কিছু প্রভাব পড়ে যেগুলো ত্বককে সুন্দর, মসৃন, উজ্জ্বল ও ফর্সা
দেখায়। এটি আমাদের ত্বকের মরা কোষগুলো দূর করে, ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করে, টোন
কমায়, এবং ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসজনিত সংক্রমনের হাত থেকে দূরে রেখে ত্বকের
স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
মুখে বেসন ব্যবহারের নিয়ম
মুখে বেসন ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে কিছু বলা যায়। এতক্ষণ আপনারা দেখলেন তো বেসন
সরাসরি ত্বককে ফর্সা করতে না পারলেও এটি ত্বকের জন্য অনেক উপকারী। বিভিন্ন
ধরনের ক্রিম যেমন নাইট ক্রিম, ফর্সা হওয়ার ক্রিম ইত্যাদি এ ক্রিমগুলো ব্যবহার
করে আপনি যে ফর্সা হচ্ছেন তা কিন্তু অনেক অনেক বেশি ক্ষতিকর আপনার ত্বকের জন্য।
কিন্তু এদিক থেকে বেসন ব্যবহার করার কোন রিস্ক নেই। এটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক ও কার্যকরী একটি উপাদান ত্বককে সুস্থ সবল ও উজ্জ্বল করে তোলার। মুখে বেসন ব্যবহার করার অনেক নিয়ম রয়েছে। আপনি অনেক ভাবে ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন। বেসন দিয়ে বা এর সাথে আরো কিছু মিশিয়ে বিভিন্ন ধরনের ফেসপ্যাক তৈরি করে ব্যবহার করতে পারেন।
আর সেই ফেসপ্যাক ত্বকে ব্যবহার করে উপকৃত হতে পারেন। সব ফেস প্যাকই ব্যবহারের
আলাদা আলাদা নিয়ম থাকে। তাই এখানে সব নিয়ম বলে ভালোভাবে বোঝানো সম্ভব হবে না।
নিচে আপনাদের সাথে বেসন ব্যবহারের সব ধরনের ফেসপ্যাক তৈরি ও ব্যবহারের নিয়ম
বলবো। তাহলে চলুন সেগুলো তৈরীর সাথে সাথে ব্যবহারের সঠিক নিয়ম জেনে নিই।
বেসন মুখে মাখার উপকারিতা
ফেসপ্যাক তৈরি ও ব্যবহারের পূর্বে আপনার বেসন মুখে মাখলে কি কি উপকারিতা পাওয়া
যায় এটি জানা জরুরী। তাই আপনাদের সাথে আগে এটি নিয়ে একটু আলোচনা করব। বেসন
আমাদের ত্বকের জন্য কতটা উপকারী এবং কি কি উপকার করে এ সম্পর্কে যদি আপনি অল্প
কিছু ধারনা পান তাহলে পরের বিষয় গুলো বুঝতে আপনার জন্য সুবিধা হবে।
আরো পড়ুন : বিচি কলা ও সাগর কলা খাওয়ার কার্যকরী ২৫টি উপকারিতা
বেসন মুখে মাখার বিশেষ কিছু উপকারিতা নিচে উল্লেখ করা হলো:
- বেসন ত্বক থেকে মরা কোষ দূর করে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।
- ত্বকের উপর থেকে ধুলাবালি ও তৈলাক্ত ভাব দূর করতে সাহায্য করে।
- ত্বকের সব ধরনের ময়লা দূর করে প্রাকৃতিক ক্লিনজার হিসেবে কাজ করে।
- বেসনের সাথে আরো কিছু উপাদান মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করলে ত্বকের ময়েশ্চারাইজ করে।
- এটি ত্বকের ব্রণ প্রতিরোধ করতে অনেক বেশি কার্যকরী।
- ত্বকের টোন সমান করতে সাহায্য করে।
- ত্বককে সুন্দর, উজ্জ্বল ও মসৃণ করে।
- ত্বকের উপর থেকে বয়সের ছাপ দূর করে ইত্যাদি।
তাহলে বুঝতে পারছেন বেসন মুখে মাখার কত উপকারিতা। নিয়মিত মুখে বেসন মাখার অভ্যাস
করলে আপনি উপরোক্ত এই উপকারিতা গুলো গ্রহণ করতে পারবেন। তাই বেসন দিয়ে ফর্সা
হওয়ার উপায় এর জন্য মুখে বেসন ব্যবহারের যে নিয়মগুলো নিচে আলোচনা করব সে
অনুযায়ী ব্যবহার করে উপকারিতা গুলো খুব সহজেই গ্রহণ করতে পারেন।
বেসন ও মধুর ফেসপ্যাক তৈরি ও ব্যবহার
বেসন ও মধুর ফেসপ্যাক কিভাবে তৈরি করবেন ও কিভাবে ব্যবহার করবেন তা বলব। এতক্ষণ
তো অনেকেই বকবকানি শুনলেন। এবার তাহলে চলুন আসল কথা বলা যাক। বেসন ও মধুর ফেস
প্যাকটি ত্বককে নরম ও মসৃণ করতে, ত্বকের ময়লা দূর করতে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা
বাড়াতে অনেক বেশি সহায়ক। এই ফেসপ্যাকটি বাড়িতে বসেই খুব সহজে বানিয়ে ফেলা
যায়।
বেসন ও মধুর ফেস প্যাক তৈরীর উপকরণ পদ্ধতি ও ব্যবহারের নিয়ম ধাপে ধাপে নিচে
দেয়া হলো।
উপকরণ
- বেসন নিবেন ২ টেবিল চামচ
- মধু ১ টেবিল চামচ
- লেবুর রস ১ টেবিল চামচ (ইচ্ছে হলে নিতে পারেন বা নাও নিতে পারেন যদি ত্বক সেন্সিটিভ হয়)
- গোলাপজল বা দুধ নিবেন পরিমাণ মতো মিশ্রণটি তৈরি করার জন্য।
ফেসপ্যাক তৈরি পদ্ধতি
প্রথমে একটি পরিষ্কার পাত্রে বেসন ও মধু ঢেলে নিতে হবে। এরপর বেসন মধু ভালোভাবে
মিশিয়ে নিতে হবে। এ দুটি ভালোভাবে মিশে গেলে যদি লেবুর রস নেন তাহলে লেবুর রস
দিয়ে দিতে হবে। তারপর পরিমাণ মতো গোলাপজল বা কাঁচা দুধ দিতে হবে। এভাবে সবকিছু
ভালোভাবে মিশিয়ে এমন একটি পেস্ট তৈরি করতে হবে যাতে মুখে ভালোভাবে লাগানো
যায়।
আরো পড়ুন : রাতে ঘুমানোর আগে কিসমিস খেলে কি হয়
আবার পেস্টটি যাতে খুব বেশি পাতলা না হয়ে যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সেজন্য
গোলাপ জল বা দুধ যোগ করার সময় পরিমাণমতো যোগ করতে হবে।
ব্যবহারের নিয়ম
প্যাকটি ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই মুখ ভালোভাবে ধুয়ে নিবেন। মুখ ধোয়ার পরে তৈরি
প্যাক হাতের আঙ্গুল দিয়ে আস্তে আস্তে সারা মুখ মন্ডলে চোখের চারপাশ বাদ দিয়ে
লাগান। গলা পর্যন্ত লাগাতে পারেন। ভালোভাবে লাগানো হয়ে গেলে ১৫ থেকে ২০ মিনিট
অপেক্ষা করুন। ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর প্রলেপটি ভালোভাবে শুকিয়ে যাবে।
প্রলেপটি শুকানোর পরে হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ভালোভাবে ম্যাসাজ করে ধুয়ে
ফেলুন যাতে মুখে কিছু লেগে না থাকে। এরপর মুখে হালকা কিছু ময়েশ্চারাইজ ব্যবহার
করতে পারেন। এই প্যাকটি সপ্তাহে ২-৩ দিন ব্যবহার করতে পারেন। আশা করি বেসন ও মধুর
ফেস প্যাকটি তৈরি ও ব্যবহার সম্পর্কে বুঝতে পেরেছেন।
বেসন ও লেবুর ফেসপ্যাক তৈরি ও ব্যবহার
বেসন ও লেবুর ফেসপ্যাক ত্বকের জন্য অনেক উপকারী। এটি ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর
করতে, ত্বকের দাগ দূর করতে, ব্রণ দূর করতে এবং ত্বককে চকচকে ও উজ্জ্বল করতে
অনেক বেশি সহায়ক। বেসন ও লেবুর ফেসপ্যাক বানানো খুবই সহজ। বাড়িতে বসেই খুব সহজে
লেবু, বেসন ও আর কিছু উপাদান দিয়ে খুবই স্বাস্থ্যকর একটি ফেসপ্যাক তৈরি করতে
পারেন।
এটি তৈরি করতে তেমন কোন ঝামেলা নেই। বেসন ও লেবুর ফেসপ্যাক তৈরির পদ্ধতি, তৈরির
উপাদান ও ব্যবহারবিধির নিচে ধাপে ধাপে দেয়া হলো। এ নিয়ম অনুযায়ী খুব সহজেই
এটি তৈরি করতে পারেন।
ফেসপ্যাকের উপকরণ
- ২ টেবিল চামচ বেসন
- ১ টেবিল চামচ লেবুর রস
- পরিমাণ মতো গোলাপজল
প্যাক তৈরি পদ্ধতি
প্রথমেই একটি পরিষ্কার পাত্রে বেসন ও লেবুর রস দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।
ভালোভাবে মেশানো হলে এর সাথে আস্তে আস্তে গোলাপ জল যোগ করতে থাকুন এবং পেস্ট তৈরি
করুন। পেস্টটি এমনভাবে তৈরি করবেন যাতে খুব বেশি পাতলা না হয় আবার শক্ত না থাকে।
ত্বকে ব্যবহারের উপযোগী করে ভালোভাবে পেস্টটি তৈরি করুন।
মুখে ব্যবহারের নিয়ম
ফেসপ্যাকটি মুখে ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই মুখ ভালোভাবে ধুয়ে নিবেন। এরপর হাতের
আঙ্গুলের সাহায্যে সার মুখে এবং গলায় লাগিয়ে নিন। চোখের চারপাশে অবশ্যই ফাঁকা
রাখবেন। এরপর পেস্টটি শুকানোর জন্য ১০ থেকে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। যখন দেখবেন যে
ভালোভাবে শুকিয়ে গেছে তখন হালকা গরম পানি দিয়ে ত্বক ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।
আরো পড়ুন : খালি পেটে কাঁচা ছোলা খাওয়ার উপকারিতা
মুখ ধোয়ার সময় আস্তে আস্তে ম্যাসাজ করে ধুবেন যাতে মুখে পেস্ট লেগে না থাকে।
বেশি জোরে ঘষাঘষি করবেন না। ভালোভাবে ধোয়ার পরে সাধারণ ময়েশ্চারাইজ ব্যবহার
করুন। এই ফেসপ্যাক সপ্তাহে এক থেকে দুই দিন ব্যবহার করা ভালো।
সতর্কতা
বেসন ও লেবুর ফেসপ্যাক অনেক সময় অনেকেরই মুখে ব্যবহারের পরে জ্বালাপোড়া করে। এর
কারণ হচ্ছে লেবুর রস। যাদের ত্বক বেশি সেনসিটিভ তাদের জন্য লেবুর রস ও বেসনের
ফেসপ্যাক মাঝেমাঝে জ্বালাপোড়া করতে পারে। এর জন্য ফেসপ্যাক তৈরি করার সময় লেবুর
রসের পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে এবং মুখে অল্প করে ব্যবহার করে টেস্ট করে দেখতে
হবে।
বেসন ও হলুদের ফেসপ্যাক তৈরি ও ব্যবহার
বেসন ও লেবুর ফেসপ্যাক এবং বেসন ও মধুর ফেসপ্যাক এর চাইতে বেসন ও হলুদের ফেসপ্যাক
কোনো দিক থেকে কম নয়। এটিও ত্বকের জন্য অনেক উপকারী। হলুদ হচ্ছে একটি প্রাকৃতিক
অ্যান্টিসেপটিক। হলুদে থাকা এন্টিসেপটিক ও এন্টি ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য ত্বককে
সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। তাছাড়া হলুদ ব্রণ দূর করতেও অনেক বেশি কার্যকর।
আমরা এমনিতেও সাধারণত মুখে হলুদ ব্যবহার করে থাকি। তাহলে ভাবুন বেসন ও হলুদের
ফেসপ্যাক কতটা কার্যকরী হতে পারে। হলুদ ও বেসন দ্বারা তৈরি ফেসপ্যাক ত্বকের
উজ্জ্বলতা বাড়াতে, ত্বকের কালচে দাগ দূর করতে এবং ব্রণ দূর করতে অনেক বেশি
কার্যকরী। এবার তাহলে বেসন ও হলুদের ফেসপ্যাক তৈরির পদ্ধতি, ব্যবহারের নিয়ম ও
উপকরণ গুলো দেখে নিই।
ফেসপ্যাক তৈরির উপকরণ
- বেসন ২ টেবিল চামচ
- হলুদের গুঁড়া ১ থেকে ৩ টেবিল চামচ
- দুধ বা দই ২ থেকে ৩ টেবিল চামচ
- গোলাপজল বা মধু সামান্য পরিমাণ
ফেসপ্যাক তৈরির পদ্ধতি
প্রথমে একটি পরিষ্কার বাটিতে হলুদের গুড়া ও বেসন ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে।
এরপরে এর সাথে দই বা দুধ ভালো ভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। এগুলো ভালোভাবে মেশানোর পরে
তার সাথে সামান্য পরিমাণ গোলাপ জল বা মধু মিশিয়ে ভালোভাবে পেস্ট করে নিতে
হবে। মুখে ব্যবহারের উপযোগী করতে হবে যাতে বেশি পাতলা বা বেশি ঘন না হয়।
ব্যবহারের নিয়ম
বেসন ও হলুদের ফেসপ্যাক ওপরে বর্ণিত অন্যান্য ফেসপ্যাক ব্যবহারের মতই। তবে এই ফেসপ্যাকটি মুখে লাগানোর পর যখন শুকিয়ে যাবে তখন ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। মুখ ধোয়ার সময় আস্তে আস্তে মেসেজ করে মুখ ধুতে হবে যাতে মুখে কিছু লেগে না থাকে। তারপর ময়েশ্চারাইজ এর জন্য সাধারণ ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারেন।
সপ্তাহে এ প্যাকটি ২-৩ বার ব্যবহার করতে পারেন। নিয়মিত ব্যবহারের ফলে ত্বক স্বাস্থ্যকর, উজ্জ্বল ও মসৃণ থাকবে। তবে ফেসপ্যাকটি তৈরি করার সময় হলুদের পরিমাণ বেশি ব্যবহার করবেন না কারণ এটি সাময়িকভাবে ত্বকের উপর হলুদ দাগ ফেলতে পারে। কারো যদি এনার্জিজনিত সমস্যা থাকে তাহলে তা আগে টেস্ট করে তারপর ভালোভাবে ব্যবহার করা উচিত।
কফি ও বেসনের ফেসপ্যাক তৈরি ও ব্যবহার
আপনারা কম বেশি সবাই জানেন কফি আমাদের ত্বকের জন্য কতটা উপকারী। কপি এবং বেসনের
একত্রিত ফেসপ্যাক ত্বক ফর্সা করতে অনেক বেশি সহায়ক। কফিতে থাকা ক্যাফেইন ত্বকে
রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে ফলে ত্বক সুস্থ সবল থাকে। কফি ও বেসনের ফেসপ্যাক ত্বকে
ব্যবহারের ফলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়, ময়লা দূর হয় এবং ত্বক তরতাজা
থাকে।
বাড়িতে বসে খুব সহজে এই প্যাকটি তৈরি করে ফেলতে পারেন। এই প্যাকটি তৈরি করার
জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ, তৈরি করার পদ্ধতি ও ব্যবহারের নিয়ম নিচে দেয়া হল।
প্রয়োজনীয় উপকরণ
- ২ টেবিল চামচ বেসন
- ভালো মানের কফির গুঁড়া ১ টেবিল চামচ
- দই বা দুধ ২ থেকে ৩ টেবিল চামচ
- মধু ১ চা চামচ ইচ্ছে হলে
তৈরির পদ্ধতি
একটি তৈরি করার জন্য প্রথমে বেসনের সাথে কফি গুড়া ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে।
এরপর এর সাথে আপনার প্রয়োজন মত দুধ বা দই মিশাতে হবে। দুধ ত্বকের শুষ্কতা দূর
করতে ও দই ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করতে কার্যকরী। তাই এগুলো আপনি প্রয়োজন মত
ব্যবহার করবেন। এগুলো ভালোভাবে মিশিয়ে নিবেন।
পেস্টের ঘনত্ব ঠিক রাখার জন্য দই বা দুধ এর পরিমাণ নির্ধারণ করবেন। এরপর তার সাথে
মধু মেশাতে পারেন যদি দরকার হয়। মধু ত্বকের মাইশচারাইজ করে। তারপর পেস্টটি তৈরি
হয়ে গেলে ত্বকে ব্যবহার করবেন।
ব্যবহারের নিয়ম
এই প্যাকটিও উপরে বর্ণিত অন্যান্য প্যাক ব্যবহারের নিয়মের অনুরূপ। এই প্যাকটি
ব্যবহার করার পর যখন মুখে পেস্টগুলো শুকিয়ে যাবে তখন ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে
ফেলবেন। সপ্তাহে ১ থেকে ২ বার এই প্যাক ব্যবহার করতে পারবেন। নিয়মিত এই প্যাকটি
ব্যবহারের ফলে ত্বকের সুস্থতা বজায় থাকে। তবে প্যাকটি তৈরি করার সময় কিছু
সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
সতর্কতা
একটি তৈরি করার আগে অবশ্যই কফির গুড়া গুলো যাতে বেশি মোটা না হয় ভালোভাবে দেখে
নিবেন। প্যাকটি ব্যবহারের ফলে যদি তাকে জ্বালাপোড়া করে তাহলে তাড়াতাড়ি করে
ধুয়ে ফেলবেন। ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই একটু টেস্ট করে দেখে নিবেন।
তৈলাক্ত ত্বকের জন্য বেসনের ফেসপ্যাক
তৈলাক্ত ত্বক আমাদের অনেকের কাছেই অনেক বেশি বিরক্তিকর। ত্বকের এই তৈলাক্ত ভাব
দূর করার জন্য আমরা কত নামিদামি ফেসপ্যাকই না ব্যবহার করে থাকি। তাও এর কোন
সমাধান মিলেনা। কিন্তু খুব সহজেই প্রাকৃতিক ও কার্যকরী কিছু জিনিস ব্যবহার করেই
যে ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করা যায় তা আমাদের অনেকের কাছেই অজানা।
ইতোমধ্যে আপনাদের সাথে বেসনের সাথে অন্যান্য উপকরণ ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের
ফেসপ্যাক নিয়ে আলোচনা করেছি। আপনি খেয়াল করলে দেখতে পাবেন যে এই সব ফেসপ্যাক
ব্যবহারের ফলেই ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর হয়। তবে টক দই ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর
করতে বেশি সাহায্য করে। তাই আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী প্যাকের সাথে দই মিশাতে
পারেন।
তাহলে বুঝতে পারছেন আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী আপনি ফেস প্যাক তৈরি করতে পারবেন এবং ব্যবহার করতে পারবেন। তাই ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করতে উপরে বর্ণিত যেকোনো একটি প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। প্যাক তৈরি করার সময় তার সাথে একটু টমেটোর রস মিশাতে পারেন। টমেটোর রসও তৈলাক্ত ভাব দূর করতে সহায়ক।
এই ছিল বেসনের সাথে আরো কিছু যোগ করে ফেসপ্যাক তৈরি করার বিভিন্ন পদ্ধতি। আপনাদের সাথে চার ধরনের ফেসপ্যাক তৈরী, ব্যবহার ও উপকরণ নিয়ে আলোচনা করলাম। বেসন দিয়ে ফর্সা হতে চাইলে এই প্যাকগুলো আপনি ট্রাই করতে পারেন। আশা করি কার্যকরী হবে।
এতক্ষণে আশা করি বেসন দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায় ও মুখে বেসন ব্যবহারের নিয়ম
সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন। চলুন এবার তাহলে বেসন নিয়ে আর কয়েকটি বিষয় জেনে
নেয়া যাক।
বেসন কি দিয়ে তৈরি করা হয়
বেসন কি দিয়ে তৈরি করা হয় এটি অনেকেই জানতে চান। বেসন সাধারণত ছোলা বা ছোলার
ডাল থেকে তৈরি করা হয়। প্রথমে ভালো মানের ছোলা নির্বাচন করে সেগুলো ভালো করে
শুকিয়ে পিষে বেসন তৈরি করা হয়। বেসন অনেক অনেক পুষ্টিকর একটি উপাদান। বেসনকে
ছোলার আটাও বলা হয়। ছোলার আটা বা বেসন শুধুমাত্র রূপচর্চায় নয়।
বেসনের ব্যবহার হাজার রকম কাজে। বিভিন্ন ধরনের রান্নার কাজে বেসনের তো অগণিত ব্যবহার। বেসনের মিষ্টি থেকে শুরু করে পিয়াজু, বেগুনি, বিভিন্ন ধরনের চপ,
রূপচর্চা আরো কত কি। বেসন খুবই পুষ্টিকর একটি উপাদান। এতে পর্যাপ্ত পরিমাণে
প্রোটিন, ফাইবার ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ থাকে। বেসন ছোলা থেকেই তৈরি করা হয়।
বেসন কত টাকা কেজি
বেসনের দাম সময় ও স্থানভেদে কম বেশি হতে পারে। তাছাড়াও বেসনের দাম গুণগত মান, চাহিদা ও সরবরাহের ওপরও নির্ভর করে। ভালো মানের বেসনের দাম একটু বেশি হয়ে থাকে। এক কেজি বেসনের দাম দেখা যায় ১০০ থেকে সর্বোচ্চ ১৫০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। তাই এর গুণগত মান দেখে শুনে অবশ্যই বেসন কিনবেন।
অনেক সময় অনেক বেসনের মধ্যেই বিভিন্ন ধরনের ভেজাল মিশ্রণ করা থাকে। অনেকেই এই
ভেজাল এড়ানোর জন্য ভালো মানের ছোলা কিনে গুড়া করে বাড়িতে বেসন তৈরি করেন। তাই
আপনিও ভালো মানের বেসন পেতে এই পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন।
লেখকের কথা - বেসন দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায় ও মুখে বেসন ব্যবহারের নিয়ম
বেসন দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায় ও মুখে বেসন ব্যবহারের নিয়ম সহ বেসন সম্পর্কে
টুকিটাকি আরো অনেক বিষয় সম্পর্কে আশা করি বিস্তারিত পরিষ্কারভাবে বুঝতে পেরেছেন।
বেসন আসলেই খুবই পুষ্টিকর ও উপকারী একটি উপাদান। অনেক আগে থেকেই মানুষ বেসন মুখে
ব্যবহার করে আসছে। তাই আপনিও এটি ব্যবহার করে উপকারিতা পেতে পারেন।
বেসন ব্যবহারের জন্য উপরে যেই প্যকগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, আশা করি সেই
ভাবে ব্যবহার করলে উপকৃত হতে পারবেন। তবে অবশ্যই সতর্কতার দিকে লক্ষ্য রাখবেন।
তাই সুন্দর, সুস্থ ও আকর্ষণীয় ত্বক পেতে নিয়মিত বেসন ব্যবহার করুন। আজকে এ
পর্যন্তই। আল্লাহ হাফেজ😍
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url