থানকুনি পাতার ১৮টি উপকারিতা ও অপকারিতা - থানকুনি পাতার ব্যবহার

থানকুনি পাতার উপকারিতা বহুমুখী। এটি একটি প্রাকৃতিক কার্যকরী ভেষজ ঔষধ। প্রাচীনকাল থেকেই থানকুনির পাতা কার্যকরী ভেষজ ঔষধ হিসেবে বিভিন্নভাবে ব্যবহার হচ্ছে। খুবই পরিচিত এই উদ্ভিদটি অনেক বেশি কার্যকর এবং ঔষধি গুনসম্পন্ন।

থানকুনি পাতার উপকারিতা

আজকে আপনাদের সাথে থানকুনি পাতার উপকারিতা অপকারিতা ও পাতার ব্যবহার সহ থানকুনি পাতা সম্পর্কে বিস্তারিত খুঁটিনাটি সবকিছু পরিষ্কারভাবে আলোচনা করব। থানকুনি পাতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।

সূচিপত্র - থানকুনি পাতার উপকারিতা অপকারিতা ও পাতার ব্যবহার

থানকুনি পাতাতে থাকা ঔষধি পুষ্টি উপাদান সমূহ

থানকুনি আমাদের খুবই পরিচিত এবং কার্যকরী ঔষধি গুন সম্পন্ন একটি উদ্ভিদ। এটি লতা জাতীয় ছোট একটি গাছ যার গোল গোল পাতা হয়। ছোট এই গাছটিতে রয়েছে নানা ওষুধি গুণ। সেসব ঔষধি উপাদান গুলো দেখলে সত্যিই অবাক হয়ে যাবেন। যে উপাদান গুলো আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। চলুন তাহলে ওষুধি গুণগুলো এক নজরে দেখে নিই।

  • ভিটামিন
  • খনিজ
  • ফটোকেমিক্যাল
  • ট্রাইটারপেনয়েডস
  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
  • অ্যালকালয়েড ও গ্লাইকোসাইডস 
  • অ্যামিনো এসিড ইত্যাদি

এছাড়াও আরো কিছু উপাদান থাকে। ভিটামিন এবং খনিজের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও বিভিন্ন ধরনের খনিজ থাকে। তাহলে বুঝতে পারছেন ছোট এই উদ্ভিদে কত গুণাগুণ। চলুন এবার তাহলে থানকুনি পাতার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।

থানকুনি পাতার উপকারিতা

থানকুনি পাতার উপকারিতা জানার আগে এর পুষ্টিগুণ সম্বন্ধে একটু ধারণা পেয়েছেন। ছোট্ট এই উদ্ভিদটিতে কত ধরনের ঔষধি গুনাগুন। তাহলে বুঝতে পারছেন এর উপকারিতা টাও কোন লেভেলের। থানকুনি গাছ আমাদের দেশে প্রায় সব জায়গায় হয়ে থাকে। বিশেষ করে আদ্র স্থানে গ্রামের যেকোনো জায়গায় দেখা যায়। আমরা এখন থানকুনি পাতার উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করব।

  1. হজম শক্তি বৃদ্ধি করে এবং গ্যাস জনিত সমস্যা দূর করে
  2. ক্ষত ও আলসার নিরাময় সাহায্য করে
  3. স্মৃতিশক্তি ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়
  4. রক্ত পরিশোধন ও ত্বকের জন্য অনেক উপকারী
  5. ইমিউনিটি বুস্টার হিসেবে কাজ করে
  6. বিষন্নতা ও উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে
  7. অ্যাজমা ও শ্বাসকষ্টের জন্য অনেক সহায়ক
  8. লিভারের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কাজ করে
  9. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
  10. শরীরের আদ্রতা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়ক
  11. মুখের ঘা ও অন্যান্য ক্ষতের জন্য উপকারী
  12. কাশির জন্য সাময়িকভাবে কাজ করে
  13. গলা ব্যথা নিরাময় করতে সহায়ক
  14. ভিটামিন সি থাকায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
  15. আমাশয় ওষুধের জন্য সহায়ক
  16. মুখের ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে

এক নজরে দেখতেই পাচ্ছেন কত রকমের উপকারিতা। এই উপকারিতা গুলো যদি পেতে চান তাহলে নিয়মিত সঠিক নিয়মে থানকুনিয়ের পাতা খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন। নিচে থানকুনির পাতা খাওয়ার উপকারিতা ও নিয়ম সহ আরো অনেক কিছু আলোচনা করব। তাই পড়তে থাকুন।

থানকুনি পাতার অপকারিতা বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

থানকুনি পাতার উপকারিতা জানলেন এবার থানকুনি পাতার অপকারিতা বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নিয়ে আপনাদের সাথে কথা বলবো। সব জিনিসেরই উপকারিতা থাকার পাশাপাশি কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকে। আমরা এ পার্শ্বপ্রতিকরা গুলো সম্মুখীন তখনই হয়ে যখন আমরা নিয়ম না মেনে বা অতিরিক্ত পরিমাণে ব্যবহার করে থাকে। থানকুনির পাতা খাওয়ার সম্ভাব্য পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলো নিচে দেয়া হলো।

থানকুনি পাতার অপকারিতা

  1. অতিরিক্ত থানকুনি পাতা খাওয়ার ফলে লিভার ও কিডনি সমস্যা হতে পারে।
  2. এটি সেবনের ফলে কিছু কিছু মানুষের এলার্জিজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  3. অতিমাত্রায় খাওয়ার ফলে নায়ত অঞ্চলের উপর অতিরিক্ত উদ্দীপনা সৃষ্টি করতে পারে।
  4. উচ্চমাত্রায় থানকুনির পাতা সেবনের ফলে হজমের সমস্যা হতে পারে।
  5. থানকুনির পাতা রক্ত পাতলা করার ক্ষমতা রাখে। তাই যারা রক্ত পাতলা করার ওষুধ খাচ্ছেন তাদের এই বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত।
  6. গর্ভ অবস্থায় থানকুনির পাতা খাওয়া থেকে সতর্ক থাকা উচিত।
  7. রক্তে শর্করার মাত্রা অতিরিক্ত কমিয়ে ফেলতে পারে।
  8. অন্য কোন ওষুধ গ্রহণ করে থাকলে সাথে প্রতিক্রিয়া করতে পারে।

তাহলে বুঝতে পারলেন থানকুনি পাতা খাওয়ার কি কি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে। উপরে খেয়াল করলে দেখবেন যে সম্ভাব্য এই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলো তখনই হতে পারে যখন তা আমরা অতিরিক্ত পরিমাণে সেবন করব। নিয়ম অনুযায়ী এবং সঠিক মাত্রায় সেবন করে আশা করি এসব পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থেকে দূরে থাকবেন।

থানকুনি পাতা ব্যবহারের বিভিন্ন পদ্ধতি

থানকুনির এত উপকারিতা দেখার পরে আপনি নিশ্চয়ই এটি খাওয়ার কথা চিন্তা করতে পারেন। এখন প্রশ্ন আসতে পারে থানকুনি পাতা কিভাবে খাওয়া যায়। থানকুনি পাতা খাওয়ার বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। অনেকে অনেক পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকেন। থানকুনি পাতা ব্যবহারের বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য পদ্ধতির নিচে আলোচনা করা হলো।

থানকুনি রস

প্রথমে কিছু তাজা থানকুনির পাতা নিয়ে নিন। এরপর সেগুলো ভালোভাবে পানি দিয়ে পরিষ্কার করে নিন। পাতাগুলো ব্লেন্ডারে করে ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিতে পারেন অথবা একটি পাত্রে  নিয়ে হাত দিয়ে ভালোভাবে মসলিয়েও এর রস বের করা যেতে পারে। প্রয়োজন হলে পরিষ্কার কাপড় বা ছাকনি দিয়ে রসগুলো ভালোভাবে ছেঁকে নিন।

এরপর রস সংগ্রহ করে সেই রসের সাথে কিছু পানি, সামান্য লেবুর রস এবং মধু মিশিয়ে খেয়ে নিতে পারেন।

সালাদ হিসেবে

এর জন্য প্রথমেই আপনাকে থানকুনির তাজা সতেজ কিছু পাতা নিতে হবে। এরপর এগুলো ছোট ছোট টুকরো করে কেটে অন্য কোন সবজি, পেঁয়াজ লেবুর রস এবং আপনার ইচ্ছেমতো আরো কিছু যোগ করে সালাত বানিয়ে খেতে পারেন।

থানকুনি পাতার চা

প্রথমে কিছু থানকুনির পাতা নিয়ে একটি পাত্রতে পানি দিয়ে সে পানিতে থানকুনি পাতা ভালোভাবে সিদ্ধ করে নিন। এরপর সেই পানি ছেকে নিয়ে গরম গরম পান করুন। ইচ্ছে হলে এর সাথে লেবুর রস বা মধু মিশিয়ে নিতে পারেন।

থানকুনি পাতার পেস্ট

পর্যাপ্ত পরিমাণে থানকুনি পাতা নিয়ে সেটি ভালোভাবে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে অথবা অন্য কোন ভাবে বেটে ত্বকে বা ক্ষতস্থানে ব্যবহার করতে পারেন। এটি ব্রণ এবং ক্ষত স্থানের জন্য অনেক বেশি উপকারী।

থানকুনি পাতার তেল

থানকুনি পাতার তেল বানানোর জন্য প্রথমে আপনাকে থানকুনির পাতাগুলো ভালোভাবে শুকিয়ে নিতে হবে। শুকনো পাতাগুলো ভালোভাবে গুড়ো করে তেলের সাথে মিশিয়ে ত্বকে বা মাথায় ব্যবহার করতে হবে। এটি ত্বককে টানটান করে এবং চুল পড়া রোধ করে।

খাবারের সাথে

থানকুনির পাতা ছোট ছোট করে কেটে নিয়ে কোন তরকারি, স্যুপ বা ডালের সাথে খাওয়া যায়। এর ফলে তরকারির স্বাদ বাড়ে এবং পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি পায়।

ক্যাপসুল বা পাউডার আকারে

বর্তমানে বাজারে থানকুনির পাতার ক্যাপসুল বা পাউডার ও পাওয়া যায়। এর জন্য আপনি ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ক্যাপসুল বা পাউডার একটি নির্দিষ্ট ডোজে ব্যবহার করতে পারেন।

আরো পড়ুন : খালি পেটে কাঁচা ছোলা খাওয়ার উপকারিতা

অনেকে অনেক পদ্ধতি ব্যবহার করে। এর মধ্যে আপনার ইচ্ছামত আপনি যেভাবে খুশি ব্যবহার করতে পারেন। এটি অনেক বেশি উপকারী এবং শরীরের জন্য অনেক সহায়ক। তাই উপকারিতা গুলো গ্রহণ করতে চাইলে নিয়মিত থানকুনি পাতা ব্যবহার করতে পারেন।

থানকুনি পাতা কিভাবে খেতে হয় পাতা খাওয়ার নিয়ম

থানকুনি পাতা খাওয়ার বিভিন্ন পদ্ধতি ইতোমধ্যে আপনাদের সাথে উপরে আলোচনা করেছি। সব জিনিস খাওয়ারই একটা নির্দিষ্ট নিয়ম থাকে। কোন জিনিসের উপকারিতা ভালোভাবে পেতে হলে অবশ্যই তা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানা দরকার। থানকুনি পাতা খাওয়ার কিছু উল্লেখযোগ্য নিয়ম আছে। থানকুনি পাতার আপনি খালি পেটে রস খেতে পারেন।

সকাল বেলা খালি পেটে থানকুনি পাতার রস বা জুস বানিয়ে খেতে পারেন। পাতার রসের সাথে মধু এবং লেবুর রস মিশাতে পারেন। প্রতিদিন আপনি ১ থেকে ২ চামচ পাতার রস অথবা দুই থেকে তিন চামচ পাতার জুস খেতে পারেন। অতিরিক্ত খাওয়া থেকে অবশ্যই বিরত থাকবেন। এছাড়াও থানকুনি পাতার  চা, সালাদ করেও খেতে পারেন।

ওপরে বর্ণিত পদ্ধতি গুলো মেনে শুধুমাত্র সকালে অথবা রাতে খাবেন। তবে একটা বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখবেন যেন অতিরিক্ত খাওয়া না হয়। দিনে ১ থেকে ২ চামচ খাওয়া যথেষ্ট হবে। অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে দেখা যাবে উপকারিতার জায়গায় ক্ষতি সম্মুখীন হতে পারেন।

গর্ভাবস্থায় থানকুনি পাতার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় থানকুনি পাতার উপকারিতা জানার অনেকে আগ্রহ প্রকাশ করেন। কিন্তু একটা বিষয় গর্ভ অবস্থায় থানকুনি পাতা সেবনে সতর্কতা অবলম্বন করা হয়। কারণ এটি গর্ভ অবস্থায় জরায়ুর সংকোচন করতে সহায়ক। তাই এটি গর্ভাবস্থায় সেবনের ফলে উপকারের তুলনায় ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি থাকে। অনেকে যেহেতু এ বিষয়ে জানতে চান শুধুমাত্র সেজন্যই বলা।

গর্ভাবস্থায়ী থানকুনি পাতা সেবনের ফলে সম্ভাব্য সামান্য কিছু উপকারিতা হতে পারে। কিন্তু এ সামান্য উপকারিতা গ্রহণ করতে গিয়ে বড় ক্ষতিও হতে পারে। তাই এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষ করে এ সময়ে ভেষজ ঔষধ সমূহ নিয়ে বিশেষভাবে সতর্ক থাকা উচিত এবং ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত। গর্ভাবস্থায় থানকুনি পাতা গ্রহণের ফলে সম্ভাব্য কিছু উপকারিতা দেখা যায়।

গর্ভাবস্থায় থানকুনি পাতা গ্রহণের ফলে ইমিউনিটি সিস্টেম শক্তিশালী হয়, ত্বকের জন্য অনেক উপকারী, হজম শক্তি উন্নত করে, রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে পেটের সমস্যা কমায় ইত্যাদি। এই উপকারিতা গুলো পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

গর্ভাবস্থায় থানকুনি পাতার অপকারিতা বা সর্তকতা

ওপরে গর্ভাবস্থায় থানকুনি পাতার উপকারিতা দেখে বুঝতেই পারলেন এর উপকারের চাইতে ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই গর্ভ অবস্থায় থানকুনি পাতা এড়িয়ে চলা উচিত। থানকুনি পাতায় এমন কিছু সক্রিয় উপাদান রয়েছে যা গর্ভের শিশুর ক্ষতি করে এবং জরায়ু সংকোচনের সম্ভাবনা থাকে এমনকি গর্ভপাতের সম্ভাবনা পর্যন্ত থাকতে পারে।

আরো পড়ুন : তোকমা দানার উপকারিতা - ইসুবগুলের ভুষি ও তোকমা খাওয়ার নিয়ম

এছাড়াও গর্ভকালীন সময়ে থানকুনি পাতা খাওয়ার ফলে হরমনের ভারসাম্যহীনতা, রক্ত পাতলা করা, লিভার ও কিডনির ওপর প্রভাব ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে তাই এভাবে বিষয়ে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। তাই গর্ভকালীন সময়ে থানকুনির পাতা এলিয়ে তার পরিবর্তে অন্যান্য পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে পারেন।

যৌবন ধরে রাখতে থানকুনি পাতার উপকারিতা ও ব্যবহার

থানকুনি পাতাতে থাকা সক্রিয় কিছু উপাদান রয়েছে যা আমাদের সুস্থ সবল রাখতে অনেক বেশি সহায়ক। যৌবন ধরে রাখতে থানকুনি পাতা অনেক বেশি উপকারী। থানকুনি পাতাতে থাকা ভিটামিন, খনিজ পদার্থ ও এন্টি অক্সিডেন্ট ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করে এবং শরীরে বার্ধক্যের ছাপ দূর করে। চলুন তাহলে এক নজরে দেখে নেই যৌবন ধরে রাখতে থানকুনি পাতার উপকারিতা গুলো।

  1. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যা ত্বকের জন্য অনেক উপকারী
  2. থানকুনি রসে থাকা ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে এবং ত্বককে সতেজ রাখতে সাহায্য করে।
  3. থানকুনির পাতাতে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি থাকে যা শরীরের বিভিন্ন জায়গার প্রদাহ, ব্রণ, ক্ষত ইত্যাদি নিরাময়ে সাহায্য করে।
  4. এ পাতা রক্ত পরিশোধনের জন্য সহায়ক যা ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
  5. নিয়মিত থানকুনি পাতার রস খাওয়ার ফলে চেহারা থেকে বার্ধক্যের ছাপ দূর হয়।
  6. ত্বকের শুষ্কতা দূর করে এবং ত্বকের আদ্রতা বজায় রাখে। ত্বককে কোমল ও নরম করে। 
  7. শরীরে কোন ক্ষতের সৃষ্টি হলে বা দাগ থাকলে থানকুনির পাতা সেবনের ফলে তা নিরাময় হয়।
  8. স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির জন্য থানকুনি পাতার রস খুবই কার্যকর এবং ভেষজ গুণ সম্পন্ন একটি ওষুধ।

তাহলে বুঝতেই পারছেন যৌবন ধরে রাখতে থানকুনি পাতা কতটা উপকারী। এই উপকারিতা গুলো পাওয়ার জন্য উপরে থানকুনি পাতা ব্যবহারের যেই বিভিন্ন পদ্ধতি গুলো উল্লেখ করা আছে সে অনুযায়ী আপনি ব্যবহার করতে পারেন। এতে আশা করা যায় অনেক লাভবান হবেন। তবে অতিরিক্ত ব্যবহার করা থেকে অবশ্যই বিরত থাকবেন।

চুলের জন্য থানকুনি পাতার উপকারিতা

চুলের জন্য থানকুনি পাতা একটি কার্যকরী প্রাকৃতিক ও ভেষজ গুণসম্পন্ন ঔষধ। এতে থাকা বিভিন্ন ভিটামিন, মিনারেল, খনিজ ও আন্টি অক্সিডেন্ট চুলের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক বেশি উপকারী। থানকুনির পাতা চুলের গোড়া শক্ত করে চুলকে সুন্দর ও আকর্ষণীয় করে তুলে। এছাড়াও থানকুনি পাতার ব্যবহারে চুলের বিশেষ বিশেষ কিছু উপকারিতা নিচে উল্লেখ করা হলো।

  • থানকুনি পাতায় অ্যামিনো এসিড থাকে যা চুলের গোড়ায় রক্ত সরবরাহ করতে সাহায্য করে ফলে চুল দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং লম্বা হয়।
  • থানকুনি পাতায় থাকা বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান চুলের গোড়া মজবুত করে।
  • চুল পড়া রোধ করে
  • চুলের আগা ফাটা ও শুষ্কতা দূর করে
  • মাথার স্কালের ব্যথা নিরাময় করে
  • মাথার খুশকি দূর করে
  • চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে ও আকর্ষণীয় করে তুলে

এর জন্য আপনি থানকুনি পাতা পেস্ট করে ব্যবহার করতে পারেন। চুলের জন্য থানকুনি পাতা বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা যায়। থানকুনি পাতার জুস, হিয়ার মাক্স, থানকুনি পাতার তেল বা শ্যাম্পুর সাথেও ব্যবহার করতে পারেন।

পেটের সমস্যায় থানকুনি পাতার উপকারিতা

থানকুনি পাতার এতক্ষণে অনেক উপকারিতা দেখলেন। পেটের সমস্যা দূর করার জন্যও কিন্তু থানকুনির পাতা বা থানকুনির পাতার রস অনেক বেশি উপকারী। পেটের বিভিন্ন সমস্যা দূর করার জন্য থানকুনি পাতা প্রাচীনকাল থেকেই ব্যবহার হয়ে আসছে। থানকুনির পাতা খাওয়ার ফলে কি কি উপকারিতা পাওয়া যায় তা এবার নিচে আলোচনা করব।

  • থানকুনি পাতা খাওয়ার ফলে গ্যাস্ট্রিক জনিত সমস্যা দূর হয়
  • নিয়মিত থানকুনি পাতা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যর হাত থেকে দূরে থাকা যায়
  • এছাড়াও পেট ব্যথা, পেট ফাঁপা ও ডায়রিয়া ভালো হয়
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
  • হজম শক্তি বৃদ্ধি করে 

তাই পেটে যদি কোন ধরনের সমস্যা হয় তাহলে থানকুনির রস খেয়ে দেখতে পারেন। তবে আগে থেকেই এলার্জিজনিত কোন সমস্যা থাকলে বা অন্য কোন সমস্যা থাকলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করবেন।

থানকুনি পাতা চেনার উপায়

থানকুনির পাতা অনেকেই চিনেন না। থানকুনির পাতা গ্রামে যেখানে সেখানে শুষ্ক স্থানে জন্মে থাকে। পাতা গাড় সবুজ রঙের হয়ে থাকে। আকৃতি গোল এবং বোটার কাছে একটু কাটা যা দেখতে লাভ আকৃতি বা হৃদপিন্ডের মতো। এটি ছোট এবং লতালো একটি উদ্ভিদ।। এ গাছের কান্ডগুলো লতার মত মাটিতে বেয়ে বেয়ে চলে। প্রতিটি গিট থেকে দুইটি করে পাতা বের হয়।

আরো পড়ুন : চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা - চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম

পাতা দেখতে একটু কুচকানো হলেও হাত দিলে মসৃন। পাতা ছিড়ে যদি হাতে ঘষা দেওয়া হয় তাহলে একটি ঝাঁজালো ঘাসের মতো গন্ধ বের হয়। এটি অন্যান্য গাছের মতো উপরের দিকে বেড়ে ওঠে না। এর কান্ডগুলো মাটির উপরে বেয়ে বেয়ে চলে আর পাতাগুলো কাণ্ডের উপর দাঁড়িয়ে থাকে। পাতাগুলো বেশি বড় হয় না ১ থেকে ২ ইঞ্চি পর্যন্ত হতে পারে।

থানকুনি পাতা খেলে ফর্সা হয়

থানকুনি পাতা খেলে ফর্সা হয় কিনা এ বিষয়টি অনেকে অনেক জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেন। এখন আপনাদের এই সম্পর্কে বলবো। আসলে থানকুনি পাতা সরাসরি ত্বক ফর্সা করতে সক্ষম না। তবে এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। কারণ এতে যেই কার্যকরী পুষ্টি উপাদান গুলো রয়েছে তা ত্বকের জন্য অনেক বেশি উপকারী।

যেমন থানকুনি পাতাতে ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা ত্বককে সুস্থ ও সরলর রাখতে অনেক সহায়ক। এছাড়াও নিয়মিত থানকুনি পাতা ব্যবহারে ত্বকের আদ্রতা ঠিক থাকে এবং ত্বক ফেটে যাওয়ার রোধ করে। ত্বক ফর্সা হওয়া সম্পূর্ণই জিনগত বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করে। তাই সরাসরি বলা যাবে না যে থানকুনি পাতা ব্যবহারে ফর্সা হওয়া সম্ভব।

এতে থাকা পুষ্টিগুণের কারণে আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পেতে পারে এই আর কি। অনেকেই এ বিষয়ে জানার চেষ্টা করেন। আশা করি বিষয়টি পরিষ্কারভাবে বুঝতে পেরেছেন।

থানকুনি পাতা মুখে দিলে কি হয়

থানকুনি পাতা মুখে দেওয়ার বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে। একটু আগে আপনাদের সাথে আলোচনা করলাম থানকুনি পাতা খেলে ফর্সা হওয়া যায় কিনা। থানকুনি পাতা খাওয়ার ফলে ফর্সা হওয়া না গেলেও এটি আমাদের ত্বকের জন্য অনেক উপকারী। তাহলে বুঝতে পারছেন যদি থানকুনি পাতা মুখে দিই  তাহলে কিছুটা হলেও উপকারিতা পাওয়া যাবে।

থানকুনি পাতা মুখে দিলে মুখের ত্বকের জন্য অনেক উপকারী হয়। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়, ত্বকের ফুসকুড়ি এবং ব্রণ কমায়, ত্বকের প্রদাহ কমায়, ত্বকে কোন ধরনের ক্ষত বা কাটার দাগ থাকলে তা নিরাময় করে ইত্যাদি। তাহলে বুঝতে পারলেন থানকুনি পাতা মুখে দিলে কি হয়। তাই থানকুনি পাতার ফেসপ্যাক বা পেস্ট তৈরি করে মুখে ব্যবহার করতে পারে।

থানকুনি পাতা চিবিয়ে খেলে কি হয়

থানকুনির পাতা চিবিয়েও খাওয়া যায়। চিবিয়ে খাওয়ার ফলেও রয়েছে অনেক উপকারিতা। তবে অনেকেই থানকুনি পাতা চিবিয়ে খেতে পারে না। থানকুনি পাতার আলাদা একটি ঝাঁজ ও স্বাদ রয়েছে। অনেকের কাছে এটি পছন্দের হয় না। অনেকে আবার চিবিয়ে খেতেও পারেন। তাই অনেকে জানতে চান থানকুনি পাতা চিবিয়ে খেলে কি হয়।

থানকুনি পাতা চিবিয়ে খেলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং এটি আমাদের শরীর থেকে ক্ষতিকর পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে। এছাড়াও নিয়মিত থানকুনি পাতা চিবিয়ে খাবার ফলে পেটের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর করে এবং শরীরের সার্বিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। তাহলে বুঝতে পারলেন থানকুনি পাতা চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা।

তবে অনেকেই এ পাতা চিবিয়ে খাওয়া পছন্দ করেন না তাই উপরে বর্ণিত বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্যে আপনার ইচ্ছামত যেকোন একভাবে খেতে পারেন এতে করে অনেক লাভবান হতে পারবেন।

থানকুনি পাতা কোথায় পাওয়া যায়

থানকুনি পাতা বিশেষ করে গ্রামের বাড়ির আশেপাশেই যেখানে সেখানে হয়ে থাকে। এ গাছ আদ্র জায়গায় বেশি জন্মায়। বিভিন্ন সবজি গাছের গোড়ায়, পুকুরের পাড়, নদীর পাড় ইত্যাদি আর্দ্র জায়গাগুলোতে এগুলো কোনরকম পরিচর্যা ছাড়াই বেড়ে ওঠে। এর কোন আলাদা পরিচর্যা বা যত্নের প্রয়োজন হয় না। এক জায়গায় জন্মালে সেখানে একা একাই বেড়ে ওঠে।

আরো পড়ুন : পুরুষদের জন্য অ্যালোভেরার ১০ টি উপকারিতা

এছাড়াও থানকুনি পাতা বাজারেও অনেক সময় বিক্রি হয়। ভেষজ ঔষধের দোকানেও থানকুনি পাতা পাওয়া যায়। তাছাড়া বর্তমানে অনলাইনের অনেক মার্কেট প্লেসেও থানকুনি পাতা মিলে। থানকুনি উদ্ভিদ সারা বছরই হয়ে থাকে তবে বর্ষাকালে এটি বেশি দেখা যায়। যদি নিজ থেকে থানকুনি পাতা পেতে চান তাহলে বাড়ির আশেপাশেই আদ্র ছায়াযুক্ত পরিষ্কার জায়গায় খোঁজ করুন।

থানকুনি পাতা চাষ পদ্ধতি

এত কিছুর পরে আপনার নিশ্চয়ই থানকুনি পাতা চাষ করার ইচ্ছা জাগতে পারে। এটি সেইভাবে বড় আকারে অধিক যত্নে চাষ করার কোন কিছু নেই। আপনি যেখানে সেখানে শুধুমাত্র এর কান্ড পুঁতে দিয়ে রাখবেন দেখবেন যে হয়ে গেছে। গ্রামের যে কোন বাড়ির আশেপাশে এটি চাষ করা খুবই সহজ। এটা ছাড়া কেউ যদি শহরের বাড়ির ছাদে চাষ করতে চাই সেটাও পারবে।

এর জন্য শুধুমাত্র একটি টবে মাটি নিয়ে সেই মাটির উপর থানকুনি গাছের লতালো কান্ডটি লাগাতে হবে। মাটির উপরে লাগিয়ে রাখলে কয়েকদিন পরই গাছের পাতা বের হবে। এই লাতালো কান্ডের প্রতিটি গেট থেকে শিকড় বের হয়। তাই এ গাছ মরে যাওয়া সম্ভাবনা ও খুব কম। তাই যেমন তেমন করে যদি লাগিয়ে রাখেন তাহলেই হবে। অধিক কোন পরিচর্যা বা যত্নের দরকার হয় না।

শেষ কথা - থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা ও ব্যবহার

প্রিয় পাঠক, এতক্ষণে আপনারা থানকুনি পাতার উপকারিতা, অপকারিতা থানকুনি পাতার ব্যবহার সহ এ সম্পর্কে বিস্তারিত আরো অনেক কিছু জানলেন। থানকুনি পাতা আসলে একটি প্রাকৃতিক কার্যকরী ভেষজ ঔষধ। এটি আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। তাই আলোচনা করা অপকারিতা গুলো যদি পেতে চান তাহলে উপরে বর্ণিত নিয়ম অনুযায়ী পাতা ব্যবহার করতে পারেন।

তবে আলোচনা করা অপকারিতা বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার দিকে লক্ষ্য রাখবেন। অবশ্যই অতিরিক্ত ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকবেন। সঠিক নিয়ম ও মাত্রা অনুযায়ী যদি ব্যবহার করতে পারেন আশা করি অনেক লাভবান হবেন। আজকে এখানেই শেষ করছি। আল্লাহ হাফেজ😍

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url