কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা ও কলার খোসার ব্যবহার

কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা করতে চাচ্ছেন ? কলার খোসার ব্যবহার ঠিকমতো জানেন না ? আরো বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করতে চাচ্ছেন ? এই সমস্ত সমস্যার সমাধান নিয়েই আজকের এই পোস্টটি। শুধুমাত্র মনোযোগ দিয়ে পড়তে থাকুন।

কলার-খোসা-দিয়ে-রূপচর্চা-কলার-খোসার-ব্যবহার

আমরা তো শুধুমাত্র কলাই খাই কিন্তু খোসাটা ফেলে দিই। শুধুমাত্র কলাতেই নয়, কলার খোসাতেও কি পরিমাণ উপকারিতা আছে তা আপনি জানলে সত্যিই অবাক হয়ে যাবেন। এই পোস্টে থাকছে কালার খোসা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা।

সূচিপত্র - কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা ও কলার খোসার ব্যবহার 

কলার খোসায় থাকা পুষ্টিগুণ সমূহ

কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা ও কলার খোসার ব্যবহার জানার আগে আপনি যদি কলার খোসাতে কি কি পুষ্টিগুণ থাকে তা জানেন তাহলে আপনার জন্য এ বিষয়গুলো বোঝা সহজ হবে। আমরা যে কলা খেয়ে খোসাটি ফেলে দিই এটিও কিন্তু অনেক উপকারী। আমরা কখনো চিন্তাই করিনি যে এই ফেলে দেয়া খোসাটাও অনেক কাজে ব্যবহার করা যায়।

আরো পড়ুন : যষ্টিমধু খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা ও যষ্টিমধু খাওয়ার নিয়ম

এই ফেলে দেওয়া কলার খোসার মধ্যে কত রকম উপকারিতা রয়েছে তা জানলে আপনি সত্যি অবাক হয়ে যাবেন। তাই এক নজরে দেখে নিন কলারখোসাতে থাকা পুষ্টিগুণ।

  • ফাইবার বা আঁশ
  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
  • ভিটামিন ও খনিজ
  • লুটেইন
  • ট্রিপটোফ্যান
  • অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি প্রোপার্টিজ ইত্যাদি

সাথে থাকা এই পুষ্টি উপাদান গুলো আমাদের শরীরে বিভিন্নভাবে উপকারে আসে। যদিও কলার খোসা সরাসরি সেভাবে খাওয়া যায় না তবে বিভিন্নভাবে ব্যবহার করে এই উপাদান গুলো গ্রহণ করা যায়। চলুন তাহলে এ নিয়ে এসে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।

কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা

কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা অনেক জনপ্রিয় একটি পদ্ধতি। এ পদ্ধতিটি অনেকেই অবলম্বন করে থাকে। কলার খোসা ব্যবহার করে বিভিন্নভাবে রূপচর্চা করা যায়। আমাদের রূপচর্চা করার যে বিষয়গুলো তা হচ্ছে চুল, ত্বক, মুখমন্ডল ইত্যাদি। আর কলার খোসাতে সাথে থাকা পুষ্টি উপাদান গুলো চুল এবং ত্বকের জন্য অনেক উপকারী।

আরো পড়ুন : থানকুনি পাতার ১৮টি উপকারিতা ও অপকারিতা 

এখন আমরা কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা করায় কি কি উপকারিতা হয় তা দেখব। নিচে বিস্তারিত ভাবে কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা করার পদ্ধতি ভালোভাবে দেখব। রূপচর্চার কাজে কলার খোসা ব্যবহার করলে কি কি উপকারিতা হয় নিচে তা উল্লেখ করা হলো।

  • ব্রনের দাগ দূর হয়
  • চেহারার উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়
  • বয়সের ছাপ কমে
  • ত্বকের আদ্রতা বজায় রাখে
  • দাঁত সাদা করে
  • চোখের নিচের ফোলা কমায়
  • কলার খোসা চুলের জন্যও অনেক উপকারী

রূপচর্চায় কলার খোসা ব্যবহারে এই উপকারিতা গুলো পাওয়া যায়। এখন আমরা পৃথক পৃথকভাবে বিস্তারিত জানবো সবকিছু।

ত্বকের যত্নে কলার খোসা

কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা করলে কি কি উপকারিতা হয় তা উপরে দেখলেন। ত্বকের জন্য কলার খোসা কিন্তু অনেক উপকারী। ত্বকে কলার খোসা ব্যবহার করলে ত্বক বিভিন্নভাবে উপকৃত হয়। এটি ত্বকের জন্য প্রাকৃতিক এবং খুবই সহজলভ্য একটি উপাদান। কলা খাওয়ার পরে তো আমরা খোসা ফেলেই দিই। কিন্তু একদিন না হয় ত্বকে ব্যবহার করে দেখুন।

নিচে ত্বকের যত্নে কলার খোসা ব্যবহারের উপকারিতা, পদ্ধতি ও নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত সবকিছু ধাপে ধাপে দেয়া হলো।

ত্বকে কলার খোসা ব্যবহারের উপকারিতা

ত্বকে কলার খোসা ব্যবহারের ফলে আপনি নিম্নে বর্ণিত উপকারিতা গুলো পাবেন

  • ব্রণ ও ব্রণের দাগ দূর হয়
  • ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকে
  • বয়সের ছাপ কমায়
  • ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে
  • তোকে টোন উন্নত করে ইত্যাদি

ত্বকে কলার খোসা ব্যবহারের পদ্ধতি ও নিয়ম

ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে :  প্রথমে কলার খোসা গুলো ছোট ছোট টুকরো করে কেটে সেগুলো ত্বকের উপর ঘুষতে থাকুন।। এভাবে ১৫ থেকে ২০ মিনিট ঘষার পরে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এভাবে দিনে ১ বার বা সপ্তাহে ৩ থেকে ৪ বার করা যেতে পারে।

আরো পড়ুন : বেসন দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায় - মুখে বেসন ব্যবহারের নিয়ম

ব্রণ ও দাগ দূর করতে : এর জন্য প্রথমেই কলার খোসার সাদা অংশ সংগ্রহ করে নিতে হবে এবং এটি ব্রণ হওয়া জায়গায় হালকা করে ঘষতে হবে এবং ১০ থেকে ১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখতে হবে। শুকিয়ে যাওয়ার পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে এতে করে ব্রণের দাগ ও ব্রণ দূর হয়। এটি প্রতিদিন একবার করে করা যায় ।

ত্বকের আদ্রতা বজায় রাখতে : প্রথমে কলার খোসা পেস্ট করে নিয়ে তার সাথে এক চামচ মধু মেশাতে হবে এবং সেটা ভালোভাবে মেখে দশ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। পেস্ট গুলো শুকিয়ে যাওয়ার পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। সপ্তাহে এটি দুই দিন করতে পারেন এর ফলে ত্বক ময়েশ্চারাইজ হবে এবং ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকবে।

এছাড়াও নিয়মিত কলার খোসা ব্লেন্ড করে ত্বকে ব্যবহার করলে ত্বক থেকে বলিরেখা দূর হয়, চোখের নিচের ফোলা ভাব কমে ও ত্বকের টোন উন্নত হয়।

চুলের যত্নে কলার খোসা

ত্বকের যত্নে কলার খোসার ব্যবহার দেখলেন আশা করি সবকিছু বুঝতে পেরেছেন। কিন্তু এটাও হয়তো আপনাদের জানা নেই যে চুলের যত্নেও কলার খোসা অনেক উপকারী। অনেকে কলার খোসা চুলে ব্যবহার করে। আজকে আপনারা কিভাবে ব্যবহার করবেন তা নিয়ে কিছু বলব। কলার খোসা একটি প্রাকৃতিক ও সহজলভ্য উপাদান।

কলার-খোসা-দিয়ে-রূপচর্চা-কলার-খোসার-ব্যবহার

কলার খোসাতে থাকা বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান, এন্টিঅক্সিডেন্ট, খনিজ ও পটাশিয়াম চুলের সৌন্দর্য ও স্বাস্থ্য ভালো রাখতে অনেক বেশি সহায়ক। এখন আপনাদেরকে বলবো চুলের যত্নে কলার খোসার উপকারিতা, ব্যবহারের পদ্ধতি ও নিয়ম সম্পর্কে।

চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে

কলার খোসা চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে অনেক সহায়ক। এর জন্য প্রথমে আপনাকে কলার খোসা ব্লেন্ড করে নিয়ে তার সাথে একটি ডিমের সাদা অংশ যোগ করে ভালোভাবে মিশে চুলে ব্যবহার করতে হবে। চুলে লাগানোর পর ২০ মিনিট অপেক্ষা করে শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে। এটি চুলের আকৃতি উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। এটি ১৫ দিন অন্তর অন্তর করতে পারেন।

চুল দ্রুত বৃদ্ধি করতে

কলার খোসা চুলে ব্যবহারের ফলে চুল দ্রুত লম্বা হয় ও চুলের গোড়া শক্ত হয়। তাই কলার খোসার সাথে একটু দই মিশিয়ে ভালোভাবে পেস্ট তৈরি করুন এবং তা চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত লাগিয়ে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এটি আপনি সপ্তাহে একদিন ব্যবহার করতে পারেন। তারপর চুল ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।

চুলের ময়েশ্চারাইজ করতে ও খুশকি দূর করতে

চুলের ময়েশ্চারাইজ ও খুশকি দূর করতে কলার খোসা ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিতে হবে এবং তার সাথে এক চামচ মধু ও এক চামচ নারকেলের তেল বা অলিভ অয়েল মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করতে হবে। পেস্টটি ভালোভাবে সারা মাথা ব্যবহার করে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। এরপর ভালোভাবে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলতে হবে।

এই কাজটি করার ফলে মাথার খুশকি দূর হয়, মাথার ত্বক পরিষ্কার রাখে, চুল ময়েশ্চারাইজ ও মসৃণ থাকে। এটি সপ্তাহে ১ ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

চুলের রুক্ষতা ও ক্ষতির প্রতিরোধে

কলার খোসা চুলের রুক্ষতা ও ক্ষতি প্রতিরোধে অনেক সহায়ক। এজন্য আপনাকে প্রথমে কলার খোসার পেস্ট নিতে হবে এবং তার সাথে যোগ করতে হবে অ্যালোভেরা জেল মধু ও জবা ফুলের পেস্ট। মধু রুক্ষতা দূর করতে এবং অ্যালোভেরা ও জবা চুলের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে। সবগুলো ভালোভাবে মিশিয়ে একটি পেস্ট করে নিবেন।

পেস্টটি  চুলে ভালোভাবে ব্যবহার করার পর ২০ থেকে ২৫ মিনিট রেখে দিবেন। এরপর ভালোভাবে শ্যাম্পু করে মাথা ধুয়ে ফেলবেন। সপ্তাহে একবার এই কাজটি করলে ভালো উপকারিতা পাওয়া যায়। এ ছিল চুলের যত্নে কলার খোসার ব্যবহার। আশা করি সবকিছু ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন। 

পাকা কলা দিয়ে ফেসপ্যাক

কলার খোসা দিয়ে ত্বকের যত্ন তো দেখলেন। এখন অনেকে জানতে চান পাকা কলা দিয়ে কিভাবে ফেস প্যাক তৈরি করে। এ বিষয় নিয়ে আপনাদেরকে এখন বলব। পাকা কলার সাথে আরও কিছু উপাদান রয়েছে যেগুলো যোগ করে সাধারণত ফেসপ্যাক তৈরি করা হয়। পাকা কলাতে থাকা পটাশিয়াম, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন এ, বি, সি ইত্যাদি পুষ্টি উপাদান ত্বকের জন্য অনেক উপকারী।

আরো পড়ুন : বিচি কলা ও সাগর কলা খাওয়ার কার্যকরী ২৫টি  উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম

আর এই উপকারিতা পাওয়ার জন্য পাকা কলা সাথে অন্য কোন উপাদান যোগ করে কয়েক ধরনের ফেসপ্যাক তৈরি করা যায়। পাকা কলার জনপ্রিয় ও উল্লেখযোগ্য কিছু ফেসপ্যাক নিয়ে আপনাদের সাথে এখন আলোচনা করব।

পাকা কলা ও মধুর ফেসপ্যাক

কলা ও মধুর ফেস প্যাক তৈরি করার জন্য একটি পাকা কলা ও এক চামচ মধু নিতে হবে। এরপর কলাটির খোসা ছাড়িয়ে তার সাথে এক চামচ মধু দিয়ে ভালোভাবে একটি পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে। সেই পেস্ট সারা মুখে, গলায় ও ঘাড়ে সমানভাবে লাগাতে হবে। এরপর কিছু সময় অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেললে কাঙ্খিত উপকারিতা পেয়ে যাবেন।

পাকা কলা ও অ্যালোভেরার ফেসপ্যাক

আপনি যদি পাকা কলা ও অ্যালোভেরার ফেসপ্যাক তৈরি করতে চান তাহলে প্রথমে একটি কলা ও অ্যালোভেরা জেল নিতে হবে। এরপর কলার খোসা ছাড়িয়ে কলাটি ভালোভাবে গলিয়ে নিতে হবে তারপর তার সাথে এলোভেরা জেল যোগ করে পেস্ট তৈরি করতে হবে। এরপর সেই পেস্টটি সারা মুখে ভালোভাবে লাগাতে হবে।

এরপর কিছুক্ষণ রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললেই পাকা কলা ও অ্যালোভেরার তৈরি ফেসপ্যাক এর কাঙ্খিত উপকারিতা পেয়ে যাবেন।

পাকা কলা দই ও বেসন ফেসপ্যাক

পাকা কলা, দই ও বেসন ফেসপ্যাক উপকরণ, তৈরির পদ্ধতি ও ব্যবহার বিধি নিচে দেয়া হল।

উপকরণ

  • একটি পাকা কলা
  • দুই চামচ দই
  • এক চামচ বেসন
  • এক চামচ লেবুর রস

তৈরি পদ্ধতি

প্রথমে কলাটি খোসা ছাড়িয়ে তার সাথে দই ও বেসন ভালোভাবে মেশাতে হবে। এর সাথে পরিমাণ মতো লেবুর রস দিবেন। তারপর এটি ভালোভাবে মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করবেন। খেয়াল রাখবেন যাতে পেস্টটি বেশি পাতলা বা ঘন না হয়।

ব্যবহার নিয়ম

তৈরি করা পেস্টটি মুখে ভালোভাবে ব্যবহার করবেন। ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই মুখ ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিবেন। এরপর মুখে লাগানোর ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন। সপ্তাহে এটি দুইবার ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

আরো পড়ুন : কিউই ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা - কিউই ফলের দাম

এ ছিল পাকা কলা দিয়ে কিছু ফেসপ্যাক। কলা খাওয়ার পরে আমরা তো খোসাটা ফেলেই দিই। তা না করে আপনি কলা ও কলার খোসা দুটি রূপচর্চার কাজে ব্যবহার করতে পারেন যা ইতোমধ্যে উপরে দেখলেন। আশা করি বুঝতে পেরেছেন এবং এ অনুযায়ী আপনি একবার ট্রাই করে দেখতে পারেন।

কলার খোসা মুখে মাখলে কি হয়

কলার খোসা মুখে মাখলে কি হয় তা আপনারা ইতোমধ্যেই উপরে বিস্তারিত জেনেছেন। কলার খোসাতে থাকা বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান, আন্টি অক্সিডেন্ট, খনিজ ও ভিটামিন মুখের ত্বকের জন্য অনেক উপকারী। তবে কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে যাদের অ্যালার্জি জনিত সমস্যা রয়েছে তাদের একটু এলার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে।

তবে কলার খোসা মুখে মাখার অপকারিতা নেই বললেই চলে কিন্তু এর অনেক উপকারিতা রয়েছে। চলুন নিচে এক নজরে আরো একবার কলার খোসা মুখে মাখার উপকারিতা দেখে নিই।

  1. ত্বক উজ্জ্বল করে
  2. বলি রেখা ও বয়সের ছাপ কমায়
  3. ব্রণ ও ব্রণের দাগ দূর করে
  4. তবে টন উন্নত করে
  5. ত্বকের ব্ল্যাকহেডস ও হোয়াইটহেডস দূর করে
  6. ত্বকে আন্টি ইনফ্লামেটরি প্রভাব ফেলে
  7. ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে ইত্যাদি।

তাহলে বুঝতে পারলেন কলার খোসা মুখে মাখলে কি হয়। নিয়মিত মুখে কলার খোসা মাখার ফলে উপরোক্ত এই উপকারিতা গুলো পেতে পারেন। আশা করি বুঝতে পেরেছেন।

কলার খোসার ব্যবহার দেখে নিন

কলার খোসার ব্যবহার করা হয় অনেক রকম কাজে। ইতোমধ্যে আপনারা উপরে কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা দেখেছেন। দেখেছেন কিভাবে কলার খোসা চুলের যত্নে ও ত্বকের যত্নে ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও কলার খোসা যে আরো কত কাজে ব্যবহার করা হয় তা আপনাদের হয়তো বা জানা নেই। কলার খোসা কি কি কাজে ব্যবহার করা হয় তা নিচে এক নজরে দেখে নিন।

  1. কলার খোসা রান্নার কাজে ব্যবহার করা হয়
  2. রূপচর্চার জন্য কলার কাছে ব্যবহার হয়
  3. দাঁত পরিষ্কার করতে কলার খোসা একটি ভালো উপাদান
  4. কলার খোসা থেকে সার তৈরি করা যায়
  5. ত্বকের যত্নে কলার খোসা ব্যবহার হয়
  6. চুলের যত্নে কলার খোসা ব্যবহার করা হয়
  7. গৃহস্থালী কাজে ব্যবহার করা হয়
  8. ক্ষত নিরাময়ের কাজে ব্যবহার করা হয়
  9. মাটির পাত্রের ফাটল মেরামতে ব্যবহার করা হয় ইত্যাদি

তাহলে বুঝতে পারলেন কলার খোসার কতই না ব্যবহার। এছাড়াও নিচে থাকছে এগুলোর বিস্তারিত আলোচনা।

কলার খোসা দিয়ে সার তৈরি

কলার খোসা দিয়ে কিন্তু উন্নত মানের জৈব সার তৈরি করা যায় যা আপনার জানা আছে কি না জানিনা। কলার খোসা দিয়ে তৈরি জৈব সার গাছের জন্য অনেক উপকারী। খুব সহজেই আপনি কলার খোসা দিয়ে জৈব সার তৈরি করতে পারেন। এর জন্য আপনাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে কলার খোসা সংগ্রহ করতে হবে। এর সাথে অন্যান্য তরীতরকারির খোসা বা গাছের পাতাও যোগ করতে পারেন।

আরো পড়ুন : খালি পেটে কাঁচা ছোলা খাওয়ার উপকারিতা

জিনিসগুলো সংগ্রহ করার পরে এগুলোর পরিমাণ অনুযায়ী মাটিতে একটি গর্ত করতে হবে এবং সেই গর্তে স্তরে স্তরে এসব খোসা দিয়ে হালকা করে পানি দিতে হবে। সবগুলো দেওয়া হয়ে গেলে মাটি চাপা দিয়ে রাখতে হবে। ৫ থেকে ৭ সপ্তাহ পরে দেখা যাবে যে এগুলো পচে মাটির সাথে মিশে গেছে। আর এটি হচ্ছে আপনার কাঙ্খিত সেই জৈব সার।

এই সার গাছপালা বিশেষ করে বিভিন্ন সবজির গাছ এবং ফুলের গাছের জন্য অনেক অনেক বেশি উপকারী। এটি হচ্ছে আপনার প্রাকৃতিক ও কার্যকরী জৈব সার। এভাবে আপনি তৈরি করে ফেলতে পারেন ফেলনা কলার খোসা ও অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় জিনিস দিয়ে দিয়ে প্রাকৃতিক জৈব সার।

কলার খোসা দিয়ে দাঁত পরিষ্কার

দাঁতের হলদেটে ভাব দূর করতে ও দাঁত পরিষ্কার করতে কলার খোসা খুবই কার্যকরী, সহজলভ্য ও প্রাকৃতিক একটি উপাদান। কলার খোসা দাঁতে ব্যবহারের ফলে কোন ধরনের ক্ষতি হয় না। নিয়মিত দাঁতে কলার খোসা ব্যবহার করলে দাঁতের হলদেটে ভাব দূর হয়, এনামেলের কোন ক্ষতি করে না, এবং দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।

দাঁতের হলদে ভাব বা পরিষ্কার করতে কলার খোসা যেভাবে ব্যবহার করবেন। সকালবেলা টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করার আগে কলার খোসা নিয়ে এর ভেতরে সাদা অংশ দিয়ে দাঁত ঘষতে থাকুন। বিশেষ করে দাঁতের যে স্থানে ময়লা বা দাগ রয়েছে সেখানে বেশি করে ঘুষুণ। এভাবে ২ থেকে ৩ মিনিট ঘোসার পরে ৫ থেকে ৭ মিনিট অপেক্ষা করুন।

যাতে খোসার উপাদান গুলো দাঁতের ময়লার বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে। এরপর টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এভাবে যদি করতে পারেন তাহলে দাঁতের হলদে ভাব দূর হয়ে যাবে এবং দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।

কলার খোসা ভেজানো পানি

আপনারা কি জানেন কলার খোসা ভেজানো পানি কি কাজে লাগে। জানলে হয়তো বা অবাক হবেন কলার খোসা ভেজানো পানিও কিন্তু অনেক উপকারী। এটি একটি প্রাকৃতিক তরল জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এটি বিভিন্ন ধরনের সবজি গাছ এবং ফুলের গাছের জন্য অনেক অনেক বেশি উপকারী। এ সার ব্যবহারের ফলে গাছ ও ফুল ফল রাসায়নিক মুক্ত থাকে।

কলার খোসা যখন ভিজিয়ে রাখা হয় তখন কলার খোসাতে থাকা পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস গুলো পানির সাথে মিশে যায় এবং তা গাছ ব্যবহারের ফলে গাছকে সুস্থ রাখতে, ফুল ফোটাতে, ফল ধরতে ও পাতা সবুজ রাখতে সহায়তা করে। তাহলে এখন মনে হতে পারে এই সার কিভাবে বানাবেন তাই তো। এই সারটি তৈরি করা খুবই সহজ একটি কাজ।

আপনি যদি অল্প পরিসরে এই তরল সারটি বানাতে চান তাহলে প্রথমে পাঁচ থেকে দশটি কলার খোসা নিয়ে ছোট ছোট করে টুকরো করতে হবে। তারপর সেটি একটি পানির পাত্রে ২ থেকে ৩ দিন পর্যন্ত ভিজিয়ে রাখুন। মাঝে মাঝে একটু নাড়াচাড়া দিবেন। এরপর সেই পানিগুলো ছেঁকে নিলেই তৈরি হয়ে গেল আপনার প্রাকৃতিক তরল জৈব সার।

এখন তরল সারটি গাছের গোড়ায় সরাসরি ঢেলে দিতে পারবেন। এতে যে গাছের কত উপকারিতা হবে তা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না।

কলার খোসার উপকারিতা

কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা ও কলার খোসার ব্যবহার সম্পর্কে জানার মধ্যেই কিন্তু আপনারা কলার খোসার উপকারিতা জেনে নিয়েছেন। আপনারা দেখেছেন কলার খোসা কি কি কাজে ব্যবহার করা হয়। এখন যদি চলার খোসা দিয়ে ব্যবহার করলাম তার ফলে কি কি উপকারিতা পাব তা যদি এক নজরে দেখে নেই তাহলে কেমন হয়।

কলার-খোসা-দিয়ে-রূপচর্চা-কলার-খোসার-ব্যবহার

নিচে কলার খোসা ব্যবহারের ফলে যে উপকারিতা গুলো পাওয়া যায় তা এক নজরে দেখে নেয়ার জন্য দেয়া হলো।

  1. কলার খোসা দিয়ে রুপার জিনিস ঘষলে তা চকচকে হয়।
  2. কলার খোসা দিয়ে প্রাকৃতিক জৈব সার তৈরি করা হয় যা অনেক উপকারী।
  3. শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছোটখাটো কাটা ছেঁড়াতে কলার খোসার সাদা অংশ ঘষলে তা তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যায়।
  4. খোসার সাদা অংশ ব্রনের ওপর ঘষলে ব্রণ তাড়াতাড়ি ভালো হয় ও ব্রণের দাগ দূর হয়।
  5. কলার খোসার পেস্ট চুলে ব্যবহার করলে চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় ও চুল মজবুত হয়।
  6. কলার খোসা বিভিন্ন ধরনের রান্নার কাজে ব্যবহার হয়।
  7. কলার খোসা ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের মাটির পাতিলের ফাটল মেরামত করা হয়।
  8. কলার খোসা সাদা অংশ দাঁতে ব্যবহারের ফলে দাঁতের হলে ভাগ দূর হয় ও দাঁত পরিষ্কার হয়।

কলার খোসার এসব উপকারিতা। এগুলো যদি পেতে চান তাহলে উপরোক্ত নিয়ম অনুযায়ী নিয়মিত ব্যবহার করতে পারেন।

কাঁচা কলার খোসার উপকারিতা

কাঁচা কলা বলতে সাধারণত আমরা যেই কলাটি রান্না করে তরকারির সাথে খাই সে কলা কে বোঝায়। কাঁচা কলার পুষ্টি উপাদান পাকা কলার চাইতে কোন দিক থেকে কম নয়। পাকা কলার খোসা অনেক উপকারী। কাঁচা কলার খোসা ব্যবহারের ফলে আপনি উপরে বর্ণিত উপকারিতা গুলো পেতে পারেন। কাঁচা কলার খোসা খাওয়া কিন্তু অনেক বেশি উপকারী।

তাহলে এখন ভাবতে পারেন কাঁচা কলার খোসা কিভাবে আবার খায়। আপনি জেনে অবাক হবেন যে অনেক ডাক্তারি পরামর্শে কাঁচা কলার খোসা খাওয়ার উপদেশ দেয়া হয়। কাঁচা কলার খোসা সিদ্ধ করে ভর্তা খাওয়া যায়। আমরা তো সাধারণত কাঁচকলা তরকারির সাথে রান্না করে বা সিদ্ধ করে ভর্তা করে খায়। সেই কাঁচকলার সিদ্ধ করা খোসা আলাদা করে ভর্তা করে খেতে পারে।

কাঁচা কলার খোসার ভর্তা কিন্তু অনেক উপকারী। খেতেও কিন্তু বেশ লাগে। দরকার হলে একদিন ট্রাই করে দেখতে পারেন। আশা করি ভালো লাগবে ও উপকৃত হবেন।

কলার খোসা খাওয়ার নিয়ম

কলার খোসা খাওয়া সবাই তেমন পছন্দ করেন না। এটি খাওয়া তেমন প্রচলনও নেই। তবে অনেকেই খাবার ইচ্ছা প্রকাশ করেন এবং এটি খাবার নিয়ম জানতে চান। কলার খোসা কয়েকভাবে খাওয়া যায়। ইতোমধ্যে উপরে আপনাদের সাথে আলোচনা করলাম কলার খোসা সিদ্ধ করে ভর্তা করে খাওয়া যায়। সিদ্ধ খোসার ভর্তা কিন্তু অনেক টেস্টি।

এছাড়াও কলার খোসা সিদ্ধ করার পর ভেতরে সাদা অংশ সংগ্রহ করে বিভিন্ন সালাত বা স্মুদির সাথে যোগ করে খাওয়া যায়। আবার কেউ কেউ আছেন কলার খোসা ছোট ছোট টুকরো করে কেটে ভাজি করে উঠে থাকেন। তবে এটি খেতে ভালোই লাগে। তাই আপনার ইচ্ছামত আপনি যে কোনভাবে কলার খোসা খেতে পারেন।

কলার খোসার অপকারিতা বা সতর্কতা

কলার খোসার কতই না উপকারিতা আমরা এতক্ষনে দেখলাম। কিন্তু এত উপকারীতার পাশাপাশি এর কিছু অপকারিতা বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও যে থাকে সেদিকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখা উচিত। সব জিনিসেরই দেখা যায় উপকারিতা থাকার পাশাপাশি কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকে। তাই এ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলো আমাদের জানতে হবে ও সতর্ক থাকতে হবে।

কলার খোসার ব্যবহার ও খাওয়ার ফলে সম্ভাব্য কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নিচে দেয়া হলো। এই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলো অবশ্যই খেয়াল রাখবেন।

  • কলার খোসায় পর্যাপ্ত পরিমাণে আশ থাকায় এটি খেলে হজম জনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • কারো কারো কলার খোসাই এলার্জি থাকতে পারে।
  • কাঁচা কলার খোসা খাওয়ার ক্ষেত্রে অনেকের কাছে এটি পছন্দ নাও হতে পারে।
  • খাওয়ার আগে অবশ্যই ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে যাতে এতে রাসায়নিক কোন পদার্থ লেগে না থাকে।
  • অনেক সময় কিছু কিছু কাল আর খোসার স্বাদ তেতো হয়।
  • অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে সমস্যা হতে পারে।

তো এই সতর্কতা গুলো অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। যদিও কোন ধরনের সমস্যায় পড়েন তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া ভালো হবে। অবশ্যই অতিরিক্ত ব্যবহার থেকে সতর্ক থাকবেন।

পরিশেষে - কালার খোসা দিয়ে রূপচর্চা ও কলার খোসার ব্যবহার

প্রিয় পাঠক, কলার খোসা নিয়ে এতক্ষন আপনাদের সাথে বিস্তারিত সবকিছু আলোচনা করেছি। আশা করি পোস্টটি ভালোভাবে পড়েছেন এবং পরিষ্কার একটি ধারনা পেয়েছেন। শুধু কলায় যে উপকারী তা নয় কলার পাশাপাশি আমাদের ফেলে দেয়া খোসাটাও কিন্তু হতে পারে আমাদের জন্য অনেক উপকারী যদি এর সঠিক ব্যবহার করতে জানেন।

তাই এসব উপকারিতা গ্রহণ করতে চাইলে ওপরে বর্ণিত বিভিন্ন পদ্ধতি ও নিয়ম অনুসারে নিয়মিত ব্যবহার করতে পারেন। যদি কোন ধরনের সমস্যা হয় তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। এতক্ষণ থাকার জন্য ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ😍

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url