যষ্টিমধু খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা ও যষ্টিমধু খাওয়ার নিয়ম

যষ্টিমধু খাওয়ার উপকারিতা আমাদের অনেকের কাছেই অজানা। কারণ আমরা খুব কম মানুষই এই জিনিসটার সাথে পরিচিত। তাই যষ্টিমধু খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আজকে আপনাদের সাথে আলোচনা করব। 

যষ্টিমধু-খাওয়ার-উপকারিতা-অপকারিতা

ভেষজ গুণ সম্পন্ন এই জিনিসটি অনেক আগে থেকেই আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা সহ অন্যান্য ঔষধ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। এই যষ্টিমধু ব্যবহার করে আমরা অনেক উপকারিতা গ্রহণ করতে পারি। চলুন তাহলে দেরি না করে সবকিছু বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।

সূচিপত্র - যষ্টিমধু খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম

যষ্টিমধু কি

যষ্টিমধু কি এ বিষয়ে আগে বলে নিই। কারণ যারা এ জিনিসটির সাথে পরিচিত নয় তাদের মনের ভিতর প্রশ্ন জাগতে পারে এটি আসলে কি। দেখুন যষ্টিমধু নাম শুনে অনেকেই চিন্তা করতে পারেন এটি হয়তো বা এক ধরনের মধু। কিন্তু আসলে তা নয়। যষ্টিমধু মধু হলো গ্লাইসাইররিজা গ্লাবরা নামক একটি গাছের শিকড়। এই গাছটিকে বাংলাতে যষ্টিমধুর গাছ বলা হয়।

যষ্টিমধু গাছের শিকড় স্বাদে অনেক মিষ্টি হয়। তাই কে যষ্টিমধু বলা হয়।। তবে এটি অন্যান্য মধুর মত কোন মধু নয় আশা করি বুঝতে পেরেছেন। তবে এটি অন্য কোন মধু না হলেও এর উপকারিতা মধুর চাইতে কম কিছু না। এটি একটি প্রাকৃতিক ভেষজ গুণসম্পন্ন ঔষধ। তাহলে চলুন যষ্টিমধু সম্পর্কে বিস্তারিত সকল তথ্য একে একে জেনে নেয়া যাক।

যষ্টিমধু খাওয়ার উপকারিতা

যষ্টিমধু খাওয়ার উপকারিতা অনেক রয়েছে। এটি খুবই ভালো এবং প্রাকৃতিক ও ওষুধি গুণসম্পন্ন একটি গাছের শিকড়। যষ্টিমধু খেতে অনেক মিষ্টি। এই শিকরটি একটু নিয়ে মুখে দিলে বোঝা যায় তীব্র মিষ্টি স্বাদ। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিয়মিত এটি গ্রহণ করলে অনেক উপকারিতা লাভ করা যায়। যষ্টিমধুর বিশেষ বিশেষ কিছু উপকারিতা নিচে উল্লেখ করা হলো।

আরো পড়ুন : থানকুনি পাতার ১৮টি উপকারিতা ও অপকারিতা

  1. সর্দি কাশি ও গলা ব্যথায় যষ্টিমধু : সর্দি কাশি ও গলা ব্যথার জন্য যষ্টিমধু অনেক উপকারী এতে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য থাকে যা সর্দি কাশি ও গলা ব্যথা দূর করতে সহায়ক।
  2. ইমিউনিটি সিস্টেম শক্তিশালী করে : যষ্টিমধুতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের  ইমিউনিটি সিস্টেম শক্তিশালী করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
  3. হজম শক্তি বৃদ্ধি করে : এটি হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে অনেক বেশি সহায়ক। পাশাপাশি পাকস্থলীর বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর করে।
  4. প্রদাহ হ্রাস করে : যষ্টিমধুতে থাকা অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি শরীরের বিভিন্ন জায়গার প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
  5. লিভারের সুস্থতা : যষ্টিমধুও লিভারকে ক্ষতিকর পদার্থ থেকে সুরক্ষা করে ফলে লিভারের সুস্থতা নিশ্চিত হয়।
  6. স্মরণশক্তি বৃদ্ধি পায় : নিয়মিত দুধের সাথে যষ্টিমধুর গুড়া খাবার ফলে  স্মরণ শক্তি  বৃদ্ধি পায়।
  7. অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়া হিসেবে : যষ্টিমধুতে গ্লিসারিন উপস্থিত থাকে যা বিভিন্ন ধরনের ছত্রাক, ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার হাত থেকে রক্ষা করে।
  8. হরমোনের মাত্রা বজায় থাকে : যষ্টিমধুতে থাকা ফাইটোস্ট্রাজেনিক নারীদের হরমোন জনিত বিভিন্ন সমস্যা দূর করে।

তাহলে বুঝতে পারছেন ছোট্ট এই ঔষধি গুনসম্পন্ন গাছের শিকড়ে কত রকম উপকারিতা থাকে। তাই উপকারিতা পেতে চাইলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী যষ্টিমধু খাবার অভ্যাস করতে পারেন। আশা করি যষ্টিমধু খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে একটু হলেও ধারণা পেয়েছেন। এবার চলুন যষ্টিমধু খাওয়ার বিভিন্ন নিয়ম গুলো দেখে নিই।

যষ্টিমধু খাওয়ার নিয়ম যষ্টিমধু কিভাবে খায়

যষ্টি মধু বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়। প্রতিটা জিনিসই খাওয়ার কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম কানুন থাকে। তেমন যষ্টিমধু খাওয়া কিছু নিয়ম রয়েছে। অনেকে অনেক ভাবে যষ্টিমধু খেয়ে থাকে। তাই এখন আপনাদের সাথে যষ্টিমধু খাওয়ার কিছু নিয়ম নিয়ে আলোচনা করব। এটি খাওয়ার কিছু সঠিক নিয়ম রয়েছে। তাই যষ্টিমধু খাওয়ার সঠিক নিয়ম অবশ্যই অনুসরণ করা উচিত।

আরো পড়ুন : শিমুল মূলের উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম

যাতে করে এর সঠিক উপকারিতা গ্রহণ করা যায় এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থেকে দূরে থাকা যায়। চলুন তাহলে যষ্টিমধু খাওয়ার কিছু পদ্ধতি দেখে নেয়া যাক।

যষ্টিমধুর চা

এর জন্য যষ্টিমধুর গুড়া অথবা যষ্টিমধুর শিকড় কুচি নিয়ে এক কাপ পানিতে ১৫ থেকে ২০ মিনিট ধরে ভালোভাবে সিদ্ধ করতে হবে। তারপর সেটি ছেঁকে নিয়ে শাহ হিসেবে খেতে হবে। এটি দিনে এক থেকে দুইবার খেতে পারেন। সর্দি কাশির জন্য অনেক উপকারী।

যষ্টিমধুর গুঁড়া ও মধু 

এক চামচ যষ্টিমধুর গুঁড়া এবং মধু নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে খেতে পারেন। গলা ব্যথার জন্য অনেক বেশি উপকারী এটি।

যষ্টিমধুর ক্যাপসুল বা ট্যাবলেট 

বর্তমানে বাজারে যষ্টিমধু ক্যাপসুল বা ট্যাবলেট হিসেবে পাওয়া যায়। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এটি গ্রহণ করতে পারেন।

অন্যান্য ভেষজ ওষুধের সাথে 

অন্যান্য ভেষজ ঔষধ বলতে যেমন আদা, তুলসী বা গোলমরিচের সাথে মিশিয়ে যষ্টিমধু খেতে পারেন।

যষ্টিমধু ও গরম পানি 

এক চামচ যষ্টিমধুর গুঁড়া ফুটন্ত পানিতে মিশিয়ে ঠান্ডা করে তার সাথে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন।

দুধ ও যষ্টিমধু

গরম দুধের সাথে এক চামচ যষ্টিমধুর গুঁড়া মিশিয়ে খাওয়া যায়। এছাড়াও শিকর চিবিয়ে রস খাওয়া যেতে পারে।। যষ্টিমধু মিষ্টি হাওয়াই অনেকে এইভাবে যখন তখন খেয়ে থাকে।

তাহলে আশা করছি যষ্টিমধু খাওয়ার বিভিন্ন নিয়ম এবং পদ্ধতি সম্পর্কে বুঝতে পারলেন। তাই সবসময় খেতে চাইলে বর্ণিত পদ্ধতি বা নিয়ম অনুসরণ করে খেতে পারেন।

যষ্টিমধু খাওয়ার অপকারিতা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

যষ্টিমধু খাওয়ার উপকারিতা ও খাওয়ার বিভিন্ন নিয়ম বা পদ্ধতি সম্পর্কে এতক্ষণ জানলেন। এখন আমরা দেখব যষ্টিমধু খাওয়ার অপকারিতা বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলো। কেননা এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আপনার যদি জানা থাকে তাহলে এটির ব্যবহার আপনার জন্য সহজ হবে। যষ্টিমধু খাওয়ার ফলে সম্ভাব্য কিছু কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।

যষ্টিমধু-খাওয়ার-উপকারিতা-অপকারিতা

তাই এ বিষয়গুলো থেকে অবশ্যই সতর্ক থাকা উচিত। এটি খাওয়ার ফলে কি কি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়ার সম্ভাবনা থাকে চলুন নিচে এক নজরে ধাপে ধাপে দেখে নিই।

  • যষ্টিমধু উচ্চমাত্রায় খাওয়ার ফলে উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে
  • অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে পটাশিয়ামের ঘাটতি দেখা দিতে পারে
  • যষ্টিমধু গ্রহণ দীর্ঘ মেয়াদি হলে কিডনির ঝুঁকি থাকে
  • পুরুষের টেস্টোস্টেরন হরমোন কমিয়ে দিতে পারে
  • হরমনের ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করতে পারে
  • অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে এটি মহিলাদের পিরিয়ড চক্রে অনিয়ম ঘটাতে পারে
  • এটি খাওয়ার ফলে অনেকের এলার্জি যাতে সমস্যা দেখা দিতে পারে
  • গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী মায়ের জন্য ঝুঁকি
  • ওষুধের সাথে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে
  • দীর্ঘ সময় ধরে যষ্টিমধু খাওয়ার ফলে ওজন বেড়ে যেতে পারে
  • দীর্ঘদিন ধরে খাবার ফলে বেশি ব্যথা, মাথাব্যথা ও দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি ভাব দেখা দেয়ার সম্ভব না থাকে।

এ সমস্যা গুলো দেখা দেওয়া সম্ভাবনা তখনই থাকে যখন আমরা দীর্ঘদিন ধরে এটি গ্রহণ করব বা অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করব। তাই আমাদের এগুলো কিছুদিন খাওয়ার পরে একটু গ্যাপ দেওয়া উচিত এবং অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। আর অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে যদি আপনি উচ্চ রক্তচাপ ও কিডনি জনিত সমস্যায় ভুগে থাকেন।

যষ্টিমধু পাউডার খাওয়ার উপকারিতা

যষ্টিমধু খাওয়ার নিয়ম ইতিমধ্যে আপনারা দেখেছেন। যষ্টিমধু বিভিন্নভাবে খাওয়া যায় তার মধ্যে একটি হচ্ছে পাউডার। বর্তমানে বিভিন্ন ভেষজ ওষুধের দোকানে যষ্টিমধুর পাউডার পাওয়া যায়। আর অনেকেই এই পাউডার নিয়মিত ব্যবহার করে থাকে। যষ্টিমধুর শিকড় থেকেই এর পাউডার তৈরি হয়। যষ্টিমধুর যেমন উপকারিতা এর পাউডারেরও ঠিক তেমন উপকারিতা রয়েছে।

আরো পড়ুন : আমলকি হরিতকি বহেরার উপকারিতা 

আমরা দেখলাম যে যষ্টিমধু শিকড় চিবিয়ে খাওয়া যায়। কিন্তু এর বেশি ব্যবহার পাউডার হিসেবে। পাউডার বিভিন্নভাবেই খাওয়া যায় যা আপনারা দেখলেন। চলুন এবার তাহলে যষ্টিমধুর পাউডার খেলে কি কি উপকারিতা পাওয়া যায় তা এক নজরে দেখে নিই।

  • যষ্টিমধুর পাউডার সর্দি-কাশি এবং গলা ব্যথার জন্য অনেক বেশি উপকারী।
  • যষ্টিমধুর পাউডার হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে অনেক বেশি সহায়ক। তাছাড়া এটি গ্যাস্ট্রিক ও আলসার জনিত সমস্যা দূর করে।
  • যষ্টিমধুতে এন্টি ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা শরীরের বিভিন্ন জায়গার প্রদাহ দূর করতে সহায়ক।
  • যষ্টিমধু ত্বকের জন্য অনেক সহায়ক। অনেকে এটি ত্বকে ব্যবহার করে থাকে।
  • এটি আমাদের শরীরের ইমিউনিটি শক্তি বৃদ্ধি করে।
  • হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে অনেক বেশি সহায়ক।
  • মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ কমায় ইত্যাদি।

তাহলে বুঝতে পারলেন যষ্টিমধু খাওয়া এবং এর পাউডার খাওয়ার মধ্যে উপকারিতার মধ্যে কোন কমবেশি নেই। তাই যষ্টিমধু খেতে আপনি এটি পাউডার হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন বা উপরে বর্ণিত পদ্ধতি গুলোও ফলো করতে পারেন। এই উপকারিতা গুলো পেতে নিয়মিত যষ্টিমধুর পাউডার গ্রহণ করতে পারেন।

যষ্টিমধুর গুড়া খাওয়ার নিয়ম

যষ্টিমধুর পাউডারের উপকারিতা জানার পরে এবার অবশ্যই এটি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আপনার জানা দরকার। ইতোমধ্যে যষ্টিমধু খাওয়ার বিভিন্ন নিয়ম বা পদ্ধতি সম্পর্কে আপনি জেনেছেন। এবার আপনাদেরকে যষ্টিমধুর পাউডার কি কি ভাবে খাওয়া যায় তা বলবো। যষ্টিমধুর গুড়া খাবার কিছু পদ্ধতি নিচে উল্লেখ করা হলো।

  1. গরম পানির সাথে মিশিয়ে : এক গ্লাস গরম পানির মধ্যে এক চামচ যষ্টিমধুর গুঁড়া মিশিয়ে তার সাথে একটু মধু মিশিয়ে নিয়ে খাওয়া যায়।
  2. দুধের সাথে : এক গ্লাস গরম দুধের সাথে এক চামচ যষ্টিমধুর গুড়া মিশিয়ে খেতে পারেন।
  3. চায়ের সাথে : যষ্টিমধুর গুড়া এক কাপ পানির সাথে মিশিয়ে ভালোভাবে ফুটিয়ে তা চা হিসেবে খেতে পারেন।
  4. মধুর সাথে : ১ থেকে ২ চামচ যষ্টিমধুর গুড়ার সাথে এক চামচ মধু মিশিয়ে খেয়ে নিতে পারেন। এটি গলা ব্যথার জন্য অনেক বেশি উপকারী।

এসব পদ্ধতি অনুযায়ী আপনি যষ্টিমধুর গুঁড়া খেতে পারেন। তবে অবশ্যই অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। কোন বিশেষ পরিস্থিতিতে খেলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তারপরে খাবেন।

যষ্টিমধুর গাছ কেমন

যষ্টিমধু হচ্ছে গ্লাইসাইররিজা গ্লাবরা নামক একটি গাছের শিকড়। অনেকেই যষ্টিমধুর গাছ কেমন তা জানার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেন। তাই এখন এ গাছের কিছু বৈশিষ্ট্য আপনাদের সামনে তুলে ধরব যাতে করে আপনারা সহজে এই কাজটি চিনতে পারেন। চলুন যষ্টিমধুর গাছের কিছু বৈশিষ্ট্য নিচে দেখে নেয়া যাক যাতে করে এ সম্পর্কে কিছুটা ধারণা আসে।

গাছের আকৃতি ও উচ্চতা

যষ্টিমধুর গাছ এক থেকে দেড় মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। এটি একটি ঝোপ জাতীয় গাছ। অনেকগুলো কান্ড থাকে এবং ডালপালা আশেপাশে ছড়িয়ে পড়ে।

গাছের পাতা

যষ্টিমধুর গাছের পাতাগুলি পিনাট আকৃতির হয়ে থাকে। যার একটি মূল শাখা থেকে অনেকগুলো পাতা বের হয়। একটি শাখাতে ১০ থেকে ১৮ টি পাতা থাকে। পাতাগুলো দেখতে উপবৃত্তাকার হয়ে থাকে।

শিকড়

এই গাছের শিকড়ই হচ্ছে আসল জিনিস। এটি লম্বা মসৃণ এবং হলুদ বাদামি হয়ে থাকে। এই শিকড়ই ভেষজ গুণসম্পন্ন এবং স্বাদে অনেক মিষ্টি। শুকানোর পরে এই শিকড়ই পাউডার করে যষ্টিমধু তৈরি করা হয়।

ফুল ও বীজ

গাছে সাদা বা বেগুনি রংয়ের ফুল ফোটে। ফুল গুলো দেখতে মটর শুঁটির মতো এবং গাছের অগ্রভাগে গুচ্ছ আকারে ধরে থাকে। এই ফুলগুলো থেকে পড়ে বীজ উৎপন্ন হয়। বীজগুলো দেখতে মটরশুঁটির দানার মত। এসব বীজ বপন করে পরে চারা উৎপন্ন করা যায়।

আরো পড়ুন : পুরুষের জন্য মেথি খাওয়ার নিয়ম উপকারিতা ও অপকারিতা

আশা করি যষ্টিমধুর গাছ সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা পেয়েছেন।। এছাড়াও আপনি চাইলে যষ্টিমধুর গাছের ছবি সার্চ করে দেখে নিতে পারেন।

সর্দি কাশি ও গলা ব্যথা কমাতে যষ্টিমধু

সর্দি কাশি ও গলা ব্যথা কমাতে যষ্টিমধু অনেক অনেক বেশি সহায়ক। সর্দি কাশি ও গলা ব্যথা কমানোর জন্য অনেক আগে থেকেই যষ্টিমধু ভেষজ ঔষধ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। এটি খুবই কার্যকরী এবং প্রাকৃতিক একটি ভেষজ। যষ্টিমধু তে থাকা এন্টি ইনফ্লেমেটরি, অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল এবং এন্টি অক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ কমাতে এবং গলা ব্যথা দূর করতে অনেক উপকারী।

যষ্টিমধু-খাওয়ার-উপকারিতা-অপকারিতা

তাই আপনি যদি সর্দি-কাশি বা গলা ব্যথা জনিত সমস্যায় পড়ে থাকেন তাহলে যষ্টিমধু ব্যবহার করে সহজে এখান থেকে পরিত্রাণ পেতে পারেন। এই সমস্যাগুলো দূর করতে আপনি বিভিন্নভাবে যষ্টিমধু ব্যবহার করতে পারেন। এর কিছু কিছু আপনাদের সাথে ইতোমধ্যে উপরে আলোচনা করেছি। গরম পানি বা মধুর সাথে যষ্টিমধুর গুঁড়া খেলে এসব সমস্যা দূর হয়।

তাছাড়া তুলসী পাতার রসের সাথেও যষ্টিমধুর খেতে পারেন। কারণ আপনারা জানেনই তুলসী পাতা কাশির জন্য কতটা উপকারী। এছাড়া এর সাথে আদার রসও যোগ করতে পারে। এ সমস্যা গুলো দূর করতে আদার রস অনেক উপকারী। তাই উপরোক্ত পদ্ধতি এবং এ পদ্ধতি গুলো অনুসরণ করে সর্দি কাশি ও গলা ব্যথা দূর করতে পারেন।

মিষ্টি কন্ঠ পেতে চাইলে ও মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে যষ্টিমধু

মিষ্টি কন্ঠ পেতে ও মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে খুবই কার্যকরী এবং প্রাকৃতিক একটি উপাদান হচ্ছে এই যষ্টিমধু। আপনারা অনেকেই হয়তোবা জানেন যে যষ্টিমধু খাওয়ার ফলে মিষ্টি কন্ঠ তৈরি হয়।। বিশেষ করে যারা গান করে বা অনেকেই অনেক জোরে কথা বলে গলা ভেঙে যায় তারা যষ্টিমধু খেয়ে থাকে। যষ্টিমধু গলার স্বর মসৃণ ও সুন্দর করতে সাহায্য করে।

অনেক সময় দেখা যায় গলায় ঠান্ডা লেগে গলা ভেঙে যায়। তখন যষ্টিমধু খেলে অনেক উপকার পাবেন। এতে করে গলা আবার সুস্থ হয়ে ওঠে। তাই কণ্ঠ সুন্দর ও মসৃণ করতে যষ্টিমধু খেতে পারেন। তবে খেয়াল রাখবেন অতিরিক্ত খাওয়া যাতে না হয় এবং দীর্ঘস্থায়ী সময় ধরে যষ্টিমধু খাওয়া থেকেও বিরত থাকবেন।

অনেকে আছেন মুখের দুর্গন্ধ সমস্যায় ভুগে থাকেন। তারা নিয়মিত নিয়ম উপরে বর্ণিত নিয়ম অনুযায়ী যদি যষ্টিমধু ব্যবহার করেন তাহলে এই সমস্যা থেকে দূরে থাকতে পারবেন। উপরের পদ্ধতি গুলোর পাশাপাশি আরো কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন যেমন। এক চামচ যষ্টিমধুর পাউডার ও কয়েকটি পুদিনা পাতা পানিতে ভালো করে ফুটিয়ে নেবেন।

এরপর সেই পানি ঠান্ডা করে পান করবেন করবেন। পুদিনা পাতার সাথে যষ্টিমধু খাওয়ার ফলে মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়। এছাড়াও দুই চামচ যষ্টিমধুর গুড়া পানির সাথে মিশিয়ে গরম করে ঠান্ডা করার পর সেটি দিয়ে গার্গল বা কুলি কুচি করতে পারেন। এটি করার ফলেও মুখের দুর্গন্ধ কমে যায়।

যষ্টিমধু কোথায় পাওয়া যায়

আপনারা অনেকেই জানতে চান যে যষ্টিমধু কোথায় পাওয়া যায়। যষ্টিমধু একটি প্রাকৃতিক ও ভেষজ গুণসম্পন্ন উপাদান। এটি আপনি সাধারণত আশেপাশের বাজারে যেসব ভেষজ ওষুধের দোকান থাকে সেগুলোতে খোঁজ করলেই পাবেন। তাছাড়া বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক ডাক্তারের কাছেও পাওয়া যায়। তাছাড়া কিছু কিছু সুপার মার্কেট ও ফার্মেসিতেও যষ্টিমধু পাওয়া যায়।

আরো পড়ুন : খালি পেটে কাঁচা ছোলা খাওয়ার উপকারিতা

বর্তমানে অনলাইনে যুগে অনেক অনলাইন প্লাটফর্মে যষ্টিমধু খেতে পারেন। অনেক সময় অনলাইন মার্কেটে যষ্টিমধুর গুড়া অফারেও বিক্রি করতে দেখা যায়। তাই আপনি অনলাইনে খোঁজ করলেও খুব সহজে যষ্টিমধু পেয়ে যেতে পারেন।

যষ্টিমধুর দাম কত

যষ্টিমধুর দাম সম্পর্কে জানতে চান অনেকেই। যষ্টিমধুর দাম নির্ভর করে এর কোয়ালিটি এবং ব্র্যান্ডের উপর। ভালো মানের যষ্টিমধুর দাম একটু বেশি হয়। যষ্টিমধু শুকনো শিকড় হিসেবে এবং এর পাউডার হিসেবে বিক্রি করা হয়। ১০০ গ্রাম যষ্টিমধু পাউডারের দাম দেখা যায়। ১৫০ থেকে ২৫০ বা ৩০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে স্থান ভেদে দাম একটু কম বেশি হয়ে থাকে।

আবার আপনি যদি শুকনা শিকড় কিনতে চান তাহলে ১০০ গ্রাম শিকড় ২০০ থেকে ৪০০ টাকা হয়ে থাকে। এছাড়াও যষ্টিমধুর ক্যাপসুল বা ট্যাবলেট পাওয়া যায়। যেগুলো আপনি স্থানীয় বাজারে দাম দেখে কিনতে পারেন। তবে অবশ্যই কেনার সময় এর গুণগত মান দেখে শুনে কিনবেন। অনেক সময় অনলাইন বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে বিভিন্ন অফারে বিক্রি হয়। সেখানে আপনি কম পেতে পারেন।

শীতকালে যষ্টিমধুর উপকারিতা

অন্যান্য সময়ের চাইতে শীতকালে যষ্টিমধুর আমাদের বেশি উপকারে আসে। কেননা এই সময় আমরা বিভিন্ন ধরনের ছোটখাটো অসুখ-বিসুখে আক্রান্ত হয়ে থাকি। এই যেমন ধরেন সর্দি, জ্বর, গলা ব্যথা, খুসখুসে কাশি, গলা বসে যাওয়া ইত্যাদি। ঠান্ডা সময় এ ধরনের সমস্যায় আমরা প্রায়ই সবাই পড়ে থাকি। তাই এ সমস্যাগুলো এড়াতে যষ্টিমধু ব্যবহার করতে পারেন।

আপনারা ইতোমধ্যে উপরে সর্দি, কাশি ও গলা ব্যথায় যষ্টিমধুর উপকারিতা দেখেছেন। এমনকি যদি গলা ভেঙে যায় তাহলে সেটির জন্য যষ্টিমধু অনেক উপকারী। আর শীতকালে এই গলা ভাঙ্গা সমস্যাটি প্রায়ই দেখা যায়। তাই আগে থেকে সতর্ক থাকতে শীতকালে যষ্টিমধুর পাউডার ব্যবহার করতে পারেন। এটি ফুসফুস থেকে স্লেশা দূর করতে সাহায্য করে।

ঠান্ডা সময় যষ্টিমধুর চা খেলে ঠান্ডা লাগা থেকে দূরে থাকা যায়। সব সময় গলা পরিষ্কার রাখে। তাছাড়া ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা তৈরি শ্বাসযন্ত্রের ইনফেকশন প্রশমিত করতে পারে। তাই ঠান্ডা সময় এ ধরনের সমস্যাগুলো থেকে দূরে থাকতে যষ্টিমধু ব্যবহার করতে পারেন।

শেষ কথা - যষ্টিমধু খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম

যষ্টিমধু খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা ও যষ্টিমধু খাওয়ার বিভিন্ন নিয়ম ও পদ্ধতি সম্পর্কে এতক্ষন জানলেন। আশা করি এ বিষয়ে পরিষ্কার একটি ধারনা পেয়েছেন। যষ্টিমধু খুবই কার্যকরী প্রাকৃতিক ঔষধি গুন সম্পন্ন একটি উপাদান। এটি ব্যবহারের ফলে কত উপকারিতা পাওয়া যায় তা বুঝতে পারছেন। তাই উপকারিতা গুলো পেতে চাইলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী যষ্টিমধু খাওয়া শুরু করতে পারেন।

তবে খেয়াল রাখবেন অতিরিক্ত খাওয়া যাতে না হয় এবং দীর্ঘ মেয়াদী ব্যবহার করবেন না। তাই খাওয়া শুরু করলে মাঝে মাঝে গ্যাপ দিবেন। এবং এর যেই সতর্কতা গুলো রয়েছে তার দিকে অবশ্যই নজর রাখবেন। আশা করি সবকিছু ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন। এত সময় নিয়ে পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ😍

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url