পাথরকুচি পাতার ক্ষতিকর দিক - খালি পেটে পাথরকুচি পাতা খেলে কি হয়

পাথরকুচি পাতার ক্ষতিকর দিক খালি পেটে পাথরকুচি পাতা খেলে কি হয় এ সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন তাইনা ? তাই আপনাদের জন্য আজকের পোস্টে নিয়ে এসেছি পাথরকুচি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সহ বিস্তারিত আলোচনা।

পাথরকুচি-পাতার-ক্ষতিকর-দিক

তাই সবকিছু ভালোভাবে জানার জন্য পোস্টটি পড়তে থাকুন। পাথরকুচি পাতা বিরুৎ জাতীয় একটি ঔষধি উদ্ভিদ। এটি ব্যবহারের কিছু উপকারিতা ও কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে। এছাড়াও এটি কখন খেলে কি হয় তা নিয়ে আপনাদের সাথে আলোচনা করব। চলুন শুরু করি।

সূচিপত্র - খালি পেটে পাথরকুচি পাতা খেলে কি হয় - পাথরকুচি পাতার ক্ষতিকর দিক

পাথরকুচি পাতার ক্ষতিকর দিক

পাথরকুচি পাতার সম্ভাব্য কিছু ক্ষতিকর দিক থাকতে পারে। আপনারা যেহেতু পাথরকুচি পাতার ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন তাই আপনাদেরকে এ সম্পর্কে আগে জানাবো। এরপর পাথরকুচি পাতা নিয়ে অন্যান্য আলোচনা করব। দেখুন পাথরকুচি একটি উপকারী উদ্ভিদ। কিন্তু মাঝে মাঝে এর কিছু প্রতিক্রিয়া বা ক্ষতিকর দিক দেখা দেয়।

এই ক্ষতিকর দিকগুলো দেখা দেয়ার একটি বড় কারণ হচ্ছে অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া এবং অনিয়মের খাওয়া। তাই আমাদের এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। অতিরিক্ত পাথরকুচি পাতা খাওয়ার ফলে সম্ভাব্য কিছু ক্ষতির দিক বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তাহলে নিচে এক নজরে পাথরকুচি পাতার ক্ষতিকর দিক বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলো দেখে নেই।

  1. অতিরিক্ত গ্রহণ : পাথরকুচি পাতা অতিরিক্ত গ্রহণের ফলে পেটব্যথা, বমি ভাব বা ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  2. গর্ভাবস্থায় : গর্ভাবস্থায় পাথরকুচি পাতা খাওয়ার জন্য অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ এই সময়ে এটি কখন কি ধরনের প্রভাব ফেলে বলা যায় না।
  3. এলার্জি : কিছু কিছু মানুষের পাথরকুচি পাতা খাওয়ার ফলে এলার্জিজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই যাদের আগে থেকে এ ধরনের সমস্যা আছে তাদের সতর্ক থাকা উচিত।
  4. অরুচি : পাথরকুচি পাতা অতিরিক্ত ও দীর্ঘমেয়াদী গ্রহণ করার ফলে মুখে অরুচি ভাব সৃষ্টি হতে পারে। এতে করে খাবারের প্রতি রুচি কমে যায়।
  5. অন্য ওষুধের সাথে ক্রিয়া : যদি অন্য কোন ধরনের ওষুধ গ্রহণ করেন তাহলে এ অবস্থায় পাথরকুচি পাতা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। কারণ এটি অন্য ওষুধের কার্যকারিতা পরিবর্তন করতে পারে।
  6. পিত্তথলির সমস্যা : দীর্ঘমেয়াদী পাথরকুচি পাতা সেবনে পিত্তথলির সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই যাদের আগে থেকে এ ধরনের সমস্যা রয়েছে তারা এটি থেকে সাবধানে থাকবেন।

আরো পড়ুন : চর্ম রোগে নিম পাতার ব্যবহার - নিম পাতার ক্ষতিকর দিক

এ ছিল পাথরকুচি পাতা খাওয়ার সম্ভাব্য কিছু ক্ষতিকর দিক। তাই পাথরকুচি পাতা খেলে এদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন। আশা করি এই পাতার ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পেয়েছেন। চলুন এবার তাহলে খালি পেটে পাথরকুচি পাতা খেলে কি হয় তা জেনে নেয়া যাক।

খালি পেটে পাথরকুচি পাতা খেলে কি হয়

পাথরকুচি পাতা খাওয়ার ক্ষতিকর দিক দেখে নিলেন। এখন খালি পেটে পাথরকুচি পাতা খেলে কি হয় সেটি দেখব। পাথরকুচির পাতা যদি খালি পেটে খাওয়া হয় তাহলে কিছু উপকারিতা ও কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। এখানে আমরা উপকারিতা ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দুটি নিয়েই আলোচনা করব। এটি খাওয়ার যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে।

পাথরকুচি-পাতার-ক্ষতিকর-দিক

চলুন এখন তাহলে খালি পেটে পাথরকুচি পাতা খেলে কি কি উপকারিতা হয় তা দেখে নিই।

খালি পেটে পাথরকুচি পাতা খাওয়ার উপকারিতা

পাথরকুচি পাতা খালি পেটে খাওয়া পাচনতন্ত্রের জন্য অনেক বেশি সহায়ক। এটি খাওয়ার ফলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করে এবং হজমে সাহায্য করে। এটি কিডনির স্টোনের বিরুদ্ধে অনেক বেশি কার্যকরী। খালি পেটে এটি খেলে কিডনির স্টোন বা পাথর গঠনের ঝুঁকি কমায় এবং যদি পাথর থেকেও থাকে তাহলে তা গলিয়ে ফেলতে সাহায্য করে।

এছাড়াও এটি রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অনেক উপকারী। তাছাড়া বাচ্চাদের সর্দি লেগে থাকলে সকাল বেলা খালি পেটে পাথরকুচির পাতা খাওয়ালে সর্দি দূর হয়। পেটে লাগা দূর করতেও পাথরকুচি পাতা খাওয়া যায়। চলুন এবার খালি পেটে পাথরকুচি পাতা খাওয়ার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা যাক।

খালি পেটে পাথরকুচি পাতা খাবার অপকারিতা বা পার্শ প্রতিক্রিয়া

আপনি যদি খালি পেটে পাথরকুচি পাতা খান তাহলে সম্ভাব্য কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যেমন ধরুন খালি পেটে যদি আপনি বেশি পরিমাণে পাথরকুচি পাতা খেয়ে ফেলেন তাহলে এটি অম্লতা বৃদ্ধি করতে পারে ফলে গ্যাস্ট্রিক জনিত সমস্যা হতে পারে। অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে বমি বমি ভাব বা ডায়রিয়াও হতে পারে।

আরো পড়ুন : থানকুনি পাতার ১৮টি উপকারিতা ও অপকারিতা 

তাছাড়া কিছু কিছু মানুষের এটি এলার্জি বৃদ্ধি করার কারণ হতে পারে। আবার এটি রক্তচাপের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। পাথরকুচি পাতা খালি পেটে খেলে আপনি এই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা অপকারিতা গুলোর সম্মুখীন হতে পারেন।

পাথরকুচি পাতার ইংরেজি ও বিজ্ঞানসম্মত নাম

আপনারা অনেকেই পাথরকুচি পাতার ইংরেজি ও বিজ্ঞানসম্মত বা বোটানিক্যাল নাম জানতে চান। তাই আপনাদেরকে এখন পাথরকুচি পাতার ইংরেজি ও বোটানিক্যাল নাম বলব। পাথরকুচি পাতা ইংরেজিতে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন Miracle Leaf, Patharchatta, Life of Plant ও Leaf of Life ইত্যাদি। অঞ্চল ভেদে বিভিন্ন নামে পরিচিত।

পাথরকুচি পাতার বোটানিক্যাল নাম হচ্ছে Kalanchoe Pinnat যা Crassulaceac পরিবারের একটি উদ্ভিদ। আশাকরি নাম দুটি বুঝতে পেরেছেন।

পাথরকুচি পাতার ঔষধি গুনাগুন বা উপাদান

পাথরকুচি পাতাতে বিশেষ ধরনের কিছু ঔষধি গুনাগুন রয়েছে। এসব গুনাগুন সম্পর্কে যদি একটু ধারণা রাখেন তাহলে পরের বিষয়গুলো বুঝতে আপনার জন্য অনেক সুবিধা হবে। এই পাথরকুচি পাতা প্রাচীনকাল থেকেই ভেষজ ঔষধ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। অনেকেই এটি বিভিন্ন রোগ নিরাময়ের জন্য ব্যবহার করে থাকেন।

এবার তাহলে পাথরকুচি পাতাতে কি কি গুনাগুন রয়েছে তা দেখে নিব। এতে থাকা বিশেষ কিছু ঔষধি গুনাগুন নিচে উল্লেখ করা হলো।

  • গ্লাইকোসাইট
  • অর্গানিক এসিড
  • ক্যালসিয়াম অক্সালেট
  • বিউফিলিন
  • অ্যালকালয়েড
  • প্যানেল
  • ফ্ল্যাভোনয়েড
  • সাপোনিন
  • ভিটামিন ও মিনারেল
  • স্টেরয়েড ইত্যাদি

তাহলে বুঝতেই পারছেন পাথরকুচি পাতাতে কি কি ওষুধে উপাদান থাকে। এই উপাদান গুলো আমাদের শরীরে বিভিন্নভাবে উপকারী এবং দরকারি।

পাথরকুচি পাতার বৈশিষ্ট্য

পাথরকুচি পাতার নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এই বৈশিষ্ট্য গুলোর কারণে খুব সহজেই এই পাতা শনাক্ত করা যায়। পাথরকুচি পাতা একটু পুরো মাংসল, আদ্র ও সবুজ রঙের হয়ে থাকে। পাতাতে হাত দিলে ঠান্ডা অনুভূত হয়। এ পাতা অনেক পানি ধরে রাখতে পারে। পাতাটি মাঝারি সাইজের হয়ে থাকে এবং কিনারায় একটু পরপর খাঁজ থাকে।

আরো পড়ুন : শিমুল মূলের উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম

পাথরকুচি পাতা খুব সহজেই বংশবৃদ্ধি করতে পারে। এ পাতা মাটিতে ফেলে রাখলে এই খাঁজ থেকেই পাথরকুচি গাছের ছোট ছোট চারা বের হয়। পাথরকুচি পাতা বাতাস থেকে ক্ষতিকর পদার্থ গ্রহণ করে বাতাস পরিশোধিত করতে সাহায্য করে। পাথরকুচি গাছ দেড় থেকে দুই ফুট লম্বা হয়ে থাকে। যেকোনো তাপমাত্রায় পাথরকুচি গাছ জন্মাতে পারে।

এ গাছ যে কোন পরিবেশ মানিয়ে নিতে পারে। পাথরকুচি গাছের ফুল হয়। গাছের মধ্য বরাবর একটি কাণ্ড বেড়ে ওঠে এবং সেই কাণ্ডে ফুলগুলো ঘন্টার মত ঝুলে থাকে। ফুলের রং গোলাপি বা হালকা লাল রঙের হয়ে থাকে। আশা করি এই বৈশিষ্ট্য গুলো দেখে আপনি সহজেই পাথরকুচি পাতা চিনতে পারবেন।

পাথরকুচি পাতার উপকারিতা

পাথরকুচি পাতার ক্ষতিকর দিকসহ আরো কত কিছুই তো জানলেন। এবার তাহলে পাথরকুচি পাতার উপকারিতা জেনে নেয়া যাক। পাথরকুচি পাতা আমাদের জন্য অনেক উপকারী। প্রাচীনকাল থেকেই এ পাতা ব্যবহার করে আসছে অনেকে। বিভিন্ন ধরনের শারীরিক অসুস্থতার হাত থেকে রক্ষা পেতে এ পাতা ভেষজ ঔষধ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে।

এটি ভেষজ ঔষধ হিসেবে এবং বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা সমাধানের জন্য খুবই জনপ্রিয়। চলুন তাহলে এবার আমরা দেখে নিই পাথরকুচি পাতা গ্রহণের ফলে প্রধান প্রধান কিছু উপকারিতা।

  1. পাথরকুচি পাতা কিডনির স্ট্রোন বা পাথর গলাতে সাহায্য করে এবং পাথরকুচির পাতার রস কিডনিতে নতুন করে পাথর সৃষ্টিতে বাধা প্রদান করে।
  2. পাথরকুচি পাতা পাচন যন্ত্রের জন্য অনেক সহায়ক। এটি গ্যাস্ট্রিক, অম্লতা ও বদহজম দূর করে।
  3. পাথরকুচি পাতা তে থাকা এন্টি ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য শরীরের বিভিন্ন জায়গার প্রদাহ হ্রাস করতে সাহায্য করে।
  4. পাথরকুচি পাতার রস বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিভাইরাস ও এন্টি ব্যাকটেরিয়া জনিত সংক্রমণ রোধ করতে সাহায্য করে।
  5. পাথরকুচি পাতা ত্বকের জন্য অনেক উপকারী।
  6. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ।
  7. বিষক্রিয়া প্রতিরোধ করে।
  8. পেশির টান ও খিচুনি কমাতে সাহায্য করে।
  9. ডায়রিয়া ও ডিসেন্ট্রির জন্য পাথরকুচি পাতা অনেক উপকারী।
  10. পাথরকুচির পাতা বেটে ক্ষতস্থানে ব্যবহার করলে দ্রুত ক্ষত শুকায় এবং জ্বালাপোড়া কমায়।

আরো পড়ুন : রাতে ঘুমানোর আগে কিসমিস খেলে কি হয়

তাহলে আশা করি বুঝতে পেরেছেন পাথরকুচি পাতা গ্রহণের ফলে কি কি উপকারিতা লাভ করা যায়। তবে এই উপকারিতা গুলো গ্রহণ করার জন্য পাথরকুচি ব্যবহারের আগে অবশ্যই উপরে বর্ণিত পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলোর দিকে খেয়াল রাখবেন।

পাথরকুচি পাতা খাবার নিয়ম কিভাবে খেতে হয়

পাথরকুচি পাতা অনেকেই অনেক ভাবি খেয়ে থাকেন। কয়েকটি পদ্ধতি রয়েছে পাথরকুচি পাতা খাওয়ার। প্রতিটা জিনিস খাওয়ার যেমন নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম রয়েছে তেমন এই পাতা খাওয়ারও কিছু নিয়ম বা পদ্ধতি রয়েছে। এই নিয়মগুলো ভালো করে মেনে আপনি নিয়মিত পাথরকুচি পাতা খেতে পারেন। চলুন তাহলে জনপ্রিয় কয়টি পদ্ধতি বা নিয়ম দেখে নিই।

পাথরকুচি-পাতার-ক্ষতিকর-দিক

কাঁচা খাওয়া

পাথরকুচি পাতা সরাসরি কাঁচা খাওয়া যায়। এর জন্য প্রথমে সকাল বেলা ১-২ টি সতেজ পাতা নিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিন। এরপর এটি খালি পেটে চিবিয়ে খেয়ে নিন। ইচ্ছে হলে লবণ দিয়ে চিবিয়ে খেতে পারেন। পাতার স্বাদ একটু টক হয় লবণ দিয়ে খেতে ভালো লাগে।

পাতার রস করে

এর জন্য পাথরকুচি পাতা নিয়ে ভালোভাবে এর থেকে রস বের করে নেন। প্রতিদিন ১ থেকে ২ চামচ রস খেতে পারেন। এতে পেটের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর হবে।

পেস্ট করে

পাথরকুচির পাতা পেস্ট করেও খাওয়া যায়। প্রথমে কয়েকটি পাতা পেস্ট করে দিনে 1 চামচ করে খেতে পারেন। তাছাড়া পাথরকুচি পাতার বেস্ট ক্ষতস্থানে লাগালে অনেক আরাম পাওয়া যায়।

গরম পানি বা চা এর সাথে

পাথরকুচি পাতা পানিতে দিয়ে গরম করে বা চাই এর সাথে যুক্ত করে খেতে পারেন। এতে করে সর্দি গলা ব্যথা দূর হয় এবং শ্বাসযন্ত্র পরিষ্কার থাকে।

জুসের সাথে

আমরা প্রতিনিয়ত অনেক ধরনের জুস করে খাই। এই জুস তৈরি করার সময় তার সাথে একটু পাথরকুচি পাতা যোগ করে জুস বানিয়ে খাওয়া যায়। এটি পেটের জন্য অনেক উপকারী।

তাহলে আশা করছি পাথরকুচি পাতা খাওয়ার বিভিন্ন নিয়ম বা পদ্ধতি সম্পর্কে বুঝতে পেরেছেন। পাথরকুচি পাতা ব্যবহার করার জন্য উপরোক্ত পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করতে পারেন।

পাথরকুচির পাতা কখন খেতে হয়

পাথরকুচির পাতা কখন খেতে হয় এ সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান। আসলে পাথরকুচির পাতা কখন খাবেন তা নির্ভর করে আপনি কি কারনে খাচ্ছেন তার উপর। ইতোমধ্যে আপনাদের সাথে সকাল বেলা খালি পেটে পাথরকুচি পাতা খেলে কি হয় তা আলোচনা করেছি। তাহলে এ বিষয়ে বুঝতে পারছেন সকাল বেলা খালি পেটে খেলে কি উপকারিতা ও অপকারিতা হয়।

আরো পড়ুন : খালি পেটে কাঁচা ছোলা খাওয়ার উপকারিতা

এছাড়াও আপনি পাথরকুচি পাতা খাবার ৩০ মিনিট আগে খেতে পারেন। খাওয়ার আগে পাথরকুচি পাতা খেলে খাবারটি হজম করতে সহজ হয় এবং গ্যাস্ট্রিক দূর করে। পাথরকুচি পাতা খাওয়ার আরেকটি সময় হচ্ছে রাতের বেলা ঘুমাতে যাওয়ার আগে। এ সময় পাথরকুচি পাতা খেলে কিডনির স্ট্রোন বা পাথর গলতে সাহায্য করে।

আবার বিভিন্ন রকম অসুস্থতার ওপর নির্ভর করেও পাথরকুচি পাতা খাওয়া যায়। তবে পাতা যেভাবেই যখনই খান না কেন অবশ্যই তার আগে একবার ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।

চুলের যত্নে পাথরকুচি পাতার ব্যবহার

পাথরকুচি পাতা শুধুমাত্র যে আমাদের শরীরের জন্যই উপকারী তা নয়। এটি আমাদের চুলের জন্য অনেক বেশি উপকারী। অনেকেই চুলের জন্য পাথরকুচি পাতা অনেক আগে থেকে ব্যবহার করে আসছেন। চুলে পাথরকুচি পাতা ব্যবহার করলে অনেক ধরনের উপকারিতা পাওয়া যায়। পাথরকুচি পাতা ব্যবহারে চুলের উপকারিতা গুলো হল:

  • চুল পড়া বন্ধ হয়
  • চুলের খুশকি দূর করে
  • চুলের গোড়া শক্ত ও মজবুত করে তুলে
  • স্কাল্পের শুষ্কতা দূর করে
  • চুলের দ্রুত বৃদ্ধি ঘাটায়
  • চুলকে উজ্জ্বল করে তুলে

চুলে পাথরকুচি পাতা ব্যবহারে এই উপকারিতা গুলো পাওয়া যায়। এখন কথা হচ্ছে চুলে পাথরকুচি পাতা ব্যবহার করবেন কিভাবে তাই না ? চুলে পাথরকুচি পাতা ব্যবহারের কয়েকটি পদ্ধতি রয়েছে। এই পদ্ধতি গুলো অনুসরণ করে আপনি সহজেই তুলে পাথরকুচি পাতা ব্যবহার করতে পারেন। যেমন পাথরকুচি পাতার পেস্ট। এর জন্য আপনাকে কয়েকটি পাথরকুচি পাতা নিতে হবে।

তারপর সেই পাতাগুলো ভালোভাবে ব্লেন্ড করে পেস্ট তৈরি করতে হবে। এই পেস্ট সরাসরি চুলের গোড়ায় ব্যবহার করুন। ৩০ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে পাথরকুচি পাতার রস ও মাথায় ব্যবহার করা যেতে পারে। পাথরকুচির কাঁচা পাতা থেকে রস সংগ্রহ করে সেই রস মাথায় তেল দেওয়ার মতো করে ভালোভাবে দিয়ে মেসেজ করুন।

২০ থেকে ৩০ মিনিট পর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। এছাড়াও পাথরকুচি পাতা তেলে দিয়ে একটু ফুটিয়ে নিয়ে ঠান্ডা করে মাথায় ব্যবহার করতে পারেন। আবার পাথরকুচির রস সংগ্রহ করে কিছু পানির সাথে মিশে চুল ধোয়ার পরে শেষবার ধোয়ার সময় সেই পানি ব্যবহার করতে পারে। খুলে পাথরকুচি পাতা ব্যবহারে এই পদ্ধতি গুলো ট্রাই করতে পারেন।

পাথরকুচি পাতার ব্যবহার

ইতোমধ্যে আপনারা পাথরকুচি পাতা সম্পর্কে অনেক কিছু জেনে ফেলেছেন। পাথরকুচি পাতার উপকারিতা ও ব্যবহার বিধিসহ কত কিছু জানলেন। এইবার আমরা পাথরকুচি পাতা কি কি কারণে ব্যবহার করা হয় তা জানবো। তাহলে চলুন জেনে নেই পাথরকুচি পাতা ব্যবহারের কারণ গুলো।

  • গ্যাস্টিক ও গ্যাসের সমস্যায়
  • প্রদাহ ও ব্যথা কমাতে
  • কিডনির স্টোন বা পাথর গলাতে
  • ক্ষত বা পড়া নিরাময়
  • ত্বক ও চুলের যত্নে
  • মাথা ব্যথা কমাতে
  • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে
  • ডায়রিয়া এবং ডিসেন্ট্রি রোধে
  • শ্বাসযন্ত্রের সমস্যায়
  • বিষক্রিয়া নিরাময়ে ইত্যাদি

তাহলে বুঝতে পারছেন পাথরকুচি পাতা কি কি সমস্যায় বা কাজের জন্য ব্যবহার করা হয়। আপনি যদি এই সমস্যাগুলো সম্মুখীন হয়ে থাকেন তাহলে উপরে বন্ত নিয়ম অনুযায়ী পাথরকুচির পাতা ব্যবহার করে এসব সমস্যার সমাধান করতে পারেন।

যেসব রোগের মহা ঔষধ পাথরকুচি

অনেক রোগ রয়েছে যেগুলো রোগ প্রতিরোধ করার জন্য পাথরকুচি পাতা ব্যবহার করা হয়। এই রোগ গুলোর জন্য মহা ঔষধ হিসেবে পাথরকুচির পাতা অনেক বেশি কার্যকরী। প্রাচীনকাল থেকেই পাথরকুচি পাতা কার্যকরী এবং প্রাকৃতিক ভেষজ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। পাথরকুচি পাতা কি কি রোগের মহা ঔষধ তা নিচে উল্লেখ করা হলো।

  • উচ্চ রক্তচাপ
  • গ্যাস ও অম্লতা
  • ডায়রিয়া ডিসেন্ট্রি
  • খুশকি ও চুল পড়া
  • কিডনির স্ট্রোন
  • শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা
  • মাথাব্যথা
  • বিষক্রিয়া নিরাময় ইত্যাদি

উপরোক্ত এই রোগ গুলো প্রতিরোধ করতে পাথরকুচি পাতা ব্যবহার করা হয়। আশা করি এ বিষয়ে পরিষ্কার একটি ধারনা পেয়েছেন।

পাথরকুচি পাতার ও গাছের ছবি

পাথরকুচি পাতা বা গাছ অনেকেই চিনেন না। তাই অনলাইনে সার্চ করে থাকেন। ইতিমধ্যে আপনাদের সাথে পাথরকুচি পাতার বৈশিষ্ট্য নিয়ে উপরে আলোচনা করেছি। এরপরেও যাতে আপনাদের চিনতে সুবিধা হয় সেজন্য নিচে ছবি যোগ করলাম। ছবিটি দেখে খুব সহজেই পাথরকুচি গাছ ও পাতা চিনতে পারবেন আশা করি।

পাথরকুচি-পাতার-ক্ষতিকর-দিক

উপরে যে ছবিটি দেখতে পাচ্ছেন এটি একটি পাথরকুচি গাছ। দেখতেই পাচ্ছেন গাছটি খুব বেশি বড় না। অনেক সুন্দর সুন্দর গাঢ় সবুজ পাতা বিশিষ্ট গাছটি অনেক সুন্দর। অনেকে এই গাছের সৌন্দর্যের জন্যও বাড়ির আশেপাশে লাগিয়ে থাকে। দেখতে ভালই লাগে।

পাথরকুচি পাতা কোথায় পাওয়া যায়

পাথরকুচি পাতা অনেক জায়গায় চাষ করে থাকে। আগে আমাদের বাড়ির আশেপাশে বা যেখানে সেখানে পাথরকুচি গাছ একা একাই জন্মাতো। এই গাছ বড় হতে তেমন কোনো আলাদা পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। আপনি যদি পাথরকুচি পাতা পেতে চান তাহলে যেকোনো আয়ুর্বেদিক ডাক্তার বা ভেষজ ওষুধের দোকানদারের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

এছাড়াও বিভিন্ন চারার নার্সারি বা অনলাইনের যে নার্সারি গুলো থাকে সেখানকার লোকদের সাথে যোগাযোগ করে দেখতে পারেন। আপনি যদি কোন ভাবে একটু পাতা সংগ্রহ করতে পারেন তাহলে সেখান থেকেই খুব সহজে আপনি গাছ করে নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারেন।

পাথরকুচির চারা তৈরি কিভাবে করে

পাথরকুচির চারা তৈরি করা একেবারে সহজ একটি কাজ। পাথরকুচির গাছের বিভিন্ন অংশ থেকে চারা তৈরি করা যায় যেমন পাতা, কাণ্ড ও শিকড়। চারা তৈরি করা সবচাইতে সহজ জিনিসটি হচ্ছে পাতা। পাতার মাধ্যমে খুব সহজেই অল্প সময়ের মধ্যে অনেকগুলো চারা তৈরি করা সম্ভব। এর জন্য প্রথমে আপনাকে একটি পাথরকুচির সতেজ পাতা নিতে হবে।

সেই পাতাটি মাটির উপরে শুধুমাত্র উপুড় করে রেখে অল্প একটু পানি ছিটিয়ে দিতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেই মাটির উপরে রাখছেন সেই মাটি যাতে স্যাঁতস্যেতে হয়। মাটি থেকে যাতে পাতাটি রস গ্রহণ করতে পারে। এরপর পাতার ওপর অল্প কিছু ঝুরঝুরে  মাটি ছিটিয়ে দিতে পারেন তবে না দিলেও চলবে। এভাবেই কিছুদিন রেখে দিন।

খেয়াল রাখবেন পাতাটির আশপাশ যাতে শুকিয়ে না যায়। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই দেখবেন পাতার কিনারা দিয়ে পাতার যে খাঁজ খাঁজ অংশ থাকে সেই দিক দিয়ে পাথরকুচির চারা বের হয়েছে। আস্তে আস্তে এই গাছগুলো বড় হয়ে যাবে। পাথরকুচির গাছ বড় করতে তেমন আলাদা কোন পরিচর্যার দরকার হয় না। এর চারা তৈরি করা খুবই সহজ একটি কাজ।

শেষ কথা - পাথরকুচি পাতার ক্ষতিকর দিক ও উপকারিতা

প্রিয় পাঠক, এতক্ষণ আপনি পাথরকুচি পাতার ক্ষতিকর দিক ও খালি পেটে পাথরকুচি পাতা খেলে কি হয় এ সকল প্রশ্ন সহ পাথরকুচি পাতা সম্পর্কে বিস্তারিত আশা করি আরো অনেক কিছু জেনেছেন এবং বুঝতে পেরেছেন। পাথরকুচি পাতা সত্যি অনেক উপকারী একটি প্রাকৃতিক ভেষজ গুণ সম্পন্ন একটি উদ্ভিদ। এটি নিয়মিত নিয়ম মেনে ব্যবহার করলে অনেক উপকারিতা পাওয়া যায় যা দেখলেন।

তবে পাথরকুচি পাতা ব্যবহারের সম্ভাব্য কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে যেগুলো ব্যবহারের আগে অবশ্যই মনে রাখা দরকার। ওপরে বর্ণিত উপকারিতা গুলো দেখার পর যদি পাথরকুচি পাতা ব্যবহার করতে চান তাহলে বর্ণিত নিয়ম কানুন অনুযায়ী অবশ্যই ব্যবহার করবেন। আজকে এখানেই শেষ করছি। আল্লাহ হাফেজ 😍

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url