কলমি শাক খেলে প্রেসার বাড়ে না কমে - কলমি শাকের ক্ষতিকর দিক
কলমি শাক খেলে প্রেসার বাড়ে না কমে এ সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন তাইতো ? তার সাথে জানতে চান কলমি শাকের ক্ষতিকর দিক। আজকে আপনাদের সাথে কলমি শাক নিয়েই বিস্তারিত খুঁটিনাটি ভালোভাবে আলোচনা করব।
যদিও কলমি শাক খুবই পুষ্টিকর এবং জনপ্রিয় একটি শাক। অনেকের কাছে এই শাকটি খুবই প্রিয়। বিভিন্ন পুষ্টিগুণ ও ভিটামিনে ভরপুর এই শাকের উপকারিতা, অপকারিতা, ক্ষতিকর দিক ও বিভিন্ন প্রভাব আপনাদের কাছে তুলে ধরব।
সূচিপত্র - কলমি শাক খেলে প্রেসার বাড়ে না কমে কলমি শাকের ক্ষতিকর দিক
- কলমি শাক খেলে প্রেসার বাড়ে না কমে
- কলমি শাকের ক্ষতিকর দিক
- কলমি শাকে ভিটামিন আছে
- কলমি শাকের উপকারিতা
- গর্ভাবস্থায় কলমি শাক খেলে কি হয়
- কলমি শাক খেলে কি হয়
- কলমি শাকে এলার্জি আছে কি
- কলমি শাকের বৈশিষ্ট্য
- কলমি শাক চাষ পদ্ধতি
- কলমি শাক খাওয়ার নিয়ম
- কলমি শাক কত প্রকার
- কলমি শাক এর ইংরেজি নাম
- কলমি শাকের ঔষধি গুণ
- কলমি শাক খেলে কি প্রেসার বাড়ে না কমে - শেষ কথা
কলমি শাক খেলে প্রেসার বাড়ে না কমে
কলমি শাক খেলে প্রেসার বাড়ে না কমে এটি অনেকেই জানার আগ্রহ প্রকাশ করেন। কলমি শাক খুবই সুস্বাদু এবং পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি শাক। তবুও যারা প্রেশার এর সমস্যায় ভুগে থাকেন তারা কলমি শাক খাওয়ার আগে চিন্তিত থাকেন। কারণ তাদেরকে খাবারের বিষয়ে একটু সতর্ক থাকতে হয়। এখন কলমি শাক খেলে প্রেসার বাড়বে নাকি কমবে সে বিষয়টি বলবো।
দেখুন কলমি শাক একটি খুবই পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধশাক। এই শাকটি নিয়মিত পরিমান মত খাওয়ার ফলে আমাদের শরীর অনেক উপকারিতা গ্রহণ করতে পারে। কলমি শাকে থাকা উপাদান গুলোর মধ্যে ফাইবার, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, নাইট্রিক অক্সাইড, মিনারেল ইত্যাদি অন্যতম। এই উপাদানগুলো আমাদের শরীরে রক্তের চাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
আরো পড়ুন : কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা ও কলার খোসার ব্যবহার
তাই বলা যায় এগুলো প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করতেও অনেক বেশি সহায়ক। তাহলে আপনি হয়তো বা বুঝতে পারলেন যে, নিয়মিত পরিমান মত কলমি শাক খাওয়ার ফলে প্রেসার বৃদ্ধি পাওয়া বা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। কলমি শাক সরাসরি প্রেসার বৃদ্ধি করতে বা হ্রাস করার ক্ষমতা রাখেনা। আশা করি এই বিষয়টি ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন।
কলমি শাকের ক্ষতিকর দিক
কলমি শাক খেলে প্রেসার বাড়ে না কমে এটি যখন জানলেন তখন নিশ্চয়ই আপনি কলমি শাকের
ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানার জন্য চেষ্টা করেছেন। কলমি শাকের অনেক উপকারিতা ও
অপকারিতা রয়েছে। এখন আপনাদের সাথে আমরা ক্ষতিকর দিক বা অপকারিতা নিয়ে আলোচনা
করব। এরপরে আস্তে আস্তে নিচে কলমি শাকের উপকারিতা সহ অন্যান্য বিষয় তুলে
ধরবো।
অতিরিক্ত কলমি শাখ খাওয়ার ফলে সম্ভাব্য কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা কলমি শাকের
ক্ষতিকর কিছু দিক দেখা দিতে পারে। আমাদের অনেকের কাছেই খুব প্রিয় এই সাতটি
খাওয়ার আগে অবশ্যই আমাদের এর ক্ষতিকর দিকগুলোর ওপর খেয়াল রাখা উচিত। তবেই আমরা
এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থেকে দূরে থাকতে পারবো। চলুন তাহলে এর ক্ষতিকর দিক গুলো
দেখে নিই।
অতিরিক্ত পটাশিয়াম : কলমি শাকে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে। আর
যারা কিডনির বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন তাদের শরীরে পটাশিয়ামের মাত্রা ঠিক রাখতে
হয়। তাই যারা কিডনির সমস্যায় ভুগছেন তারা পরিমিত পরিমানে কলমি শাক খাবেন।
দূষিত পদার্থ : কলমি শাক দেখা যায় প্রায়ই পানিতে বা জলবদ্ধ ভূমিতে
বেশি জন্মায়। তাই এই শাকটি যদি দূষিত পানি বা মাটি থেকে সংগ্রহ করা হয় তাহলে
এতে আর্সেনিক বা ভারী ধাতু থাকতে পারে সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।
আরো পড়ুন : পাথরকুচি পাতার ক্ষতিকর দিক - খালি পেটে পাথরকুচি পাতা খেলে কি হয়
ডায়রিয়ার সমস্যা : বেশি পরিমাণে কলমি শাক খাওয়ার ফলে হজমে সমস্যা
হতে পারে যার কারণে ডায়রিয়া হওয়ারও সম্ভাবনা থাকে।
এলার্জির সমস্যা : এলার্জি সৃষ্টি করতে পারে এমন অনেক উপাদান রয়েছে।
কলমি শাক খাওয়ার ফলে এলার্জিজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই যাদের এলার্জি
রয়েছে তারা এ বিষয়ে সতর্ক থাকবেন।
রাসায়নিক পদার্থ : কলমি শাকে কিছু রাসায়নিক পদার্থ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই আপনি যখন এই শাকটি খাবেন তখন এই রাসায়নিক পদার্থগুলো আপনার শরীরের প্রবেশ করবে এবং শরীরের বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
অনিয়ন্ত্রিত প্রেসার : অতিরিক্ত কলমি শাক খাওয়ার ফলে দেখা যায় যে
প্রেসার কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই যারা পেশার জনিত রোগী তাদের এ বিষয়ে
সতর্ক থাকতে হবে। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
অতিরিক্ত ফাইবার : ফাইবার আমাদের শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকার হলেও
এটির অতিরিক্ত পরিমাণ আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। অতিরিক্ত ফাইবারের
কারণে বদ হজম পেটব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়।
রক্ত জমাটে বাঁধা প্রধান : রক্ত জমাট বাঁধতে যে উপাদানগুলো বাধা
প্রদান করে কলমি শাকির সেই উপাদান থাকে। তাই যারা ডায়াবেটিসের রোগী রয়েছেন
তাদের জন্য এটি ঝুঁকি স্বরূপ হতে পারে।
আরো পড়ুন : চর্ম রোগে নিম পাতার ব্যবহার - নিম পাতার ক্ষতিকর দিক
এ ছিল কলমি শাক খাবার সম্ভাব্য কিছু ক্ষতিকর দিক। আপনি যখন নিয়ম না মেনে
অতিরিক্ত পরিমাণে শাক খাবেন তখন আপনি সমস্যা গুলো সম্মুখীন হতে পারেন। তবে
নিয়মিত পরিমাণ মতো খাওয়ার ফলে আপনি অনেক উপকৃত হতে পারবেন। তাই অতিরিক্ত খাওয়া
থেকে বিরত থাকুন এবং নিয়মিত পরিমান মত কলমি শাক খান।
কলমি শাকে ভিটামিন আছে
কলমি শাকের ক্ষতিকর দিক ও কলমি শাক খেলে প্রেসার বাড়ে না কমে এ সম্পর্কে এতক্ষন জানলেন। এবার আপনাদেরকে কলমি শাকে থাকা ভিটামিন গুলো কি কি তা বলব। কলমি শাকে থাকা ভিটামিন সম্পর্কে যদি আপনার ধারণা থাকে তাহলে অন্যান্য বিষয় বুঝার জন্য আপনার আরও বেশি সুবিধা হবে। কলমি শাকের নিম্নলিখিত ভিটামিন গুলো পাওয়া যায়।
- ভিটামিন এ
- ভিটামিন বি
- ভিটামিন সি
- ভিটামিন কে
- থায়ামিন
- নিয়াসিন
- রিবোফ্লোভিন
- প্রোটিন
- ক্যালসিয়াম
- ম্যাগনেসিয়াম
- আয়রন
- ফাইবার
- লৌহ
- শ্বেতসার ইত্যাদি
তাহলে বুঝতেই পারছেন সাধারণ এই শাকটিতে কত রকমের পুষ্টি উপাদান। উপাদান গুলো দেখে
বুঝতেই পারছেন এগুলো আমাদের শরীরের জন্য কতটা উপকারী। এই উপাদান গুলো আমাদের
শরীরে বিভিন্নভাবে কাজ করে। এবার চলুন নিচে অন্যান্য বিষয়গুলো দেখে নেয়া
যাক।
কলমি শাকের উপকারিতা
কলমি শাকের ক্ষতিকর দিক যেহেতু জেনে ফেলেছেন তার পাশাপাশি এখন উপকারিতা জেনে নিলে
ক্ষতি কি তাই না ? এবার আপনাদেরকে কলমি শাক খাওয়ার ফলে যে উপকারিতা গুলো হয় তা
সম্পর্কে বলব। কলমি শাক খুবই জনপ্রিয় পুষ্টিকর এবং অনেকের কাছে খুব পছন্দের একটি
শাক। চলুন তাহলে কলমি শাকের উপকারিতা এক নজরে দেখে নেয়া যাক।
আরো পড়ুন : বিটরুট পাউডারের ১০ টি উপকারিতা - বিটরুট খাওয়ার নিয়ম
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
- হজম শক্তি বৃদ্ধি করে
- ওজন নিয়ন্ত্রণ করে
- চোখের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী
- ডায়াবেটিসের জন্য কার্যকরী
- ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে
- রক্তস্বল্পতা দূর করে
- হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখে ইত্যাদি
এই উপকারিতা গুলো ছাড়াও কলমি শাকের আরো অনেক অজানা উপকারিতা রয়েছে। তাই এই
উপকারিতা গুলো যদি গ্রহণ করতে চান তাহলে নিয়মিত কলমি শাক খেতে হবে। নিয়মিত এই
শাক খাবার ফলে উপরোক্ত উপকারিতা গুলো পাবেন।
গর্ভাবস্থায় কলমি শাক খেলে কি হয়
আপনারা ইতোমধ্যে দেখলেন কলমি শাকের উপকারিতা ও এতে থাকা বিভিন্ন পুষ্টিগুণ। তাহলে
বুঝতে পারছেন যে কলমি শাক সাধারণত কতটা উপকারী। এটি গর্ভকালীন সময়ে একজন গর্ভবতী
মা ও তার গর্ভে থাকা সন্তানের জন্যও কিন্তু অনেক উপকারী। কলমি শাকে থাকা বিভিন্ন
উপাদান যেমন, ফাইবার, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ভিটামিন এ, ভিটামিন
সি।
আরো পড়ুন : থানকুনি পাতার ১৮টি উপকারিতা ও অপকারিতা - থানকুনি পাতার ব্যবহার
উপরোক্ত উপাদানগুলো একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য অনেক প্রয়োজনীয়। শুধুমাত্র গর্ভবতী মা
ই নয়। এগুলো গর্ভের শিশুর দৈহিক বিকাশ ঘটাতে অনেক বেশি সহায়ক। কলমি শাকে থাকা
ফলিক এসিড বাচ্চার ব্রেন ডেভেলপমেন্টে অনেক কার্যকরী। তাই গর্ভাবস্থায় পরিমাণ
মতো কলমি শাক খাবার তালিকায় রাখতে পারেন।
কিন্তু এ বিষয়ে কয়েকটি সর্তকতা অবলম্বন করা উচিত। অবশ্যই খেয়াল রাখবেন যাতে
কলমি শাক কোন দূষিত জায়গা থেকে সংগ্রহ করা না হয় এবং এটি রান্নার পূর্বে অবশ্যই
ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিবেন। এবং রান্না করার সময় ভালোভাবে সিদ্ধ করে
রান্না করবেন।
কলমি শাক খেলে কি হয়
কলমি শাক খেলে কি হয় তা আপনারা অল্প কিছু হলেও একটু ধারণা পেয়েছেন। কলমি শাক
খাওয়ার ফলে আমরা বিভিন্নভাবে উপকৃত হয়ে থাকি। আমাদের শরীরে দৈনন্দিন বিভিন্ন
ধরনের পুষ্টি উপাদানের প্রয়োজন হয়। আপনি যদি নিয়মিত শাকসবজি খাওয়ার অভ্যাস
গড়ে তুলেন তাহলে আপনি দীর্ঘদিন নিজের যৌবন ধরে রাখতে পারবেন।
শুধুমাত্র যে ভালো মন্দ খাবার খেলে মানুষ সুস্থ থাকে তা কিন্তু নয়। আমাদের সুস্থ
ও সবল দেহ গঠনের জন্য অবশ্যই খাবার তালিকায় বেশি বেশি শাক-সবজি রাখা উচিত। সেখান
থেকে কলমি শাক আপনাকে অনেক বেশি সাহায্য করবে। আপনি যদি প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের
অসুখ-বিসুখে ভুগে থাকেন তাহলে কলমি শাকিব খান।
কেননা কলমি শাক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এছাড়াও কলমি শাক খাওয়ার ফলে আপনার
দৃষ্টিশক্তি ভালো হয়। কারণ কলমি শাকে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ রয়েছে। আমাদের
প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২৫০ গ্রাম এর বেশি সবজি খাওয়া উচিত। সেখান থেকে কলমি শাক
খুবই ভালো মানের একটি সবজি। তাছাড়া এটি ক্যালসিয়াম ও আয়রনেরও ভালো একটি
উৎস।
তাই বলতে গেলে কলমি শাক খেলে নিচে বর্ণিত উপকারিতা গুলো আপনি গ্রহণ করতে
পারবেন।
- হাড়ের জন্য অনেক উপকারী
- চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে
- ত্বক সুন্দর করে
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
- শরীরে পুষ্টি সারবরাহ করে
- ওজন নিয়ন্ত্রণ করে ইত্যাদি।
কলমি শাক খেলে কি হয় এক কথায় বলতে গেলে আপনি এইগুলো দেখতে পারেন। কলমি শাক খেলে
এই উপকারিতা গুলো হয়। কিন্তু অবশ্যই অতিরিক্ত শাক খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। বেশি
পরিমাণে খেলে দেখা যাবে উপকারিতার পরিবর্তে আপনি ক্ষতি সম্মুখীন হয়ে আছেন। তাই
অবশ্যই সতর্ক থাকবেন।
কলমি শাকে এলার্জি আছে কি
কলমি শাকে এলার্জি আছে কিনা অনেকে জিজ্ঞেস করেন। যদিও কলমি শাক খুবই পুষ্টিকর
সুস্বাদু এবং অনেকের কাছে খুব জনপ্রিয় একটি শাক। তবে কলমি শাক অনেকের ক্ষেত্রেই
এলার্জির কারণ হতে পারে। কারণ এতে কিছু উপাদান রয়েছে যেগুলোর কারণে এলার্জি জনিত
সমস্যায় পড়তে পারেন। তবে সবার ক্ষেত্রে এ সমস্যাটি দেখা নাও দিতে পারে।
আরো পড়ুন : বিচি কলা ও সাগর কলা খাওয়ার কার্যকরী ২৫টি উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম
কলমি শাক ছোট থেকে বড় পর্যন্ত সকলের জন্যই অনেক উপকারী। তবে এটি খেলেই যে
এলার্জি দেখা দিবে এরকম কোন সম্ভাবনা নেই। যাদের অ্যালার্জিজনিত সমস্যা আগে থেকেই
আছে বা এলার্জির হালকা কোন প্রভাব রয়েছে এমন কোন কিছু খেলেই এলার্জি দেখা দিতে
পারে তাদের জন্য আলাদা ব্যাপার। তাদের এ বিষয়টি মাথায় রাখা উচিত।
আশা করি বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। কলমি শাক খেলেই এলার্জি হবে এরকম কোন ব্যাপার
নয়।
কলমি শাকের বৈশিষ্ট্য
আমি শাকের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে অনেকে জানার আগ্রহ থাকে। আসলে সাধারণ এ শাকটি কেন
এত উপকারী কেন এটি এত জনপ্রিয়। এটি খুবই সহজলভ্য একটি শাক। এই শাকটির অনেক কিছু
বৈশিষ্ট্য রয়েছে। প্রথমে বলতে গেলে এটি অনেক অনেক বেশি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। খেতেও
অনেক সুস্বাদু। অনেকের কাছে এই শাক তো অনেক পছন্দের।
এই শাক খুব সহজেই যেখানে সেখানে অল্প দামের মধ্যেই পাওয়া যায়। এটির চাষ পদ্ধতিও
খুবই সহজ এবং খরচও খুব কম হয়। খুব সহজেই এটি যেখানে সেখানে চাষ করা যায়। এই
শাকটি খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায় যার কারণে কয়েকদিন পর পরই এটি সংগ্রহ করা যায়। এর
সবচাইতে বড় বৈশিষ্ট্য হল এটি খেতেও যেমন সুস্বাদু পুষ্টিগুণেও তেমন ভরপুর।
কলমি শাকের কিছু জাত রয়েছে যেগুলো পানিতে জন্মে আবার কিছু কিছু যেগুলো স্যাতসেতে
মাটিতে ভালো জন্মায়। সবুজ রঙের সহজলভ্য এই শাকটি আপনি বারো মাস যেখানে সেখানে
পাবেন। আপনি যদি চান তাহলে আপনার বাড়ির আশেপাশে বা যেকোনো জায়গায় খুব সহজে এটি
চাষ করে খেতে পারেন।
কলমি শাক চাষ পদ্ধতি
কলমি শাকের চাষ পদ্ধতি খুবই সহজ। খুব সহজেই আপনি যেখানে সেখানে এই স্বাদ চাষ করতে
পারবেন। এটি আপনি খুব বড় পরিসরে রোজগারের জন্য বা শুধু মাত্র বাড়িতে এর চাহিদা
মিটানোর জন্যও চাষ করতে পারেন এর জন্য আপনাকে তেমন বেশি কোন পরিশ্রম করতে হবে না।
কলমি সাধারণত চাষ করার সময় বীজ বপন করা হয়।
কিন্তু কলমি শাক দ্রুত বংশ বৃদ্ধি করে এর কান্ড থেকে। আমরা যেই কলমি শাক বাজার
থেকে নিয়ে আসি তার পাতা নিয়ে বাকি যে অংশটুকু থাকে তা মাটিতে পুঁতে দিলেই
কিন্তু সেখান থেকে নতুন শাক গজায়। কলমি শাক চাষ করার জন্য প্রথমে আপনাকে মাটির
নির্বাচন করে নিতে হবে যে মাটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে রস থাকে।
এরপর সেখানে বাজার থেকে কলমি শাকের বীজ নিয়ে এসেও বপন করতে পারেন বা কলমি শাকের
কান্ড কেটে কেটে লাগিয়ে শাক উৎপাদন করতে পারেন। কলমি শাকের আলাদা তেমন কোন
অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয় না। শুধুমাত্র লাগিয়ে রেখে খেয়াল রাখতে হবে যাতে
মাটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে রস থাকে। এভাবে আপনি খুব সহজে কলমি শাক চাষ করতে
পারবেন।
কলমি শাক খাওয়ার নিয়ম
কলমি শাক আপনি বিভিন্ন ভাবে খেতে পারেন। যেভাবেই খান না কেন এটি অনেক বেশি
সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর। আমরা বিশেষ করে কলমি শাক সবাই ভাজি করে খায়। কলমি শাকের
ভাজি গরম ভাত আর ডাল ঝোল একসাথে খেতে কি যে মজা তা বলার মত নয়। আপনি শুধুমাত্র
কলমি শাক ভাজি করে খেতে পারেন আবার এর সাথে আরো কিছু মেশাতেও পারেন।
কলমি শাকের সাথে আলু কুচি করে কেটে দিয়ে ভাজি করলে তো মজা আরো বেড়ে যায়।
বিভিন্ন জনে বিভিন্নভাবে এই কলমি শাক রান্না করে খায়। আপনার যেভাবে ইচ্ছা হবে
আপনি সেই ভাবে রান্না করে খেতে পারেন। এছাড়াও কলমি শাকের চচ্চড়ি, বড় মাছের
সাথে কলমি শাকের ঝোল ইত্যাদি বিভিন্ন রেসিপিতে কলমি শাক খাওয়া যায়।
তবে কলমি শাক রান্না করার আগে অবশ্যই ভালোভাবে ধুয়ে নিবেন এবং ছোট ছোট করে কেটে
রান্নার জন্য প্রস্তুত করবেন। অবশ্যই কলমি শাক কোন দূষিত জায়গা থেকে সংগ্রহ করা
হলো কিনা সেই দিকে লক্ষ্য রাখবেন।
কলমি শাক কত প্রকার
কলমি শাক কত প্রকার হয়ে থাকে তা আমরা অনেকে জানিনা। আসলে কলমি শাক দুই ধরনের
হয়ে থাকে। অনেকেই এই দুই জাতকে দেশি ও বিদেশী কলমি শাক বলে থাকে। কলমি শাকের
একটি জাত রয়েছে যেটি পানিতে বেশি জন্মে। এই শাকটির কাণ্ড লাল রঙের হয়ে থাকে,
পাতাগুলো চিকন চিকন হয়ে থাকে এবং কাণ্ড লম্বা হয়ে লতার মত ছুটে চলে।
এটির পাতা কান্ডের অনেক দূরে দূরে অবস্থান করে। এটিকে অনেকে দেশী কলমি শাক বলে
থাকে। এটি সেভাবে চাষ করা হয় না। পুকুর পাড়ে বা নদীর ধারে জন্মে পানির উপর
দিয়ে হেঁটে চলে আর বড় হতে থাকে। একে জল কলমিও বলা হয়। এই শাকের স্বাদও একটু
বেশি। আর এক জাতের কলমি শাক রয়েছে যেগুলো বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়।
এই শাক পুরোটা একদম সবুজ রঙের। এটি পানিতে জন্মে না। তাই একে স্থল কলমিও বলা হয়। পাতাগুলো অনেক প্রশস্ত এবং বড় বড়। অনেকে এই শাককে বিদেশী কলমি শাকও বলে। তুলনামূলক এই শাকের স্বাদ একটু কম। এই শাকই সাধারণত বাজারে বিক্রি করা হয়।
কলমি শাক এর ইংরেজি নাম
কলমি শাক এর ইংরেজি নাম জানার জন্য আপনারা অনেকেই অনলাইনে সার্চ করে থাকেন। আসলে কলমি শাকের ইংরেজি নাম হচ্ছে Water Spinach । কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় এই কলমি শাক বিভিন্ন ইংরেজি নামে পরিচিত। Water Spinach ছাড়াও কলমি শাক River Spinach, Water Morning Glory, Kangkong, Water Convolvulus ইত্যাদি নামেও বিভিন্ন জায়গায় পরিচিত।
কলমি শাকের ঔষধি গুণ
কলমি শাকের বেশ কিছু ঔষধি গুনাগুন রয়েছে যে গুনাগুন গুলো আমাদের শরীরে
বিভিন্নভাবে কাজ করে থাকে। এই গুনাগুন আমাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে
বিভিন্নভাবে সুস্থ ও সবল রাখতে সাহায্য করে। কলমি শাকে থাকা ঔষধি গুনাগুন গুলো
যখন আমরা গ্রহণ করি তখন আমরা বিভিন্নভাবে উপকৃত হই।
কলমি শাকে থাকা গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঔষধি গুনাগুন নিচে উল্লেখ করা হলো।
- কিডনি ও মূত্রনালী পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
- হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখতে সাহায্য করে
- দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে
- পেটের আলসার প্রতিরোধ করে
- জ্বর ও সংক্রমণ নিরাময়ে সহায়ক
- কোষ্ঠকাঠিন্য ও হজম শক্তি উন্নত করে ইত্যাদি।
এছাড়াও কলমি শাক আমাদের শরীরে অনেক ঔষধি গুনাগুন প্রদান করে যা আমাদের জানা নেই।
তাই এই ওষুধটি গুণাগুণ গুলো যদি পেতে চান তাহলে নিয়মিত খাবার তালিকায় কলমি যোগ
করতে পারেন।
কলমি শাক খেলে প্রেসার কি বাড়ে না কমে - শেষ কথা
কলমি শাক খেলে প্রেসার বাড়ে না কমে ও কলমি শাকের বিভিন্ন ক্ষতিকর দিক সহ কলমি
শাক সম্পর্কে আরো অনেক তথ্য এতক্ষণে জেনে ফেলেছেন। আশা করি সবকিছু ভালোভাবে বুঝতে
পেরেছেন এবং উপকৃত হয়েছেন। আসল কথা কলমি শাক খেলে প্রেসার বাড়েনা বা কমেনা।
কলমি শাক সরাসরি প্রেসার বৃদ্ধি করতে বা হ্রাস করতে পারে না।
তবে শাকটি অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন এবং এর যে ক্ষতিকর বিষয় নিয়ে
আলোচনা করেছি এদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন। এটি খুবই পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এবং খুবই
সুস্বাদু একটি শাক। আশা করি কলমি সম্পর্কে আপনাদের মধ্যে যে প্রশ্নগুলো ছিল
সেগুলোর উত্তর পেয়ে গেছেন। পোস্টটি করার জন্য ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ😍
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url