পালং শাকে কি এলার্জি আছে, পালং শাকের উপকারিতা অপকারিতা
পালং শাকে কি এলার্জি আছে ? জানতে চান অনেকে। পালং শাক আমাদের কাছে খুবই পরিচিত। তবুও পালং শাকের উপকারিতা অপকারিতা সম্পর্কে আমাদের ধারণা খুবই কম। তাই আজকের এই কনটেন্টে পালং শাক নিয়েই বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
তাই আপনার মনের মধ্যে পালং শাক নিয়ে যত ধরনের প্রশ্ন আছে সবকিছুর উত্তর পেতে
চাইলে কনটেন্টটি একবার করে ফেলুন। তাহলে আশা করা যায় আপনি এ বিষয়ে পরিষ্কারভাবে
সবকিছু বুঝতে পারবেন।
সূচিপত্র - পালং শাকে কি এলার্জি আছে ও পালং শাকের উপকারিতা
- পালং শাকে কি এলার্জি আছে
- পালং শাকের উপকারিতা
- পালং শাকের ক্ষতিকর দিক বা অপকারিতা
- পালং শাকে কি কি ভিটামিন থাকে
- পালং শাক খাওয়ার নিয়ম
- পালং শাক কেন খাওয়া উচিত
- পালং শাক কাদের খাওয়া উচিত নয়
- পালং শাক খেলে কি গ্যাস হয়
- পালং শাক এর (English Meaning) ইংরেজি নাম
- পালং শাকের রেসিপি
- গর্ভাবস্থায় পালং শাকের উপকারিতা
- পালং শাকের জুসের উপকারিতা
- পালং শাকের জাতের নাম
- পালং শাক কি প্রতিদিন খাওয়া উচিত
- পালং শাকে কি এলার্জি আছে ও পালং শাকের উপকারিতা অপকারিতা - শেষ কথা
পালং শাকে কি এলার্জি আছে
পালং শাকে কি এলার্জি আছে ? প্রথমে আমরা এই প্রশ্নটির উত্তর জানব। হ্যাঁ,
পালং শাক এলার্জির কারণ হতে পারে। এটি একটি হাই হিস্টামিন সমৃদ্ধ শাক। তবে পালং
শাক এলার্জির কারণ বলে খেলেই যে এলার্জি হবে এমনটা নয়। আসলে কোন খাবার খেলে
এলার্জি হবে কিনা সেটি নির্ভর করে নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তির উপর। যে কোন খাবার
কিন্তু যে কোন ব্যক্তির জন্য এলার্জির কারণ হতে পারে।
আরো পড়ুন : কলমি শাক খেলে প্রেসার বাড়ে না কমে - কলমি শাকের ক্ষতিকর দিক
পালং শাকে কিছু উপাদান রয়েছে যেগুলো এলার্জির কারণ হতে পারে। কিন্তু সেটি সবার জন্য নয়। যারা আগে থেকেই এলার্জি জনিত সমস্যাই আছেন বা পালং শাকে যাদের এলার্জি রয়েছে তাদের জন্য হতে পারে। আমরা দৈনন্দিন অনেকেই কিন্তু পালং শাক খেয়ে থাকি। তবে সবাই কিন্তু অ্যালার্জিরি সমস্যায় পড়েনা। পালং শাকে যাদের এলার্জি রয়েছে, তারাই এই সমস্যায় পড়ে থাকেন।
তার মানে আসল কথা হচ্ছে পালং শাক যে নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের এলার্জি আছে তারাই এই
সমস্যায় পড়বেন। যদি আপনি পালং শাক খাওয়ার ফলে আপনার অ্যালার্জি হয় তাহলে ধরে
নেওয়া হবে পালং শাকে আপনার অ্যালার্জি আছে। পালং শাকের এলার্জি কারণে ত্বকে চুলকানি বা র্যাশ, গলা ব্যথা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়। আপনার যদি
পালংশাকে এলার্জি থাকে তাহলে এই উপসর্গগুলো দেখা দিতে পারে।
পালং শাকের উপকারিতা
পালংশাকে এলার্জির সম্ভাবনা থাকলেও এটি কিন্তু খুবই উপকারী একটি শাক। বিভিন্ন
ধরনের পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ এই শাকটি আমাদের শরীরের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
তাছাড়া আপনারাও অনেকেই জানেন পালং শাক কতটা পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। অনেক সময় বিভিন্ন
ডাক্তার পালং শাক খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। পালং শাক শুধু স্বাস্থ্য উপকারিতা
নয় এটি শরীরে ওষুধ হিসেবেও কাজ করে।
আরো পড়ুন : চর্ম রোগে নিম পাতার ব্যবহার - নিম পাতার ক্ষতিকর দিক
ভালো মানের শাক সবজির মধ্যে পালং শাক অন্যতম। পালংশাক প্রধানত শীতকালীন একটি
সবজি। কিন্তু এটি বর্তমানে বারো মাসি পাওয়া যায়। দেশের বিভিন্ন জায়গায় বছরের
সব সময় চাষ করা হয়। তাই খুব সহজে যেখানে সেখানে পাওয়া যায়। পালং শাকের
উল্লেখযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ কিছু উপকারিতা নিচে দেয়া হল। এক নজরে দেখে নিন।
- পালং শাকে উচ্চ মাত্রায় ম্যাগনেসিয়াম থাকে যার রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
- পালং শাক রক্ত পরিষ্কার করে এবং দেহকে বিভিন্ন সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করে।
- পালং শাক ভিটামিন এ এর ভালো একটি উৎস। যা চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
- এ শাকে থাকা ক্যালসিয়াম হাড় কে মজবুত ও শক্তিশালী করে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পালং শাক উন্নত মানের একটি সবজি।
- হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে পালং শাক উপকারী।
- ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী একটি শাক।
- পালং শাক ওজন কমাতে সহায়ক।
এছাড়াও পালং শাকের আরো অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। তাই আপনি যদি উপরে
বর্ণিত এই উপকারিতা গুলো পেতে চান তাহলে নিয়মিত খাবার তালিকায় পালং শাক যোগ
করতে পারেন। আশা করি পালং শাকের উপকারিতা সম্পর্কে বুঝতে পেরেছেন।
পালং শাকের ক্ষতিকর দিক বা অপকারিতা
পালং শাকে কি এলার্জি আছে এটি জানার পাশাপাশি পালং শাকের উপকারিতা দেখলেন। পালং শাকের উপকারিতার পাশাপাশি এর কিছু অপকারিতা বা ক্ষতিকর দিক রয়েছে। যেগুলো সম্পর্কেও আপনাদের জানা উচিত। পালং শাক বিভিন্ন সময় আমাদের স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে যখন আমরা এটি বেশি পরিমাণে ব্যবহার করি। পালং শাক একেবারে অতিরিক্ত পরিমাণ খাওয়া ঠিক নয়।
আরো পড়ুন : বিটরুট পাউডারের ১০ টি উপকারিতা - বিটরুট খাওয়ার নিয়ম
কারণ এতে পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সালিক এসিড আছে। আমরা যখন বেশি পালং শাক খাব তখন
এটি আমাদের শরীরের ক্যালসিয়ামের সাথে যুক্ত হয়ে ক্যালসিয়াম অক্সালেট তৈরি
করবে। যা আমাদের শরীরের সিস্টেম থেকে সহজেই বাইরে বের করে দিতে পারে না। যার ফলে
কিডনিতে ক্যালসিয়াম অক্সালেটের স্টন জমা হতে পারে। আর এর ফলে কিডনিতে পাথর
হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
এছাড়াও অতিরিক্ত পালংশাক খাওয়ার ফলে এটি আমাদের রক্ত পাতলা করে দিতে পারে। আবার
অনেকেরই পালং শাকে এলার্জি থাকে। পালং শাকে কিছু কিছু পদার্থ আছে যেগুলো আমাদের
থাইরয়েড হরমোন উৎপাদন ব্যাহত করতে পারে। এছাড়াও পালং শাক একটি উচ্চ ফাইবার
বিশিষ্ট সবজি। উচ্চ ফাইবারের কারণে মাঝে মাঝে এটি হজমজনিত সমস্যা ও দেখা দিতে
পারে।
পালং শাকের এই ক্ষতিকর দিকগুলো থাকে। আপনি একটা বিষয় খেয়াল করলে দেখবেন যে এই
সমস্যাগুলো সম্মুখীন আপনি তখনই হবেন যখন এটি মাত্রাতিরিক্ত খাবেন। তাই এই
সমস্যাগুলো যাতে না হয় সেজন্য একসাথে বেশি শাক খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। এটা আশা
করা যায় এই সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হবেন না।
পালং শাকে কি কি ভিটামিন থাকে
পালংশাকে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন থাকে। ইতোমধ্যে আপনারা পালং শাক এর বিভিন্ন
উপকারিতা ও অপকারিতা জেনেছেন। এখন পালং শাকের ভিটামিন সম্পর্কে কিছুটা ধারণা নিন।
পালংশাকে যেই ভিটামিন গুলো রয়েছে এ সম্পর্কে যদি একটু ধারণা পান তাহলে সব বিষয়
বুঝতে আরো সুবিধা হবে। বিভিন্ন পুষ্টিগুনে ভরপুর এই পালং শাক। শরীরের জন্যও
বেশ উপকারী।
পালং শাকে থাকা ভিটামিন গুলোর একটি চার্ট নিচে দেওয়া হল।
ভিটামিন
- ভিটামিন এ
- ভিটামিন বি ৬
- ভিটামিন সি
- ভিটামিন ই
- ভিটামিন কে
- আয়রন
- পটাশিয়াম
- ক্যালসিয়াম
- ম্যাগনেসিয়াম
ফাইবার
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
ক্যালোরি ইত্যাদি
আরো পড়ুন : হাঁসের ডিমের ক্ষতিকর দিক - হাঁসের ডিমে কি এলার্জি আছে
পালং শাকে এই উপাদান গুলো থাকে। একবার চিন্তা করে দেখুন সাধারন একটি শাকে কি
পরিমানে উপাদান থাকতে পারে। এতে যে পুষ্টি উপাদান গুলো রয়েছে তার সবই আমাদের
শরীরের জন্য অতীব জরুরী। যা আমাদের দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজ করার ফলে ব্যয় হয়। তাই
সহজলভ্য এই শাক থেকে যদি এই উপাদানগুলো গ্রহণ করতে চান তাহলে পালং শাক খেতে
পারেন।
পালং শাক খাওয়ার নিয়ম
যখন আপনি একটি খাবার থেকে এর পুষ্টিগুণ গ্রহণ করতে চাইবেন তখন আপনার অবশ্যই এটি
খাবার নিয়ম সম্পর্কে জানতে হবে। যখন নিয়ম মেনে কোন কিছু খাবেন তখন আপনি তার
সম্পূর্ণ উপকারিতা গ্রহণ করতে পারবেন। পালং শাক খাওয়ার বিভিন্ন নিয়ম রয়েছে।
অনেক গবেষক আছে যারা পালং শাক সিদ্ধ বা রান্না করে খাওয়ার পরিবর্তে কাঁচা খেতে
বলেছেন।
কারণ পালং শাক সিদ্ধ করলে এতে থাকা লুটেইন এর পরিমাণ কমে যায়। তাই অনেকে পালং শাক
কাঁচাও খাই আবার কেউ কেউ রান্না করেও খায়। পালং শাক আপনি কাঁচা অবস্থাতেই জুস
করে খেতে পারেন। আবার এটি বিভিন্ন সবজির সাথে সালাদ হিসেবেও খাওয়া যায়। কাঁচা
পালং শাক কেটে এর সাথে লেবুর রস যোগ করে খেলে ভিটামিন সি শোষণ ক্ষমতা উন্নত
হয়।
তাছাড়া পালং শাক হালকা সিদ্ধ করেও খাওয়া যায়। হালকা সিদ্ধ করে পালং শাক খেলে
ক্যালসিয়াম, আয়রন ও ভিটামিন এ শরীর সহজেই শোষণ করতে পারে। পালং শাক ভাজি করে
খেতেও বেশ মজার। তাই আপনি চাইলে এটি ভাজি করেও খেতে পারেন। তবে আপনি এটি যেভাবে
খান না কেন, এটির অনেক উপকারিতা বলে ইচ্ছেমতো খাবেন তা কিন্তু ঠিক নয়।
আরো পড়ুন : বড়দের হরলিক্স খাওয়ার নিয়ম | বড়দের হরলিক্স এর দাম কত
অবশ্যই এটি পরিমাণ মতো খাওয়া উচিত। অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। প্রতিদিন
একটি মানুষের যে পরিমাণ সবজি খাওয়া উচিত সেই মাত্রা ঠিক রেখে পালং শাক খাবেন।
এতে করে ওপরে বর্ণিত অপকারিতা থেকে দূরে থাকতে পারবেন।
পালং শাক কেন খাওয়া উচিত
পালং শাক কেন খাওয়া উচিত তা আপনাদের এতক্ষণে জেনে যাওয়ার কথা। ইতোমধ্যে আপনাদের সাথে পালং শাক খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা আলোচনা করেছি। দেখা যায় যে এর অপকারিতা চাইতে উপকারের পরিমাণ বেশি। এতে বিভিন্ন ধরনের ঔষধি গুন রয়েছে। যে কারণে পালং শাক খাওয়া উচিত। বিশেষ করে যারা উচ্চ রক্তচাপের রোগী তাদের জন্য এটি অনেক উপকারী।
পালং শাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম থাকে যা রক্তচাপ কমাতে অনেক বেশি
সহায়ক। এছাড়াও পালং শাক আয়রনের খুব ভালো একটি উৎস। যারা রক্তস্বল্পতা রোগে
ভুগে থাকেন তাদের জন্য এটি বেশি উপকারী হবে। আয়রন রক্তস্বল্পতা দূর করে। আমাদের
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পালং শাক ভালো ভূমিকা পালন করে। পালং শাক
উচ্চ ফাইবার বিশিষ্ট একটি খাবার।
আরো পড়ুন : মধুময় বাদাম খাওয়ার নিয়ম | মধুময় বাদাম তৈরির উপাদান ও পদ্ধতি
আর ফাইবার আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। আরেকটি বড় বিষয় হল এটি
ক্যান্সার প্রতিরোধী হিসেবেও ভালো কাজ করে। যাদের ওজন বৃদ্ধি নিয়ে ভয় তারাও
পালং শাক খেতে পারেন। পালং শাক ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। তাহলে বুঝতেই
পারছেন পালং শাক কেন খাওয়া উচিত। এই সকল উপকারী তার দিকে দৃষ্টি দিয়ে হলেও
আপনার পালং শাক খাওয়া উচিত।
তবে পালং শাকের কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে যেগুলো মনে রাখবেন। এখন এসব বিষয় মাথায়
রেখে আপনি চিন্তা করবেন পালং শাক আদৌ খাওয়া ঠিক হবে কিনা। এখন আপনার ইচ্ছা খাবেন নাকি খাবেন না।
পালং শাক কাদের খাওয়া উচিত নয়
পালং শাক ছোট থেকে বৃদ্ধ বয়সে সকলের জন্যই কিন্তু উপকারী। তবে কিছু কিছু সমস্যা
জনিত মানুষ রয়েছে যাদের জন্য পালং শাক ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই এ ব্যক্তিদের
পালং শাক না খাওয়াই ভালো হবে। যেমন যাদের কিডনিতে স্টোনের সমস্যা রয়েছে। কারণ
পালং শাকে অক্সালিক এসিড থাকে এবং এই এসিড ক্যালসিয়ামের সাথে যুক্ত হয়ে
ক্যালসিয়াম অক্সালেট তৈরি করে যা কিডনিতে স্টোন তৈরি করতে সাহায্য করে।
যারা রক্ত পাতলা করা ওষুধ গ্রহণ করেন তাদের জন্যও পালং শাক না খাওয়া ভালো হবে।
কারণ পালং শাক রক্ত জমাট বাঁধতে সহায়ক। তাই এটি ওষুধের সাথে বিরূপ প্রভাব ফেলতে
পারে এছাড়াও যারা থাইরয়েড ও গ্যাস্ট্রিক যন্ত্র সমস্যার সাথে জড়িত আছেন তাদের
জন্যও পালং শাক ক্ষতিকর হতে পারে। তাই এই ধরনের রোগীরা পালং শাক থেকে দূরে
থাকবেন।
আরো পড়ুন : বেল পাতার কার্যকরী ১০টি উপকারিতা ও অপকারিতা
কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে পালং শাক এলার্জির কারণ হয়ে থাকে। তাই পালং শাক
আপনার যদি এলার্জির কারণ হয় তাহলে এটি থেকে দূরে থাকবেন। এইসব ধরনের পরিস্থিতিতে
যদি কেউ পড়ে থাকে তাহলে তাদের জন্য পালং শাক খাওয়া উচিত নয়। যদি কোন সমস্যা
হয় তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন।
পালং শাক খেলে কি গ্যাস হয়
পালং শাক সরাসরি গ্যাস জনিত সমস্যা তৈরি করতে সক্ষম নয়। তবে পালং শাক উচ্চ ফাইবার বিশিষ্ট হওয়ায় এটি মাঝে মাঝে পেট ফাঁপা বা হজম জনিত সমস্যা দেখা দিতে
পারে। সেই ক্ষেত্রে গ্যাস হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে। তবে পালং শাক খাওয়ার ফলে
সাধারণত গ্যাস হয় না। আবার যদি কারো আগে থেকেই পালং শাকে সমস্যা থাকে তবে এ সমস্যা দেখা দিতে পারে।
তবে সেটা খুবই কম। পালং শাক খুবই ঠান্ডা একটি সবজি। এটি হজম শক্তিও বৃদ্ধি করতে
সাহায্য করে। পরিমাণ মতো পালং শাক খেলে এটি খুব সহজেই হজম হয়ে যায়। কিন্তু আপনি
যখন বেশি পরিমাণে খাবেন তখনই সমস্যা হতে পারে। তাই খাওয়ার সময় পরিমাণ ঠিক
রাখবেন। আসল কথা পালং শাক খাওয়ার ফলে গ্যাস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
পালং শাক এর (English Meaning) ইংরেজি নাম
পালং শাকের ইংরেজি নাম জানার জন্য অনেকেই অনলাইনে সার্চ করে থাকেন। পালং শাকের ইংরেজি নাম হচ্ছে Spinaches। অনেক জায়গায় Spinach লেখাও থাকে। এখানে Spinach মানে অনেক সময় শুধুমাত্র শাককে বোঝায়। আর Spinaches মানে পালং শাক বুঝায়। তাই পালং শাকের সঠিক ইংরেজি হবে Spinaches বা Spinach। আশা করি বুঝতে পেরেছেন।
পালং শাকের রেসিপি
পালং শাকের বিভিন্ন ধরনের রেসিপি আছে। বিভিন্নজন বিভিন্ন রকম রেসিপি পছন্দ করে।
যার যেরকম ইচ্ছে সে সেইরকম ভাবে শাকটি রান্না করে খাই। তবে আপনি এটি যেভাবে খান
না কেন এর উপকারিতা পাবেন। কিন্তু এর সম্পূর্ণ উপকারিতা পাওয়ার জন্য অনেক
গবেষকরা এটি কাঁচা খাবার উপদেশ দিয়েছেন। কিন্তু কাঁচা পালং শাক খাওয়া সবার
পক্ষে সম্ভব নয়।
আরো পড়ুন : পুরুষের জন্য মেথি খাওয়ার নিয়ম উপকারিতা ও অপকারিতা
তাই আপনি আপনার পছন্দ মতো রেসিপি অনুযায়ী পালন শাক খেতে পারেন। নিচে পালং শাকের
জনপ্রিয় কিছু রেসিপি দেয়া হলো।
চিংড়ি দিয়ে পালং শাক : পালং শাকের সবচাইতে জনপ্রিয় রেসিপি হচ্ছে
চিংড়ি দিয়ে পালং শাক। চিংড়ি দিয়ে পালং শাক ঝোল বা ভাজি যেটাই করেন না কেন
খেতে কিন্তু দারুণ লাগে।
পালং শাক ভাজি : যারা পালং শাকের ঝোল বা অন্য তরকারি খেতে পছন্দ করেন
না তারা পালং শাকের ভাজি করে খেতে পারেন। পালং শাক ভাজি করার জন্য শুধুমাত্র চিকন
করে কেটে সিদ্ধ করে তেল মসলা দিয়ে ভাজি করলেই হয়ে গেল।
মাছ দিয়ে পালং শাকের ঝোল : বড় মাছ দিয়ে পালং শাক রান্না করলে খেতে
বেশ মজা লাগে। বেশিরভাগ মানুষ এভাবেই পালং শাক খেয়ে থাকে। এটিও খুব জনপ্রিয়
একটি রেসিপি।
কালাই ডাইল দিয়ে পালং শাক : পালং শাকের আরেকটি জনপ্রিয় রেসিপি
হচ্ছে কালাই ডাল দিয়ে পালং শাক। কালাই ডাল দিয়ে পালং শাক রান্না করলে এর যেমন
স্বাদ হয় তেমন পুষ্টিগুণ অনেক বৃদ্ধি পায়।
এই ছিল পালং শাকের জনপ্রিয় কিছু রেসিপি। এছাড়াও পালং শাক অন্যান্য সবজি বা
শাকের সাথে যোগ করেও রান্না করে খাওয়া যায়। অন্য শাকের সাথে একটি যোগ করলে তার
পুষ্টিগুণ ও বৃদ্ধি পায়। এর মধ্যে আপনি আপনার পছন্দমত যেকোনো একটি বেছে নিতে
পারেন।
গর্ভাবস্থায় পালং শাকের উপকারিতা
পালং শাকে কি এলার্জি আছে এটি জানার পাশাপাশি এতক্ষণে অনেক কিছু জেনে ফেলেছেন। এতক্ষণ দেখলেন পালংশাকের বিভিন্ন উপকারিতা ও অপকারিতা। পালং শাকে কত ধরনের পুষ্টিগুণ রয়েছে তাও দেখলেন। এ পুষ্টিগুণ গুলো আমাদের শরীরে বিভিন্ন রকম উপকার প্রদান করে থাকে। তাহলে একবার চিন্তা করে দেখুন এগুলো একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য কতটা উপকারী হতে পারে।
একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য পালং শাক খাওয়া অত্যন্ত উপকারী। পালং শাকে থাকা
পুষ্টিগুণ গর্ভবতী মা ও গর্ভের সন্তানের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য অনেক
সহায়ক। গর্ভবতী মায়ের জন্য পালং শাকের উল্লেখযোগ্য কিছু উপকারিতা নিচে দেয়া
হল।
- পালং শাকে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন এ থাকে যা মা ও গর্ভের শিশুর দৃষ্টি শক্তি উন্নত করতে সহায়ক।
- আয়রনের ভালো একটি উৎস পালং শাক। গর্ভকালীন সময় রক্তশূন্যতা দূর করতে আয়রনের প্রয়োজন হয়। যা পালং শাক প্রদান করে।
- এতে থাকা ক্যালসিয়াম গর্ভবতী মা ও গর্ভের শিশুর হাড় শক্তিশালী ভাবে তৈরি করতে সাহায্য করে।
- পালং শাক ফালিক এসিডের একটি ভালো উৎস যা গর্ভের শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশে বিশেষভাবে ভূমিকা রাখে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
- শরীরে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান প্রদান করে।
- ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে ইত্যাদি।
গর্ভকালীন সময়ে যদি একজন গর্ভবতী মা নিয়মিত পরিমান মত পালং শাক খায় তাহলে সে
উপরে বর্ণিত এই উপকারিতা গুলো গ্রহণ করতে পারবে। তবে খেয়াল রাখবেন সেটি যেন
মাত্রাতিরিক্ত না হয়। প্রয়োজন হলে এটি গ্রহণ করার পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ
নিবেন।
পালং শাকের জুসের উপকারিতা
পালং শাক শুধুমাত্র রান্না করেই যে খাওয়া যায় তা কিন্তু নয়। এটি কাঁচা ও
খাওয়া যায়। তবে সবাই খেতে পারে না। কিছু গবেষক গবেষণা করে দেখেছেন যে পালং শাক
সিদ্ধ করার ফলে এর পুষ্টিগুণ কমে যায়। তাই অনেক গবেষক এটি কাঁচা খাওয়ার উপদেশ
দিয়েছেন। তাই পালং শাকের জুস তৈরি করে, সালাদের মিশিয়ে বা স্মুদি হিসেবে খাওয়া
যায়।
পালং শাকের জুস স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। এই শাক এইভাবে খেলে সম্পন্ন
পুষ্টিগুণ পাওয়া যায়। পালং শাকের জুসের কিছু উপকারিতা নিচে উল্লেখ করা হলো।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করে
- চর্মের স্বাস্থ্য ভালো রাখে
- রক্তের সঠিক প্রবাহ বজায় রাখে
- ওজন নিয়ন্ত্রণ করে
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ
- এনার্জি বৃদ্ধি করে
- লিভার এবং কিডনি স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়ক ইত্যাদি।
পালং শাকের জুস খাওয়ার ফলে এসব উপকারীতা পেতে পারেন। যদি আপনার পক্ষে কাঁচা
খাওয়া সম্ভব না হয় তাহলে আপনি রান্না করেও কিন্তু এর উপকার গ্রহণ করতে
পারেন।
পালং শাকের জাতের নাম
পালং শাক বিভিন্ন জাতের হয়ে থাকে। আমাদের দেশে এর অনেক কয় ধরনের জাত রয়েছে।
এদের জাতের ভিন্নতা অনুযায়ী এদের ভিন্ন ভিন্ন কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তবে জাতের ভিন্নতার ওপর এদের পুষ্টিগুণের তেমন তারতম্য নেই। তাই আপনি যে কোন জাতের পালং
শাক খেতে পারেন। বছরের বিভিন্ন সময়ে এর বিভিন্ন জাত চাষ করা হয়। যদিও এটি একটি
শীতকালীন শাক।
নিচে পালং শাকের কিছু জাতের নাম দেয়া হলো।
- ইভান
- কপি পালং
- সাথী
- আংকিতা
- পুষা জয়ন্তী
- টাক পালং
- সবুজ বাংলা
- গ্রিন
- নোবেল জায়েন্ট
- ব্যানার্জি জায়েন্ট
- পুষপা জ্যোতি ইত্যাদি
এ ছিল পালং শাকের উল্লেখযোগ্য কিছু জাতের নাম। এর মধ্যে প্রায় সব জাতগুলোই
আমাদের দেশে চাষ করা হয়। পালং শাক শীতকালীন সবজি হলেও বছরের বিভিন্ন সময়ে
বিভিন্ন জাত চাষ করা হয়।
পালং শাক কি প্রতিদিন খাওয়া উচিত
পালং শাক আপনি প্রতিদিন খেতে পারেন তবে এর পরিমাণ এর ওপর নজর রাখতে হবে।
আপনাদেরকে এতক্ষণ বললাম যে পালং সঠিক মাত্রায় খেতে হবে। এই সঠিক মাত্রাটা কতটুকু
এটা তো জানার বিষয় তাই না ? অনেক ডাক্তার বলেন যে প্রতিদিন একজন সুস্থ
মানুষ এক বাটি পালং শাক খেতে পারবে। তার মানে বুঝতে পেরেছেন প্রতিদিন কতটুকু পালন
শাক খাওয়া উচিত।
এবার বলি পালংশাক প্রতিদিন খাওয়া যাবে কিনা। পালং শাক আপনি প্রতিদিন খেতে পারবেন
তবে এই যে সঠিক মাত্রা এর বেশি যাতে না হয়। আশা করি বুঝতে পেরেছেন।
পালং শাকে কি এলার্জি আছে ও পালং শাকের উপকারিতা অপকারিতা - শেষ কথা
পালং শাকে কি এলার্জি আছে ? আশা করি এতক্ষণে এই প্রশ্নটির উত্তর পেয়ে গেছেন। তার
সাথে পালং শাক সম্পর্কে বিস্তারিত আরো অনেক কিছু বুঝতে পেরেছেন। পালং শাক সত্যিই
অনেক উপকারী একটি সবজি। পালংশাক সরাসরি এলার্জির
কারণ নয়। এই শাকে যাদের এলার্জি রয়েছে তাদের জন্যই শুধু পালং শাক এলার্জির কারণ
হতে পারে।
আর যারা এরকম সমস্যায় আছেন তাদের পালং শাক থেকে দূরে থাকাই ভালো। এছাড়াও ওপরে
বর্ণিত যাদের জন্য পালং শাক খাওয়া উচিত নয় তারা এড়িয়ে চলবেন। আর যাদের কোন
ধরনের সমস্যা নেই তারা নির্দ্বিধায় নিয়মিত পরিমান মত পালং শাক খেতে পারেন। আশা
করি পোস্টটি পড়ে উপকৃত হয়েছেন। আজকে এখানেই শেষ করছি। আল্লাহ হাফেজ😍
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url