গর্ভাবস্থায় কচুর লতি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

গর্ভাবস্থায় কচুর লতি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা আমাদের অনেকেরই অজানা। কচুর লতি যে কতটা পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ও উপকারি তা অন্তত আমাদের একটু হলেও ধারণা আছে। এই পোস্টে গর্ভাবস্থায় কচুর লতি খাওয়া যাবে কিনা ও খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা নিয়ে আলোচনা করব।

গর্ভাবস্থায়-কচুর-লতি-খাওয়ার-উপকারি- ও-অপকারিতা

সহজলভ্য এই জিনিসটির সাথে আমরা প্রায় সবাই পরিচিত। এই জিনিসটি অনেকেই খেতে খুব পছন্দ করে। অনেক সময় দেখা যায় গর্ভবতী মা ও খেতে চাই। তাই গর্ভকালীন সময়ে এটি খেলে কি কি উপকারিতা ও ক্ষতি সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তা নিয়ে আজকের এই পোস্ট।

সূচিপত্র - গর্ভাবস্থায় কচুর লতি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

গর্ভাবস্থায় কচুর লতি খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় কচুর লতি খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। গর্ভকালীন সময় একজন গর্ভবতী মায়ের জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়। এই সময়টাতে গর্ভবতী মায়ের ওপর একটি এক্সট্রা নজর রাখা হয়। বিশেষ করে খাদ্য তালিকার ওপর। এ সময় গর্ভবতী মা চিন্তিত হয়ে থাকেন যে কোন খাবার গ্রহণ করা উচিত আর কোন খাবার থেকে দূরে থাকা উচিত।

এজন্য সব সময় গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকায় সব ধরনের পুষ্টি গুণসম্পন্ন খাবার রাখা হয়। আপনারা জানেন যে, কচুর লতি অনেক উপকারী একটি সবজি। এতে থাকা বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাই এ উপকারিতা গুলো গ্রহণ করার জন্য এ সময় অনেকেই কচুর লতি খাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে।

আরো পড়ুন : গর্ভাবস্থায় ডালিম খাওয়ার উপকারিতা - ডালিম ও বেদনার পার্থক্য

কচুর লতি খাবার উল্লেখযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ কিছু উপকারিতা নিচে দেয়া হল:

আয়রনের উৎস : কচুর লতি আয়রনের অনেক বড় একটি উৎস। গর্ভকালীন সময়ে গর্ভবতী মায়ের শরীরে আয়রনের কতটা প্রয়োজন তা সবাই জানেন। তাই যদি গর্ভকালীন সময় কচুর লতি খান তাহলে আয়রন গ্রহণ করতে পারবেন।

ভিটামিন ও খনিজ : কচুর লতিতে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন যেমন ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়াম থাকে। একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য এই উপাদান গুলো অনেক অনেক বেশি প্রয়োজনীয়। কেননা এটি গর্ভবতী মা ও গর্ভে থাকা শিশুর দৈহিক বিকাশ ও সুস্থ থাকতে অনেক বেশি সহায়ক।

শক্তির উৎস : কচুর লতিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট থাকে যা আমাদের শরীরে শক্তি প্রধান করে। গর্ভকালীন সময়ে শরীরে কার্বোহাইড্রেট এর প্রয়োজন অনেক বেশি। কারণ এ সময় বিভিন্ন ধরনের পরিশ্রম করতে হয় ফলে শক্তি প্রয়োজন হয়।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি : কচুর লতিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। গর্ভকালীন সময়ে গর্ভবতী মায়ের বিভিন্ন কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়। তাই এ সময় কচুর লতি খাওয়া অনেক উপকারী হবে।

আরো পড়ুন : গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার উপকারিতা - খেজুর খাওয়ার নিয়ম

ফাইবার থাকে : উচ্চ মাত্রার ফাইবারের একটি উৎস হলো কচুর লতি। ফাইবার হজম শক্তি ভালো করতে সহায়ক। তাই হজম শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য কচুর লতি খাওয়া যেতে পারে।

ক্যালসিয়াম এর উৎস : কচুর লতি ক্যালসিয়ামের অনেক বড় একটি উৎস। গর্ভবতী মা ও গর্ভে থাকা শিশুর জন্য ক্যালসিয়াম অনেক বেশি প্রয়োজনীয়। কেননা ক্যালসিয়াম মা ও গর্ভের শিশুর হাড় গঠন ও মজবুত করতে খুবই প্রয়োজনীয়।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে : কচুর লতি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে অনেক বেশি সহায়ক। কচুর লতি খাওয়ার ফলে পায়খানা ক্লিয়ার হয়।

এছাড়াও কচুর লতি খাবার আরো অনেক উপকারিতা রয়েছে। গর্ভাবস্থায় আপনি যদি উপকারিতা গ্রহণ করার জন্য কচুর লতি খান তাহলে এই উপকারিতা গুলো আশা করি পাবেন। তবে খাওয়ার আগে যদি একবার ডাক্তারের পরামর্শ নেন তাহলে সেটি আরো বেশি ভালো হবে। তবে খেয়াল রাখবেন প্রতিদিন যাতে অল্প পরিমাণে খাওয়া হয়।

গর্ভাবস্থায় কচুর লতি খাওয়ার অপকারিতা

গর্ভাবস্থায় কচুর লতি খাওয়ার অপকারিতা যে নেই এমনটি নয়। এতক্ষণ তো গর্ভাবস্থায় কচুর লতি খাওয়ার উপকারিতা দেখলেন। কিন্তু এটি খাওয়ার ফলে কি কি অপকারিতা হতে পারে তাও তো জানতে হবে তাই না ? তাই এ অপকারিতা গুলো জানার পরে আপনার যদি ইচ্ছে হয় তাহলে গর্ভকালীন সময়ে কচুর লতি খাবেন অন্যথায় খাওয়ার দরকার নেই।

আরো পড়ুন : বিচি কলা ও সাগর কলা খাওয়ার কার্যকরী ২৫টি  উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় কচুর লতি খাওয়ার উপকারিতার চাইতে অপকারিতা খুবই কম। এককথায় নেই বললেই চলে। অপকারিতা বা সমস্যা গুলো তখনই হয় যখন কচুর লতির রান্না ঠিকভাবে হয় না। আমরা জানি যে কচুর লতিতে বা কচুতে ক্যালসিয়াম অক্সালেট থাকে। যা সাধারণত আমাদের মুখ বা গলা চুলকায়। অনেকে এই ভয়েও কচু বা কচুর লতি খেতে চায় না।

এটি একটি সমস্যা। আর একটি সমস্যা রয়েছে এলার্জি। যারা এলার্জি জনিত সমস্যায় আগে থেকেই পড়ে আছেন তাদের এলার্জি হতে পারে। এলার্জির কারণে সারা শরীর চুলকাতে থাকে। এছাড়াও কচুর লতি খাওয়ার ফলে অনেকের হজমজনিত সমস্যা হতে পারে যখন এটি ভালোভাবে রান্না করা না হয় বা সিদ্ধ কম হয়। তাই এটি ভালোভাবে সিদ্ধ করে রান্না করা উচিত।

সাধারণত কচুর লতি খাওয়াই এই অপকারিতা গুলোই পাওয়া যায়। এগুলো যদিও অপকারিতা বলা যায় না। কচুর লতি ভালোভাবে সিদ্ধ করে রান্না করলে এতে থাকা ক্যালসিয়াম অক্সালেট নষ্ট হয়ে যায় ফলে এটি খেলে আর মুখ বা গলা ধরে না। তাই অবশ্যই ভালভাবে রান্না করে নিবেন।

গর্ভাবস্থায় কচুর লতি খাওয়া যাবে কিনা

গর্ভাবস্থায় কচুর লতি খাওয়া যাবে কিনা এটি আরেকটি প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি অনেকেই করে থাকেন। ইতিমধ্যে আপনাদের সাথে গর্ভ অবস্থায় কচুর লতি খাবার বিভিন্ন উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে আলোচনা করেছি। এগুলো জানার পর আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন গর্ভকালীন সময়ে কচুর লতি খাওয়া আদৌ ঠিক হবে কিনা।

গর্ভাবস্থায়-কচুর-লতি-খাওয়ার-উপকারি- ও-অপকারিতা

এই প্রশ্নটির উত্তরে বলা যায়, হ্যাঁ ! গর্ভাবস্থায় কচুর লতি খাওয়া যাবে যদি আপনি এটি সঠিক পদ্ধতিতে রান্না করে নিয়ম অনুযায়ী খান। এতে থাকা বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান, আয়রন, ফাইবার, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম গর্ভবতী মায়ের জন্য অনেক প্রয়োজনীয়।। তাই আপনি এটি খেতে পারেন। তবে খাওয়ার আগে অবশ্যই কিছু বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

এটি রান্না করার সময় ভালোভাবে সিদ্ধ করে রান্না করতে হবে যাতে এতে থাকা ক্যালসিয়াম অক্সালেট নষ্ট হয়ে যায় তাছাড়া এটি মুখ বা গলা চুলকানো সম্ভাবনা থাকে। অবশ্যই আপনাকে পরিমিত মাত্রায় খেতে হবে। তাই প্রতিদিন অল্প অল্প করে খেতে পারেন। আর আপনি যদি আগে থেকেই এলার্জিজনিত সমস্যায় ভুগে থাকেন তাহলে এটি থেকে দূরে থাকাই ভালো হবে।

আরো পড়ুন : গর্ভাবস্থায় মিষ্টি কুমড়ার উপকারিতা

তাহলে আশা করছি এতক্ষণে বুঝে গেছেন গর্ভ অবস্থায় কচুর লতি খাবার ঠিক হবে কিনা। খাওয়ার আগে যদি নিয়ম কানুন মেনে পরিমিত মাত্রায় খান তাহলে অবশ্যই খাওয়া যাবে।

কচুর লতিতে কি কি ভিটামিন থাকে 

কচুর লতিতে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও পুষ্টি উপাদান থাকে। ইতিমধ্যে আপনারা উপরে দেখেছেন বিভিন্ন ভিটামিনের জন্য এটি আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা প্রদান করে থাকে। এখন যদি আপনারা কি কি ভিটামিন থাকে তা দেখেন তাহলে বিষয়গুলো আরেকটু ভালোভাবে পরিষ্কার হয়ে যাবেন। এতে থাকা ভিটামিন গুলো আমাদের জন্য অনেক উপকারী।

কচুর লতিতে থাকা উল্লেখযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন গুলোর নাম নিচে উল্লেখ করা হলো। এক নজরে দেখে নিন।

  • ভিটামিন এ 
  • ভিটামিন সি
  • ক্যালসিয়াম
  • পটাশিয়াম
  • ফাইবার
  • আইরন 
  • ভিটামিন বি ৬
  • আয়োডিন 
  • ফলেট ইত্যাদি

উপরোক্ত ভিটামিন গুলো কচুর লতিতে পাওয়া যায়। সাধারণ সহজলভ্য এই সবজিতে কত উচ্চমানের সব ভিটামিন তাই না। এই ভিটামিন গুলো আমাদের শরীরের জন্য অনেক প্রয়োজনীয়। শুধুমাত্র আমাদের জন্যই নয়। একজন গর্ভবতী মা ও গর্ভে থাকা শিশুর দৈনিক বিকাশ ও সুস্থ থাকার জন্য এই সব পুষ্টি উপাদান অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

কচুর লতিতে কি এলার্জি আছে

কচুর লতিতে এলার্জি আছে কিনা অনেকে আছেন তা জানার আগ্রহ প্রকাশ করেন। কচুর লতিতে অ্যালার্জি আছে কিনা এই প্রশ্নটির এক কথায় উত্তর বলতে গেলে , হ্যাঁ ! কচুর লতিতে এলার্জি থাকে। কচুর লতিতে ক্যালসিয়াম অক্সালেট নামক একটি উপাদান থাকে। যেটি সাধারণত আমাদের মুখ বা গলা চুলকানোর জন্য দায়ী। তবে সঠিকভাবে রান্না করে খেলে এটির প্রকোপ অনেকটাই কমে।

আরো পড়ুন : খালি পেটে কাঁচা ছোলা খাওয়ার উপকারিতা

যারা এলার্জিজনিত সমস্যায় ভুগেন তাদের কচু বা কচুর লতি থেকে দূরে থাকাই ভালো। এটি খেলে অ্যালার্জিজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে কিছু কিছু কচু ও কচুর লতি রয়েছে যেগুলো মুখ বা গলা ধরে না। এগুলোকে সাধারণত মিষ্টি কচু বলা হয়। এলার্জি বা গলা ধরার একটি কারণ হচ্ছে এটি ভালোভাবে সিদ্ধ করে রান্না না করা।

কচুর লতি বা কচু যখন আপনি ভালোভাবে সিদ্ধ না করে রান্না করবেন তখন এর ভেতরে থাকা ক্যালসিয়াম অক্সালে নষ্ট হবে না। যার ফলে এলার্জি বা চুলকানি হতে পারে। কচুর লতি খাওয়ার ফলে মুখ ও গলা চুলকানো, গলা খসখস করা, স্কিনের উপর লালচে দাগ ও চুলকানি ইত্যাদি প্রভাব দেখা দিতে পারে। এগুলো থেকে সতর্কতা অবলম্বন করার জন্য কচুর লতি ভালোভাবে রান্না করে খাবেন।

এতে আশা করা যায় এর পক্ষ থেকে কিছুটা হলেও রেহাই পাবেন। কোন গর্ভবতী মা যদি কচুর লতি খেতে চান এবং তিনি যদি আগে থেকেই এলার্জিজনিত সমস্যায় ভুগবেন তাহলে এটি থেকে দূরে থাকায় শ্রেয়। তাই সবশেষে আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে বলা যায় যে, হ্যাঁ । কচুর লতিতে অ্যালার্জি থাকে।

কচুর লতিতে কোন উপাদান বেশি থাকে

আমরা ইতিমধ্যে কচুর লতিতে থাকা বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান দেখেছি। এর মধ্যে যে উপাদানটি প্রচুর পরিমাণে থাকে তা হল আয়োডিন ও ভিটামিন বি। শুধুমাত্র তাই নয় এছাড়াও কচুর লতিতে আইরন, ফাইবার, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম এর পরিমাণও কম থাকে না। এগুলোও পর্যাপ্ত পরিমাণে কচুর লতিতে পাওয়া যায়। এগুলো গর্ভবতী মা ও শিশুর জন্য অনেক বেশি উপকারী।

আরো পড়ুন : গর্ভাবস্থায় চেরি ফল খাওয়ার উপকারিতা - চেরি ফলের দাম

আয়রন এবং ভিটামিন বি গর্ভে থাকা শিশুর ব্রেন ডেভেলপমেন্ট এর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া যেই উপাদান গুলো বললাম সেগুলো গর্ভে থাকা শিশুর দৈনিক বৃদ্ধি ও সুস্থ থাকতেও বেশি সহায়ক। তাহলে আশা করা যাচ্ছে বুঝতে পেরেছেন যে কচুর লতিতে কোন উপাদানটি বেশি থাকে। যে উপাদানে থাকবে না কেন আপনি যদি এটি গ্রহণ করেন তাহলে সবগুলোই পাবেন।

আয়োডিন খুব সহজে যেখানে সেখান থেকে পাওয়া যায় না। কিন্তু দেখেন সহজলভ্য এই জিনিসটির মধ্যে কিন্তু আয়োডিন পাওয়া যায়। কচুর লতিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে কিন্তু আয়রনও পাওয়া যায়। আয়রন একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা আর বলার দরকার নেই।

কচুর লতির ইংরেজি কি

কচুর লতির ইংরেজি প্রতিশব্দ জানার জন্য অনেকেই অনলাইনে সার্চ করে থাকেন। আসলে আমাদের দেশে যেমন কোনো একটি জিনিস বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন নামে পরিচিত ঠিক তেমন এই জিনিস কেউ বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ইংলিশ নামে চিনে থাকা হয়। আপনি সরাসরি যদি কচুর লতির ইংলিশ জানতে চান তাহলে সেটি কোন ভাবে খুঁজে পাবেন না।

আরো পড়ুন : গর্ভাবস্থায় গাজর খাওয়ার উপকারিতা - কাঁচা গাজর খাওয়ার উপকারিতা 

যেমন ধরেন কিছু কিছু জায়গায় কচুর লতিকে ইংরেজিতে Taro Lobe বলা হয়। আরো কিছু কিছু জায়গা আছে যেগুলোতে কচুর লতিকে Arum Lobe ও Colocasia Lobe নামে চিনে থাকে। খুবই পুষ্টিকর এবং ভালো মানের একটি সবজি এটি। আর একটি কথা, যদি কচুর লতি রান্না করার পরে মুখ গলা ধরে তাহলে একটু লেবুর রস চিপে দিতে পারেন।

লেবুর রস মিশিয়ে খেলে সেটি আর মুখ ধরে না। লেবুর রসে থাকে এসিড এবং কচুতে থাকা ক্যালসিয়াম অক্সালেট এক ধরনের ক্ষার। এই দুটি বিক্রিয়া করে প্রশমিত হয়। যার ফলে সেটি আর মুখ ধরে না।

কচুর লতি খেলে কি হয়

গর্ভাবস্থায় কচুর লতি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা দেখার পরে আপনারা এখন অন্তত এই বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন যে কচুর লতি খেলে কি হয়। আপনারা দেখলেন যে কচুর লতি খাওয়ার বিভিন্ন উপকারিত রয়েছে। আবার কিছু এর সতর্কতামূলক ডি করেছে যেগুলোর দিকে অবশ্যই খেয়াল রাখা দরকার। কচুর লতি খেলে অনেক উপকারিতা পাওয়া যায়।

চলুন তাহলে নিচে এক নজরে কচুর লতি খেলে কি হয় তা ধাপে ধাপে দেখে নেয়া যাক।

  1. শরীরে আয়রনের ঘাটতি মেটাই
  2. হজম শক্তি বৃদ্ধি করে
  3. শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করে
  4. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রদান করে যার প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
  5. কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
  6. আয়োডিন প্রদান করে
  7. ক্যালসিয়ামের ভালো একটি উৎস
  8. আয়রন থাকায় রক্তশূন্যতা দূর হয় ইত্যাদি

কচুর লতি খেলে উপরোক্ত উপকারিতা গুলো পাওয়া যায়। শুধুমাত্র উপকারী তাই নয়। এর কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে যদি আমরা সেগুলো নিয়ম না মেনে খাই। অনেক সময় দেখা যায় কচুর লতি খাওয়ার ফলে এলার্জি, চুলকানি ও গলা ধরা সমস্যা হয়। এই সমস্যাটি বেশি দেখা যায় যখন এগুলো আমরা ভালোভাবে রান্না করে না খাই। এগুলো ভালো করে সিদ্ধ করে রান্না করা উচিত।

আরো পড়ুন : গর্ভাবস্থায় লটকন খাওয়ার উপকারিতা - গর্ভাবস্থায় লটকন খেলে কি হয়

যদি এই সমস্যাটি হয় তাহলে এর সাথে লেবুর রস দিতে পারেন। এতে করে গলা ধরা কমে যাবে। আশা করি কচুর লতি খেলে কি হয় বুঝতে পেরেছেন।

গর্ভাবস্থা নিয়ে সচরচর জিজ্ঞাসিত কিছু প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন : গর্ভাবস্থায় কচুর লতি খাওয়া যাবে কি ?

উত্তর : হ্যাঁ ! গর্ভাবস্থায় কচুর লতি খাওয়া যাবে। গর্ভাবস্থায় কচুর লতি খাওয়া নিরাপদ। কচুর লতিতে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান থাকে যেগুলো গর্ভবতী মায়ের জন্য খুবই দরকারি। তবে কচুর লতি মাঝে মাঝে গলা ধরা বা অ্যালার্জি জনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর জন্য তার সাথে লেবুর রস বা টক জাতীয় কোন কিছু মিশাতে পারেন।

প্রশ্ন : গর্ভাবস্থায় চিত হয়ে শুলে কি হয় ?

উত্তর : গর্ভাবস্থায় চিত হয়ে শুয়ে থাকলে ঘুমের অনেক বড় ক্ষতি হতে পারে এমনকি ভ্রুণ নষ্টও হয়ে যেতে পারে। চিত হয়ে শুলে প্রধান রক্ত নালী সংকুচিত হয় যার ফলে রক্ত ভ্রুণে যেতে বাধা প্রাপ্ত হয়। এর কারণে গর্ভকালীন সময় ডাক্তাররা গর্ভবতী মাকে চিত হয়ে শুতে নিষেধ করেন।

প্রশ্ন : গর্ভাবস্থায় কতক্ষণ ঘুমানো উচিত ?

উত্তর : একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য ঘুম খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এ সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে হবে। এর জন্য দিনের বেলায় কমপক্ষে ২ ঘন্টা এবং রাতে ৮ ঘন্টা ঘুমাতে হবে। তবে দিন ও রাত মিলে ৮ ঘন্টা ঘুমালেও সেটি পর্যাপ্ত হবে।

প্রশ্ন : ? গর্ভাবস্থায় বাচ্চা ছেলে না মেয়ে কি করে বুঝবো ?

উত্তর : গর্ভাবস্থায় বাচ্চা ছেলে না মেয়ে এটি আপনি খুব সহজেই বুঝতে পারবেন। এর জন্য আপনাকে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করাতে হবে। আল্ট্রাসনোগ্রাফি করে খুব সহজেই বোঝা যায় বাচ্চা ছেলে হবে নাকি মেয়ে।

প্রশ্ন : গর্ভাবস্থায় কতটুকু হাটা উচিত ?

উত্তর : গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাস এবং শেষের তিন মাস অনেক বেশি সেনসিটিভ। এই সময়ে বেশি হাঁটাচলা বা ভারি জিনিস বহন, সিঁড়িতে ওঠা এগুলো থেকে দূরে থাকতে হবে। তবে নিয়মিত পরিণত ব্যায়াম ও অল্প পরিমাণে হাঁটা উচিত। এতে করে ডেলিভারির জন্য অনেক সুবিধা হয়।

প্রশ্ন : মেয়ে সন্তান কত মাসে হয় ?

উত্তর : মেয়ে সন্তান বা ছেলে সন্তান যেই হোক না কেন তা হওয়ার একদম নির্দিষ্ট সময় আপনি কোনভাবেই বলতে পারবেন না। সাধারণত সন্তান প্রসব হয় ৩৮ সপ্তাহ থেকে ৪১ সপ্তাহের মধ্যে।

প্রশ্ন : গর্ভাবস্থায় কি প্রতিদিন হাটা উচিত ?

উত্তর : বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে গর্ভবতী মহিলার নিয়মিত হাঁটার ফলে ডেলিভারির সময় বিভিন্ন রকম জটিলতা হ্রাস পায়। এছাড়া নিয়মিত হাঁটলে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস ও সিজার করার সম্ভাবনা কমে যায়। তাই প্রতিদিন অল্প পরিমাণে হাটা ও পরিমিত ব্যায়াম গর্ভবতী মায়ের জন্য ভালো।

গর্ভাবস্থায় কচু শাক খাওয়া যাবে কি

গর্ভাবস্থায় কচুর লতি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা জানার পরে এইবার আপনাদেরকে গর্ভ অবস্থায় কচু শাক খাওয়া যাবে কিনা এ ব্যাপারে বলব। আসলে কচু সহ এর আরো যে অংশগুলো আমরা খেয়ে থাকি যেমন, কচুর পাতা, ডাটা, লতি সবকিছু খুবই পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। কচুর লতিতে যেমন পুষ্টি উপাদান রয়েছে এর পাতাতেও রয়েছে অবাক করার মতো উপকারিতা।

গর্ভাবস্থায় কচু শাক খাওয়া খুবই পুষ্টিকর এবং নিরাপদ হতে পারে। তবে কিছু কিছু বিষয়ের দিকে সতর্ক থাকতে হবে। কচুশাকে অনেক ধরনের পুষ্টি উপাদান যেমন, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ফাইবার, পটাশিয়াম, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ইত্যাদি থাকে। এগুলো একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য অনেক বেশি দরকারি। যে কারণে গর্ভবস্থায় কচু শাক খাওয়া নিরাপদ বলে মনে করা হয়।

তাই আপনি নির্দ্বিধায় গর্ভাবস্থায় কচু শাক খেতে পারেন। গর্ভকালীন সময়ে কচু শাক বিভিন্নভাবে উপকারিতা প্রদান করে থাকে যেমন , গর্ভে থাকা শিশুর দৈহিক বিকাশ, ব্রেন ডেভেলপমেন্ট করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ করে ইত্যাদি। এছাড়াও কচু শাকে থাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন থাকে যা একজন গর্ভবতী মায়ের শরীরের জন্য খুবই দরকারি।

তাই এই সমস্ত দিক লক্ষ্য রেখে আপনি বুঝতে পারছেন যে গর্ভাবস্থায় কচু শাক খাওয়া যাবে কিনা। তবে এতে কিছু সতর্কতা রয়েছে যেমন কচু পাতায় ক্যালসিয়াম অক্সালের থাকায় মুখ ধরতে পারে। তাই এতে করে আপনি এর সাথে লেবুর রস যোগ করতে পারেন। আরেকটি বিষয় খেয়াল রাখবেন যেন ভালোভাবে রান্না করা হয় এবং সঠিক মাত্রায় খাবেন।

গর্ভাবস্থায় কচু খাওয়া যাবে কি

গর্ভাবস্থায় কচু খাওয়া যাবে কিনা তাই তো ? ? দেখুন ইতিমধ্যেই আপনাদেরকে আমি বললাম যে কচু এবং কচু গাছ এর যেসব অংশ আমরা খেয়ে থাকি তার সবগুলোর মধ্যেই রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিগুণ। আর এইসব পুষ্টিগুণ আমাদের শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী। তাহলে বুঝতেই পারছেন এগুলো গর্ভকালীন সময়ের জন্যও উপকারী।

কচুতে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন. খনিজ. আইরন. ফাইবার. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট. ভিটামিন সি সহ আরো বিভিন্ন ধরনের উপাদান রয়েছে। আর এই উপাদানগুলো একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য কতটা জরুরী তা আপনাদের জানা। তাছাড়াও কচু খুবই জনপ্রিয় একটি সবজি। কচু খেতে মজাদার হওয়ায় অনেকেই খেতে খুব বেশি পছন্দ করেন ।

মাছ দিয়ে যদি কচু ঝোল করা হয় তাহলে তার স্বাদতো আর বলতে হবে না। ছোট মাছের সাথে কচুর চচ্চড়ির কথা আর না বলি। গর্ভকালীন সময় গর্ভবতী মায়ের অবশ্যই পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এবং টেস্টি খাবার প্রয়োজন। এই সবজিটিও খুবই টেস্টি এবং স্বাদযুক্ত। তাই নিঃসন্দেহে গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকায় কচু যোগ করতে পারেন। এতে করে ভালো খাবারও পাবেন পুষ্টিও পাবেন।

তাহলে আশা করছি বুঝতে পেরেছেন গর্ভাবস্থায় কচু খাওয়া যাবে কিনা। তবে উপরে যেই সতর্কতা গুলো বলেছি এখানেও সেই সতর্কতা গুলো অবলম্বন করবেন। মাঝে মাঝে কচুতেও মুখ বা গলা ধরে। তাই এর সাথে লেবুর রস, তেতুল বা টক জাতীয় কোন কিছু যোগ করতে পারেন। এতে করে এলার্জি সমস্যা থেকেও দূরে থাকতে পারবেন।

শেষ কথা - গর্ভাবস্থায় কচুর লতি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

গর্ভাবস্থায় কচুর লতি খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা সহ কচুর লতি সম্পর্কে বিস্তারিত আরো অনেক কিছু আপনাদের সাথে আলোচনা করেছি। আশা করি সবকিছু ভালোভাবে পড়েছেন বুঝতে পেরেছেন এবং উপকৃত হয়েছেন। কচুর লতি আসলে খুবই উপকারী একটি সবজি। এতে থাকা বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী।

তাই এই সবজিটি গর্ভকালীন সময়েও অনেক জরুরী। গর্ভকালীন সময়ে কচুর লতি খেতে পারেন এতে করে ওপরে বর্ণিত সুবিধা গুলো পাবেন। তবে যে সতর্কতা রয়েছে সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন। মাত্রাতিরিক্ত কচুর লতি খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। প্রতিদিন অল্প অল্প করে খাবার তালিকা যোগ করতে পারেন। এখানেই শেষ করছি। আল্লাহ হাফেজ😍

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url